কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

মঙ্গলবার, ৮ মার্চ, ২০২২

দিলীপ ফৌজদার

 

চিত্রশিল্পী : পার্থ চট্টোপাধ্যায় 




দুসরি লহর

 

ধুলিধূসর

দিগবলয়ে পোঁতা আছে ঠিকানা ঠিকানা

এমনই মনে হয়

 

এদিকে তো মুখে মুখে

ছেপে গেল এই বার্তা সেই সঙ্গে

অন্দরমহলে ঢুকে গেল

দুসরি লহর

 

তখন এটাও মনে মনে হল

‘ম্যয় তঁ ফকির আদমী হুঁ জী

কিসি দিন ঝোলা উঠানে চল দুঙ্গা’।

 

যাব একদিন সব ছেড়েছুড়ে

দিগ্বলয়ে মুখ রেখে রেখে কোনো

একটা ঠিকানায়

যদিও সেখানে

পৌঁছানোর শিথিল ইচ্ছারা হাতে পায়ে স্থানু,

গতিহারা অদৃশ্য ফাঁদের ফাঁদে

 

এরকম ঠিকানা হারিয়ে যাওয়া

এ সময়

যে সময় বিশাল স্টেশনে

প্ল্যাটফর্মে ট্রেন

খাঁজে খাঁজে দিগন্তের বাস সারি সারি

উন্মুখ

একদিকে বহুমুখী হাতছানি

অন্যদিকে

অঙ্গে অঙ্গে ছড়িয়ে পড়েছে

বল্কলের লতাপাতা

কোথ্থাও নড়তে দিচ্ছে না

 

সব জানা ছিল

তাও এগুলোর কোনোটাই

প্রকৃ্তির লন্ডভন্ড করে রাখা দৃশ্যদের তুলনীয়

ছিলই না

এগুলোর কোনটা কি

ছিল?

 

গঙ্গায় মড়া ভাসানোর মত

নিরুপায়, প্রকৃত বিকল্পহীন

গঙ্গায় তো চিরকাল দেখে এসেছি

‘জলে ভেসে যায়

শব

কার শব?’

এসব দৃশ্য তো সে কবেই

চলে গিয়েছে এছাড়া গঙ্গাও তো আর

বারোমাস স্রোতস্বনা নয়

 

সেই সব দিনগুলো মৃত আজ

আজকের প্রশ্ন ছিল

কেউ কি দেখেছে এমনি দৃশ্যগুলি আগে?

যদিও সকলে মরে যাইনি এখনো

তাও এই প্রশ্ন চিহ্নগুলি স্বাভাবিক, দগদগে, মাথার

ওপরে চেপে মাতামাতি করে

 

ভরা কোটালের দিনই ধার্য করা ছিল হ্যারিকেন

দ্যাখো ছিল, দ্যাখো ছিলও তো না

পূর্ণিমা তো ছিলই, তাও পরিপূর্ণ গ্রহণে গ্রসিত

দুষ্ট গ্রহদের সমাগমে আজ

বুদ্ধ পূর্ণিমার রাত কলঙ্কিনী

 

সকলে যে একই দিনে একই ক্ষণে নেমে পড়বে

জানা ছিল?

কিছু কিছু জানা ছিল

জ্ঞান, যন্ত্রপাতি আর ডিজিটালে নবকলেবরে

নতুন, বিভ্রান্ত এক সময়কে কাছে ডেকে

 

রেখা নাথ ক্রমাগত লিখে চলেছেনঃ

অক্সিজেন সিলিন্ডার

হাসপাতাল

সারি সারি মৃত্যুশয্যা

অগণ্য মৃত্যুসংকেতের আনাগোনা

চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলছি

শেষ পর্ব পর্যন্ত লিখুন

একটা দলিল থাক এই সময়ের

 

এদিকে আমার পাড়াও

দুঃসংবাদে ভরপুর

পরিচিত জনারণ্যে

টেলিফোনে খবর নিতেও ভয়

 

দিগবলয় ভেদ করে অন্য ঠিকানায়

পৌঁছে গিয়েছেন স্বদেশরঞ্জন।

প্রকৃতই একা একা

এমনই তাঁহার মত

 

কত গাছ মহীরুহ পড়ে যায় এত গাছ ছাঁটার

পরেও

 

বিপুলাস্যা পৃথ্বী

এরকম একযোগে সর্বস্বান্ত

ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে এটা কল্পনাতেও ছিল না

 

ঘরে ফিরব

এমনই দিকভ্রান্ত হট্টরোলে

ঘরের ভেতরে লোনাজল

সব মিলেমিশে একাকার তাও

সকলেই প্রাণপণ ঠেকিয়ে ঠেকিয়ে

ঝড় ঝাপটা যেভাবে কাটায় ঠিক সেই ভাবেই

সেই ভাবেই

সাইক্লোন, কোটাল আর জ্যোৎস্না মেশা বন্যাজল

নিত্য বছরের

বিদ্যুৎলতার আলো মুহূর্তের

 

প্রবাসে দানাপানি অকস্মাৎ

চিন্তনীয় আশ্বাসের দুরন্ত অভাবে

শুকিয়ে ফুরিয়ে এলে

তাও থাকে

ঘরে ফিরবার এই দীর্ঘ পথ

হাজার যোজন তবুও

চেনাশোনা

আশ্বাস ও টানটান জেদী দৃঢ় বাঁচার উপায়

আঁকড়ে

(দ্বিতীয় ওয়েভে সমগ্র মানব জাতির দুর্দশা, মৃত্যু, শোক ও যন্ত্রণা বিশ্বকে   আমূল কাঁপিয়ে দিয়ে গেছে। এই দ্বিতীয় ওয়েভেই আমাদের বহু আপনার জন চিরতরে হারিয়ে গেছে, অশোক তাঁতীও।)

 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন