কবিতার কালিমাটি ১১২ |
"শুধু তোমার বাণী নয় গো"
মন্থন বেয়ে
উঠে আসি অমৃত ডুবুরি
চুঁইয়ে পড়ে
গরল আমার
পাখনা পায়ে
জড়িয়ে ধরে ঘূর্ণিলতার অবিশ্বাস
ডুবি উঠি তুলে
আনি অতল দ্বীপ, সর্বস্ব শ্যাম
দু'ফালি প্রবালে
গেঁথে থাকে আকাশ
কৃত্রিম শ্বাসনলী
ছুঁড়ে ফেলে বার করে আনি
বিশল্যকরণীর
ইতিবৃত্ত
যত বর্গী হানা,
চেটে নেয় ভেজা সবুজ
আদি অনন্ত বিষবৃক্ষ
আমি
রাতবিরেতে চন্দ্রকলা
মাখি
জড়িয়ে ধরি,
বাঁচিয়ে রাখি
মন্থন বেয়ে
উঠে আসি অমৃত ডুবুরি
চুঁইয়ে পড়ে
গরল আমার তোমার স্রোতে প্রিয়
"মাঝে
মাঝে প্রাণে তোমার পরশখানি দিও"।
অ-রূপকথা
আমার গল্প বলার
মিঠে সুতোয়
বুনতে থাকে
ঝুরো রাত,
একটু খোলা সিন্দুকে
ওই ওপারের নীলকণ্ঠ
বিন্নি খইয়ে
ভরতে থাকা ডায়েরি,
ওই বাগানের
নাম দিয়েছি আজ-কাল-পরশু,
আমি লুকিয়ে
রাখি মাছরাঙা লাল
কালচে ডোরা
গলার ফাঁস
লিখছি নামের
ছড় বেহালা
ঘাড় বেয়ে নেমে
আসা ঝরনায়
বয়ে যায় অবাধ্য
তিল
মন্ত্র ভরা
প্যাঁটরা থেকে বেরিয়ে আসে
চিকচিকে পশম,
নেহাতই জেগে বলে বলে যাই
আমার লক্ষ রূপান্তর...
আমিই লক্ষ্য,
আমিই পথ।
হ্লাদিনী
গৌরমোহন, সকালবেলা বাড়ি বয়ে স্বাস্থ্যবান লালচে শ্যামলাবরণ কচুর লতি নিয়ে এল সবজিওয়ালা, আর মনে পড়ে গেল তোমার নাম। ও গৌর, ও মোহন, বলি ও গৌরমোহন, সাড়া দাও না কেন আর? আবার হেসে লুটিয়ে পড়বো তোমার ওই নাম শুনে, তুমি লজ্জা আধরাঙা মুখ নিচু। এই দেখো, কচুর লতি যে প্রথম তুমি চিনিয়েছিলে তোমাদের বাঙাল হেঁসেলে, তা আজও মনে রেখেছি। কাঠবাঙাল গৌরমোহন, এ ঘটিনী যে বানভাসি নদী হয়েছিলো গো, গৌর তুমি জলকে চলো, মোহন তোমার তেলচিকন চুল এলোমেলো করে দেবো, চিরুনি দেবো ছুঁড়ে মাঠেপারের জলায়। কচুরিপানা তুলে আনতে বলবো, ভীষণ বায়না... ঘোর বর্ষার নিচে তাই দিয়ে গয়না বানিয়ে পরিয়ে দেবো। ও গৌরমোহন, গান শোনাবে আবার তিলক এঁকে?
ইলিশমুড়োর গন্ধভাত, ওই দরমাছেঁচা বেড়া, তার গায়ে লতিয়ে থাকা টুপটুপে ফুল একটা দুটো, গাছ হয়ে যাই গো মোহন, আধার হয়ে যাই৷ বাহারি টবেই বসে রই গো রসিক, আসবে জানি।
ও মোহন, দেখ বাসন্তী রঙ শাড়ি, দোলে আঁচল কোলে পিন। বাবার ঘরে টেলিফোন, চুপি চুপি এলে বলো। জমিয়েছি গুনে গেঁথে একশো সাতান্নটা চিঠি, পড়বে বসে সব? একটা এক্কাদোক্কা বাড়ি, তার ইকড়িমিকড়ি উঠোন তুমি তুলে রেখেছো বছর বিশ, খবর পাই, তুমি সরকারী স্কুলের হেডমাস্টার। আজও রান্না পারি না, আজও তেমন কোমর বাঁধি সব ব্যাপারে। আজ সাজি চশমায়, আজ পরি না ঘড়ি। বাবার টেলিফোন বাজে ওঘরেই, আমার সাথেই চলে তোমার ডাকের আশা।
মুঠি হাতে লক্ষ্মীর ছাপ শিখেছি, মাকে জানিও। জানিও রাজকন্যের দেশ ভাসিয়ে গেছে কার বাঁশি, তুমি হেসে ফাঁসি দিয়েছো তাকে। তোমার তো বেড়া দরমা নেই, নেই কোনও গাছ, নেই ফুল টুপটাপ। ও মোহন, সে এক বানভাসি নগরে গাছ হবো, দরমা দাও, লতিয়ে উঠি। আগাম জল দাও, ক্ষেতে দাও বীজশস্য, তোমার সেকেলে নামে হেসে গড়িয়ে যাই। জাগুক শুকসারী।
ডাক দাও জোরে, "চন্দ্রাবলী!" সরসর করে ডাক ছড়িয়ে যাবে, কই গেলি, তুই কই গেলি? গৌর, তোমার নেশা খুঁজি, তোমার নেশায় দেখি টলটল লজ্জামুখ। গন্ধরাজের কোলে ফেলে রাখা দ্বৈত মেটে উঠোন, শাড়ি সেলাই পর্দা, বিহান বেলার শুদ্ধিকাল। এক পশলা অভিমান হোক, দু পশলা মানভঞ্জন, তিন পশলা এই মারি সেই মারি, চার পশলায় আসুক তুখোড় ঝড়বাদলা তছনছিয়া শিহর।
কবিতা বলবে গৌর? বলবো, ন্যাকা। গাছতলার মাটিতে আঁক কাটো দুর্বাদল ঘনশ্যাম, কেড়ে নেবো ভাঙা ডাল। স্থির বোসো, নির্লজ্জ দেখি তোমায়। মেঘের ছায়া সরে সরে যাক, আরশি জলে ডুবে যাক ভাদ্র রোদ। জেলেবাড়ি বয়ে নিয়ে এসো জালবোনা সুতো। হেডমাস্টার গৌর, ছাত্রদের বোনা শিখিও পোক্ত, শিখিও টব থেকে দরমাবেড়ায় খেলতে চাওয়া লতা জেদে টব ভেঙে শেকড়হীন বেঁচে থাকে অপেক্ষায়। মালীদের গাছ মাটি চিনতে ভুল হলে, সাজিয়ে নিতে হয়ে দরমাছেঁচা নিজের হাতে।
কিছু বলার ভাষা নেই, শুধুই মুগ্ধতা।
উত্তরমুছুনসশ্রদ্ধ ধন্যবাদ জানাই।
মুছুন