ইটাভাট্টার একদিন প্রতিদিন - দ্বিতীয় পর্ব
পানের দাম যখন আটআনা ছিল
হরিপাঁড়ের পানের দোকানে, এক খদ্দের এসে একটা জর্দা
পান দিতে বলল, তারপর শুরু হল তার পানের মসলার ফিরিস্তি-
-বেগার কত্থা, তিনশ, বত্তিস, চৌঁযট, বাবা
একসো বিস, একসো যাট, ছেসো, তুলসী
-হাঁ
চমনবাহার লখনৌই
-এক
লন আউর ইলাচি ভী ডাল দিজিয়েগা
এতটা শোনার পর হরিপাঁড়ে
চর্ট করে উঠে দাঁড়িয়ে ধুতিটাকে কোমর পর্যন্ত তুলে নিয়ে বলল,
-অব আঠি আনা মে ইহো কাম পুরা করলো
কতটা দিয়ে কতটা চাওয়া
যায় এই পরিমিতি বোধ আমাদের সকলেরই অল্পবিস্তর কম। ইঁটাভাটার ছবি তুলতে গিয়ে কর্মকর্তারা
অনুমতি দিতে একটু কিন্তু কিন্তু করছিল। আমরা বুঝিয়ে সুঝিয়ে রাজি করালাম।
কিছুক্ষণ ছবি তোলার পর একজন নব্য ফটোগ্রাফার ওই মাথায় ইটের বোঝা নিয়ে যে কামিনরা যাচ্ছে, তাদেরকে দাঁড় করিয়ে মনের মত করে ছবি তোলার জন্য মানিকদা স্টাইলে ডিরেকশন দেওয়া শুরু করলো।
এক কর্মকর্তা তেড়ে এলো
।
-ভাগতা কি নহি ইঁহাসে ভোঁসড়িকে!
বুড়ো ফটোগ্রাফাররা কোনক্রমে
বুঝিয়ে সুজিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিল।
ছেলে বুড়ো জোয়ানের এই সঙ্গবদ্ধ মাটির পাহাড় নিয়ে অনর্গল যুদ্ধ প্রতিমুহূর্তে নতুন ছবি তৈরি করে দিচ্ছে।
মানুষের দ্রুত ছোটাছুটি
মাটির ঝড় তুলছে, দৃশ্যপট বদলে যাচ্ছে।
কখনো গাঢ়
লাল মাটির ধোঁয়ায় মানুষ হারিয়ে যাচ্ছে, কখনো সে ধোঁয়া একটু পাতলা
হলে অস্পষ্ট ছবি ফুটে
যা দেখছো সবই ছবি কখনো সেজানের ঘোলাটে জলরং কখনোবা ডুরারের প্রায় মুর্ত বাস্তবের জলছবি।ছবির আড়ালে মানুষগুলোর শরীরে কি হয়ে যাচ্ছে কেউ জানতে পারছে না। আর জানলেই বা কি। আনরগানাইজড সেক্টরের শ্রমিকদের শরীর স্বাস্থ্য নিয়ে কেই বা ভাবে। শুধু কি শরীর স্বাস্থ্য।
ছোট ছোট কাচ্চা বাচ্চার পরিচর্যা, শিক্ষার কথা তো বাদই দিলাম। মাকেই সময় বার করে দুটো চাল ফুটিয়ে দিয়ে যেতে হয়। সে সময় বাচ্চা কিছুক্ষণের জন্য হয়তো মাকে পায়।
বাকি সময়ে লাওয়ারিশ হয়ে ওই ইট মাটি ধুলোর মধ্যে শৈশবের সারল্যে ছুটে বেড়াচ্ছে।
কচি বয়সের মেয়েগুলো যখন ওই ইটের বোঝা মাথায় নিয়ে ছুটছে দেখে কিছুটা বিহ্বল হয়ে পড়েছিলাম।
ওই ইট ভাট্টার কারবার যারা চালাচ্ছেন তারাও এক কঠিন সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে চলছে। কারবারের সংগ্রামটা যারা পরিচিত নয় তারা হয়তো জানবেননা প্রতিদিন প্রতিনিয়ত এই ধরনের কারবারিদের কি ধরনের সংগ্রাম করতে হয়। বহু কাঠখড় পুড়িয়ে এক প্রস্থ জমিতে চুল্লিও চিমনি বানিয়ে ধান্দা শুরু হলো। স্থানীয় রাজনৈতিক পার্টির চাঁদা, পুজোপারবনে ছেলে চোকরার চাঁদা, এ অঞ্চলে আবার মাওবাদীদের লেভি। এর চেয়ে ভয়ংকর সরকারি সন্ত্রাস। কখনো পলিউশন কন্ট্রোল বোর্ড কখনো আবগারি হানা। এখন আবার জিএসটির উৎপাত। EPFO আর ESI এর মাসোহারা। কাল যদি ধান্দা বন্ধ করে দেন এই সরকারি হানাদারি অফিসগুলোর থেকে নিজের কারবারের নামটা সরানোর জন্য বিশাল দক্ষিণা দিতে হবে।
নিজের সফটওয়্যার কোম্পানি চালাতে গিয়ে বুঝেছি কত ব্যথা।
Jharkhand Mines and
Minerals (Development and Regulation) Act অনুযায়ী সম্ভবত এই ধরনের ভাটা গুলো সবই
এখন বেআইনি হয়ে গেছে। মানে আরো একটি সরকারি
হপ্তা উসুলি। যে কোনদিন কারবার লাটে উঠতে পারে। খেটে খাওয়া মানুষগুলো যা পাচ্ছে
সেগুলো হয়তো বন্ধ হয়ে যাবে।
ইটা ভাট্টার টার মানুষগুলো অতশত জানেনা। মাথা নিচু করে প্রাণান্তকর পরিশ্রম প্রতিদিন চালিয়ে যাও। ওই লাল মাটির ধুলোর পাহাড়ে একটু একটু করে শরীর ক্ষয় করে এক সময় ওই বুড়ির চেহারায় এক অন্ধকার কুঠুরিতে লাঠিতে ভর করে বসে থাকা। উৎসাহী ফটোগ্রাফাররা তাকেও ছাড়ে না।
-
ও মাসি টুকু লান্ধা।
-
জীবনযুদ্ধে বিধ্বস্ত হয়ে মাসিকে একটু হাসতে হবে। ফটোগ্রাফাররা ছবি তুলবে। মাসির মুখের বিহ্বল অভিব্যক্তিটা হাসি না কান্নার!
কভু আশীবিষে, দংশেনি যারে!!
কম বয়সে যখন লাল রাজনীতি করতাম তখন এই সমাধান গুলো খুব সহজ ছিল।সত্তরের দশকের সশস্ত্র সংগ্রাম - আর তো মোট কটা দিন কটা বছর। শ্রেণী সংগ্রাম চলছে। সুদিন কয়েক বছরের মধ্যেই আসছে। আপাতত সংগ্রামী অভিনন্দন।
স্বপ্ন ভঙ্গ হতে বেশিদিন
সময় লাগেনি। ১৯৭২ আসতেই স্বপ্নভঙ্গের দেওয়াল
লিখন দেখা গেল
বোকাচোদা জনগণ
রইলো তোদের আন্দোলন
চললাম আমরা বৃন্দাবন
কিছু মানুষের বিদ্রোহী বিক্ষোভ নতুন রাস্তা খুঁজে নিল গান, নাটক আর এনজিও ভিত্তিক কর্মকাণ্ডে। প্রতিবাদের নতুন ক্যানভাস খুঁজে নিলো।
প্রতিবাদী মানুষ নিত্য নুতন রাস্তা খুঁজে নিচ্ছে। নতুন সুপারম্যান সিনেমা (২০২৫) অনলাইনে তীব্র বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। শক্তিশালী বোরাভিয়া এবং দুর্বল জারহানপুরের মধ্যে কাল্পনিক সংঘাতকে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের প্রতীক হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন অনেকেই। গাজায় ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডের সাথে সাদৃশ্য দেখেছেন। অভিযোগ উঠেছে পরিচালক জেমস গান "ইসরায়েল-বিরোধী" এবং ফিলিস্তিনি-পন্থী। বেসামরিক নাগরিকদের উপর বোরাভিয়া বোমা হামলা চালাচ্ছে যা গাজার বাস্তব চিত্র। ফিলিস্তিনি-পন্থী কণ্ঠস্বর থেকে প্রশংসা এবং অন্যদের কাছ থেকে বয়কটের আহ্বান। অনলাইনে সিনেমাটি একটা সাংস্কৃতিক আলোড়ন হয়ে তুলেছে।
https://youtu.be/s-rawt1LHWs?si=488f66GqDSGh-RHn অনুরাগ কাশ্যপ চোক্ড ছবিটিকে নোটবন্দির প্রতীকী প্রতিবাদ বলা যেতে পারে। The Politics of CHOKED: India & Her Government(https://youtu.be/zFkVNGDOClM?si=I99GMuvziUvy30mf)
মানুষের অন্তহীন উদ্ভাবনী প্রতিভা প্রতিবাদের শৈল্পিক অভিব্যাক্তি নিয়ে আসছে।
নিজের অক্ষমতা আর হতাশা একসময় শক্তির কাব্যে চোখে মনে বুড়ো বয়সের ঢূুলুনি নিয়ে আসে
ব্যথার
মাঝে ঘুমিয়ে পড়ি আমি।












0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন