কালিমাটির ঝুরোগল্প ৮৬ |
জানালা
কমলেশের শরীরটা বছর দেড়েক হল ভাল যাচ্ছে না। তা শরীরের কী দোষ, ছিয়াত্তর
চলছে। নির্মলা চলে গেছে পাঁচ বছর … হ্যাঁ, একটা বিরল সৌভাগ্য তাঁর আছে – ছেলে-বৌ, নাতি-নাতনি
তাঁর দেখাশোনাটুকু করে। তবু বড় একলা লাগে, কেউ রইলো না…
জানালার কাছে হেলানো চেয়ারটায় বসেই দিন কাটে। বাইরে নিজে আর যেতে পারেন
না। রাস্তার ওপারে ছোটদের ইস্কুল আছে একটা … বেশ লাগে দেখতে। ছুটির ঘণ্টা বাজলে পিলপিল
করে ছেলেমেয়েরা হৈহৈ করতে করতে বেরিয়ে আসে। ক’টা বড়বড় গাছ, আকাশ আর মেঘ। লোকজনের যাতায়াত।
জানালা তাকে সারাদিন সিনেমা দেখায়।
গত পরশু হঠাৎ কী যে হলো, কমলেশ মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছিলেন। জ্ঞান ছিল
না। ঘর মুছতে এসে কাজের মাসি ভাগ্যিস দেখতে পায়! তারপর যেমন হয় – ডাক্তার, প্রেশার মাপা, মেলা ওষুধপত্র। সে যাত্রায় আর তেমন
কিছু হয়নি, কিন্তু ডাক্তার বলে গেছেন, কিছু টেস্ট-ফেস্ট করাতে হবে আর এরকম নাকি আবার
দু-এদিনের ভেতর হতে পারে – তাই কটা দিন নার্সিংহোমে
থাকা উচিত। সোজা কথায় টাকার শ্রাদ্ধ
হতে চলেছে। উফ্, আজ ভর্তি হতে হবে।
-“দাদু, রেডি তো, গাড়ি বার করতে বলছি…” নাতনি বলল। নাতনি আর ওর মা
যাবে সঙ্গে… নার্সিংহোমে ব্যবস্থা করা আছে।
-সাতদিনের ‘হলিডে’তে যাচ্ছ, বুঝলে! টি-শার্ট, সান-গ্লাস, টুপি সব নিয়েছ
তো…!” হাসতে হাসতে ঝড়ের মতো নাতনি ঘরে ঢুকল। কলেজে পড়ে, সকালের দিকে ক্লাস নেই আজ। বিছানার চাদরটা ঝেড়েঝুড়ে
পেতে দিলো সমান করে। টেবিলের ওষুধগুলো একদিকে করে খালি জলের গেলাসটা সরিয়ে রাখল। তারপর
জানালাটা বন্ধ করতে গিয়ে বলে উঠল --“উফ্, এতো শক্ত কেন! জাম হয়ে গেছে। রাত্তিরেও কি বন্ধ করো না?”
কিছুক্ষণ চেষ্টা করে না পেরে বলল … “দাঁড়াও, ড্রাইভারকে ডাকি, আমার
গায়ের জোরে কুলোচ্ছে না।”
কমলেশ বললেন– “আরে ছাড় তুই, কাউকে ডাকতে হবে না। আমি দেখছি”।
কমলেশ এসে ডানদিকের
পাল্লটা হাত বাড়িয়ে ধরলেন। প্রত্যেক জানালার একটা নিজস্ব স্বভাব থাকে, কাউকে একটু ওপর
দিকে আর কাউকে একটু নিচের দিকে না ঠেললে নড়তে চায় না। যারা জানে না তারা আনাড়ির মতো
গায়ের জোর লাগায়।
ক্যাঁ অ্যাঁ
অ্যাঁ অ্যাঁ … চ্! আওয়াজ করে জানালাটা কমলেশের হাতে বন্ধ হল। রোজই খোলা বন্ধ করেন কিন্তু এই আওয়াজটা কানে কেমন
অন্যরকম ঠেকলো। কমলেশ স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে গেলেন। জানালাটা কাঁদছে।
কপাটে হাত বুলিয়ে
বললেন- “তুই কাঁদিস না রে … কাঁদলে আমার মনটা খারাপ লাগবে যে…!”
বারান্দা থেকে
তাড়া এলো, কার সঙ্গে কথা বলছ গো, সময় হয়ে গেছে…
কমলেশ ফিসফিস
করে বললেন– “এরা তো জানে না তুই আমার কত কাছের বন্ধু… তুই আমাকে বাইরেটা দেখাস, তাতেই
দিন কাটে আমার। আরে বোকা, হাসপাতাল থেকে ফিরে আসব রে, তোকে না বলে আমি ওপারে যাবই না…
ভালো গল্প, ওনু গল্প, একক গল্প, বা যা কিছু গল্প বলতে পারেন, কিন্তু ঝুরো গল্প হয়েছে এটা কোনো ভাবেই বলা যাচ্ছে না
উত্তরমুছুন