কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

শুক্রবার, ৫ এপ্রিল, ২০১৯

অপরাহ্ণ সুসমিতো




৩৭ ও ২৪


লোকটা ভাবছে এই জায়গাটার নাম বালুচর কেন? নামটা এত সহজ যে এই নামের পিছনের ইতিহাস খুব একটা ভাবার প্রয়োজন পড়ে না হয়তো একসময় এখানে বালুরচর ছিল হয়তো আশেপাশে একসময় মরা নদী ছিল

নদী মরে যায় কেন ভাবতে ভাবতে লোকটা লেবু আড়াআড়ি কাটতে গেল লেবু আড়াআড়ি কাটার কোন দরকার ছিল না, একভাবে কাটলেই হলো সে কোন খাবার লেবু ছাড়া খেতে পারে না লোকটার বন্ধুরা বলে সে মারা গেলে তার কবরের পাশে লেবুগাছ লাগিয়ে দেবে

লোকটার ভাবনা মুহূর্তে টসটসে লেবুর সবুজ রঙ থেকে দূরে সরে যায় আচ্ছা সে মরে গেলে তাকে কবর দিতে হবে কেন? সে জন্মসূত্রে মুসলমান বলে?

এইসব ভাবনার প্রকৌশলে লেবু কাটার সময় তার বাম হাতের তর্জনীর সামান্য একটু কেটে গেল। সে কবরভাবনা বাদ দিয়ে আঙ্গুলটার দিকে আনমনে তাকিয়ে রইল। চিলতে রক্তের আভা দেখা যাচ্ছে। অল্প রক্তের একটা সৌন্দর্য আছে। তাকিয়েই রইল রক্তের দিকেক্রমশ রক্তের আকার বড় হচ্ছে। হোক!

সব্জি খিচুড়ি খাবে সে লেবুর রস মাখিয়ে। খিদে জমেছে টনটন। রান্নাঘরের একখণ্ড জানালা দিয়ে তেমন কিছু দেখা যায় না। এই মেস থেকে আরেকটা মেসের নোনাধরা দেয়াল। তার রুমমেটরা কেউ নেই এখন। কাটা আঙ্গুলে অল্প অল্প পানি ঢালছে। সময় যাচ্ছে একটু একটু। রক্ত পানিতে মিশে তরল হয়ে গড়িয়ে যাচ্ছে। যাক না!  

লোকটার মাথায় তখনি ভাবনা এলো ডানায় ভর করে। জীবন তো এরকমই, সময় পার করে দেয়া। আচ্ছা তার নাম ইরফান কেন রেখেছে বাবা মা? ইরফান শব্দের অর্থ কী?  

মানুষের নাম যদি সংখ্যায় হতো ! যদি তার নাম বাবা মা রাখতেন ৩৭? স্কুল কলেজে সবাই তাকে ডাকত সাঁইত্রিইইইইইইইইইইশ...
কেউ নাম শুনেই তার জন্মসূত্রে প্রাপ্ত ধর্ম বুঝতে পারত না।
সেই মেয়েটাকে ডাকত চব্বিইইইইই্‌ইই্শ...

লোকটা নিজেই নিজের এই আবিষ্কারে মুগ্ধ হয়হাত কাটার এই জলচিকিৎসা থামিয়ে খিচুড়ির প্লেটে মনোযোগী হয়। লেবুটা ঠিকমতো কাটা হয়নিলেবুর খণ্ডিত অংশে খানিক রক্ত লেগে আছে শার্টের পকেটে কলম উঁকি দেবার মতো করে।

৩৭ আর ২৪ সংখ্যাটা তার মাথায় এলো কেন চট করে? অন্য সংখ্যাও তো ভাবতে পারত সে! ক্লাসের সেই পুতুল মেয়েটা সব সময় সাদা রঙের সালোয়ার  কামিজ... ওর রোল ২৪ বলে?

একাকী খাবার খাওয়ার এই একটা প্লাস পয়েন্ট। প্লেটে অনেক খাবার নাও, খেতে থাকো আর ভারত-পাকিস্থান যুদ্ধ উত্তেজনার মতো ভাবতে থাকো।

মেসের জানালা দিয়ে রোদ পালিয়েছে অনেক আগেই। রাতের খাবারের আয়োজন করতে বুয়া এসেছে। বুয়া লোকটার এই ধীর গতির খাবারে বিরক্ত হয় না, অবাক হয় না। বুয়া জানে।

খিচুড়ি খেতে ভালো লাগছে না। আরেকটু লেবু মাখাবে কিনা... সবুজ রঙা কাটা লেবুটার দিকে তাকিয়ে ভাবে কাটার সময় কি লেবুটা ব্যথা পেয়েছে?

লোকটা তন্ময় হয়ে বুয়াকে ডাক দিলো তখুনি : চব্বিইইইইইশ...

0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন