কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

০৯) অচিন্ত্য দাশ

উচ্ছেসেদ্ধ অচিন্ত্য দাশ



লিফ্টে সাততলায় এসে কাচের দরজাটা ঠেলে এগোলেই ডানকান ট্রেডার্স লিমিটেডের হাল-ফ্যাশনের আপিস। টেবিলে বসে কাজ করছে জনাপঁচিশেক, বাকিরা ল্যাপটপ-আইপ্যাড নিয়ে মোবাইল কানে এদিক ওদিক ছোটাছুটি করছে। ট্রাউজার-সার্ট, র্স্কাট কিম্বা জীনস্-টপ, শাড়ি একটা-দুটো। সকলেরই বয়স মোটামুটি ত্রিশের নিচে। জয়ন্ত, মানে এই আপিসের যে ম্যানেজার, তার বত্রিশ। সোয়া একটা বাজে, লাঞ্চটাইম শুরু। দু-একজন অ্যালুমিনিয়ামের মোড়ক থেকে স্যাণ্ডউইচ ছাড়াচ্ছে। একটা কাগজ হাতে জয়ন্তকে দেখা গেল কোণার দিকে আড়াল হয়ে থাকা জগৎশেখরের টেবিলটার দিকে যেতে।

জগৎশেখরের সঙ্গে এই আপিসের কারুর মিল নেই। ছাঁটাই অভিযান, বাধ্যতামূলক ভি-আর-এস -- গত কয়েক বছর চলতে থাকা সব ঝড়ঝাপটা কাটিয়ে কী করে যেন লোকটা টিকে আছে। অবশ্য রিটায়ার হতে আর মাত্র দেড় বছর। সব আপিসেই কিছু রুটিন কাজ থাকে, যা না করলেই নয়, কিন্তু আজকাল কেউ করতে চায় না। জগৎশেখর তা নিয়েই আছে। টেবিলে টিফিনবাটি খুলে জগৎ সবে খাওয়া শুরু করতে যাবে, এমন সময় জয়ন্তকে দেখে ধড়ফড় করে উঠে দাঁড়াল। জয়ন্ত একটু অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছিল, সেটা কাটাতে জগৎকে এড়িয়ে দৃষ্টি নামাতেই তার চোখ পড়ল একটা বাটিতে। সাদাসাদা-সবুজসবুজ মাখামাখা কী একটা রয়েছে। চোখ আটকে গেছিল দু-এক পল, তা দেখে জগৎ বলল – উচ্ছেসেদ্ধ স্যার। মানে স্যার, বছর দশেক আগে একটু লিভারের অসুখ হয়েছিল, ডাক্তার বলেছিল খেতে। প্রতিষেধক কিনা! তা সে কতদিন সেরে গেছে, গিন্নী কিন্তু ছাড়ে না। কতবার বলেছি না দিতে, তা সে শুনলে তো...

জয়ন্ত বলল – ওকে, আপনি খান। পরে দেখা যাবে।

নিজের কিউবিকলে এসে জয়ন্ত বুঝল, এখন আর কাজ হবে না। বেশ খিদে পেয়েছে। তার ওপর ওই সাদা-সবুজ ঘ্যাঁট মানে উচ্ছেসেদ্ধর বাটিটা ঘুরেফিরে মনে আসছে, জিনিসটা কিছুতেই মাথা থেকে নামছে না।

ফোনের বোতাম টিপল জয়ন্ত। অঞ্জলি। পাশের অফিসে কাজ করে। বছর দুই হলো বেশ স্টেডি চলছে দুজনের। তবে সম্পর্কটা কেমন যেন ত্রিশঙ্কু হয়ে পড়ছে, এরপর কোন্‌ দিকে ঢলবে, তা বলা শক্ত।

লাঞ্চে আসতে পারবে? ...পারবে। তাহলে পৌনে দুটোতে চলে এস... হ্যাঁ, হ্যাঁ, ওই আমাদের জায়গায়।

অঞ্জলির মনে হলো, জয়ন্তকে আজ একটু যেন অন্যরকম লাগছে। অঞ্জলি কতকটা ঠিকই আঁচ করেছিল, কারণ খাওয়ার পর বিলের অপেক্ষা করতে করতে জয়ন্ত বলল – অঞ্জু, ভাবছিলাম কী জানো, বিয়ে ব্যাপারটা খুব একটা খারাপ আইডিয়া নয়...

0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন