কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

বুধবার, ১৫ জুলাই, ২০২০

সোনালি বেগম



কালিমাটির ঝুরোগল্প ৮৬




অনুসন্ধান

বস্তু, মন, শরীর –– জগতের অস্তিত্বের পথ ধরে চলতে চলতে থমকে দাঁড়ায় সে, অনামিকা। দার্শনিক রণেদেকার্ত-এর বিখ্যাত উক্তিটি মনে পড়ে তার ‘cogitoergo sum’ অর্থাৎ ‘আমি ভাবি, তাই আছি’। অনামিকা ভোরের সূর্যের আলোয় স্নান সারে। কিন্তু ‘চিন্তা’ এবং ‘সত্তা’-র ধারণা মানুষ কতদূর তাদের অনুসন্ধানে কাজে লাগাতে পারে, সে ব্যাপারে এই উক্তি কিছুই বলে না। অনামিকা ছাদে উঠে আসে। সারি সারি টব, সে জল দেয়। শুকনো পাতাগুলো ছিঁড়ে ফেলে দেয়। উজ্জ্বল প্যানজি, ডায়ান্থাস, ডালিয়া, কার্নেশন, গোলাপ, নানা রকমের মরশুমি ফুল ফুটে আছে। মাটি তৈরি করা, সার মেশানো সবই তার নিজের হাতে করা। আদতে সমস্ত জ্ঞানেরই ভিত্তি অভিজ্ঞতা, সে মানে।

অনামিকার মাথার উপর ছড়ানো নীল আকাশ। পাশের বাড়ির ছেলেমেয়েরা সাদা রঙের পায়রা পোষে, আকাশ ডানায়-ডানায় ছেয়ে গেছে। গমের দানা ছড়িয়ে দেয় সে। কয়েকটা পায়রা নেমে আসে ছাদে, দানা খুঁটে খায়। শীতের রোদ্দুর মেখে নিজের মনেই তর্ক-বিতর্ক করতে বেশ ভালো লাগে তার। কখনও কখনও বন্ধুদের সঙ্গেও। আসলে সনাতন পদার্থবিদ্যার অবস্থানটা হল প্রশ্নাতীত বাস্তবতার। কিন্তু কোয়ান্টামতত্ত্বের ভেতর জানা যায় যে প্রশ্নাতীত বাস্তবতার ভিত্তিকে বাদ দিয়েও বিজ্ঞান সম্ভব। ইলেক্ট্রনের ‘অবস্থান’ এবং ‘গতিবেগ’ অনিশ্চয়তার সূত্র থেকেই ব্যাখ্যা করা সম্ভব। সেখানে নিউটনীয় বলবিদ্যা অক্ষম হয়ে পড়ে।

অনামিকার মনে পড়ে যায় দার্শনিক প্লেটোর সেই গুহা-র উপমা। সে ভাবে যে সত্যিই সে গুহাবন্দী জীব হয়ে উঠছে ক্রমশ। তার পিছনে আগুন। দেয়ালে তার নিজের এবং অন্যান্য বস্তুর ছায়া দেখতে পাচ্ছে সে। সুতরাং শুধু ছায়াগুলো জেগে উঠছে তার কাছে, এগুলোই তার বাস্তব জ্ঞান হয়ে উঠছে। তাকে আরও সচেতন হতে হবে। তার এই বন্দীদশা থেকে পালিয়ে মুক্তির আলো ছুঁতে হবে। সঠিক সত্যকে জানতে হবে।

এই সময় সন্দীপদার কল্ এল। জানালেন যে মেনটাল অ্যাসাইলামের সেই মেয়েটি মঞ্জু আজ সকাল থেকে উধাও হয়ে গেছে। কথাগুলো শুনে অনামিকার বুক কেঁপে উঠল। এখনই বাইরে বেরোতে হবে তাকে, মঞ্জুকে খুঁজে বের করতে হবে। অনিশ্চয়তার মায়াঘোরে মঞ্জুর মুখশ্রী ভেসে উঠল আকাশে।

0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন