বেলুড়
ঝড়ের মধ্যে হেঁটে আসার পর কি পড়ে থাকে?
এইমাত্র ট্রেনটা আমায় ঝড়ের টানেলের ভিতর থেকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে গেল এখানে। দূর
থেকে যে মন্দির দেখা যাচ্ছে, না মন্দির না; মন্দিরের মতো দেখতে যাত্রী প্রতীক্ষালয়। চাওয়াপাওয়া নিয়ে দর কষতে কষতে ভগবানকে মাঝে
মাঝে টিকিট কাউন্টারের টিকিটবেচা মাস্টার বা উত্তরপাড়া বাজারের সব্জিওলা লাগে। ইজি
টু মেক ভগবান ইজি টু গেট নকুলদানার বিনিময়ে ঘর সংসার প্রেম জীবনভিক্ষাও দিয়ে দেন,
যেন এতটাই চিপ লেভেলের ডি গ্রেড সরকারি কর্মচারি। করুণামৃত কে আগে নেবে, সে কী ঠেলাঠেলি - মান্থলি/ডেলি/ইয়ারলি...। ওটাকে বেলুড়মঠ ভেবে ফেলবেন না যেন! ভগবানের মন্দিরের নাম
টিকিট কাউন্টার, স্টেশনের নাম বেলুড়, স্টেশনে
নেমেই ঠিক বাঁ’দিকে...। অবশ্য বেলুড় বলতে বেলুনও বুঝতে পারেন, যাকে আমার এখনও ধরাছোঁয়া হয়ে উঠল না।
বেলুড় হলো প্রথম টোটো চড়া এবং রূপান্তরকামী মানুষটিকে বোঝানো লিঙ্গ নয়, মন চওড়া করতে হবে। বেলুড় মানে অনেক হেঁটে হেঁটে মঠে পৌঁছে জানতে
পারা, সময়ে না গেলে মন্দির হোক বা ডাক্তারখানা, খাটা পায়খানা হোক বা জেলখানা – দরজা বন্ধ ও খোলার একটা নির্দিষ্ট সময় থাকে। দরজা নিয়ে
আমি অলোকপর্ণার মতো করে ভাবতে পারি না বলে উঠোনেই বসে পড়ি। দেখি যাকে উঠোন ভেবেছিলাম, সে’ই রাস্তা হয়ে গেছে। আমি কড়িবরগার জানালা নিয়েই বাঁচি বরং। উঁকিঝুঁকি মেরে যতটুকু দেখা যায়, অমলেরও তো ওইটুকুই
ছিল... মানুষের তো এটুকুও থাকে না। যারা চিরকাল না খেয়ে বেঁচে থাকে, লক্ষ্য করলে
দেখবেন, তারাই নিজের একটা মাত্র রুটিটাও ভাগ করে লোক খাইয়ে বেড়ায়। অতএব উঁকি মেরে
ফিরে আসি ছোটবেলার ছোটলোকের গল্পে। বেলুড় বলতে অন্যের বাবার হাত ধরে ট্যালেন্ট
সার্চ একজাম দিতে যাওয়া, কারণ নিজের বাবা জানেই না কোন্ ক্লাসে পড়ি! সুইট ইনোসেন্সি! ডাঁহা ফেল করি,
অন্যের বাবার মুখে রাক্ষস রাক্ষস হাসি। আমি বদলা নেব ভাবতে ভাবতে বড় হয়ে উঠি। আমি
বদলা নেব ভাবতে ভাবতে বোকার মতো অন্যের বাবা ছেলের প্রেমে পড়ি। আমি বদলা নেব ভাবতে ভাবতে ঝড়ের মধ্যে সে উড়ে যায় অন্য
কোথাও। বাব্বাহ, সেই অন্যের বাবার মতো তার মুখেও একইরকম হাসি ছিল
যাওয়ার বেলা; শুধু পার্থক্য, হাসির আওয়াজ নাইনটিজের কুমার
শানুর নাকিসুরে মেলডি মাখানো ভয়েস – ‘মনে পড়ে প্রেমিক ছিলাম’। বেলুড়কে দূর থেকে দেখলে এইরকমই একটা মিহি লাথি লাগে।
নস্টালজিয়া এমনই, দেখবেন গাধার লাথিও সফট্ লাগবে। বৃষ্টি আসার আগেই মিচিক করে হেসে ফেলবেন কখন, কেউ জানতেই পারবে না ঝড়ের
মহিমা। যাওয়ার বেলা সব্বাই হেসেই যায়, যাওয়ার তাড়া থাকে তো! আপনিও কত যাওয়া দেখে হেসেছেন আপন মনে, কিন্তু আপনার লেট হয়ে গেছিল। আজ আপনি যদি একটি
শান্ত ঝড় দেখতে চান, হ্যাঁ নিজের দিকে তাকান। হাসছেন?
এবার কি করনীয়? কাদা পায়ে ফিরে আসা ছাড়া! পুমার লাল দু’হাজারি চটিও কাদা মাখলে কেমন ছোটলোক ছোটলোক দেখতে লাগে, এতটা রাস্তায় হেঁটে
না এলে বুঝতেই পারতাম না। ফাঁকা হয়ে থাকা টিকিট কাউন্টারে মাছি উড়ে বেড়ায়। ছোটলোক
ছোটলোক দেখতে লাগে তাকে। এইমাত্র ভেবে ফেলি আমি আমার চাকরি ছাড়ব, যাহোক একটা টিকিট কাটব, রানিং গাড়িতে ছুটে
চড়ব, হাত পা কেটেকুটে প্রেমে পড়ব এই এক্ষুনি, লেখা ছেড়ে দেব আর কক্ষনো ফিরে আসব না এখানে কোথাও
আর। আমার সেই লেখা ছেড়ে দেওয়া শুকনো কালো শিরা ওঠা হাতই বাড়ির টিকিট কাটে। ডাউনের অ্যানাউন্স
শোনে, দৌড়ে দৌড়ে ফাঁকা জায়গা দেখে ট্রেনে উঠে বসে পড়ে কোথাও।
#
##
###
###
তবে কি বলছিলাম যেন... ঝড়ের মধ্যে হেঁটে আসার পর মানুষের আর আগের মতো নরম জামা নরম মুখ পড়ে থাকে
না। ধুলোটুলো কড়কড়ে ব্যাপার, মাথা ঘেঁটে ঘ। তাই জন্যেই তো ঝড়কে ঝড় বলা হয়।
বেলুড়কে বেলুন...
(ঋণ - অপরিচিত কোনো দার্শনিক বা কবি এবং সমস্ত
ছোটলোকদের... যাদের দেখলেই বোঝা যায় যে তারা ঠিক কোথা থেকে উঠে এসেছে)
Sundor laglo...:)
উত্তরমুছুনSundor laglo...:)
উত্তরমুছুন