কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

মঙ্গলবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২০

কাজল সেন



কালিমাটির ঝুরোগল্প



রিহার্সাল


নতুন নাটকের রিহার্সাল শুরু হয়েছে গত শুক্রবারে। পরিচালক নির্মলদা মোটামুটি ভাবে ঠিক করে নিয়েছেন কোন চরিত্রে কে অভিনয় করবে। কিন্তু এই বাছাই ফাইন্যাল নয়। কয়েকদিন বিভিন্ন চরিত্রে আপাতত নির্বাচিত ছেলেমেয়েদের সংলাপ শুনে শুনে ঠিক করবেন সেইসব চরিত্রে তারা মানানসই এবং বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠছে কিনা। ইতিমধ্যেই দু’একজনের চরিত্র পরিবর্তন করেছেন। যেমন মধুমিতা করছিল মিসেস মুখার্জির চরিত্র, সেটা পালটে দিয়ে মধুমিতাকে অপর্ণার চরিত্র দিলেন। অজয়কে নেগেটিভ চরিত্রে ঠিক ভালো লাগছিল না। নির্মলদা একটা সাধাসিধে চরিত্রে নিয়ে এলেন। কিন্তু শ্রীলতাকে যখন নির্মলদা বললেন যে, তোকে ললিতাবেশ্যার চরিত্রে মানাবে না, তুই বরং মিসেস মুখার্জির মেয়ের রোলটা কর, শ্রীলতা রীতিমতো ক্ষেপে গেল। ‘কেন, আমি ললিতার রোল করব না কেন? তুমি কীভাবে বললে যে, আমাকে বেশ্যার চরিত্রে মানাবে না?’

নির্মলদা বয়োজ্যেষ্ঠ পরিচালক। সবারই সম্মানীয়, কেউ তাঁর মুখে মুখে কথা বলে  না। শ্রীলতাও এর আগে নির্মলদা যেমন যেমন নির্দেশ দিতেন, তাই মেনে চলত। অভিনেত্রী হিসেবে তার সুনামও আছে। নির্মলদা প্রথমটা ঘাবড়ে গেলেও পাল্টা প্রশ্ন করলেন, ‘তুই কীভাবে বুঝলি যে তোকে মানাবে? আমি পরিচালক, তুই আমার থেকে বেশি বুঝিস?’ শ্রীলতা আরও ক্ষেপে গেল। ‘হ্যাঁ, জানি তো, তুমি ডিরেক্টর। কিন্তু আমিও তো এতদিন অ্যাক্টিং করছি, আমিও কি কিছুই বুঝি না?’
দলের ছেলেমেয়েরা বুঝতে পারছিল, ব্যাপারটা ক্রমশ অন্যদিকে চলে যাচ্ছে। নাটককে ছাপিয়ে পারস্পরিক ইগোর দ্বন্দ্ব এসে যাচ্ছে। আসলে শ্রীলতা একটু রগচটা মেয়ে। কখনও কখনও উচিৎ অনুচিৎ বোধ হারিয়ে ফেলে। নাটক করতে হলে নাটকের চরিত্রদের যে পরিচালকের কথা মেনে নিতে হয়, সে তো সবাই জানে। শ্রীলতাও জানে। তবু কেন যে নির্মলদাকে রীতিমতো চ্যালেঞ্জ করছে, তা কারোরই বোধগম্য নয়। তারা কোনো মন্তব্য করতে দ্বিধা করছিল। কিন্তু আজ এত শান্ত ও সংযত নির্মলদারও যে কী হলো, তিনি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে বেমওকা বলে বসলেন, মনে হচ্ছে তোর অভিজ্ঞতা আছে এই চরিত্রে?

এরপর যা ঘটা অবশ্যম্ভাবী ছিল এবং সেজন্য সবাই যখন মনে মনে প্রস্তুতি নিচ্ছিল, তা কিন্তু ঘটল না। রগচটা মেয়ে শ্রীলতা, যে সামান্য কারণেই ক্ষেপে ওঠে, হঠাৎই কেমন যেন নিষ্প্রভ হয়ে গেল। মুখে কোনো কথাই যোগালো না। একান্ত বাধ্য মেয়ের মতো মুখটা অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিজেকে আড়াল করার চেষ্টা করল। রিহার্সাল রূমে এক অদ্ভুত নিঃশব্দতা নেমে এলো। নির্মলদাও কথাটা বলেই একেবারে নিশ্চুপ হয়ে গেলেন। হয়তো কথাটা তিনি এভাবে বলতে চাননি। অসতর্কতায় বলে ফেলেছেন। বলে অসহায় বোধে তিনিও মুখ ঘুরিয়ে নিজেকে আড়াল করতে চেষ্টা করছেন।

রিহার্সাল রুমের এই স্তব্ধতা দলের প্রতিটি ছেলেমেয়ের কাছে অসহ্য মনে হচ্ছিল। বরং শ্রীলতা তার স্বভাবমতো যদি ক্ষেপে উঠে নির্মলদাকে দু’চার কথা শুনিয়ে দিত, তাহলে সবাই স্বস্তি বোধ করত। কিন্তু আশ্চর্য! শ্রীলতা কেমন যেন গুটিয়ে গেল! আর নির্মলদাও কেমন ভ্যাবলা হয়ে গেল!

0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন