কালিমাটি অনলাইন

ত্রয়োদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১৩৭

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

ত্রয়োদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১৩৭

শুক্রবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৫

সুপর্ণা বোস

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১৪২


রবীন্দ্রনাথের গাড়ি

রাস্তার বাঁদিক ঘেঁষে গাড়িটা দাঁড় করিয়ে বরুণ বলল, রাস্তা ক্রস করে চলে যাও। পাশে নিউ মার্কেট।  কেনাকাটা হয়ে গেলে ফোন করো। পিক করে নেবো।

মেঘা বাধ‍্য বালিকার মত ঘাড় নেড়ে গাড়ি থেকে নেমে পড়ল। বরুণ রিয়র মিররে দেখল, মেঘা টিয়াপাখি রঙের শাড়ির আঁচল সামলে রাস্তা পার হওয়ার অপেক্ষায়। কানের পাশে দু’তিনটে ফুলপাতা সমেত ছোট্ট একটা বেলফুলের ডাল গুঁজে রেখেছে খোঁপায়। তার গন্ধ এখনো গাড়ির মধ‍্যে ম-ম করছে। মফস্বলে বড় হওয়া মেঘা কলকাতার এই সদাব্যস্ত পথঘাটে খুব একটা স্বচ্ছন্দ নয়। বরুণ জানে, তাই পাখি-পড়া করে বুঝিয়ে দেয়। তাছাড়া বিয়েটাও আনকোরা! হানিমুন ফেজ কাটেনি।

নিউ মার্কেটের ভিতরে ঢুকে টুকটাক কেনাকাটা করতে ঘন্টাখানেক পার হয়ে গেল মেঘার। ফেরার পথে  শ্রীরাম আর্কেডের সামনে একটু দাঁড়িয়ে পড়ল। বড্ড ঘাম হয়েছে শরীরে। খোলা দরজা দিয়ে আছড়ে পড়া এসির ঠান্ডাটা যেন ভেতরে টানছে। মেঘা সেই স্বস্তিটুকু নিতেই যেন ঢুকে পড়ল ভিতরে। এখানে যদিও তেমন কিছুই পছন্দ হলো না। জরি চুমকি লাগানো ঘাঘরা বা সালোয়ার স‍্যুট সে পরে না।

বেরোতেই যাবে, বরুণের ফোন - দশ-মিনিটের মধ্যে আসছি! তোমার কি কেনাকাটা হয়ে গেছে?

মেঘা সম্মতি জানালো। বেরিয়ে ডানদিকে কিছুটা পা চালিয়ে এগোতেই গাড়িটা দেখতে পেল। ঘনসবুজ রঙের স‍্যান্ট্রো। মেঘা যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো। এইটুকু সময়েই সে ঘেমেনেয়ে একসা। মেঘা দ্রুত এগিয়ে গেল গাড়ির দিকে। দরজা খুলে বসতে গিয়ে দেখে ড্রাইভারের সিটে অন্য একজন ভদ্রলোক অবাক চোখে তাকিয়ে আছেন। মেঘাও ততোধিক বিস্মিত আর বিব্রত। অপ্রতিভ ভাবে বলে উঠলো, সরি আমি আসলে...

-ইটস ওকে ম‍্যাম। নো প্রবলেম।

মেঘা মাথা ঘোরাতেই দেখল বরুণ গাড়িতে বসে হর্ণ দিচ্ছে! গলদঘর্ম মেঘা তৎক্ষণাৎ গাড়ির দরজা খুলে  বরুণের পাশে বসে পড়ে হাতের প‍্যাকেটগুলো পিছনের সিটে রেখে সিটবেল্ট বাঁধল। বরুণ গাড়িতে স্টার্ট দিয়ে বলল, আমি তো দেখলাম আমার বউ অন্য কার যেন গাড়িতে উঠে পড়ছে!

মেঘা লজ্জা পেয়ে বলল, আসলে, খেয়াল করিনি! গাড়ি তো সেই একই রং, একই মডেল...

-যাহ্ বাবা! নাম্বার দেখবে না?

-নাম্বার? মেঘা অন‍্যমনস্কভাবে বলে।

-হ্যাঁ নাম্বার! যেন আকাশ থেকে পড়লে? নিজের গাড়ির নাম্বার জানো না?

-জানি তো! ডব্লিউ বি এ ৮৬৮৯।

বরুণ অবাক হয়ে বলে, এটা কার গাড়ির নাম্বার? তোমার কোনো প্রেমিকের নাকি?

-প্রেমিকই তো! জন্ম জন্মান্তরের প্রেমিক।

বরুণ বলে, ওরে বাবা! যে-সে প্রেমিক নয়! জন্ম জন্মান্তরের প্রেমিক? হায়! আমি শেষে কাবাব মে হাড্ডি হলাম?

বরুণের মুখের ভঙ্গি দেখে হেসে ওঠে মেঘা, আহারে কী দুঃখ! ওই নম্বরটা আসলে রবিঠাকুরের গাড়ির! হ‍্যাম্বার সেডান। উনিশ’শ তেত্রিশে কেনা।

 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন