তৃষ্ণার ক্যালরি বিতৃষ্ণার টক্সিনস - ১৮
ভাবনাকে তুলে এনে শব্দের সাঁকোয় বসানোর পরও যে গর্ত থেকে যায় সেখান থেকে
চুঁইয়ে নেমে আসে গলিত মোম। হাতে মুখে মোম ছ্যাঁকা লাগে। আঙুল গলে গেলে
আমি আর কলম ধরতে পারিনা, মাপতেও পারিনা গলনাঙ্ক। ঠিক পারি না বলা যায় না।
চেষ্টা করি না। শিষ্ট সামাজিক আমরা বড্ড বেশী আপোষে অভ্যস্ত হয়ে গেছি।
অমীমাংসিত আপোষের একপ্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত পর্যন্ত উপাসনারা জুলিয়েট
ছদ্মনামে দড়ির ওপর রয়েলচামচ মুখে নিয়ে হেঁটে গেলে অনবরত ভালো থেকো ভালো
থেকো বলে যায় সুজনেরা। ভালো থাকার ফর্মুলাটা ঠিক কী?
জলের গভীরে আলোকের প্রতিসরণ রেখার ঘনত্ব অনুযায়ী বেঁকে যাওয়া ব্যাপারটা
পুরোটাই আমার মাথায় ছিল।মাথায় ছিল পাহাড় নিষেধগুলো। তবুও জলের অনাবশ্যক
অতলে আমি যখন ক্রমশ তলিয়ে যাচ্ছি কেউ আমাকে ব্রহ্মলোক শেখায় নি, সাবমেরিনের
টেকনোলজিও না।
পাব্লিক বলছে আপনি তিনদিন বেঁচে গেলে ৩০ বছর বেঁচে যেতেন, আমি জানি না
কেন এবং কিসের প্রতীক্ষায় আমি শবরী ছিলাম এবং আপনাকে হারিয়েছি। ভাবনার
ছেদ বিন্দুতে যে আবার মিলিত হব পৃথবী ততটাও গোল নয়। এপিসোডের পর এপিসোড
তৃষ্ণার ক্যালরি আর বিতৃষ্ণার টক্সিনস থেকে লাভাস্রোত উগলে আসছে আমার সিরিজ
ও সিরিয়ালে। আপনি আমাকে ক্ষমা করেছেন তো কবি?
তৃষ্ণার ক্যালরি বিতৃষ্ণার টক্সিনস - ১৯
আপোষহীন চলে যাওয়ার আগে শেষবারের মতো থেমেছিল কিছু আপোষ। আপোষও
একধরনের প্রাপ্তি কখনো কখনো। ঋতুস্তব্ধ যৌনকালে শুধু শুয়ে শুয়ে ছুঁয়ে ছুঁয়ে
যাপনগল্প বলে যেতে হয়।
ঘুমের আয়োজন বলতে কিছু ওষুধ আর রাংতামোড়া দুঃস্বপ্ন। জানি জোর
করেই ঘুমাতে হবে, তবু কৃষ্ণচাঁদ ছায়াছায়া, ছাইরঙা জীবনের পিছিয়ে পড়াগুলোকে
স্মৃতির দিকে একটু ঠেলে এগিয়ে দিয়ে,মায়ের ফেলে যাওয়া পন্ডস ম্যাজিক
পাউডার মেখে ফেডেড জিন্স জ্যোৎস্নায় দাঁড়ালাম ব্যালকনিতে, হয়ত এভাবেই
আজ রাত কাটবে!
পিপাসা না মেটার রবীন্দ্রগানের টপ্পা অঙ্গে গেয়ে যাওয়া করুণ হায়রণন, হায়
নাহি মিটিল... হায় নাহি মিটিল... পিপাসার সরোদ বাজছে, আঙুল দিয়ে টেনেটেনে
কে যেন টঙ্কার তুলছে মহাধমনীতে... মূর্ছনা বেয়ে নেমে আসছে তৃষ্ণার ক্যালরি
বিতৃষ্ণার টক্সিনস...
