কালিমাটি অনলাইন

ত্রয়োদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১৩৭

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

ত্রয়োদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১৩৭

শুক্রবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৫

সৈয়দ মাজহারুল পারভেজ

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১৪২


মধ্যরাতের ফোন

সামনে বইমেলা। লেখালেখি নিয়ে খুব ব্যস্ত। রাত জেগে লিখতে হচ্ছে। লেখা পাঠানোর জন্যে প্রকাশকদের ফোন আসছে। যখন লিখি তখন লেখার মধ্যে ডুবে যাই। অন্যদিকে মন থাকে না। সেলফোনের কথাও মনে থাকে না।

আমি লিখছি, স্ত্রী পূরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের খাতা দেখায় ব্যস্ত; সেলফোনটা পাশের রুমে। রাত তখন একটা হবে। পাশের রুমে সেলফোনটা অনেকক্ষণ ধরে বাজছে। অবাক হলাম না। এ সময়ে আমার প্রচুর কল আসে। পূরবী গিয়ে ফোনটা ধরলো। আমার আগেই বলা ছিল, খুব জরুরি ফোন না হলে আমাকে না দিতে। ফোনে  কথা বলে পূরবী আমার কাছে এলো।

আমি জিজ্ঞেস করলাম: কার ফোন?

পূরবী বলল: তোমার এক বন্ধু ফোন করেছিল।

- কী নাম?

- কী যেন নাম বলল কায়সার হামিদ না হামিদ কায়সার!

- কেন ফোন করেছিল?

- বলল, এই মাঝরাতে তোমার সাথে গল্প করতে ওনার খুব ইচ্ছে করছে।

- তুমি কী বললে?

- উনি লেখায় ব্যস্ত আছেন, কাল সকালে ফোন করতে।

- কী করেছো তুমি!

- কেন? তুমিই তো বলেছিলে জরুরি ফোন না হলে তোমাকে না দিতে।

- হায় আল্লাহ! এরচেয়ে জরুরি ফোন যে আমার জীবনে আর নেই সে কথাটা আমি তোমাকে কী করে বোঝাবো! ও আমার ছেলেবেলার বন্ধু, বলতে পারো জীবনের সেরাবন্ধু। কতদিন ধরে ওর ফোন নাম্বার খুঁজছি। ওর সাথে কথা বলার জন্যে আমি সেই কবে থেকে মুখিয়ে আছি।

- ভালকথা, এখন তো উনি জেগেই আছেন, তুমি ফোন করে কথা বলো।

পুরবীর কথাটা পছন্দ হলো। হাতের লেখাটা অসমাপ্ত রেখে ফোন করলাম। ফোন সুইসড অফ। আবার ফোন করলাম। একই উত্তর, দিস নাম্বার ইজ নট এ্যাবেলএ্যাবল নাও, প্লিজ ট্রাই লেটার’।

রাতে ভালো করে ঘুমোতে পারলাম না! কেন ফোন করেছিল, সুপ্ত? কী কথা বলতে চেয়েছিল? ওকে বলার জন্যে কত কথা জমে আছে বুকের ভেতর। নাম্বার যখন পাওয়া গেছে আর অসুবিধে নেই। সকালেই কথা বলা যাবে।

অনেক রাতে ঘুমাতে যাবার কারণে সকালে দেরিতে ঘুম থেকে ওঠার অভ্যেস। ছ’টার দিকে সেলফোনটা বাজতে থাকলো। এত সকালে কেউ ফোন করলে আমি খুব বিরক্ত হই। ঘুমের মধ্যেই ফোন ধরলাম।

- হ্যালো, আমি পাভেল বলছি। খবর শুনেছিস?

- কী খবর?

- কাল রাত তিনটের দিকে সুপ্ত মারা গেছে।

এক ঝটকায় উঠে বসলাম। সারা শরীর কাঁপতে থাকলো। কে যেন বুকের ওপর একখানা দশ টনের পাথর চাপিয়ে দিল। নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে আমার। সুপ্ত মানে আমার বেস্টফ্রেন্ড হামিদ কায়সার। যে কাল রাতও আমাকে ফোন করেছিল। আমার কথা বলতে খুব কষ্ট হলো। তবু মিইয়ে স্বরে জিজ্ঞেস করলাম : কীভাবে?

- হার্ট-এ্যাটাক।

হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হতে থাকলো - তীব্র থেকে তীব্রতর!


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন