কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

বুধবার, ১৬ আগস্ট, ২০২৩

জয়িতা ভট্টাচার্য

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১২১


খাপছাড়া

তৈরী হয়ে বেরোতে বেরোতেই কত রাত। সেই রাতের মধ্যে বেরিয়ে দেখা গেল আরও রাত গোঁজা। যেমন কালোরাস্তার মাঝ-বরাবর কালোবেড়াল, জ্যোৎস্নার আলোয় ভিজে লক্ষ্মীপ্যাঁচা। এসব নিয়ে কাব্যনাট্য লেখালিখি হয়। তবু খালি চোখে দেখতে গেলে প্রতিবার অবাক।

অনেক সময় ভদ্রভাবে বলা হয় কামনা কিম্বা ডিজায়ার। এরকম খাপে-খাপ রং জাগায় ওসব। ডিজায়ার কী? সোজা-কথায় ঠাপ। ঠাপের জন্য সব। ওই যাকে বলে প্রণয়। ভাতের জন্য যেমন তরকারি। তরকারির জন্য ভাত নয়।

বেরোতে দেরি হওয়ার ফলে আরও অন্ধকারে ঢুকে গেল ট্রেনটা। যেন খাটের তলায় ভ্রমণ। কত কী যে অন্ধকারে আবিষ্কার!  

এই একটা গ্রহ যার ভিত শুধু যৌনতা আর সন্ত্রাস। সেখানে খাপছাড়া কেউ কেউ শান্তি ছেটাতে গিয়ে অকালে খসে গেছে। খসবেই। কার এত সময় আছে এসব অলীক নিয়ে দেরি করার?

অলীক বলতে মনে হলো ‘ভাল’। ‘ভাল’ একটা এমন শব্দ যার একটা ছক ঠিক করা আছে সব সমাজে, পাড়ায়। সেই অনুযায়ী সকলে প্রাণপণ ওই ছকটা দেখাতে চায়। এমন বোকা অন্ধকার যে বোঝে বা  বোঝেই না যে মানুষের মন মানে শরীরের মধ্যে যে ওই ব্ল্যাকক্যাট রাতে, সেটা কখনোই ছকে ফেলা যাবে না। যা নয় তাই দেখাতে সারাদিন ব্যস্ত। বউ ভালোবাসি বলে ছটাছবি। ওগো মা তোমাকে ছাড়া জগতে বাঁচিতে চাহি না আর! অথচ যদ্দিন বেঁচে ছিল হয়ত সময়ই পায়নি দেখা করার। কতদিন এদিক ওদিক  বাসে উঠে কনুই ঠেকাচ্ছে বিপুল স্তনে পত্নীপ্রেমে। চুপ করবে না। ওই যে, যেতে হবে টর্চ জ্বেলে চাঁদের আলোয়। ছকে থাকা নিরাপদ। আমাদের মন্দিরগুলো তো সব সেন্সার বোর্ড নিষিদ্ধ করে দেবে এরপর। যা যা স্বাভাবিক, সব বারণ।

এভাবে দেরিতে শুরু হলে পৌঁছতে আরো কতদিন টপকাতে হবে, কে জানে! ততক্ষণ চলবে চলা। ট্রেন।

এসব ভাবতে ভাবতে জানলার ধারে বসে নড়েবালা বিড়ি ধরাবে গুটিসুটি বসা বনমালীর থেকে আগুন নিয়ে।

গুষ্টির গ্রাম ঝেঁটিয়ে সব আলো না ফুটতেই ছুটবে শহরে। ভুসভুস করে ধোঁয়া ছাড়ে নড়েবালা। বড়নোকদের দেকলি গা জ্বলে। শহর মানে বাজার। নিজের মতো করে শ্রেণীবিভাজন করে নিয়েছে নড়েবালা। বড়নোক  মানে হাপু। লোমশ পা হাপপ্যান্ট, ডাগর ভুড়ি। সঙ্গে সঙ্গে দাম ডবল। মাঝারি নোকরা পুরো প্যান্ট আর তার পরেররা লুঙ্গি পাজামা। এদের সঙ্গে চাট্টি গপ্প হয় সুক দুকের। এজন্য বনমালী পেরায় তাকে  ইন্টেলিজেন্ট বলে। এখানে ঘড়ি বলে কিছু নেই। একসময় একটা মাটির স্টেশনে হাল্কা দাঁড়াবে ট্রেন। চাঁদের আলোয় নামবে নড়েবালা। দ্বিতীয় বিড়িটা প্লাস্টিকের চটিতে পিষে। চাদ্ধার দেখে নেবে। তারপর বিরাট সাদা ডানা দুটো মেলে বোঁ করে এক চক্কর দিয়ে উড়ে যাবে মরা নদীর ধারের অশত্থের ডালে। প্রথমেই পচ করে হাগবে ঘুমন্ত কাকেদের ওপর। তারপর নিজের বাসার ভেতর আয়েস করে খাবে। আর পাশ ফিরে ঘুমোবে। ট্রেন চলছে আকাশের পথ ধরে।


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন