কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

শুক্রবার, ৫ এপ্রিল, ২০১৯

সুবল দত্ত




বিজ্ঞান ভৈরব এ্যাপার্টমেন্ট


গ্রাউন্ড ফ্লোর (কামাদি কুসুম) 

বিশাল বেসমেন্ট ঢালাও বিছানা ফ্যান ও কুলারের ব্যবস্থা। মাঝরাত। সারি সারি মানুষ মানুষী শুয়ে। - কাম তুমি দেখছো? কেমন নিজের নিজের পার্টনার খুঁজে যৌন মিলনে মত্ত? গায়ে ঢাকাও আর রাখছে না। বেহায়া সব। যেন, লোকে দ্যাহে ত দেহুক, আমরা ত দেহাইবারেই চাই, এমন ভাব। - ঠিক বলছো রতি। এই জায়গাটার মাহাত্ম্যই এমন। এখানে পশুমৈথুন ও বিকৃতকামও হয় দেখেছি। আচ্ছা রতি? তোমার উত্তেজনা হচ্ছে না তো? বিছানায় যাবে? - না কাম। যৌনতা পবিত্র। তাই চাই পরিবেশ নিজস্ব বাস সময় ও সংগীতময় মন প্রাণ দেহ। তবেই প্রেম উর্ধ্বগামী হয়। এখনও আমাদের আত্মচেতনা আসেনি তাই বোধ নেই। আর এখন তো আমাদের ছাদে যেতে হবে। তাই না? 

ফার্স্ট ফ্লোর (রসনা) 

বিশাল ডাইনিং হলে পরিত্যক্ত টেবিল কুর্সি এঁটোকাঁটা বেঁচে যাওয়া বিরিয়ানি মাছ মাংসের ভ্যারাইটি পদ ও যাবতীয় নিরামিষ লোভনীয় গন্ধ। এই গন্ধে এখন বমি পায়। ক্লান্তি আসে। কেননা পেট ভরা আছে। পেট ও ইচ্ছে খালি থাকলে এই গন্ধ তখন স্বর্গীয়। 
এইসব একাই বসে ভাবছিল অনীহা। তার পরিমিত আহার। আসক্তি নেই বলেই এইসব ভাবতে পারছে। কিন্ত না। এখন ছাদে যাওয়ার সময় হয়েছে। সেখানে আসল দেখা জানা। 


সেকেন্ড ফ্লোর (অনাহত আবেগ)
 
মালিকের আদেশ। ননস্টপ অটো স্টিরিওফোনিক ড্রাম বাজবে। ঢিম ঢিপ ঢিম ঢিপ...এখানে মুক্ত পানশালা। ঢালাও মদ। আকন্ঠ নেশা করে ফুর্তি গান প্রেম গালাগালি না পাওয়ার দুঃখ লুকোনো আবেগ ঠেলে বাইরে বের করা এই সব অনেক কিছু। মাঝরাতে এখন সব ঝিমিয়ে। কেবল বাজনার শব্দ ঢিম ঢিপ... হৃদয়হরণ জেগে। না সে নেশা করেনি তাই পানাসক্তদের আবেগগুলো জানতে পারলো। এখন সময় হয়েছে। ছাদে যেতে হবে। 

থার্ড ফ্লোর (মূর্ছনা) 

এখানে সবরকমের বাদ্যযন্ত্র। এখন মূক। মাঝরাত অব্দি সংগীতময় আবেগ স্মৃতি আজীবন গাঁথা থাকবে। যখনই কষ্ট অশান্তি তখনই সুর সঙ্গম। দুজন মানুষ এখনো সুর তরঙ্গের রেশে ভাসছে। ওদের নাম লয় ও ঝঙ্কার। ওরা বিশুদ্ধ ভাব তরঙ্গে ভাসছে। এবার উত্তরণছাদে যেতে হবে। 

ফোর্থ ফ্লোর (আদেশ) 

ম্যানেজমেন্ট কমিটির গুরুত্বপূর্ণ মিটিংরুম। এই বিশাল কর্মকান্ডের চালনা ও ডিসিশন মেকিং গোলটেবিলটি এখন ফাঁকা সুনসান অনুষ্ঠান চালানোর যাবতীয় আদেশ ও আদেশ পালন শেষ। এবার কর্মকর্তাটির নিজস্ব কাজ। উনি দেওয়াল জুড়ে মস্ত আয়নাতে নিজেকে দেখলেন। এই সৌম শান্ত প্রতিবিম্বটিকে লোকেরা প্রাণসাহেব বলে ডাকে। উনি দরজা খুলে ওপরে যাবার সিঁড়ির ধাপে পা রাখলেন। 

ছাদের উপর মুক্ত আকাশ (হাজার তারার আলো) 

এখানে মুক্তি প্রশান্তি ব্যাপ্তি। সবকিছু নিচে ছেড়ে এখানে যে দাঁড়াবে মাথার উপরে অসীম অন্তরীক্ষ তারই অধিকার। 
-
তোমরা ঘোরানো সিঁড়ি বেয়ে এসেছো তো? কাম রতি, নিচে যা দেখেছ ভুলে থেকো। তোমরা সব কাছে এসো। এখানে অসীম জ্যোতিহীন জ্যোতিতে এক হয়ে এসো এবার পৃথিবীতে মানুষের মনে ছড়িয়ে পড়ি।






0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন