কবিতার কালিমাটি ১০৫ |
লোডশেডিংয়ের রাত
হৃৎপিন্ডে
মাইডাসের স্পর্শ চাই না।
জীবন্ত হৃদয় কেন হবে
শুধুমাত্র কঠিন এক স্বর্ণপিন্ড!
হৃদ্স্পন্দনের প্রতিটি শব্দ শুনতে চাই
আর
ছুঁয়ে দেখতে চাই
ছুরিকাঘাতে গড়িয়ে পড়া রক্তধারার উষ্ণতাটুকু।
জানালার দু'পাশের দৃশ্যাবলি আর একখন্ড আকাশ
সাথে নিয়ে, ছুটে যাচ্ছে দ্রুতগামী ট্রেন।
ক্রমশঃ মিলিয়ে যায় তীব্র হুইসেলের শব্দ;
পেছনে পড়ে থাকে
পরিত্যক্ত প্ল্যাটফরমের দীর্ঘশ্বাস।
আজ সারাদিন খুব ঘুম ঘুম নির্জনতা
মেঘের মতো ছায়া ফেলেছিল।
বুকের ভেতরে খুব ছড়ানো ছিল, ভিজে হাওয়ার কুয়াশা।
নীলখাতার কোথায় কতটা হয়ে গেছে
আরো গাঢ়নীল
দেখতে চাইনি,
জানি
যতই খন্ডিত করা হোক আকাশ
নীল সেই নীলই তো; প্রখর অথবা ম্লান।
একঘর অন্ধকারের গ্রাসের ভেতর
বাতাসের প্রবল হতাশ্বাস
বয়ে যায়
টুং টাং বেজে ওঠে আলো নেভা ঝাড়বাতি;
আলো জ্বলবে কি জ্বলবে না
ভাবতে
ভাবতেই মনে পড়লো
আজ আবার এক তমসাঘেরা লোডশেডিংয়ের রাত।
দৌড়
দীর্ঘশ্বাসগুলো জমা রাখি না;
ভোর হলেই মুঠো খুলে ছড়িয়ে দিই।
সিঁড়ি উঠতে গিয়ে দেখি, প্রথম ধাপেই
শুয়ে আছে সতর্ক ডোবারম্যান পিনশার
কানখাড়া, গুটান লেজ
মুহূর্তেই হামলে পড়তে পারে;
ভঙ্গিমায় একথা সুস্পষ্ট।
সেই থেকে সিঁড়িঘরে গিয়েছি আটকে;
সিঁড়িপথ ভুলে গেছি।
কেউ কেউ, খোলাচোখ আকাশে নিবদ্ধ
মুক্তকচ্ছ
রণপায় দৌড়ায়।
বলতে ইচ্ছা হয়--
থামো, এত
দ্রুততার কিছু নেই।
পেছলালে তোমারই
পতন।
কোন দৌড়াকাঙ্ক্ষীকে কখনো
‘ধীরে চলো’ একথা বলতে নেই।
দু’ফোঁটা নুন
কালরাতে
মেঘমল্লার বেজে বেজে উঠেছিলো
অঝোর কেঁদেছিলো আকাশ;
চাতকেরা বৃষ্টি ছোঁয়নি
বৈরাগ্য ছুঁয়ে ফেলেছিল তাদের।
সেই অবিরল ধারার ভেতরে অনায়াসে ঠেলে দিয়ে
হাসতে হাসতে বললে--
'তোমাকে ঘিরে আছে আজন্ম খরা
একমাত্র জলের ভেতরেই সুন্দর তুমি'।
তুমি ভেজোনি। শুধু
তোমার দু'চোখে দু’ফোঁটা নুন জমেছিলো।
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন