প্রসঙ্গঃ তরুণ
মজুমদার ৪
ইতিমধ্যে মধ্য কলকাতার বাসস্থান ছেড়ে উঠে এসেছি লবণ হ্রদ/বিধাননগর/সল্ট লেকে আমাদের নিজেদের বাড়িতে। সেটা ১৯৭৬ সালের মাঝামাঝি।
এর
পরেই আস্তে-আস্তে উত্তর কলকাতার সিনেমা-হলগুলোতে যাওয়া শুরু করেছিলাম। ষাটের দশকে
রাধায় ‘বীরেশ্বর বিবেকানন্দ’ দেখা ছিল স্থানের দিক দিয়ে ব্যতিক্রমী, কারণ তখন
বাংলা ছবি দেখা হতো দক্ষিণের ভবানীপুর-কালিঘাট অঞ্চলে। আবার রাধায় এই সত্তরের
দ্বিতীয়ার্ধে দেখলাম ১৯৬৩ সালের ‘পলাতক’, যাতে ‘যাত্রিক’ নামের আড়ালে হেমন্তর
সঙ্গে প্রথম জুটি বেঁধেছিলেন তরুণ মজুমদার। গান পাগল করেছিল, তৃপ্ত করেছিল, কিন্তু
অনুপকুমার-অভিনীত মূল চরিত্রটির প্রতি খুব-একটা সহানুভূতি বোধ করিনি। তার
ক্ষ্যাপামির জন্যে মানসিকভাবে ক্ষত-বিক্ষত হয়েছে একের পর এক চরিত্র, ‘হরে’রূপিনী
সন্ধ্যা রায় থেকে যাত্রাদলের গোলাপ (অনুভা গুপ্ত) আর সনাতনের স্নেহময় দাদা-বৌদি
(অসিতবরণ-ভারতী দেবী) অবধি! তবে ‘জীবনপুরের পথিক রে ভাই’ আমার গলায় ধ্বনিত হয়েছে
প্রেসিডেন্সী কলেজে প্রমোদদা’র ক্যান্টিনে, তার হিন্দি রূপান্তরটি লক্ষ্নৌ-এর ‘মোতি
মহল’ ক্যাম্পাসে, এবং সবশেষে আবার বাংলা গানটি সাগরপারের অক্সফোর্ড শহরে এক
‘পাব’-এ!
১৯৮০-র
২৮শে নভেম্বর মুক্তি পায়, তারিখ অনুযায়ী, তৃতীয়, কিন্তু গুণের বিচারে ৭৩-এর
‘শ্রীমান পৃথ্বীরাজ’-এর সঙ্গে আমার সবচেয়ে প্রিয় বাংলা ছবি, তরুণ মজুমদারের ‘দাদার
কীর্তি’! বাবা-মা আর আমি দেখতে যাই লেক টাউনের জয়ায় প্রথমবার। দেখে মুগ্ধ, আপ্লুত
হয়ে স্থির করি আমার মাতৃসমা মাসীমাকে – যাঁর উৎসাহে আমরা সবাই প্রথম ‘বালিকা বধূ’
দেখি, এবং যিনি আমাদের সঙ্গে তারপর ‘শ্রীমান পৃথ্বীরাজ’ ও ‘ফুলেশ্বরী’, দুটিই
দেখেছেন, এবং অনেক আগে ‘একটুকু বাসা’ও – এ ছবি দেখাতেই হবে। মা আর আমি ছুটলাম
দক্ষিণ কলকাতার ভারতীতে তাঁকে নিয়ে। এরপর দাদার পালা। তিনি চাইলেন ‘বাঞ্ছারামের
বাগান’ দেখতে (এটি ততদিনে দেখা হয়ে গেছে আমার)। কিন্তু আমি জোর করলাম, এবং নিয়ে
চললাম শ্রদ্ধানন্দ পার্কের পাশে অরুণায় তাঁকে নিয়ে। এবার মুখ খুললেন বাবা, যিনি
১৯৭০-এ ‘এই করেছ ভাল’ নামক ছবিটি দেখে দেখে চরম বিরক্তি-সহকারে তাঁর জন্যে বাংলা
ছবির টিকিট আর না কাটার নিদান দিয়েছিলেন। “দিব্যি নিজেরা বারবার দেখছো তো ছবিটা!
আমাকে তো আরেকবার নিয়ে যাওয়া যায়, নাকি?” সেই তাঁকে নিয়ে অরুণায় চতুর্থ বার ‘দাদার
কীর্তি’! ততদিনে ১৯৮১ সাল পড়ে গেছে!
তরুণবাবুর ছবি দেখার মুখ্য আকর্ষণ হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর স্বর্ণজুটি। তাছাড়া কিশোর প্রেমের এমন রুচিসম্মত উপস্থাপন তাঁর মতো কেউ করতে পারেন না। ‘দাদার কীর্তি’তে এর ওপর কাহিনি ও চরিত্রবিন্যাসে গান, বিশেষ করে রবীন্দ্রসঙ্গীতের ব্যবহার, অভূতপূর্ব। স্বয়ং হেমন্ত ‘চরণ ধরিতে’ দিয়ে তরুণবাবু যে অলৌকিক মাধুর্য্য সৃষ্টি করতে চলেছেন তা বোঝেন নি। গানটির চিত্রায়নও ভাবুনঃ সঞ্চারীতে ‘তোমারই কাছেতে হারিয়া’ গাইছে সরলপ্রাণ কেদার (তাপস পাল), আর ক্যামেরা ঘুরে তাকাচ্ছে পিয়ানো-বাদনকারিনী সরস্বতীর (মহুয়া রায়চৌধুরী) দিকে। পূজা ও প্রেম যে এভাবে সমার্থক হয়ে যেতে পারে তা একনিষ্ঠ রবীন্দ্র-পূজারী ছাড়া এমন করে কে বোঝাবে? এই গান তো শুনে এসেছি রেকর্ডে আরও দ্রুত লয়ে পঙ্কজ মল্লিকের কণ্ঠে, ঈশ্বরের কাছে আত্মনিবেদনের গান হিসেবেই! হেমন্ত বলেছেন যে গানটি ‘শ্যামা’ গীতিনাট্যের বিকল্প রূপ ‘পরিশোধে’ শ্যামার মুখে শোনা যেত! ছবির শেষে সরস্বতীর দিক থেকে এই একই গান তার পূজামিশ্রিত প্রেম নিয়ে ফিরে আসবে কেদারের দিকে। কেদার তার নিজের অবচেতনে নিজেকে এই গানটির মাধ্যমে নিবেদন করেছিল সরস্বতীর কাছে। এবার সরস্বতী তার কেদারকে ভুল বোঝার প্রায়শ্চিত্ত হিসেবে নিজেকে নিবেদন করলো কেদারের কাছেঃ ‘নিজ হাতে তুমি গেঁথে নিও হার, ফেলো না আমারে ছড়ায়ে’! এখানে ‘ফুলেশ্বরী’র কথা মনে পড়েছিল, ঐ শেষ মুহূর্তে সব কিছু ঠিক হয়ে যাওয়ার ফর্মুলা ব্যবহারের জন্য। কিন্তু কীভাবে ভুল বোঝাবুঝি মিটল সেটা গানের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলায় ‘ফুলেশ্বরী’র মতো গোঁজামিল মনে হয় নি। এর একটু আগে, ভোম্বল ভটচাযের (অনুপকুমার) চক্রান্তে সরস্বতীর বিরাগভাজন হবার পর কেদারের মুখে ‘এই করেছ ভালো, নিঠুর হে’ শুনে মা চমৎকৃত হয়ে বলে উঠেছিলেন, “কী শিল্পসম্মত প্রয়োগ!” তারও আগে চিত্রাঙ্গদার বেশে সরস্বতীর মুখে ‘বঁধু, কোন আলো লাগলো চোখে’র মধ্য দিয়ে পরিচালক পরিস্ফুট করলেন কেদারের মনে অব্যক্ত ভক্তি-মেশানো প্রেমের জাগরণ, আবার কেদারের মাধ্যমে আপাত-কঠোর সরস্বতীর অন্তরে যে ভালোবাসার আলো পড়তে চলেছে, তারও ইঙ্গিত দিয়ে রাখলেন। ধন্য তরুণবাবু! এর অনেক পর ‘আলো’তে ‘শ্রাবণের ধারা মতো’ আর ‘যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন’, আর সাম্প্রতিক ‘ভালোবাসার বাড়ি’তে ‘মোর হৃদয়ের গোপন বিজন ঘরে’! আপনি স্বয়ং কবিগুরুর আশীর্বাদ-ধন্য।
অন্য
গানগুলিই বা কম কিসে? আমি তো মুগ্ধ হয়েছিলাম ‘এসো প্রাণ-ভরণ দৈন্য-হরণ হে’
উপাসনাসঙ্গীতটি শুনে! আবার, বসন্ত-উৎসবে ‘কী রূপে যে কখন আসো ওগো বসন্ত’! মাঝে
কাহিনিকার শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বরচিত ‘জনম অবধি’, যাতে কীর্তন, উচ্চাঙ্গ
সঙ্গীত, ভাটিয়ালী, পশ্চিমী আধুনিক – সব মিশিয়েছেন সুররত্নাকর হেমন্ত, আর কণ্ঠে রেখেছেন মান্না দেকে! আর
হৃদয়েশ পাণ্ডের হিন্দি-বাংলা মেশানো হোলি-দোলযাত্রার গানে বিহারী হিন্দিভাষীর কণ্ঠ
যে হেমন্তর তা তো রেকর্ড কেনার আগে বুঝতেই পারিনি! এই ছবির জন্যে শুনেছি হেমন্ত
পেয়েছিলেন ‘পঙ্কজ মল্লিক স্মৃতি পুরষ্কার’, যা তাঁর সুরসৃষ্টির প্রতি প্রাপ্য
সম্মানই প্রদর্শন করেছিল।
এক
কথায় নিস্পাপ সততা, সরলতার জয় আত্মম্ভরিতা আর অতি-চালাকির বিরুদ্ধে – ছবির কাহিনির
অন্যতম বক্তব্য বোধহয় এই। কেদারের নম্রতা, নিজের সম্বন্ধে বেশ খানিকটা হীনমন্যতা,
অন্যকে নির্দ্বিধায় বিশ্বাস করা, কারুর দ্বারা নির্যাতিত এবং প্রতারিত হয়েও তার
অমঙ্গল কামনা না করা, এবং ভালোবাসার মানুষ ভুল বুঝে কষ্ট দিলেও পূজা-মিশ্রিত
প্রেমে তাকে অভিবাদন – লিখতে-লিখতেই চোখে জল এসে যাচ্ছে!
আর
সরস্বতী আপামর যুবকের হৃদয়ে বাণ হেনেছিল, ব্যতিক্রম বোধহয় শুধু আমি! সরস্বতীর ছোট
বোন বিনি (দেবশ্রী
রায়) যখন জানলার মধ্যে দিয়ে চোখ তুলে তার হবু
স্বামীর (অয়ন বন্দ্যোপাধ্যায়) দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করছে, “তোমার শরীর ভালো আছে?”
তখন আমি পুরো কাৎ! দেবশ্রীর প্রেমে হাবুডুবু খেতে-খেতে এর পর তাঁর দেখা পাব অপর্ণা
সেনের 36 Chowringhee Lane ছবিতে! সেখানে তাঁর
ক্রিয়াকলাপ দেখে তো আমি ভগ্নহৃদয়! শেষে তরুণবাবুই আমার কষ্টের ‘মেঘমুক্তি’ ঘটাবেন।
সে কথা যথাস্থানে।
শুধু
একটা কথা মনে খটকা লাগায়! ১৯৮০তে ছবিটি মুক্তি পাবার সময় পোস্টারে দেখেছিলাম
‘জীবনে যখন প্রথম রামধনু ওঠে!’ কে এই কথা লিখেছিলেন এবং কেন, জানি না। এই একবিংশ
শতাব্দীতে বসে প্রশ্ন জাগে, এই উক্তির মধ্যে ভোম্বলের ক্রমাগত কেদারের পেছনে লাগা
এবং শেষ অবধি কেদারের কাছে নতিস্বীকারের কোন কারণের প্রতি ইঙ্গিত আছে কিনা!
১৯৮২তে
দেখা দুটি নতুন ছবিই তরুণ মজুমদারের। বছরের গোড়ায় মিনারে ‘মেঘমুক্তি’, যেখানে
দেবশ্রীকে দেখে (তিনি দ্বিতীয় নায়িকা, অয়ন বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিপরীতে) 36 Chowringhee Lane-এর ঘা সেরেছিল! মূল নায়ক-নায়িকা বিশ্বজিৎ-সন্ধ্যা
রায়, বিশ্বজিৎ-অভিনীত চরিত্রটির নাম ‘হেমন্তকুমার রায়’, তিনি পেশায় গায়ক! হেমন্ত
রায়ের মুখে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের চারখানা একক গান আর একটি সমবেত গান তখন মনে তেমন
দাগ না কাটলেও এখন শুনতে বেশ লাগে। তখন আমার ভালো লেগেছিল হেমন্ত রায়ের নিজের
বিয়ের বাসরে গাওয়া ‘তোমার মনের তুলসীতলায় আমার গানের প্রদীপ’। স্ত্রী সন্ধ্যা রায়
সন্তানসম্ভবা হবার পর স্বামী রেকর্ড করেন, ‘বলো খোকা নাকি খুকু, কে আসছে ও কোল
জুড়ি?/ কল্পলতার শাখায় ফুটছে সে কোন কুঁড়ি?’ আমার মা’র পছন্দ হয়েছিল এই গানটি।
কাহিনির আসল জটিলতা এবং মজা অবশ্য বিশ্বজিৎ-অয়নের দোর্দণ্ডপ্রতাপ বাবা, ভোজনরসিক উৎপল দত্তকে নিয়ে।
বছরের
দ্বিতীয়ার্ধে নতুন প্রেক্ষাগৃহ, লেক টাউনে জয়ার ঠিক পাশে মিনি-জয়াতে দেখলাম ‘খেলার
পুতুল’। প্রধান আকর্ষণ আমার কাছে ছিল হেমন্তকণ্ঠে অতুলপ্রসাদের গান। তখনো
‘ক্ষণিকের অতিথি’ (১৯৫৯) দেখার সুযোগ হয়নি, ‘চেনা অচেনা’ও (১৯৮৩) মুক্তি পায় নি।
হতাশ হলাম! ‘ক্রন্দসী পথচারিণী’ প্রথম অন্তরাতেই শেষ হয়ে গেল! পরে ক্যাসেটেও
দেখলাম অজ্ঞাত কারণে হেমন্ত প্রথম অন্তরার পর আভোগে চলে গেলেন, সঞ্চারী বাদ দিয়ে!
তবে প্রচলিত লোকগীতি ‘আমি বন্ধুর প্রেমাগুনে পোড়া’ (অরুন্ধতী-হেমন্ত), বা পুলক
বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা ‘আমার জীবন শুধু দুঃখেই গড়েছো’ (আরতি) খুবই সুন্দর।
ছবিটি
কিন্তু রূঢ়তা ও নির্যাতন প্রদর্শনের আধিক্যে ক্লান্তিকর এবং বিতৃষ্ণার উদ্রেক করে।
সন্ধ্যা রায়ের চরিত্রটি পদে-পদে লাঞ্ছিতাঃ প্রথমে তার বাবা বিয়েতে পণের টাকা না
দিতে পারায় হবু-শ্বশুর (কমল মিত্র, সম্ভবত তাঁর শেষ অভিনয়) ছেলেকে (সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়) বিয়ের আসর
থেকে তুলে নিয়ে যান। এরপর বোনের ওপর অত্যধিক-অধিকারবোধে-দুষ্ট ভাই
(অনুপকুমার) সেই স্বামী গ্রামে স্ত্রী-এর খোঁজে এলে, বোনকে মৃত ঘোষণা করে। পরে,
বোনের সুবিধার্থে ভাইয়ের বিয়ে দিলে, তার ফল হয় ভয়াবহ ও ন্যক্কারজনক। দুর্মুখ
ভ্রাতৃবধূ (অনামিকা সাহা) প্রথমে বৌদিকে মিথ্যে চুরির দায়ে ফেলে, তারপর ধরা পড়ে
স্বামী ও বৌদির মধ্যে অবৈধ সম্পর্কের ইঙ্গিত করে! অন্তত ভাইয়ের ক্ষেত্রে কথাটা – অতিরঞ্জিত
হতে পারে, একেবারে অমূলক কি? এরপর গ্রাম ছেড়ে নিজের শ্বশুরবাড়িতেই কাজের লোক হয়ে ঢোকে হতভাগ্য নায়িকা। সেখানেও ননদের হাতে (অলকা গাঙ্গুলী) নির্যাতন, যদিও শ্বাশুড়ি (সন্ধ্যারাণী) সহানুভূতিশীল। শেষে অবশ্য সেই
ভাইই বোনের পরিচয় দেয় আর স্বামী এই প্রথম নিজের বজ্রকঠোর বাবার বিরুদ্ধে গিয়ে
দ্বিতীয় বিয়ে করতে অস্বীকার করে! (হবু-দ্বিতীয় স্ত্রীর – আলপনা গোস্বামী – কিন্তু
গায়ে হলুদ হয়ে গেছে! এবার তার কী হবে?)
১৯৮৪-তে
একটিই নতুন বাংলা ছবি দেখেছি। জয়াতে নিধুবাবু আর টপ্পাগান নিয়ে তরুণ মজুমদারের
‘অমর গীতি’। মন্দ লাগে নি, যদিও কিছু ঘটনা বাদ দিয়ে ছবিটি আরেকটু সংক্ষিপ্ত করলে
ভাল হত। নিধুবাবুরূপী সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ঠিকই আছেন, আর স্থানীয় রাজার চরিত্রে
বিশ্বজিতের মধ্যে ভালো-খারাপ মিশিয়ে বেশ জটিলতা আনার চেষ্টা হয়েছে। সন্ধ্যা রায়
নিধুবাবুর নিবেদিত-প্রাণ ছাত্রী এবং প্রেমিকারূপে ভালোই, পরে ছোট পর্দায় ১৯৬৫-র
‘আলোর পিপাসা’ দেখে দুটি চরিত্রের মধ্যে সাদৃশ্যের কথা মনে হয়েছে। পরিচালক তরুণবাবু
বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে যে চিত্রনাট্য লিখেছেন তার চরম পরিণতি ১৯৪১ সালের
‘রাজনর্তকী’ থেকে তুলে বসানো!
হেমন্ত
তো টপ্পা গাইতে পারেন না! (১৯৮১ সালের ‘সুবর্ণ গোলক’ ছবির ‘আমি আজ ভেবেছি মনে’ গানটি
একবার সবাইকে শুনতে অনুরোধ করব। গানটি প্রথমে দীপঙ্কর দের মুখে গেয়েছেন হেমন্ত,
তারপর আবার রবি ঘোষের মুখে অনুপ ঘোষাল)। অতএব, সেই ১৯৭১-এ ‘নিমন্ত্রণে’
নির্মলেন্দু চৌধুরীর মতো ‘অমর গীতি’তেও হেমন্ত শুধুই সঙ্গীত পরিচালক। আসল দায়িত্বে
রামকুমার চট্টোপাধ্যায়, যিনি স্বাভাবিকভাবে মুখ্য গায়কও, সৌমিত্রের নেপথ্যে।
সন্ধ্যা রায়ের কণ্ঠ আরতি মুখোপাধ্যায়। যেমন ‘হংসরাজে’ (১৯৭৬) তিনি লোকসঙ্গীতে মাত
করেছিলেন, এবারে মাত করেছেন টপ্পায়! অরুন্ধতী হোম চৌধুরীর কন্ঠেও একটি শ্রুতিমধূর
গান আছে। হেমন্ত শুধু একটি তরজা গেয়েছেন, চিন্ময় রায় যেখানে দল নিয়ে মীনাক্ষী
গোস্বামীর দলের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নেমেছেনঃ ‘ওরে, আমি যদি মুচি, তবে বল দেখি তুই
কি?’
১৯৮৪-র
২রা অক্টোবর, মহাষ্টমীর দিন, সরকারী বৃত্তি পেয়ে আমি বিদেশ যাত্রা করি উচ্চতর পড়াশোনার জন্য। ১৯৮৮তে দেশে ফিরে
আবার দেখা হবে তরুণ মজুমদারের সঙ্গে!
(ক্রমশ)
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন