অপেক্ষা
(১)
এই মুহূর্তে তুমি ছিলে। পরমুহূর্তে নেই
এই না থাকাগুলো গুনতে থাকি, প্রতিটি সেকেন্ড, মিনিট... কখনো লিখি অভিমান, কখনো অভিযোগ অথবা যে কথাগুলো তুমি সামনে থাকলে কখনোই বলা হত না, যেমন, তোমার জন্য মন খারাপ, আকাশটা মেঘলা, কিংবা কী করছ তুমি?
ভাবছ আমার কথা?
অথবা শুধুই একটা ভালবাসার চিহ্ন।
মামুলি দু-এক কথাও যে বলি না তা নয়। খেয়েছ? আমার এই কাজটা করে দেবে গো!
এই কথাগুলোর দরকার ছিলো না। তবু এগুলোর মধ্যে দিয়েই আমি তোমাকে ছুঁতে চাইছি, আর তুমি আনমনে বসে ভাবছ এমনি কিছু কথা।
(২)
লালবাতি সবুজবাতির গা বেয়ে বৃষ্টি। থেমে থাকা সিগন্যাল। গাড়ির বনেটে নেচে যাচ্ছে রুমঝুম শব্দে। নুপূর বাজছে তার পায়ে।
বৃষ্টি নেমেছিল ঘরের বাইরে উঠোনে। সেখানে তার হাসির কলতান। ছুঁয়ে যাচ্ছিল চৌকাঠ।
বৃষ্টিটা নেমেছিল ঘরের ভেতরেও। ভাসিয়ে দিচ্ছিল মনের সিঁড়িগুলো। এক দুই তিন করে ক্রমশ...
স্তব্ধ কোলাহল। থমকে রাস্তা। লালবাতি স্থির।
একটু আগের রিমঝিম সুর থেমে এখন শুধুই নিজের সঙ্গে বোঝাপড়া।
(৩)
একটা ঝকঝকে রোদ জানালার কার্নিশে, হাতে বই। পড়তে পড়তে মন হঠাৎ মেঠো সুর শুনতে পেল। হুড়মুড় করে সিঁড়ি ভেঙে নেমে এলাম রাস্তায়। কে গাইছিল পরাণ মাঝিরে পরাণ ঘাটে বাঁধা ছিলো প্রেমের নাও রে...
কবে কোন মাটির রাস্তায় গঙ্গার ধারে ভেঙে পরা ঘাটে জীর্ণ সিঁড়ির বাঁকে প্রাগৈতিহাসিক বটগাছের ঝুড়িতে ফেলে এসেছি পরাণ। আজ তবে কে ডাক দেয় এমন করে!
সরু পিচের রাস্তায় গাড়ি, রিকশা, বাইক আর অজস্র মানুষের মিছিলে কেমন করে খুঁজব তারে?
পরাণ ঘাটে বাঁধা ছিল সুখের নাও রে... পরাণ আমার...
রোদ ক্রমশ দূরে সরে যাচ্ছে...
(৪)
এমনি সন্ধ্যা যতবার এড়াতে চাই চোখ
ততবার সামনে এসে দাঁড়ায়
মনে জাগে চঞ্চল শিহরণ,
যেন ঘূর্ণি-পাওয়া পাতা, ভালোবেসে
অনন্ত স্রোতে পাক খেয়ে নেমে আসে এই মাটিতে-
কী আনন্দ চারদিকে।
এমনি আগুন রাঙা রূপ, যতই ফেরাই চোখ,
যতই এড়াতে চাই, দেখি সে পুড়িয়ে দিচ্ছে তৃষ্ণার্ত প্রাণ।
আমি জল খুঁজি, নদী খুঁজি
সে বুঝি আমাকে রিক্ত করেছে ভালোবেসে।
এত ভালোবাসা হয়!
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন