তিনটি গল্প
Marco Denevi (মার্কো দেনেবি / আর্জেন্টিনা)
GÉNESIS 2 (সৃষ্টি ২)
(অনুবাদ : জয়া চৌধুরী)
কল্পনা করুন
একদিন পরমাণু যুদ্ধ নেমে এল। মানুষ এবং শহরগুলো অদৃশ্য হয়ে গেল। গোটা দুনিয়াটা
একটা পোড়া মরুভূমি হয়ে গেল। তবে এটাও কল্পনা করুন যে একটা নির্দিষ্ট অঞ্চলে সম্প্রতি
অবলুপ্ত কোন সভ্যতার উত্তরসূরী একটা বাচ্চা বেঁচে গেল। বাচ্চাটা ফলমূল খেত আর
গুহায় ঘুমাত। বহুকাল ধরে সেই ধ্বংসলীলার ভয়ে সে ঝলসে রয়েছিল। শুধু কাঁদত আর বাবাকে
নালিশ করত। তার স্মৃতিগুলো আবছা হয়ে, টুকরো টুকরো ছেঁড়া ছেঁড়া আর একটা স্বপ্নের মত
হয়ে গিয়েছিল। তার ভয়ের কাঁপুনি স্রেফ উদ্দেশ্যবিহীন গা ছমছম হয়ে গিয়েছিল। কখনও মনে
পড়ত বর্ণনার অতীত এক স্মৃতি, একটা শৃঙ্খলা সম্পন্ন, নিরাপদ দুনিয়া যেখানে তার বাবা
হাসছে নয়ত সতর্ক করে দিচ্ছে কিংবা একটা আগুনে ঘেরা জাহাজ যেটা একটু পরেই বিস্ফোরিত
হয়ে মেঘের ভেতর হারিয়ে গেল। তখন একাকীত্বে পাগল হয়ে সে হামাগুড়ি দিয়ে হাঁটতে শুরু
করে আর একটা প্রার্থনা বানিয়ে নেয় - এক খৃষ্ট গীত। ইতিমধ্যে পৃথিবী সবুজ হতে শুরু
করে, নতুন করে অঙ্কুরোদ্গম হয়। উদ্ভিদেরা ফুলে আর গাছেরা ফলে ঢেকে যেতে শুরু করে।
বাচ্চাটা ততদিনে বালকে পরিণত হয়েছে। সে তখন অঞ্চলটা আবিষ্কার করতে শুরু করল। একদিন
একটা পাখি দেখল। অন্যদিন নেকড়ে। আর একদিন অপ্রত্যাশিত ভাবে তার সঙ্গে দেখা হয়ে গেল
আর এক বালিকার, ঠিক তার মত বয়েস, সেও পরমাণু বোমা যুদ্ধের পরে বেঁচে যাওয়া মানুষ।
তারা পরস্পরের দিকে তাকাল, একে অন্যের হাত ধরল, একাকীত্ব থেকে ওরা বেঁচে গেল।
তাদের নিজেদের ভাষায় বকবক করতে লাগল। তার ফলে দুজনের ভাষা থেকে একটা নতুন ভাষার
সৃষ্টি হল। তারা নিজেরাই নিজেদের ডাকতে লাগল পুরুষ আর নারী। তাদের ছেলেপুলে হল।
অনেক হাজার বছর পরে এক ধর্ম সেই পুরুষ ও সেই নারীর উত্তরমানুষদের মধ্যে প্রচারিত
হবে, যেখানে পুরুষটির বাবা হবেন ঈশ্বর আর সেই হারিয়ে যাওয়া সভ্যতার নাম হবে হারিয়ে
যাওয়া স্বর্গ।
Max Aub (ম্যাক্স আউব / প্যারিস-স্পেন)
HABLABA Y HABLABA… (বকে যেত বকে
যেত...)
(অনুবাদ : জয়া
চৌধুরী)
বকে যেত বকে যেত
বকে যেত বকে যেত বকে যেত বকে যেত…বকে যেত। আর আসুন কথা বলতে। আমি একজন গৃহবধূ। কিন্তু সেই মুটকী কাজের মাসীটা
কথা বলা কথা বলা কথা বলা ছাড়া আর কিছুই করত না। আমি যেখানে থাকতাম ও সেখানেই থাকত, আসত আর কথা বলতে শুরু করত। যে কোন জিনিষ নিয়ে কথা বলত, সব কিছু নিয়ে। ওকে যে বিষয় বলতে বলা হত ও বলে যেত।
ওইজন্য ওকে ছাড়ালেন? ওকে তো তিনমাসের টাকা দিতে হত। তার ওপর আমার দিকে খুব বাজে নজরে তাকাতেও পটু
ছিল সে। এমনকি চানের ঘরেও এটা না হলে ওটা না হলে আর অন্য কোন বিষয় নিয়ে। ওর মুখের
ওপর তোয়ালে চাপা দিয়ে দিয়েছিলাম আমি যাতে শান্ত হয়। সে কারণে মরে নি ও। বরঞ্চ কথা
না বলতে পেরে মরেছে - কথাগুলো ভেতরে ফেটে গিয়েছিল।
Rosario Barros Peña (রোসারিও বাররোস পেন্যিয়া / স্পেন)
LA TRISTEZA (দুঃখ)
(অনুবাদ : জয়া
চৌধুরী)
শিক্ষক আমাকে
একটা নোট দিলেন মাকে দেবার জন্য। সেটা পড়লাম। সেটায় লেখা যে মায়ের সঙ্গে তাঁর দেখা
করা দরকার কেননা আমি বাজে মেয়ে। ওটাকে কাল সকালে খাবার জন্য রাখা দুধে ভরা বড়
কাপটার তলায় টেবিলের ওপর রেখে দিলাম। সুপারমার্কেট থেকে কেনা তোরতিইয়াটা মাইক্রো
আভেনে ঢোকালাম। আধখানা খেলাম। বাকি আধখানা টেবিলে দুধের কাপটার পাশে একটা প্লেটে
রাখলাম। আমার মা একরকমই ব্যবহার করল। মুখের দিকে না চেয়েই লাল চোখে আমার দিকে
তাকাল। বালিশে এলিয়ে ছড়ানো চুল মায়ের, যে চুল এখন আর চকচক করে না। ঘরে ঘামের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু জানলার
পর্দাটা সরাতেই চেঁচিয়ে উঠল মা। লোকে বলে যদি সূর্য না দেখলে তাহলে তো দিনই গড়ায়
না। কিন্তু এটা ঠিক নয়। আমি জানি দিন গড়িয়ে যায়, কেননা ওয়াশিং মেশিনগুলো নোংরা কাপড়ে উপচে পড়ে। আর এই
বাসন মাজার যন্ত্রগুলোয় আর কিছু আঁটে না। কিন্তু সবার ওপরে আমি জানি আসবাবগুলোর
ওপরে এঁটে থাকা দুঃখটা সরে যায় না। দুঃখ হল একরকমের সাদা গুঁড়ো যা সব কিছু ঢেকে
ফেলে। শুরুতে এটা বেশ মজাদার। তার সম্পর্কে বলা যায় - “যারা পড়ে তারা বোকা”। কিন্তু পরের দিন সেই শব্দগুলোকে দেখা যায় না কেননা
তার ওপরে আরো পুরু করে দুঃখের প্রলেপ পড়ে। শিক্ষক বলেন আমি মন্দ মেয়ে কেননা ক্লাসে
অন্যমনস্ক থাকি। কেননা আমি সেই ভাবনাটা সরাতে পারি না মন থেকে যে এই দুঃখ একদিন
আমার মাকে পুরোপুরি ঢেকে দেবে আর তারপর আমাকেও। আর বাবা যখন ফিরে আসবে সেকথা ভেবে
রোজ রাতে খাবার টেবিলে যে লিখি “তোমাকে ভালবাসি” দুঃখ সেটাকেও মুছে দেবে।
এমন প্রাঞ্জল যে অনুবাদ বলে মনে হল না।
উত্তরমুছুনতিনটি অণুগল্পই খুব সুন্দর। বিশেষ করে তৃতীয়টি।
এমন প্রাঞ্জল যে অনুবাদ বলে মনে হল না।
উত্তরমুছুনঅণুগল্পগুলিও সুন্দর, বিশেষ করে তৃতীয়টি।
thank u
মুছুন