মশারি
মোহমশারি
এমন মোহে পড়ে এর আগে কখনো মশারি কিনে ফেলিনি তাই কেনার পর ভেবে
আকুলাচ্ছি। ফেরিওয়ালার গলিকুকুরের মতো করুণ চোখ... চোখের অসহায় আবেদন
ছিল। খিদে ছিল সংবেদনা ছিল। চেরিরঙ কার্পেটও তো ছিল। ফরাসডাঙা ডিঙিয়ে
যেত ইনহি লোগোঁ কা ছিনা হুয়া দোপাট্টা! ব্রাউন ফোয়ারা! অথচ আমি মশারিটাই
কেন কিনলাম!
মশারি কেনার কোনো তাৎপর্য আছে কি নেই এর চেয়েও বড় কথা মশারির রঙ গোলাপি,
গর্ভরঙ মেঘলাগোলাপ আমি কখনো দেখি নি, ডাক্তারবাবু
বলেছিলেন। ডাক্তারবাবুই
জরায়ূর কান্নাও শুনিয়েছিলেন। এই রঙটাও কি কোনো তাৎপর্যেই তাহলে আমার
পছন্দ
হল! অর্গাজম হারিয়েছি কি আমি? প্রত্যক্ষ প্রমাণ
নেই কোনো। ঋতুরাগ তো ছেড়ে যায় নি
এখনো। মশারির আবদ্ধতা কতোদূর
বদ্ধভূমি কতখানি বধ্যভূমি আমি জানি না, আমি
মুক্তির সংজ্ঞাও জানি না। যতটুকু জেনেছিলাম কবি জীবনানন্দের কাছে
"মশা তার
অন্ধকার সংঘারামে থেকে তবু জীবনের স্রোত ভালোবাসে।"
বিপ্রতীপ মশারি
মশারিটা টাঙাতে গিয়ে মনে হল সীমানাকে তারকাঁটা ভেবে কখনো মশারি খাটাই নি
ব্যক্তিগত খাটে, আমি কি এখন থেমে যেতে চাইছি? তবেকি
আমি আবদ্ধ হতে চাইছি?
আমার আমিয়ানার ভিতর গুটিপোকা হয়ে সৃজন ও ক্লোনকে লালার লালনে রাখতে
চাইছি?
অথচ মুকুলে ছেয়ে গেছে আমের আম ইয়ারানা। মশারিওয়ালা
যে কাশ্মীরের লোক একথা
বোঝাতে গিয়েই যত ইঁট পাটকেল। আমার সমস্ত একাউন্ট থেকে ইয়ার দোস্ত গায়েব
হল
মশাই। মশারির রঙ একটা বয়েসের পর ততটা জরুরী নয়। কিন্তু প্রত্যেক ভোটের
জন্য
কিছু গণতান্ত্রিক রঙ থাকে এবং প্রতিটি রঙেই রক্তের ছিটে লেগে থাকে একথা
মশারি
বিক্রেতাই জানালেন সভয়ে। তিনি চলে যাচ্ছেন কেননা তাঁর মেয়ে মিনি, এখনো
অক্ষত
দেহে প্রতীক্ষায় আছে। চলে যাওয়ার আগে তিনি যাতে যুদ্ধ না ঘটে এই আবেদন
জানিয়ে
যাচ্ছেন।
আমার চোখের সামনে এখন ভারতবর্ষরঙের একটা প্রকান্ড অথচ অসহায় মশারি অথবা
মশারির আকৃতির এক ভারতবর্ষ টাঙানো আছে দড়িতে। মশারির ভিতর ঘুমিয়ে
আছে
মৃত সেনারা। ঘুমিয়ে আছে আরও আরও মৃত সামাজিক আর চারিদিকে বীভৎস নোংরা
মশারা ভ্যানভ্যান
করে মরছে...
|
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন