বিহঙ্গম বিতান ও সাবিনা
বিহঙ্গম ভাবতে পারেনি,
বিতান তার কাছে ফিরে আসবে। যাওয়া মানে তো চলে যাওয়া, ফেরার কোনো প্রতিশ্রুতি থাকে
না। তাছাড়া বিতানের প্রস্থানপর্বে বিহঙ্গম বিতানকে কখনও ফিরে আসার জন্য অনুরোধও
করেনি। বলেনি – যদি ইচ্ছে হয়, ফিরে আসিস! বিতানও বিদায় মুহূর্তে বলেনি – আসি! বরং
বলেছিল – যাই! এসব কারও জানার কথা নয়। কেউ জানতও না। তবে সাবিনা জানত। কেননা সেদিন
ঘটনাচক্রে সাবিনা উপস্থিত ছিল সেই বিদায়লগ্নে। কিন্তু এই বিদায়কে কি যথাযথ বিদায়
বলা যায়! বিশেষত যেখানে আসা যাওয়ার প্রেক্ষাপটে কোনো শর্ত নেই, কোনো অজুহাত নেই, কোনো
বাঁধন নেই!
সাবিনা ঠিক মনে করতে
পারে না, কোন্ বছরের কোন্ মাসের কোন্ তারিখ থেকে বিতান বেশি বেশি করে থাকতে
শুরু করেছিল বিহঙ্গমের সঙ্গে। অনেকদিন থেকেই তো বিহঙ্গমের কাছে বিতানের আসা যাওয়া।
কখনও দিনে, কখনও রাতে। আবার কখনও দিনে রাতে। তা সাবিনা এত হিসেব নিকেষ করে দেখেনি।
বিহঙ্গমের কাছে বিতানের নিত্য নৈমিত্তিক আসা যাওয়াটা নিতান্তই স্বাভাবিক ও সাধারণ
ব্যাপার হয়ে উঠেছিল। যেমন কোনো এক বছরের কোনো একমাসের কোনো এক দিন থেকে বিহঙ্গমের
কাছে বিতানের থেকে যাওয়াটাও ছিল স্বাভাবিক ও সাধারণ। আর তাই বিতান যেদিন ‘যাই’ বলে
চলে গেল, সেদিনও সাবিনা ঘটনাটা একান্তই সাদামাটা বলে মেনে নিয়েছিল।
তবে বিহঙ্গম অনেক ভেবেও
ঠিক যেন বুঝে উঠতে পারেনি, বিতানের চলে যাওয়ায় সে কতটা কষ্ট পেয়েছিল, কতটা আহত
হয়েছিল! বিতান তার কাছে ছিল, বড় বেশি জড়িয়েই ছিল, ভীষণ রকম শারীরিক ও মানসিক
নিবিড়তায় নিমগ্ন ছিল। তাই হয়তো বিতানের চলে যাওয়াটা বিহঙ্গমের কাছে খুব সহজ কিছু
ছিল না, সরল সমীকরণ ছিল না। অথচ বিতানকে ধরে রাখারও কোনো শর্ত ছিল না, কোনো অজুহাত
ছিল না, কোনো বাঁধন ছিল না। আবার বিহঙ্গম এটাও ঠিক বুঝে উঠতে পারে না যে, বিতান
চলে যাওয়ার পরে যখন সাবিনা ঠিক একই ভাবে, একই মানসিকতায়, কোনো শর্ত বা অজুহাত অথবা
বাঁধন ছাড়াই তার কাছে থেকে গেল, সেই থেকে যাওয়াটা বিহঙ্গমকে কতটা আশ্বস্ত করেছিল,
তার অদৃশ্য ক্ষতে কতটা প্রলেপ লাগিয়েছিল!
বিহঙ্গম ভাবতে পারেনি,
বিতান তার কাছে ফিরে আসবে। হয়তো সাবিনাও ভাবতে পারেনি। আবার হয়তো বিতানও ফেরার আগে
ভাবতে পারেনি তার ফেরার কথা! কিন্তু এটাই তো এই সম্পর্কখেলার নিয়ম! খেলতে গেলে সেই
খেলার নিয়ম মানতেই হয়। যদিও চলে যাওয়ার সময় বিতান আনাড়ি খেলোয়াড়ের মতো ‘যাই’
বলেছিল। ‘যাই’ বলতে নেই, বলতে হয় ‘আসি’। আসলে সবাই তো ঠেকেই শেখে। তা সেই খেলার
নিয়মেই বিতানও একদিন ফিরে আসে বিহঙ্গমের কাছে। আর কী আশ্চর্য, সেদিনও সাবিনা
ঘটনাচক্রে উপ্সথিত ছিল বিতানের পুনঃপ্রবেশপর্বে! সাবিনা ভাবে, তাই তো! ভুল করে
বিতান ‘যাই’ বলেছিল। কিন্তু তার ফিরে আসাটা সম্পর্কখেলার নিয়ম মেনেই। আর এভাবেই
জমে ওঠে খেলা। যেমন এখন সাবিনার প্রস্থানপর্বে ‘আসি’ বলে চলে যাওয়াটাও তো সেই
খেলার নিয়ম মেনেই!
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন