সিনেমার পৃথিবী – ৭
বাংলা ছায়াছবিতে যদি সত্যজিৎ-ঋত্বিক-মৃণাল সবার ওপরে তিন ধ্রুবতারা হন, তাহলে জাপানি ছবিতে কুরোশাওয়া-ওজু-মিজোগুচি। খুব ভুল যদি না করি, তাহলে এটা বলা যেতেই পারে যে জাপানি ছায়াছবির মুন্সিয়ানার সঙ্গে গোটা পৃথিবীর পরিচয় ঘটে কুরোশাওয়ার ‘রশোমন’ (১৯৫০) সিনেমার মাধ্যমে। যদিও তার আগেই ১৯৪৯-এ ইয়াসুজিরো ওজু ‘লেট স্প্রিং’-এর মত জাপানি সিনেমা তৈরি করে ফেলেছেন, তবুও রশোমনের যাত্রা দিয়েই জাপানের সিনেমা আন্তর্জাতিক হয়। এক হত্যা আর এক ধর্ষণ, সেই নিয়ে চারজন সাক্ষীর চার রকম ভিন্ন বয়ান, যা থেকে পরবর্ত্তীকালে ‘রশোমন এফেক্ট’ আইনের চোখে এক স্বীকৃত তত্ত্ব হয়ে ওঠে। এবং জাপানি ছবির স্বর্ণযুগে একদিকে যেমন আকিরা কুরোশাওয়া রশোমন (১৯৫০), ইকিরু (১৯৫২), সেভেন সামুরাই (১৯৫৪)-এর মত অনবদ্য ছবি বানিয়ে চলেছেন, আরেকদিকে ইয়াসুজিরো ওজু লেট স্প্রিং (১৯৪৯), আর্লি সামার (১৯৫১), টোকিয়ো স্টোরি (১৯৫৩) বানাচ্ছেন, তেমনি অন্যদিকে কেঞ্জি মিজোগুচি তৈরি করছেন দ্য লাইফ অব ওহারু (১৯৫২), উগেৎসু (১৯৫৩), সানশো দ্য বেইলিফ (১৯৫৪) ইত্যাদি। তবে আজ সব পুরনো ছবি নিয়ে আলোচনা সীমাবদ্ধ রাখব না, বরং পুরনো-নতুন মিশিয়ে জাপানি সিনেমার কথা বলব। এইসব সিনেমার (এবং বেশিরভাগ জাপানি সিনেমার) আরেক বৈশিষ্ট্য হল, আউটডোর শুটিংয়ের সিনে বিভিন্ন সময় ওয়াইড অ্যাঙ্গেলে প্রকৃতিকে ধরার চেষ্টা। প্রায় প্রতি শটে ল্যান্ডস্কেপিং ফুটে ওঠে। ফলে জীবন বা রহস্য বা জটিলতা বা ফিকশন, সব কিছুই প্রকৃতির মাঝে উপভোগ্য হয়ে ওঠে। আর সেজন্যই আজ জাপানের ছায়াছবি নিয়ে আলোচনা, যেটা আগেরবার বলেছিলাম।
আজ আমরা যে
সাতখানা জাপানি সিনেমা নিয়ে আলোচনা করব, সেগুলো হল – ‘উগেৎসু’ (১৯৫৩), ‘ওম্যান ইন
দ্য ডুনস্’ (১৯৬৪), ‘ড্রিমস্’ (১৯৯০), ‘সুজাকু’ (১৯৯৭), ‘নোবডি ন্যোজ’ (২০০৪), ‘ডিপার্চারস’
(২০০৮) ও ‘টোকিও সোনাটা’ (২০০৮)।
‘উগেৎসু’ মানে বৃষ্টিশেষের রহস্যময় চাঁদ। সাদা কালো এই ছবি মায়াময় আলো, আবছায়া, ডিপ ফোকাস, লং শট, স্পেসিয়াল প্রক্সেমিক্স – এই সব টেকনিকের জন্য জাপানের সর্বকালের সেরা সিনেমা হবার দৌড়ে সব সময় এগিয়ে থাকবে। সাদা-কালো কস্টিউম ডিজাইনের জন্য অস্কার নমিনেটেড হয়েছিল। ষোড়শ শতকের জাপানে গৃহযুদ্ধ ও তার মাঝে দুজন কৃষকের জীবন-স্বপ্ন নিয়ে এক ভৌতিক পরিবেশের ছোঁয়ায় এই ছবি। একজনের চোখে ঈর্ষা, আরেকজনের চোখে লোভ। এমনকি নিজেদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছতে তারা নিজেদের পরিবারকেও বাজি লাগাতে বা বিপদে ফেলতে পিছপা নয়। ছবি যত এগোয়, আমরা জীবনের তত অদ্ভুত রহস্য দেখতে পাই।
আমি এই সিনেমা এক মনস্তাত্বিক সংঘর্ষের ছবি হিসেবে দেখি। ভূত এখানে ভূত নয়, তা মানুষের অনৈতিক লোভ-মোহ-মাৎসর্যের ছায়া। তার প্রতিকৃতি সিনেমার একেক শটে। এবং আমার চোখে এই সিনেমার অসাধারণ দৃশ্য হল লেকের দৃশ্যগুলো। লং শটে একটা নৌকো কুয়াশা ছেড়ে এগিয়ে আসছে, আর আস্তে আস্তে এক মাঝি দৃশ্যমান হচ্ছে – যেন বহুদূরের কোন অশরীরি। মিজোগুচি অল্পবয়সেই মারা না গেলে আমরা হয়ত এরকম আরো কিছু ক্লাসিক তার হাত থেকে পেতাম।
‘ওম্যান ইন দ্য ডুনস্’ অস্তিত্ব রক্ষার এক ভয়ঙ্কর সুন্দর ছবি। এই একটা সিনেমাই হিরোশি তেশিগাহারা-কে প্রায় জীবন্ত কিংবদন্তীর পর্যায়ে নিয়ে চলে গেছিল। এই মুভি দুটো অস্কারের জন্য ও গোল্ডেন পামের জন্য নমিনেটেড হয়েছিল। আরো গোটা দশেক পুরস্কার পেয়েছে। অদ্ভুত থিম। এক পতঙ্গবিশারদ কোন এক গ্রামে পতঙ্গ সংগ্রহ করতে এসে গ্রামবাসীদের চাতুর্যে গ্রামের শেষপ্রান্তে বালিখাদানের নিচে এক মহিলার সঙ্গে থাকতে বাধ্য হয়। পরেরদিন সকালে ফেরত যেতে গিয়ে সে বুঝতে পারে গ্রামবাসীরা তাকে ফাঁদে ফেলে এই মহিলার সঙ্গে বালিখাদানে নির্বাসিত করেছে, কারণ তার পালানোর কোন রাস্তা নেই। সেই মহিলার কাজ হচ্ছে গ্রামের মানুষের জন্য বালিখাদ থেকে রোজ বালি জোগান দেওয়া। লোকটিকেও সেই কাজ শুরু করতে হয়। এমনকি রক্তমাংসের মানুষ হিসেবে শারীরিক চাহিদায় একসময় সেই মহিলার সঙ্গে তার সম্পর্কও শুরু হয়। যদিও রোজ সে পালিয়ে যেতে চায় কিন্তু পারে না। বালিখাদ থেকে রোজ শুধু মজুরের মত বেলচা দিয়ে অন্তহীন বালির জোগান দিতে থাকে। তারপর?
তারপর নিজে দেখুন। একটা আপাত অর্থহীন বিষয় নিয়ে এক ইরোটিক, কঠোর, কর্কশ, অস্তিত্বের সংঘর্ষপূর্ণ রূপক সিনেমা। বালির সাদা-কালো পটভূমিকায়। আর সেখানেই ছবির মুন্সিয়ানা। একটু ভাল করে ভেবে দেখুন তো, আমাদের জীবন কি এক বিশাল বালিঘড়ির অন্তহীন ঝরে পড়া বালিমুহূর্ত দিয়ে তৈরি নয়? যতক্ষণ বালি ঝরছে, ততক্ষণ জীবন। তারপর কী কেউ জানে না। আর সেজন্যই তো আমাদের অস্তিত্ববাদ।
আমাকে যদি আজকের এই সবকটা সিনেমার র্যাঙ্কিং করতে বলা হয়, আমি অবশ্যই এক নম্বরে রাখব ‘ওম্যান ইন দ্য ডুনস্’-কে এবং দশে দশ দেব কারণ আমি এই সিনেমায় কোন খুঁত খুঁজে পাই নি। আর ঠিক এই কারণেই এই ছবির পর তেশিগাহারা-র আর কোন ছবি এইরকম সফলতা ছুঁতে পারে নি।
এবার ফিরে আসি আকিরা কুরোসাওয়া-য়। কুরোসাওয়ার বিখ্যাত ছবি ‘ড্রিমস্’ আটখানা গল্প নিয়ে তৈরি, যা উঠে এসেছে পরিচালকের বারবার ফিরে আসা আটটা স্বপ্ন নিয়ে। ‘সানশাইন থ্রু দ্য রেইন’, ‘দ্য পিচ অর্চার্ড’, ‘দ্য ব্লিজার্ড’, ‘দ্য টানেল’ এইরকম আটটা গল্প। আমি এগুলোর একটাও আলোচনা করব না। অনুরোধ করব দেখুন। এই সিনেমা আমার তালিকায় পছন্দের ওপরের দিকে দুটো কারণে। এক, ভিস্যুয়াল এফেক্ট। রংয়ের ব্যবহার। দুই, ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক। এই দুই মিলে সিনেমার ক্যানভাস যেন জীবন্ত কবিতা হয়ে উঠেছে। আসলে, কুরোসাওয়া, কিউব্রিক, বার্গম্যানের মত পরিচালকেরা ক্যামেরার পেছনে চোখ লাগিয়ে সেলুলয়েডে রং-তুলি নিয়ে খেলতে ভালবাসেন। তাই তাদের ছবি অনুভব করতে হয়, বুদ্ধি দিয়ে ধরতে হয়।
তরুণ প্রজন্মের নাওমি কাওয়াসে-র প্রথম সিনেমা ‘সুজাকু’। নাওমি ছিলেন ফটোগ্রাফির শিক্ষক। এবং তার এই প্রথম ছবি কান ফিল্ম ফেস্টিভালে ‘গোল্ডেন ক্যামেরা’ পুরস্কার পায়। সুতরাং পাঠক, এটা নিশ্চয়ই বলে দেবার অপেক্ষা রাখে না এই ছবিতে কোন বিষয়বস্তু মনোযোগ সহকারে দেখা উচিৎ। সিনেমার গল্প মোটামুটি সাদামাটা। কাঠের ব্যবসায় লাগে, এরকম গাছভর্তি এক পাহাড়ি গ্রামের এক সাধারণ পরিবারের কাহিনি। পরিবারের মাথা কোজো তার মা, বউ, মেয়ে আর ভাইপোকে নিয়ে থাকে। গ্রামে ট্রেন চালু হলে গ্রামের অর্থনীতি ভাল হবে সেই আশা নিয়ে তারা দিন গোনে। পনেরো বছর কেটে যায়। কিন্তু অর্থনীতি ভাল আর হয় না। একদিন ট্রেনের প্রজেক্ট-ও থেমে যায়। কোজো মনের দুঃখে নিজের ক্যামেরা নিয়ে রাস্তায় বেড়িয়ে পড়ে। তারপর নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। একদিন পুলিশ তার মৃতদেহ এনে পরিবারের হাতে তুলে দেয়। এরপর কোজোর মেয়ে আর ভাইপোর পরস্পর ভাললাগা সত্ত্বেও আস্তে আস্তে সেই পরিবার ভেঙে টুকরো হয়ে যায়।
এই ছবির প্রথম প্রাপ্তি প্রকৃতি আর মানুষের মাঝে কবিতার মত ঘুরে চলা ক্যামেরা। রঙ্গিন প্রকৃতি, এক পরিবারের পুরনো অ্যালবামের মত স্মৃতি আর ডকুমেন্টারি ধাঁচে স্টিল শট (নাওমি ডকুমেন্টারি থেকেই এসেছেন, ফলে এই কলা ওনার হাতে অনবদ্য) সিনেমা উপভোগ্য করে তুলেছে। এই ছবির আরেক প্রাপ্তি ক্যামেরার সামনে গ্রামের অনেক সাধারণ মানুষ যারা কেউ প্রফেশনাল অভিনেতা নন। ফলে পুরো ব্যাপারটা আরো ন্যাচারাল হয়ে উঠেছে।
হিরোকাজু কোরিইদা-র ‘নোবডি ন্যোজ’ সত্যি ঘটনা অবলম্বনে এক মনস্তাত্বিক পারিবারিক ড্রামা। জাপানের দরিদ্র সমাজের জীবন যুদ্ধের প্রামাণ্য দলিল। এক মদ্যপ অসংযমী মায়ের চার বাচ্চা। তাদের বাবা এক না ভিন্ন সেটাও প্রশ্নসাপেক্ষ। মা সেই চার বাচ্চাকে নিয়ে, দুজনকে সঙ্গে নিয়ে আর বাকি দুজনকে বাক্সের ভেতর লুকিয়ে, এসে ওঠে এক ছোট ভাড়ার ফ্ল্যাটে। তারপর একদিন মা বাচ্চাদের ফেলে রেখে আবার নিরুদ্দেশ হয়ে যায় কোন এক পুরুষ সঙ্গীর সাথে। সেই চার বাচ্চার ভেতর বড় যে ছেলেটি (বারো বছরের আকিরা), এবার তার ওপর তার বাকি ভাই-বোনের (বা সৎ ভাই-বোনের) দায়িত্ব এসে পড়ে। সিনেমা প্রকৃত অর্থে এখান থেকে শুরু হচ্ছে। এবং আকিরার ভূমিকায় য়ুয়া য়াগিরা-র অভিনয় বাকি প্রায় দু’ঘন্টা চুপচাপ বসে দেখতে হয়। যখন মা-কে খুঁজে পাবার আশায় সে জমানো কয়েন থেকে কয়েকটা নিয়ে ফোন বুথে যায় অথবা রাস্তা থেকে স্কুলের পেছনের মাঠে চুপচাপ তাকিয়ে থাকে সে কবে স্কুলে যাবে সেই আশায় অথবা তার সবথেকে ছোট বোনকে নিয়ে রাস্তা দিয়ে হেঁটে আসে বোনের জন্মদিনে। শিশুশিল্পী হিসেবে এত পরিণত অভিনয় খুব কম দেখেছি। আর সেজন্যই য়াগিরা মাত্র বারো বছর বয়সেই কান ফিল্ম ফেস্টিভাল থেকে সেরা অভিনেতার সন্মান পেয়েছিল।
এইরকম সংবেদনশীল এক বিষয় নিয়ে ছবি করার সাহসিকতা দেখানোর জন্য পরিচালক কোরিইদাকে সিনেমা জগৎ মনে রাখবে। বাচ্চাদের থেকে সেরাটা বের করে আনার জন্য উনি প্রচুর স্ট্যাটিক শট ব্যবহার করেছেন, সেটাও প্রশংসার যোগ্য।
য়োজিরো তাকিতা-র ‘ডিপার্চারস’ বেশ বিতর্কমূলক ছবি। সাধারণ মানসিকতা নিয়ে এই ছবি দেখতে বসলে শক্ লাগবে। এক তরুণ চেলো-বাদক তার কাজ হারানোর পর যখন হন্যে হয়ে কাজ খুঁজছে, তখন অজান্তেই তার সামনে আসে এক অদ্ভুত কাজের অফার। মরে যাবার পর মৃতদেহকে সাজিয়ে গুছিয়ে তুলে দিতে হবে শেষকৃত্যে। প্রথমে ইতস্তত করলেও টাকার অঙ্ক দেখে সেই তরুণ চেলো-বাদক রাজী হয়। মৃতদেহ সাজানোয় পটু হয়ে ওঠে। এই নিয়ে তার বউয়ের সঙ্গে ঝামেলা হয়, বউ ছেড়ে চলে যায়, এবং শেষে আবার ফিরে আসে।
এই ছবি নিয়ে বেশ বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। সমালোচকরা বলেছিলেন এই ছবি বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়বে। কিন্তু দেখা যায় ২০০৮-এর সেরা বিদেশি ছবি হিসেবে অস্কার পাবার পর এর বক্স অফিস ভালই হিট হয়েছিল। এই ছবি জীবনের পরে কী, সেই দার্শনিক প্রশ্ন না তুলে বিদায়কে কীভাবে কাব্যিক করে তোলা যায়, সেটা নিয়ে সুন্দর এক দিক খুলে দেয়। তবে এর একটা অন্য দিকও আছে। সেটা হল ব্যক্তির সঙ্গে ব্যক্তির সম্পর্ক কিরকম হওয়া দরকার এবং কারো জীবনসংগ্রাম নিয়ে উপহাস করা উচিৎ নয়, বরং তা সহমর্মিতার সঙ্গে দেখা দরকার। আমার ব্যক্তিগতভাবে বেশ স্পর্শকাতর অংশ মনে হয়েছে সেই জায়গা যেখানে কোবায়াশি (তরুণ চেলো-বাদক) তার হারিয়ে যাওয়া বাবার ঠিকানায় গেছে, বাবার মৃতদেহ সাজিয়ে দিতে গিয়ে বাবার মুঠো করা হাত থেকে ছেলেবেলায় বাবাকে উপহার দেওয়া এক সাদা নুড়িপাথর আবার খুঁজে পাচ্ছে।
কিয়োশি কুরোসাওয়ার ‘টোকিও সোনাটা’ টোকিও-র হাইরাইজ আর পাহাড়ি ল্যান্ডস্কেপিং-এর পেছনে লুকিয়ে থাকা এক সাধারণ পরিবারের সদস্যের হঠাৎ চাকরি চলে যাওয়া, অবিশ্বাস আর সংযোগহীনতার এক জ্বলন্ত দলিল। চার সদস্যের এক পরিবারের ছবি যারা সরে যেতে যেতে একে অপরের থেকে আলাদা হয়ে যায়। আবার শেষে ফিরে আসে। এই সিনেমা সিরিয়াসলি দেখলে আপনি একসময় ভয় পেতে পারেন, কারণ কোভিড পরবর্তী পরিস্থিতি হয়ত কখনো আমাদের এইরকম কোন এক জায়গায় দাঁড় করাতেই পারে। এই ছবিও বেশ কিছু পুরস্কার পেয়েছে যার ভেতর বেশিরভাগ স্ক্রিনপ্লে বা স্ক্রিনরাইটিং-এর জন্য। গল্প কীভাবে স্ক্রিনপ্লে-র মধ্যে দিয়ে সফল সিনেমা হয়ে ওঠে, তা বুঝতে হলে এই সিনেমা দেখুন। আর হ্যাঁ, কিয়োশি-র ছবিতে দৃশ্য থেকে দৃশ্যান্তরে যাওয়াটা মসৃণ নয়, এক সিন কাট করে হঠাৎ পরের সিনে চলে যাওয়া। এটা মাঝে মাঝে ভালোই লাগে। যেমন ভাল লাগবে পিয়ানো বাজানোর মধ্যে দিয়ে সিনেমার শেষ নাটকীয় দৃশ্য।
শেষ করার আগে আরেক স্পেশাল মেনশন, অনেকটা ৩ নম্বর পর্বের শিন্ডলার্স লিস্ট-এর মত। হিরোকাজু কোরিইদা-র আরেক মাস্টারপিস ‘শপলিফটার্স’ (২০১৮)। ২০১৮ সালে এই সিনেমা কান ফিল্ম ফেস্টিভালে ‘গোল্ডেন পাম’ পেয়েছিল এবং সারা পৃথিবী থেকে আরো অন্তত ৫০টা পুরস্কার ও ১০০টা নমিনেশন। কিন্তু সেজন্য আমি এই সিনেমা বাছিনি। বেছেছি অনবদ্য থিম, সাউন্ড ও লাইটের জন্য। কুঁড়েঘরে পাঁচজনের এক ছোট্ট সংসার – ঠাকুমা, পিসি, বাবা, মা ও ছেলে। আসলে তারা সবাই ঠগ। শপিং মলে চুরি করে বা অন্য কোন কেপমারি করে সংসার চালায়। তারা এক বাচ্চা মেয়েকে শীতের ঠান্ডায় রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখে বাড়ি নিয়ে আসে। খাবার দেয়, আশ্রয় দেয়, ভালবাসা দেয়। তারপর বিভিন্ন ঘটনার ভেতর দিয়ে বোঝা যায় আসলে তারা সবাই জোচ্চোর, কারো সঙ্গে কারো কোন সম্পর্ক নেই। কিন্তু একসঙ্গে থাকার জন্য ভালবাসা আছে। এই থিমের ছায়া মাথায় রেখে ‘প্যারাসাইট’ সিনেমাটা আরেকবার দেখবেন তো!পরিশেষে, জাপানি সিনেমা নিয়ে আলোচনা কখনোই সম্পূর্ণ হয় না যদি আমরা অ্যানিমেশন মুভি নিয়ে কোন কথা না বলি। আমেরিকায় যেমন ডিজনি প্রোডাকশন্স, জাপানে তেমনি স্টুডিও গিব্লি। সামনের বার তাহলে অ্যানিমেশন মুভি ছুঁয়ে ছোটদের সিনেমা নিয়েও কিছু বলে নেব।
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন