সমকালীন ছোটগল্প |
জোসেফ
কে-র যে গল্পগুলো কোনোদিন কাফকা লেখেন নি
(১)
জোসেফ কে ও সোনিয়া:
এখন
যখন কালো মড়ক ছড়িয়ে পড়েছে এবং কে জানেন যে তাঁর বাঁচার আশা অতিশয় ক্ষীণ যেহেতু বেশ
কিছুদিন ধরেই তিনি ভুগছেন ক্ষয় কাশি ও ফুসফুসের সংক্রমণ রোগে... ৩৯-এর জোসেফ কে ভাবেন
তাঁর কি নারী বা বিবাহ ভীতি ছিল? কেন? প্রাগ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে উত্তীর্ণ হয়ে
ব্যঙ্কে খুব মন দিয়ে কাজ করেছেন আর ডায়েরিতে কিছু লেখা। হোমারের মহাকাব্য নয়, তলস্তয়
বা দস্তয়েভস্কির মত মোটা উপন্যাস নয়... শীর্ণকায় বা মিতায়তন কিছু গল্প আর খান কয়েক
উপন্যাস... পাঠযোগ্য? তাঁর প্রকাশক বন্ধুকে বরং বলবেন সেসব পুড়িয়ে ফেলতে। তাঁর অসুস্থতাকে
জেনেও যে নারীরা তাঁর দয়িতা হতে চেয়েছে বা বিয়ে করতে চেয়েছে... বিয়ে নিয়ে ভীতি ছিল
কেন তাঁর? কোন্ সুবিশাল রাজকার্যটাই বা করতে পেরেছেন বিয়ে না করে? নাকি ভেতরে ভেতরে
জোসেফ কে ভয়ানক স্বার্থপর? একা অকৃতদারের জীবনে নি:সঙ্গতা যেমন আছে, তেমন সময়কে দুই
হাতে নিজের মত কাজে লাগানোর বিষয়টিও আছে। বিবাহিত বন্ধুদের বাড়ি গেলে সুখী ও স্বাস্থ্যবান
পুতুলের মত শিশুদের দেখলে ভাল লাগে ঠিকই... কিন্ত সেই স্ত্রীর সাথে রুটিন মাফিক লাগাতার
বৈবাহিক সম্পর্ক, বাজার-ঘাট, রান্না-বান্না, সাংসারিক নানা খরচের হিসাব-নিকাশ, বাচ্চার
জন্ম, হাগু-মুতু-ডায়াপার-দুধেরশিশি-ধোপার বিল-ডাক্তারেরখরচ-সব্জি ও দুধের দাম-বাচ্চাদের
হোমওয়ার্ক... পাগল করা সব বিষয়! নাকি কঠোর ইহুদি পিতার সন্তান জোসেফ কে নিজের সাথে
সমঝে উঠতে পারেনি যে এই খ্রিষ্টান সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রাগে একজন ইহুদি হিসেবে তাঁর সংসারটি
ঠিক কেমন হবে? বোন ত’ লক্ষী মেয়ে ছিল। ভাই বলতে কাজিন ভাইদের ভেতর বড় কাজিন আদর্শ ইহুদি
পিতার আদর্শ বড় পুত্র। পরিবারের ব্যবসা সামলানো, ইহুদি এক ব্যবসায়ীর কন্যাকেই সময়মত
বিয়ে করা ও তিন/চারটি সন্তানের পিতা হওয়া... সময়মত সিনাগগে যাওয়া। মেজো কাজিনটি একদম
বিপরীত। দীর্ঘকায় ও ইহুদি যুবক হয়েও ব্যবসায় না ঝুঁকে পটু ঘোড়সওয়ার ও নারীপ্রেমী...
এক খ্রিষ্টান নারীর প্রেমে পাগল হয়ে পিতৃব্যের সাথে কি লড়াই তার... নারীটি কিন্ত তেমন
আকর্ষণীয়া ছিল না দেখতে... মলিন ও নিরানন্দ ইহুদি ঘেটোতে যে অতি সাধারণ ইহুদি মেয়েটি
বড় হয়ে ওঠে, সে-ও বোধ করি সেই খ্রিষ্টান নারীটির থেকে সুন্দরী দেখতে... কিন্ত মেজো
কাজিন কি পেয়েছিল তার ভেতর কে জানে... পুরো পরিবারের সাথে লড়াই করল বহু বহু দিন...
কিন্ত খ্রিষ্টান হয়ে ওঠার সিদ্ধান্তটিই নিতে পারেনি। সেটা না হলে বিয়েও সম্ভব না। এমন
বেশ কিছু বছর পর সেই নারীটিই ক্ষোভে ও রাগে আর এক ইহুদি ছোকরাকে উল্টো খ্রিষ্টান করে
বিয়ে করে বসল। মেজো কাজিন আজো বিয়ে করেনি। কিন্ত পরিবারে যা হয়... সবচেয়ে ভাল ও নীতিবান
বড় ভাই, বোন বা কাজিনকে আমরা শ্রদ্ধা করি আর অপেক্ষাকৃত দুষ্টু, অবাধ্য বা বিদ্রোহীটির
দ্বারা প্রভাবিত হই। কে-র হলো ঠিক সেই হাল।
বিশ্ববিদ্যালয়ে
যখন সে পড়তে যাচ্ছে, তখনো সে জানে যে গলির সামনের রাব্বির বাড়ির বড় মেয়ে সোনিয়া...
তার সহপাঠিনী... তাকেই প্রস্তাব করবে সে। গড়বে আদর্শ ইহুদি সংসার। তেমন সবুজ সঙ্কেত
একাধিকবার সে দিয়েছে সোনিয়াকে আর সোনিয়াও লজ্জিত, সুখী মুখে মেনেই নিয়েছে। কিন্ত বিশ্ববিদ্যালয়
শেষ করতে না করতে মেজো কাজিনের সম্পর্কটি ভেঙ্গে
গেলেও কে-কে সে উদ্বুদ্ধ করেই যায়, ‘সবকিছুর পরও আমরা ইহুদি। প্রাগে আমরা সংখ্যালঘু।
দিনের শেষে সেই ঘেটোর জীবন। খ্রিষ্টান মেয়েদের দ্যাখো- কি হাসি-খুশি, প্রাণোচ্ছল তারা!
আমি পারি নি - কিন্ত তুমি তেমন কিছু করো! সংখ্যালঘু
হয়ে থাকার ভেতর কোন কৃতিত্ব নেই।’
জোসেফ
কে আর্তনাদ করে, ‘কিন্ত আমাদের পবিত্র ভূমি থেকে উচ্ছেদ করা থেকে শুরু করে হাজার বছর
ধরে যাবতীয় অমর্যাদা, খুন-ধর্ষণ, সম্পত্তি লুণ্ঠন, ধর্মনাশ করেছে এই খ্রিষ্টানরা। খোদ
শেক্সপীয়ার ‘মার্চেন্ট অফ ভেনিসে’ কি লিখেছেন? বলো ত’ কি লিখেছেন?’
‘কে-
তুমি লেখক হতে চাও? লেখক হয়ে তুমি কি করে এত রক্ষণশীল? তুমি জায়োনিস্ট আন্দোলনের সমর্থন
করছো।’
‘হ্যাঁ-
তুমি ত’ কমিউনিস্ট। অথচ তাদের ভেতরেও সূক্ষ্ম ইহুদি-বিদ্বেষ আছে।’
‘রক্ষণশীল
হয়েও তুই লিখতে চাস?’
সেসময়েই
রাশিয়া থেকে আসা কমিউনিস্ট নারী জোয়া দ্যুনিয়েভস্কায়ার সাথে পরিচয়। দীর্ঘাঙ্গী, টানটান,
ভাবালু দুই চোখ আর কোঁকড়া চুলের এক নারী। প্রাগে সমাজতান্ত্রিক আদর্শ ছড়িয়ে দেবার
কাজেই তার আসা। একটা বিষয় কি... কে-র মেজো কাজিন তার চেয়ে অনেক সুদর্শন হলেও তেমন সুন্দরী
খ্রিষ্টান নারী সে পায়নি। উল্টো কে অত সুদর্শন না হলেও এবং খানিকটা অসুস্থ হয়েও আর
নিজের অসুস্থতা নিজেই সবাইকে রাষ্ট্র করে বললেও তার কাছে অনিন্দ্য সুন্দরী খ্রিষ্টান
নারীরা প্রতি মুহূর্তে আসে। মনে হয় প্রাগের সুন্দরীতমারা কে-র দিকেই আসে। কেন? লেখক হিসেবে খুব যে খ্যাতিমান হয়ে উঠতে পেরেছে
তা-ও ত’ না।
‘কি
তুই সোনিয়াকে বিয়ে করার কথা ভাবিস? বাচ্চা-কাচ্চা সেই তালমুদই পড়বে, সিনাগগেই যাবে।’
‘আমি
ইহুদি- আমার বাচ্চা ত’ তালমুদই পড়বে। সিনাগগেই যাবে।’
‘
কি ভয়ানক সঙ্কীর্ণ মনের তুই!’
মেজো
কাজিন যেন খাঁটি শয়তান। কিন্ত শয়তানের প্রভাব বিস্তারের ক্ষমতা প্রায়ই ঈশ্বরকেও ছাড়িয়ে
যায়। ছটফট করে জোসেফ কে। সোনিয়া কি তবে তার উপযুক্ত নয়? কেন? সে-ও ত’ পড়াশোনা করে একটা
ব্যঙ্কে কাজ নিয়েছে। দিব্যি দেখতে- শুনতেও ভাল। কিন্ত মেজো কাজিন তার ছোটবেলার হিরো।
সে যা বলে তা-ই বালক কে শুনেছে সবসময়। এখনো শোনে। সে সময়েই জোয়া দ্যুনিয়েভস্কায়ার সাথে
দেখা। শুরুতে আর দশজন পরিচিতার মতই। যতই সুদর্শনা হোক। জোয়া তার দু’বছরের বড়ও। তেমন
জোয়া এক বরফ ঝড়ের রাতে রাশিয়াতে বিপ্লবের হাল-হকিকত নিয়ে আলাপের পর কে যখন বিদায় নিচ্ছে...
তুষারপাতের কারণেই আলোচনায় কম মানুষ এসেছিল, দু’জন শ্রোতা ঘরে অসুস্থ শিশু আছে বলে
আধা ঘন্টা আগে উঠে গেছে... মোমের আলোয় বিপ্লবের অ-আ-ক-খ বলতে বলতে দু’বছরের বড় জোয়া
সহসা তার কুঞ্চিত কেশরাশি নিয়ে রক্তিম মুখে নুয়ে পড়ে... কে হতভম্ব হয়ে যায়। মিনিট দশেক
এমন অবনত মুখে থাকার পর জোয়া কোনমতে মুখ তোলে। কে টলতে টলতে বিদায় নিয়ে বের হয়। কিন্ত
তারপর থেকেই জোয়ার আচরণ কঠোর। প্রাগে বিপ্লবীদের আলোচনা সভায় কখনো দেখা হলে... যদিও
কে বিপ্লবী নয়... জোয়া তাকে এড়িয়ে যায়। কে বয়সে ছেলে হয়েও দু’বছরের ছোট বলে? জোয়া ত’
এখন বছর চারেকের ছোট এক ছোকরার সাথে ওঠা-বসা করছে বলেই সবাই জানে। তা’ সেসময়টা জোয়া
তাকে এড়িয়ে চলে আবার অন্য কোন মেয়েকে কে-র সাথে কথা বলতে দেখলেও জোয়ার চেহারা দেখার
মত হয়। এমন সময়েই ফরাসী কাউন্টেস মাদমোয়াজেল নাতালী ডুরখেইম এলেন প্রাগে। তিনি জার্মান
জানেন বেশ। এক ধনাঢ্য পরিবারের ভোজসভায় পরিচিত কয়েকজনের অনুরোধে পড়বে না পড়বে না করেও
কে তার একটি ছোট গল্প পড়ে শোনানোর পর কাউন্টেস নাতালী অসম্ভব প্রশংসা করলেন। প্যারিসে
সাঁলোগুলোয় কাউন্টেস নাতালীর শিল্প-সাহিত্য বোদ্ধা হিসেবে সুনাম আছে। জোয়ার আচরণ হয়ে
উঠলো আরো কঠোর। কে তেমন কিছুই বোঝে না। দিনের শেষে কাজ সেরে, আড্ডা সেরে বাড়ি ফিরলে
একাকী সোনিয়ার কথা ভেবে তার মন খারাপ হয়। আবার মেজো কাজিনের বিদ্রুপও কানে লাগে। সোনিয়া
কি আসলেই তার উপযুক্ত নয়? প্রাগের সুন্দরীতমারা কি তাকে বিশেষ মূল্য দেয়? তবে তারা
সবাই ক্রিশ্চিয়ান। তাদের কথা ভেবে গল্প লিখতে পারে কে। তবে কে জানে যতক্ষণ খেলাটা মানসিক,
ততক্ষণ সে নিরাপদ। ক্রিশ্চিয়ান প্রেমিকাদের সাথে দৈহিক সম্পর্কে জড়ালে আর যদি বা কখনো
কোন ক্রিশ্চিয়ান আর ইহুদির মিলনে কোন ভ্রুণ জন্ম নেয়ই, তবে এই খ্রিষ্টান সংখ্যাগরিষ্ঠ
রাষ্ট্র তাকে টেনে-হিঁচড়ে গির্জায় নিয়ে যাবে। বাপ্তিষ্ম করাবে। ব্যথিত মা-বাবা, ভাই-বোন,
আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-পড়শি আর নিজেকে আড়াল থেকে আরো আড়ালে সরিয়ে নেয়া সোনিয়া... পারবে
না কে। পারবে না। তবু মেজো কাজিনের প্ররোচনায় কিনা কে জানে- প্রাগের ক্রিশ্চিয়ান সুন্দরীতমারাও
তাকে মাঝে মাঝে বিপথগামী করতে চায়। সে সংখ্যালঘু আবার খুব স্বীকৃত না হলেও প্রতিভাবান...
এ হিসাব মেলানো আসলেই কঠিন। যা হোক, জোয়া দ্যুনিয়েভস্কায়া আর নাতালী ডুরখেইম... দুই
ক্রিশ্চিয়ান তরুণীকে নিয়ে ভাবতে ভাবতেই নাতালীর কাছে তার মার্কিনী ধনকুবের প্রেমিক
আসে একদিন। নাতালী তাকে বিয়ে করে নিউইয়র্ক চলে যায় আর জোয়া সবাইকে অবাক করে কে-র চেয়ে
... কে আদৌ সুদর্শন নয়... তবে তার চেয়েও সব দিকেই অতি সাধারণ একটি ছেলের সাথে ঘোরা
শুরু করে। পাড়ায় সোনিয়ার সাথে দেখা হলেও সে কঠোর চোখে তাকায়। কে কাজে মন দেয়। এই একটা
জিনিষ তাকে সব অমীমাংসা, সব দ্বন্দ থেকে মুক্তি দেয়। খুব ভগ্ন স্বাস্থ্যেও সারাদিন
ইন্স্যুরেন্স কোম্পানীর কাজের পর রাতে পান্ডুলিপিতে অবিশ্রান্ত কাটাকুটি করতে কে-র
কোন কষ্ট হয় না। কাজই যেন তার আরাধ্যা নারী। এর মাঝেও জীবন ছোট ছোট নানা কৌতুক উপহার
দিয়েই চলে। যেমন, কে-র ইন্স্যুরেন্স কোম্পানীতে এলো এক বিবাহিতা মার্কিনী তরুণী মার্গারেট
ক্যাম্পবেল। বিবাহিতা হয়েও কে-র সাথে তীব্র ফ্লার্ট করতে শুরু করলো। কে খানিকটা গললোও
বটে। আবার এসময়েই মার্গারেটের বর এলো আর মার্গারেট চাকরি ছেড়ে চলে গেল।
বেশ
কয়েক বছর পর জোয়ার সাথে হুট করে দেখা হলে একদিন কে কি মনে করে এগিয়ে গেল। জোয়া ব্যঙ্গ
করে তাকে ‘বুর্জোয়া অবক্ষয়বাদী লেখক- কেমন আছেন?’ বলায় সারা রাত কাশি বাড়লো কে-র।
সে জানতে পেল জোয়া তাকে চরিত্রহীন এবং মাদমোয়াজেল নাতালীর একসময়কার শয্যাসঙ্গী বলে
চারদিকে রাষ্ট্র করে বেড়াচ্ছে। কিন্ত বাস্তবে নাতালীর সাথে তার কিছু হয়নি ত’। দূর!
আহ- জোয়া তবে তাকে ভুল বুঝেছে? জোয়ার ভুল সে ভাঙ্গাবে। কিন্ত জোয়া বুঝি নিজের ভুল স্বীকার
করার মেয়ে? কে-কে সে জায়নিস্ট বলে ঘৃণাও করে।
যদিও বহু পরে কে জানতে পারবে যে জোয়া কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দিলেও তার বাবা ছিল জারের
আত্মীয় এবং রাশিয়ায় একাধিক ইহুদি বিরোধী দাঙ্গায় দায়িত্বপ্রাপ্ত সামরিক অফিসার। বহুবার
ইহুদির রক্তে লাল হয়েছে জোয়ার বাবার হাত। জোয়া কি এজন্য কোনদিন স্বাভাবিক হতে পারেনি?
‘জোয়া
তোকে হয়তো ইহুদি বলেই মানতে পারেনি। ও মনে করে ইহুদি মানেই দুশ্চরিত্র, খল আর মন্দ।
ও রাতে নাকি ঘুমানোর আগে জামার ভেতর থেকে রূপোর ক্রুশ বের করে চুমু খায়। আসলে খাঁটি
অর্থোডক্স ক্রিশ্চিয়ান। এবার তোর জোয়াকে নিয়ে অবসেশনটা ছাড়। আর তুই যে ভাবিস শুধু
জোয়ার সাথে তোর সংসার করার স্বপ্ন তৈরি হয়েছিল এটাও আসলে ভুল। জোয়া তোকে এত বেশি প্রতিরোধ
করেছে বলে তোর এত বেশি অবসেশন।”
‘অবসেশন
না। আমি যে আসলে নাতালীর সাথে শোওয়া কেন - হাত ধরাও হয় নি-’
‘কে-
তুই নির্বোধ। পুরুষ মানুষ হয়েও শরীরী শুদ্ধতা নিয়ে এত ভাবতে হবে? কন্ট্রাসেপটিভ তৈরি
হচ্ছে বলে মেয়েরাই এখন এসব নিয়ে কম ভাবছে। আর কিনা তুই? এছাড়া হু ইজ জোয়া? ওরও ত’ নাকি
গোপনে গোপনে অনেক সম্পর্ক! রেসিস্ট একটা মেয়ে। আমি নিজে ক্রিশ্চিয়ান ছেলে হয়েই বলছি।
ও ইহুদিদের খুব খারাপ ভাবে। তাই তোকে এত চরিত্রহীন ভেবেছে এত দিন। বাদ দে ওর কথা। আর
একটা সত্যি কথা বলব? তুই আসলে তোর লেখা ছাড়া কাউকে ভালবাসিস নি?’
‘কাউকে
ভালবাসিনি?’
‘উহুঁ
- বিয়ে করতে বা সংসার করতে অনেক দায়িত্ব নিতে হয়, অনেক সময় দিতে হয়। তুই সেসব দেবার
মানুষ একেবারেই না। কাউকে না। তোর জিউ পাড়ার সোনিয়াও না - ক্রিশ্চিয়ান মেয়েদেরও না।
তবে কিনা লেখক হিসেবে তোরও ত’ কিছু ফ্যান্টাসি দরকার। কিছু কল্পনা দরকার। তাই মাঝে
মাঝে ভাবের ঘরে ধোঁয়া দিস। তাই এই জোয়া, এই নাতালী আবার সেদিন কি এক পিয়ানো বাদিকার
গল্প করলি না?’
‘হ্যাঁ-
মাদাম পোপোভা। অবিশ্বাস্য সুন্দরী, পিয়ানো বাদিকা আবার ছবি আঁকেন। বললে বিশ্বাস করবি
না - এক নৈশভোজের আসরে অনেক সুদর্শন যুবককে ফেলে আমার কাছে এসে ফিসফিস করে বললো যে
আমার উদ্দেশ্যেই এখন বিঠোফেনের নাইনথ সিম্ফনী বাজাবে! তার দু’দিন পরে একটি বাগানে একবার
দেখা হলো। আমার কয়েকটি স্কেচ এঁকেছেন। অথচ আমি ত’ অপেরার অভিনেতা নেই।’
‘তারপর?’
‘এখন
আবার ক’দিন একটু চুপচাপ।’
‘হা-
হা- সুন্দরী খেলছে তোকে নিয়ে। তবে তোর ত’ কচ্ছপের খোল আছে। বেশিদিন কেউই তোকে নিয়ে
খেলতে পারে না। আবার তুই তোর ইন্স্যুরেন্সের কাজ আর লেখার ভেতর ঢুকে যাবি, তাই না?’
‘হ্যাঁ-
মানে-’
‘নারী
তোর কাছে কোনদিন অপরিহার্য কিছু ছিল না। ইন্স্যুরেন্সের কাজ করতে করতে বিরক্ত লাগলে
কাজ ছেড়ে কয়েকদিন বিশ্রাম নিস। লেখার পৃষ্ঠা বাড়ে তখন। আবার কাজ নিস। সাথে সাথে লেখা
চলে। আসলে তুই সোনিয়া-জোয়া-নাতালী-মার্গারেট-মাদাম পোপোভা কাউকেই ভালবাসিস নি!’
‘একথা
আমার মেজো কাজিনও বলে।’
‘তোর
মত উদ্ভট মানুষ আমি দেখি নি বাস্তবিক। আহ্- কাশছিস? ঘুমিয়ে পড়িস তাড়াতাড়ি।’
‘আমি
মারা গেলে আমার লেখাগুলো সব পুড়িয়ে ফেলিস। কিছু হয়নি। আর-’
‘আর?’
‘মড়ক
আসছে। আমি হয়তো বাঁচব না। সোনিয়ার কাছে ক্ষমা চাইতে পারতাম? যদিও সেই অর্থে... দৈহিক
পবিত্রতাই নিষ্পাপতার মাপকাঠি হলে ক্ষমা চাবার কিছু নেই... কিন্ত মানসিক বিচলন ত’ বেশ
কয়েকবারই হয়েছে।’
‘হা-
হা- ধর সোনিয়া ক্ষমা করলো? তারপরও পিয়ানো বাদিকার ঘাগড়ার বিবরণে তোর গল্পের একটি স্তবক
কিন্ত দিব্যি ব্যয় হবে। সোনিয়া ক’বার ক্ষমা করবে তোকে? এখন ঘুমো।”
অপার্থিব
তুষারপাতে ভরে যায় প্রাগের রাত। চারপাশে মড়কে মরছে মানুষ। জোসেফ কে একটি গোটা জীবন
ইহুদি যুবকের কৃত্য, লাস্যময়ী ক্রিশ্চিয়ান তরুণীদের ছায়া দেহ আর সোনিয়ার কাছে ক্ষমা
চাইবেন কি চাইবেন না ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়েন।
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন