কবিতার কালিমাটি ১৩১ |
ঢেকে নেয় হিমঋতু
ধুলোর
একটা গন্ধ থাকে, মাটির একটা গন্ধ থাকে
হারানো
শৈশবের মতো — নিভৃত নিরুচ্চার।
বৃষ্টি
শেষ হলে যেমন শূন্য হয়ে আসে মেঘ
তেমনই
কথারা শেষ হয়ে আসে যখন
দর্পণে
প্রতিবিম্বিত ছায়া সরে সরে যায়
বছর
মাস সপ্তাহ দিন পার হয়ে আমাদের
ক্ষণমুহূর্তগুলি
স্মৃতি হয়ে ঘুমিয়ে থাকে প্রগাঢ় সত্তায়।
সেখানে
পলি জমে পরতে পরতে, হেমন্তের ফসলের
গান
নেই কোন। আমরা কি পরাজিত হই নাকি
অন্ধকার
সুড়ঙ্গের শেষে আলোর রেখার দিকে চোখ
রেখে
চলে যাই বহমান মৃত্যুর কাছে।
ধ্রুব
বলে সত্যি বলে শাশ্বত বলে কোনকিছু
যাচ্ঞা
করিনি কখনও অরণ্যের কাছে বা নদীর কাছে
পর্বত
বা ঝর্নার কাছে। এখানে মন্দ্রিত সময়
অলীক
অবয়বে ঢেকে নেয় হিমঋতু।
ধূসর মেঘের ইতিকথা
তোমার
সঙ্গে যেদিন শেষবার দেখা হয়েছিল
তারপর
থেকে কোন রক্তপাত ঘটেনি কোথাও
কিংবা
কোন অস্থিরতা ঝঞ্ঝা ও প্রলয়। শুধু অযুত
মৃত্যুর
হিমশীতলতা নিয়ে আমাদের বেঁচে থাকাগুলি
এক
গ্লানিময় সত্যের মতো। আমরা অপেক্ষা করি
দিন
থেকে রাত, রাত থেকে দিনের। তবু মধ্যযামে
কোন
নতুন ঘোষণা নেই আসন্ন সূর্যের। আমাদের
একরৈখিক
চলাচল বিপন্নতার দরজা খুলে উত্তুরে হাওয়াকে
ডেকে
নিতে ভয় পায়। গভীরতর নক্ষত্রের সংকেত হাওয়ার
ওপার
থেকে আগুনের খবর নিয়ে আসে। আমাদের জীবন
আন্দোলিত
হবে না ভেবে নদীর বুকে ভাসিয়ে দিয়েছি
ডানাগুলি।
সেইসব ভেসে যাওয়া ডানারা খুঁজে পাবে
তোমাকে
কোনদিন। ততদিনে নিঃশব্দ অরণ্য
প্রস্তুত
করে রাখে চকমকি — কিংবা এক বজ্রগর্ভ
আকাশ
তার চাঁদোয়ায় ভাসিয়ে রাখে ধূসর মেঘের ইতিকথা।
হত্যার আগে তুমি...
ওই
সব ঝড় তুফান তোমার রক্তগোলাপের লালের চেয়েও বেশি
সমুদ্র
ফেনার মতো নোনতা আর আষাঢ় মাসে বৃষ্টি নামলে
ডুবে
যায় পথ। পলাশের বন বলে কিছু ছিল কি কখনও।
নাকি
ওসব বানানো গল্প। হত্যার আগে তুমি মধুশালায়
ছড়িয়ে
দাও অলকানন্দার জল। কিন্তু কোন কিছুই শাশ্বত নয়
জেনে
গেছ তুমি। বিশ্বাস কর না বোধহয়। তোমার ঘুমচোখে
এসে
বসে মায়া, কবেকার বটের শিকড়। আজকাল পুরনো বাড়িগুলি
খুঁজতে
গিয়ে সেখানে জমে থাকা মায়ার পাহাড়ে হুমড়ি খেয়ে পড় আর
রক্ত
ডাকে। ডাকে আর নিভৃতে এক কবন্ধের মতো অন্ধকার জমে তোমার
অস্তিত্বের
অঙ্গীকারে। ফানুসের মতো দিন তুমি চিনতে চাও না আর।
মাথার
ভিতরে হত্যারা জেগে ওঠে। তুমি জান প্রয়োজন নেই কোন। তবু
তুমি
রক্ত মাখো আলোর কিংবা আঁধারের। তোমার বুকের মধ্যে ঘুমিয়ে থাকে
মায়া
কিংবা পরাগজল।
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন