কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

সোমবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২০

তমাল রায়

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ৯০


আমাদের একটা কমলা রঙের পাহাড় ছিলো       

                     

(১)

 

ইস্কুল যাবার পথে চোখে পড়তো অস্পষ্ট পাহাড়। তখন ভোর, কমলারঙা পাহাড় বেয়েই কি নেমে আসতো সে? নইলে সেখানে তো আর কিছুই ছিলো না কোথাও। গোলাপিফ্রকে রক্তলাল ফুলের আলপনা। হাতে অর্কিড। মুখে ভুবন ভোলানো হাসি। এ কারণেই হয়ত ইস্কুলে অনুপস্থিতির দাগ প্রায় নেই বললেই চলে। স্কুল থেকে ফেরার পথে, না থাকতো পাহাড়, না সেই কিশোরী। সেটা ফেব্রুয়ারীর শুরুর দিক।  শুনেছিলাম এরপরেই শহরে বসন্ত আসে। আর গাছগুলো ফুলে ফুলে ভরে ওঠে।  শহড় জুড়ে তখন আনন্দ, কার্নিভাল, ভালো লাগারা বড় হতে হতে উঁচু মিনার হয়ে গেলে, শহর ছেড়ে নিরুদ্দেশে হয়ে যেত অনেকেই। এমনই একসময়ে বাবা চলে যান শহর ছেড়ে, আর তারপর আমাদের পুরনো বাড়িতে কাঠকয়লার ছোপছোপ দাগ, বেড়ালের কান্না। গোলচকের দোকানগুলোর আবার ঝাঁপ পড়ে যাচ্ছে একে  একে। পর্দার আড়ালে যেসমস্ত প্রাপ্তবয়স্ক ছায়ারা কাছাকাছি আসতো, তারাও ফ্রিজড্। শুনেছি এসময়েই না'কি জিম রিভির গান বাজতো নীচু ভল্যুমে। ট্রাফিক সিগনাল থেকে একটুকরো অন্ধকার কোথাও পৌঁছনোর রাস্তা খুঁজছে...

 

(২)       

 

চাও বা না চাও, একদিন সকলেই বড় হয়। যেমন শহর, যেমন নীলমাধব। আসলে দানিয়েল ব্লু। পরমেশ্বরের ইচ্ছেয়, নীল তারপর একদিন বেরিয়ে পড়ে কারণ বুড়ো স্যামুয়েল বলেছিলেন, বই বিশ্বাস করতে শেখায় না, অনুসন্ধানে উৎসাহী করে। সেই যে ভোর, ইস্কুল যাবার পথ, সেই কমলারঙা পাহাড়... কিশোরী ফ্রকের ঝুল বাড়লো কিনা খুঁজতে গিয়েই সে একদিন ছেড়ে যায় শহর। তারপর বৃষ্টি এসেছিলো খুব। যে কোনো শহরেরই একটা আত্মা থাকে। সেটা হার্ট অব দা টাউন না হয়ে বরং একটু নিরালা জায়গাতেই বিশ্রাম নেয়। আর হার্টে থাকে সময়! সে টিকটিক করে জানান দেয়, তুমি বেঁচে আছো। অথবা নেই। বাবা যেদিন চলে যান, সেরাতে খুব শীত। ব্লু যেদিন গেল, সেদিন এসব কিছুই হয়নি। পড়েছিলো কিছু ফুল। কয়েকটা  কাঠবেড়ালী খাবার ভেবে ফুল শুঁকছিলো। জুন পেরিয়ে জুলাই। ফাটাফুটো ক্যানোপিগুলো সারিয়ে তোলা হচ্ছে, মাছধরার ঋতু। চার্চবেল বাজে তবে আর প্রকট নয় মোটেই... প্রথমটা জোর, তারপর মৃদু হতে হতে ভ্যানিশ!

 

(৩)

 

বুড়ো স্যামুয়েলের একদিন কথা বন্ধ হয়ে যায়। তার শেষকথা ছিলো, প্রতিটি মানুষেরর একটা নিজস্ব নক্ষত্র থাকে। নক্ষত্রের থাকে বন্ধু। বন্ধুর মসৃণ গাল না থাকলে বুঝবে কি করে যে তারও আলো ছিলো! সে বলেছিলো, এই জনপদে মানুষই সব থেকে সস্তা! এরপরই দাবানল লাগলো। সবার আগে পুড়েছিলো লাইব্রেরী। আর কাঠবেড়ালি।

এরও অনেকদিন পর ব্লু ফিরে এসেছিলো। ধ্বংসাবশেষে তখন একটু একটু করে জন্মাচ্ছে সবুজ।  মাথা উঁচু করে আছে একটা বন্ধঘড়ি, পাশে ভাঙা ভায়োলিন! এসময়েই আবার পাহাড় দেখা দেয়। কিশোরী ফ্রকের ঝুল, পা ছাড়িয়েছে। শহরে শীত পার হলেই হয়ত আবার মানুষ ফিরবে। ব্লু আপাতত ম্যাপলপাতায় লিখে রাখছে দাঙ্গার ইতিহাস! কিছুটা দূরে একটা স্লেজগাড়ি থেকে নেমে আসছেন বাবা।  ব্লু তখন গুনগুনিয়ে গাইছে, আমাদের একটা কমলারঙের পাহাড় ছিলো...


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন