কালিমাটির ঝুরোগল্প ৮৬ |
কুমারসম্ভব
নীরবের কাজ সব কম্পিউটারে। আর অফিসিয়াল ভিডিও কনফারেন্স করবে নিয়মিত। বিয়ে হয়েছে তিনবছর। ঘর সাজাতে আর বেড়াতে দিন কেটে যাচ্ছে। আরো একটা ব্যাপার আছে। ওদের ভিতর যৌনতা নেই। অথচ খুব ভালো বন্ধু। পাশাপাশি বসে ছবি-টবি তোলে। পর্নো দেখে, সিনেমা দেখে। কিন্তু একেবারেই আবেদনহীন। এরপর বাপের বাড়ি শ্বশুরবাড়ি সামলানোর ব্যাপার আছে। বিয়ের আগের যে বিশেষ কোনো প্রেমঘটিত ধাক্কার গল্প আছে, তাও না। দুজনেই মেধাবী পড়ুয়া ছিল। দুজনেই চাকরি করছে। ছিমছাম মসৃণ সবকিছু। শুধু শরীরটা ক্লিক করে না। অন্য কোন নারী বা পুরুষের প্রতিও আকর্ষণ বোধ করে না। ডাক্তারের কথামতো নানা কসরৎ করে অবশ্য। কাজের কাজ কিছু হয় না। মানে এতদিন হয় নি।
এবারো মার্চ মাসে উত্তরভারত বেড়াতে যাবার সব ঠিকঠাক। কিন্তু করোনার কারণে হয় নি। একে অন্যের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখুন -- এই বিজ্ঞপ্তিতে পৃথিবীর আকাশ মাটি জল ছেয়ে গেছে। দুজনেই ভাবছে ওরা কি অসমাপ্ত থেকে যাবে? ঋতি একদিন কাঁদো কাঁদো হয়ে বলেই দিল একে অন্যকে ছাড়া বাঁচতে পারবে না। ঋতির কান্না দেখে নীরব অবাক। ঋতিকে বুকে জড়িয়ে ধরে এমনভাবে, যেভাবে আগে কখনো ধরে নি। নীরবের মনে হল ঘরের পর্দাগুলো খুব হাততালি দিচ্ছে। সোনামনি কাঁদে না দাঁড়াও তোমার জন্য চকোলেট নিয়ে আসি ফ্রিজ থেকে। ঘরবন্দীর কারণে এখন প্রচুর সঞ্চয়। প্রয়োজনাতিরিক্ত সময় ধরে একে অন্যের ঠোঁটে ঠোঁট গুঁজে চকোলেট খেল। আর সারাদিন পোষাক ফেলে দিয়ে হনুমানের মতো চলাফেরা করতে লাগল। সোফা খাট ডিভান চেয়ার ঘরের মেঝে রান্নাঘরের সিমেন্টের বেদি বাথরুমের শাওয়ার সবকিছু কামাধিকরণের কাজে লাগছে। কাজের লোকেরা এসে বিরক্ত করবে না। কী একটা গুপ্তধন খোঁজার মত করে নীরব ঋতির শরীরে তন্ন তন্ন করে পঞ্চেন্দ্রিয়কে কাজে লাগাচ্ছে। ঋতিই মনে করিয়ে দিল আলমারিতে তুলে রাখা চিভাসরেগালের কথা। প্রচুর ঢালাঢালি ঢলাঢলি করে মদিরা পান করতে লাগল। আর বাচ্চাদের মতোই আঙুলের সাহায্যে নানা মুদ্রা তৈরি করে একে অন্যকে দেখাচ্ছে হাসছে। আজ কম্পিউটার চালু করতেই ভুলে গেছে নীরব। নীরব দেখল ওর হাতের তালু পায়ের তালু ঘামছে। হঠাৎ মনে হল গ্ৰামের বাড়িতে গরুদের সঙ্গমের দৃশ্য। এবং ঋতিকে কোলে বসিয়ে হনুমান শিম্পাঞ্জি বাঁদর কচ্ছপ জিরাফ সিংহ বাঘ বিড়াল ইত্যাদির সঙ্গম প্রক্রিয়া দেখে যেতে লাগল একের পর এক। উলঙ্গ অবস্থায় খাওয়া দাওয়া ভুলে জড়াজড়ি করে থাকল। ঋতি যেন ওর জমিয়ে রাখা সমস্ত প্যাস্টেল কালার গলিয়ে একটা শক্ত মোটা কিছু তৈরি করতে চাইছে। শেষে নীরবও হাউ হাউ করে কেঁদে ফেলল। সেদিন সারাদিন ‘রোজা’ সিনেমার গান আর জবাফুলের পুংকেশরটিতে প্রাণ সঞ্চারের খেলা। মানুষ মরে যাচ্ছে সারা পৃথিবী জুড়ে! সময় কম! দ্রুত অমৃত তৈরি করে নিতে হবে।
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন