কালিমাটি অনলাইন

ত্রয়োদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১৩৭

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

ত্রয়োদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১৩৭

শুক্রবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৫

সুকান্ত পাল

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১৪২


মুক্ত পাখি

টুপ করে পুকুরে উপর ঝুঁকে থাকা নাম না জানা গাছটা থেকে একটা পাকা ছোট ফল পড়ে যেতেই পতনের বিন্দু থেকে জলের উচ্ছ্বাস গোলাকার হয়ে ছোট ছোট বৃত্ত থেকে বড়ো বৃত্ত হয়ে ছড়িয়ে পড়লেও তা পাড় পর্যন্ত পৌঁছতে পারল না। তার আগেই স্থির জলের সঙ্গে মিশে গিয়ে নিজেরাও স্থির হয়ে যায়। কিছুক্ষণ একটুখানি ভেসে থেকে ফলটা ধীরে ধীরে তলিয়ে যায়।‌ ওখানেই পাঁকের সঙ্গে মিশে গিয়ে একদিন ফলটাও পাঁকের পরিমাণ যৎকিঞ্চিৎ হলেও বাড়িয়ে তুলবে। কেউ না, শুধু বৃক্ষমাতাই জানল তার শরীর থেকে জন্ম দেওয়া ফলটা তাকে ছেড়ে চিরদিনের মতো হারিয়ে গেল। মিশে গেল এই পৃথিবীর শরীরের সঙ্গে।

অনেকদিন পর অনন্যা শহর থেকে দূরে এই গ্রামে তার মামার বাড়িতে এলো। বেশ কিছুদিন ধরে তার দুচোখ থেকে ঘুম চুরি হয়ে গেছে। শেষ রাতের দিকে একটু ঘুমিয়ে পড়লেও ভোরবেলাতেই তার ঘুম ভেঙে যাওয়াতে সে বেরিয়ে পড়ল তার ছোটবেলার দেখা গ্রামটা একটু ঘুরে দেখার জন্য।

ছোটবেলায় পূজোর সময় মামার বাড়ি আসলে বড়োমামা তাকে ভোরবেলায় ঘুম ভাঙিয়ে নিয়ে যেত নদীর কাছে। ঘাসের উপর বিন্দু বিন্দু রূপোলি শিশির কণার উপর সূর্যের আলো পড়ে হীরক কুচির মতো জ্বল জ্বল করত। শরতের ছেঁড়া মেঘের নিচে কাশফুলের কানাকানি বেশ লাগত তার। সেসব দিনের কথা ভীষণ মনে পড়ছে আজ।

একটু আগে পুকুরের বুকে ঝরে পড়া ফলটার কথা মনে হতেই তার বুকের মধ্যে একটা চিনচিনে ব্যথা সে অনুভব করছে। হঠাৎ করে ঐ ফলটার পতনের মতোই দুমাস আগে তার ফোনেও টুং করে একটি মেসেজ ঝরে পড়েছিল।

অদ্রীশ বলেছিল, আমার পাশপোর্ট ভিসা হয়ে গেছে। সামনের শনিবার ফ্লাইট।

--তুমি আমার কথা শুনলে না। তোমার বাড়িতে জানালে না, আমাকেও জানাতে দিলে না।

--ওটা কোনো ব্যাপারই না। আমরা দুজনেই প্রাপ্তবয়স্ক, আমাদের ইচ্ছার উপরে কেউ হস্তক্ষেপ করতে পারে না। আর করলেও তা মানব কেন? আমরা দুজন দুজনকে যে ভালোবাসি - এর মধ্যে তো কোনো মিথ্যে নেই!

--আমি অস্বীকার করি না। কিন্তু আমার শরীরে যে বীজ তুমি বপন করলে আজ, তার কী হবে? এই কারণেই বলেছিলাম আমাদের রেজিস্ট্রিটা হয়ে যাক, তাহলে দুজনেই একসঙ্গে যেতে পারি।

--কী করব বলো, কোম্পানির অর্ডার। আমি তো ছ'মাস পর ফিরেই আসছি। তখন সব কিছু ঠিকঠাক  করে তোমাকে নিয়ে যাবো।

এরপর অনন্যা আর কথা বাড়ায়নি।

দুমাস আগে একটি অচেনা ফোন থেকে তার হোয়াটসঅ্যাপে যে মেসেজটি এসেছিল তার তীব্রতা এতো বেশি ছিল যে তার সেলফোনের প্রাণ থাকলে হয়তো আর্তনাদ করে উঠত। তাতে লেখা ছিল, হাই অনন্যা, হেয়ার ইজ এমিলি। আই অ্যান্ড অড্রীশ আর ভেরি হ্যাপি...


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন