ওকলাহোমা
অর্ক চট্টোপাধ্যায়
বেশ কয়েকদিন ধরে একটা বই পড়ছিলাম। জোসেফ কর্নেল (১৯০৩-১৯৭২) নামের একজন আমেরিকান শিল্পীর জীবনী। যদিও সুররিয়ালিস্টদের দ্বারা প্রভাবিত এই কোলাজ শিল্পী বক্স আর্টিস্ট বলেই বেশি পরিচিত, ৩০এর দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে তিনি স্বল্প দৈর্ঘ্যের সিনেমা বানাতে শুরু করেন। চিরজীবন অবিবাহিত জোসেফ তাঁর অসুস্থ ভাই হলে গিয়ে সিনেমা দেখতে পারতেন না বলে তাঁর দেখার জন্য বাড়িতে ফিল্ম ডিস্ক নিয়ে আসতেন। আর সেই সিনেমা তাঁর বা তাঁর ভাইয়ের পছন্দ না হলে তার ভেতর অন্য নানা রকম দৃশ্য কাট আপ করে ঢুকিয়ে দিতেন। এইভাবে নিজে সিনেমা বানাতে শুরু করেন। ৫০-৬০ এর দশকে আমেরিকার নন-ন্যারেটিভ আঁভা গার্দ সিনেমা মুভমেন্টের পূর্বাভাস পাওয়া যায় তাঁর বানানো শর্ট ফিল্মগুলোয়। পরে তিনি ওই সিনে আন্দোলনের অনেকের সাথে কোলাবোরেট করে সিনেমা বানিয়েছিলেন। সেদিন ট্রেনে যেতে যেতে বইটা পড়ছিলাম। আমার কম্পার্টমেন্টে বিশেষ কেউ ছিল না। আমি একটু একটু করে জোসেফের জীবনে মনোনিবেশ করছিলাম। সারাজীবন পরম যত্নে নানা ধরনের বাক্স বানিয়ে গেছেন তিনি। একেকটা বাক্স একেকটা পৃথিবী। তার নিজস্ব নিয়ম কানুন, নিজস্ব সব বাসিন্দা। এখন যে জায়গাটা পড়ছিলাম সেখানে জোসেফের বানানো একটা বই-বাক্সের ছবি ছিল। একটা বইয়ের পাতাগুলোর মাঝখানে গর্ত করে একটা জানালা বানানো আর ওই জা্নালার ভেতর থেকে একটা ছোট বাচ্চা উদাস চোখে তাকিয়ে রয়েছে বাইরের দিকে, যেন সেদিনকার মতো তার বাইরে খেলতে বেরোনো বারণ হয়ে গেছে। জোসেফ সম্পর্কে জীবনীকারকে দেওয়া ইন্টারভিউতে তাঁর পরিচিত কয়েকজন বলেছেন যে, তিনি সারা জীবন ভেতরে ভেতরে একটা বাচ্চাই রয়ে গিয়েছিলেন। আর তাই বাচ্চাদের ভালো লাগার মতো করে একের পর এক বাক্সজগৎ বানিয়ে গেছেন নিরলস। আমি ছবির পাতাটার ওপর হাত বোলাচ্ছিলাম, এমন সময় মানুষের শব্দ পেলাম কামরায়। পেছনের সীটে বসে দুজন ভদ্রলোক কথা বলতে শুরু করেছেন কখন খেয়ালই করিনি। হঠাৎ তাঁদের কথাবার্তার ভেতর থেকে একটা নাম হুট করে বেরিয়ে এসে কানে ঢুকে পড়লো : ওকলাহোমা। ওনারা বারবার নামটা করছিলেন। একটু মন দিতে বুঝতে পারলাম, ওকলাহোমাতে একটা বেশ ভয়ানক ভূমিকম্প হয়েছে এবং ওনারা তাই নিয়েই কথা বলছিলেন। আমি শেষ দু-এক দিন টিভি দেখিনি, তাই কোনো ধারণা ছিল না। কান এবং মন সরিয়ে নিয়ে বইটার দিকে তাকালাম। পাতাটা বুকমার্ক করে বইটা বন্ধ করতেই আবার ওকলাহোমা! বইটার কালো স্পাইনের শেষের দিকে সাদা কালিতে লেখা ওকলাহোমা। বইটা আসলে ওকলাহোমা ইউনিভার্সিটি প্রেস থেকে বেরিয়েছে। অথচ এর আগে আমি এটা খেয়ালই করিনি। কিম্বা হয়তো খেয়াল করেছি কিন্তু শব্দটা এর আগে তাড়া করেনি বলে মনে ছিল না। বইটাকে বন্ধ করে কোলের ওপর রেখে দিলাম। দেখতে পেলাম বইটার পাতার ভেতর এখন একটা জানালা গজিয়েছে। জানালা দিয়ে দেখা যাচ্ছে একটা বাচ্চা ছেলের করুণ মুখ। সে ভূমিকম্পের ডেব্রিসের ভেতর আটকা পড়ে রয়েছে।
বেশ কয়েকদিন ধরে একটা বই পড়ছিলাম। জোসেফ কর্নেল (১৯০৩-১৯৭২) নামের একজন আমেরিকান শিল্পীর জীবনী। যদিও সুররিয়ালিস্টদের দ্বারা প্রভাবিত এই কোলাজ শিল্পী বক্স আর্টিস্ট বলেই বেশি পরিচিত, ৩০এর দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে তিনি স্বল্প দৈর্ঘ্যের সিনেমা বানাতে শুরু করেন। চিরজীবন অবিবাহিত জোসেফ তাঁর অসুস্থ ভাই হলে গিয়ে সিনেমা দেখতে পারতেন না বলে তাঁর দেখার জন্য বাড়িতে ফিল্ম ডিস্ক নিয়ে আসতেন। আর সেই সিনেমা তাঁর বা তাঁর ভাইয়ের পছন্দ না হলে তার ভেতর অন্য নানা রকম দৃশ্য কাট আপ করে ঢুকিয়ে দিতেন। এইভাবে নিজে সিনেমা বানাতে শুরু করেন। ৫০-৬০ এর দশকে আমেরিকার নন-ন্যারেটিভ আঁভা গার্দ সিনেমা মুভমেন্টের পূর্বাভাস পাওয়া যায় তাঁর বানানো শর্ট ফিল্মগুলোয়। পরে তিনি ওই সিনে আন্দোলনের অনেকের সাথে কোলাবোরেট করে সিনেমা বানিয়েছিলেন। সেদিন ট্রেনে যেতে যেতে বইটা পড়ছিলাম। আমার কম্পার্টমেন্টে বিশেষ কেউ ছিল না। আমি একটু একটু করে জোসেফের জীবনে মনোনিবেশ করছিলাম। সারাজীবন পরম যত্নে নানা ধরনের বাক্স বানিয়ে গেছেন তিনি। একেকটা বাক্স একেকটা পৃথিবী। তার নিজস্ব নিয়ম কানুন, নিজস্ব সব বাসিন্দা। এখন যে জায়গাটা পড়ছিলাম সেখানে জোসেফের বানানো একটা বই-বাক্সের ছবি ছিল। একটা বইয়ের পাতাগুলোর মাঝখানে গর্ত করে একটা জানালা বানানো আর ওই জা্নালার ভেতর থেকে একটা ছোট বাচ্চা উদাস চোখে তাকিয়ে রয়েছে বাইরের দিকে, যেন সেদিনকার মতো তার বাইরে খেলতে বেরোনো বারণ হয়ে গেছে। জোসেফ সম্পর্কে জীবনীকারকে দেওয়া ইন্টারভিউতে তাঁর পরিচিত কয়েকজন বলেছেন যে, তিনি সারা জীবন ভেতরে ভেতরে একটা বাচ্চাই রয়ে গিয়েছিলেন। আর তাই বাচ্চাদের ভালো লাগার মতো করে একের পর এক বাক্সজগৎ বানিয়ে গেছেন নিরলস। আমি ছবির পাতাটার ওপর হাত বোলাচ্ছিলাম, এমন সময় মানুষের শব্দ পেলাম কামরায়। পেছনের সীটে বসে দুজন ভদ্রলোক কথা বলতে শুরু করেছেন কখন খেয়ালই করিনি। হঠাৎ তাঁদের কথাবার্তার ভেতর থেকে একটা নাম হুট করে বেরিয়ে এসে কানে ঢুকে পড়লো : ওকলাহোমা। ওনারা বারবার নামটা করছিলেন। একটু মন দিতে বুঝতে পারলাম, ওকলাহোমাতে একটা বেশ ভয়ানক ভূমিকম্প হয়েছে এবং ওনারা তাই নিয়েই কথা বলছিলেন। আমি শেষ দু-এক দিন টিভি দেখিনি, তাই কোনো ধারণা ছিল না। কান এবং মন সরিয়ে নিয়ে বইটার দিকে তাকালাম। পাতাটা বুকমার্ক করে বইটা বন্ধ করতেই আবার ওকলাহোমা! বইটার কালো স্পাইনের শেষের দিকে সাদা কালিতে লেখা ওকলাহোমা। বইটা আসলে ওকলাহোমা ইউনিভার্সিটি প্রেস থেকে বেরিয়েছে। অথচ এর আগে আমি এটা খেয়ালই করিনি। কিম্বা হয়তো খেয়াল করেছি কিন্তু শব্দটা এর আগে তাড়া করেনি বলে মনে ছিল না। বইটাকে বন্ধ করে কোলের ওপর রেখে দিলাম। দেখতে পেলাম বইটার পাতার ভেতর এখন একটা জানালা গজিয়েছে। জানালা দিয়ে দেখা যাচ্ছে একটা বাচ্চা ছেলের করুণ মুখ। সে ভূমিকম্পের ডেব্রিসের ভেতর আটকা পড়ে রয়েছে।
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন