কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

শুক্রবার, ৫ এপ্রিল, ২০১৯

সুমী সিকানদার




লুকোচুরি

অনেক অনেককাল আগের কথা, একদা এক পেঁয়াজ-রঙের স্টিলের আলমারিতে একজোড়া পায়জামা ও পাঞ্জাবি বাস করিত। তাহারা ছিল ধবধবে প্রবল ইস্তিরিযুক্ত  নিপাট ভাঁজে ভাঁজ। এই স্টিলের আলমারিটি এতকাল ব্যবহত হইলেও তাহার মধ্যে যে এরকম ছাপা ছাড়া সাদা পায়জামা ও পাঞ্জাবি থাকিতে পারে, তাহা কাহারো জানা ছিল না।

অনুমান করা যাইতে পারে, এই পাঞ্জাবীর মালিক বেশ লম্বা মানুষ ছিলেন। হাতা প্রায়ই গুটাইয়া রাখিতেন, কেননা হাতায় স্পষ্টদাগ ইস্তিরিতে যায় না। পায়জামার  নিচটা একেবারে ফকফকা, কোন দাগ নাই। অর্থাৎ তিনি পোষাকের তুলনায় লম্বা ছিলেন। সম্ভবত তাঁহার বেতের চেয়ার টেবিল এবং ক্লিপবোর্ডে কয়েকদিস্তা কাগজ  আটকানো থাকিতো। তিনি রোজ সকালে ভিটামিন ডি খাইতে খাইতে পাতার পর পাতা লিখিতেন। হলদেটে কাগজের পলকা পৃষ্ঠাগুলি সেইভাবেই ক্লিপবোর্ডে   আটকানো অবস্থায় আলমারি হইতে বাহির হইতে চাহিল বাহির করিবার সময় ঝুরঝুর করিয়া সকল সাদা কাগজ নিজেই নিজের মর্মান্তিক সর্বনাশ ঘটাইল

ইহার পর উক্ত আলমারি হইতে একে একে বাহির হইতে লাগিলো কলম, ঝোলা,  চেকের লুঙ্গি, ভেলভেটের টুপি, সাদা সুতির চাদর, কুরুশকাঁটার টুপি সহ  নেপালিটুপি। যিনি এই সমস্ত টুপির মালিক তাঁহাকে বাস্তবে টুপি সহ কোনকালে  কখনই বাইরে দেখা যাইত না। টুপির সহিত আদৌ বন্ধুত্ব ছিল না তাঁহার কিন্তু টুপিরা তাঁহার বন্ধু হিসেবেই বাকি সময়টুকু আলমারিতেই রহিয়া গিয়াছিল।  

বেশ কিছু কুচি করা লেস দেখিয়া তো অবাক! মেয়েদের জামার নিচে নাচিতে থাকা  লেসগুলি নাচ করিতে করিতেই আলমারি হইতে বাহির হইতে লাগিল। কিছু ফ্রিল দেয়া মাথার ব্যান্ডও। এগুলি তাঁহার হাতের তৈয়ারি, কে যেন বার্তা রাখিলেন।
তাহা হইলে পুতুলটি কাহার? আর সিগারেটের খালি প্যাকেট, রাংতা, খামে রাখা ছবি, অনেক অনেক খুচরা টুকরো ভাঙ্গা সময় – কাহার?

এছাড়া ছিল পুরু ঝকঝকে কাঠের পাইপ। সোনালি বর্ডার দেয়া কাঠের পাইপটি সুদৃশ্য, দামী। পাইপটি ঠোঁটে পুরিয়া তিনি যখন টান দিতেন তখন পাইপের  অভ্যন্তরে অবস্থিত চূর্ণ তামাকেরা যত্রতত্র জ্বলিতে থাকিত। ইহার ফলে অবাধ স্ফুলিঙ্গের সৃষ্টি হইত। এই স্ফুলিঙ্গ আলো-কর্তার গালে কখনও তীব্র, কখন ম্রিয়মান ভাবে জ্বলিতো। এই আলোটুকু কেবলই প্রস্থানরত কাহাকে মনে করাইতো!

চশমার ফ্রেমটা ছিল মোটা কালো রঙের। ভাঙ্গা অবস্থায় আলমারির জরুরী ড্রয়ারে অবস্থান ধর্মঘট করিতেছিল

ফেরৎ যাইবার পর এতকাল পরে তাঁহার পরনের এবং ব্যবহার্য জিনিস দেখিয়া নানা প্রশ্ন আমার কিশোরী মনে উদয় হইতে লাগিল। কিন্তু এই বিষয়ে মুখ খুলিবার কোন উপায় নাই। বরং ভাঁজ করা কাপড়গুলি ফের গুছাইয়া আলমারির তাকে রাখিয়া আসাই ভালো। সবকিছু জায়গা মতো রাখিয়া আসিবার সময় হঠাৎ ফের  আলমারির দরজা ঘটাং শব্দে খুলিলাম। নাহ, অন্য কোন শব্দ নাই। যেখানে যেখানে  যা যা থাকিবার সব ঠিকঠাকই আছে। নিশ্চয়ই আমার শুনিতে কিছু ভুল হইয়াছে।  আলমারির ভিতর হইতে নিশ্চয়ই কেউ আমাকে ‘মামনি’ বলিয়া ডাকিয়া উঠিতে পারে না! কখনই পারে না!























Top of Form
Bottom of Form


2 কমেন্টস্: