কালিমাটির ঝুরোগল্প ১২১ |
বরষার সুর
'গঙ্গা ভাসলে ঘর ভাসবে'
'এ আর নতুন কথা কী'
'বৃষ্টি হচ্ছে না, বৃষ্টি হচ্ছে
না বলে তো হেদিয়ে মরছিলে'
'বৃষ্টি না হলে চাষ আবাদ হবে না'
'তাতে তোমার চোদ্দো গুষ্টির কী?'
'ধানের জমিতে জল না দাঁড়ালে ধান
রোয়া যাবে না কুসি'
'উফফ, এখানে তোমার ধান জমির স্বপ্ন
যে কেন দ্যাখো?’
'এককালে যা আমার ছিল, তা কি স্বপ্ন?'
'ওটা গত জম্মের মনে করলেই তো ল্যাটা
চুকে যায়'
'তোর মুখটা বড়ো খারাপ হয়ে গেছে
রে কুসি'
'আমার মুখ কোনো কালেই ভালো ছিল
না গোঁসাই'
শ্রাবণের শেষের বৃষ্টি। গলিতে এখনই গোড়ালি অবধি জল। এবার জল ঘরে ঢুকবে।
'ও গোঁসাই, জমা পয়সা বের করো এবার' রুমকি হেসে হেসে বলে।
রুমকিকে কুসি দু চক্ষে দেখতে পারে
না।
'ওই হারামজাদী, তোর কোন কালের গোঁসাই
রে ও'
'আহা রাগ করো কেন কুসিদি? সম্পক্কে
তো শালীই হই'
রুমকিকে মনে মনে গালি দেয় কুসি। রুমকির ধবধবে ফর্সা রঙকে বড়ো হিংসে করে কুসি। নিজের চকচকে কালো মুখটা হাত দিয়ে ঘষতে থাকে।
রতন গ্রামে ফেরার জন্য মাথা কুটে
মরে। গ্রামও বানভাসি হয়। গোয়াল, ঘর, জমি জিরেত ভাসে। সাপ, মানুষ, গরু, ছাগল ভেসে
যায়। তবু যেন সেও এর থেকে ভালো। এতো পচাগলা, গা ঘিনঘিনে নয়।
'খিল্লি না করে, গ্যারেজে যাও।
দ্যাখো, মাইনেটা দেয় কী, আমিও আজ কাজে বের হই।'
রুমকির দিকে হিসহিসানি দৃষ্টি দিয়ে
বের হয় কুসি।
রুমকিও মুচকি হেসে ঘরে ঢোকে। রতনের
আজকাল গোঁসাই ডাক শুনলেই বমি পায়।
রতন হাঁটু পর্যন্ত প্যান্ট গোটায়।
শার্ট পড়ে। দুটো একশ টাকার নোট নেয়। স্টেশনে যায়। মেদিনীপুরের টিকিট কাটে। অপেক্ষা
করে ট্রেনের।
রতন ফেরেনি ঘরে। চারদিক ঝাপসা করে
বৃষ্টি নেমেছে। উশখুশ করতে করতে রতনকে ফোন করে কুসি। বেজে বেজে থেমে যায় ফোন।
'কোথায় গেল লোকটা!'
সারারাত বৃষ্টি শেষে ভোর হয়। কুসিদের ঘরে জল থইথই।
কুসি চৌকিতে বসে দ্যাখে, রুমকি
আসছে, হাঁটু জল ভেঙে। সব রাগ পড়ে রুমকির ওপর।
চিৎকার করে বলে, 'এই অনাছিস্টি
বিষ্টিতে সারারাত ছিলিস কোথায় রে?'
রুমকি ক্লান্ত হেসে বলে, 'জানোই
তো, এরপর তো আর কদিন বের হতেই পারব না। আমাকে হিংসা কোরো না কুসিদিদি। তোমার তো একটাই
গোঁসাই গো। আমার যে অনেক অনেক গোঁসাই। তারা তোমার গোঁসাইয়ের মতো ওরকম সুরে তো গায়
না। সব বেসুরো।'
কুসির হঠাৎ কান্না পায়। রতন না
রুমকি, কার জন্য জানে না।
রতন তখন তার বিক্রি করে দেওয়া
ধানজমির কাছে দাঁড়িয়ে দেখছে, জলে থৈ থৈ করছে তার ধানের ক্ষেত।
অসাধারণ একটি লেখা
উত্তরমুছুন