কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

সোমবার, ২৩ মে, ২০১৬

তমাল রায়

সমুদ্রকে ভালোবাসতে নেই

অলি তুমি ভালো। পাহাড়ি নদীর মতোই স্বচ্ছতোয়া। পাহাড়কে চিরটাকাল আমার হিসেবি পুরুষ মনে হয়। যে ধীরে ধীরে তার কেরিয়ার গড়ে তোলে। আমি তো বেহিসেবী, বাউণ্ডুলে। তাই ফিরে ফিরে আসি সমুদ্রের কাছেই। দেখো সমুদ্রেরও এক বাউন্ডুলেপনা আছে। গীর্জার ঘড়িতে রাত একটার ঘন্টা বাজলো
চারদিক নিস্তব্ধ। আমি হাঁটতে বেরিয়েছি একা। এ সময়ে সমুদ্র রহস্যময়ীর মতো রূপের পরত খোলে একে একে। 

একটু আগে তোমায় অহন ফোন করেছিল। তুমি জানতে না অহন এখন মদ খেয়ে চুর। ও তো  হিসেবী বামুনের পো। ও তোমায় এস টি ডি করে ফোন কখনো তো করে না। আজ করল। অবাক লাগলো নাআসলে জানো, সব মানুষের মধ্যেই লুকিয়ে থাকে এক বেহিসেবি মন, সুযোগ বুঝে টুক করে সে বেরিয়ে আসে। অহনের  গডফাদার হলো ওর বিশুদা। ও বেহিসেবী হয় বিশুদা সাথে থাকলেই। তার আগে  তোমায় ফোন করেছিল নিদাঘ অপরাহ্ণ। তোমার ওর কন্ঠ শুনতে ভালো লাগে। খুব  পুরুষালি কন্ঠ। ভাবছো অসময়ে তোমায় কেন হোয়াটস এপ-এ এত বড় মেসেজ!  ভাবছ অহন বা অপরাহ্ণর প্রতি ঈর্ষায়? উঁহু। যে যার যোগ্যতায় এ পৃথিবীতে বাঁচে। আমি ঈর্ষা করে কী করবো অলি! ওরাও তো তোমার বন্ধু। তোমার ওদের ভালো  লাগে। যেমন লাগতো আমাকেও। ঢেউ আসছে। আমায় ভিজিয়ে দিল।

না এই হোয়াটস এপ রেকর্ডারে নিম্নচাপের উত্তাল সমুদ্রের গর্জন আমি শোনাতে  পারতাম। কিন্তু শোনাবো না। কী লাভ! তুমি তোমার জীবন, সংসার আর লেখালিখি আর ভালো মানুষ বন্ধু স্বজন নিয়ে দিব্বি আছোঅতল জলের আহবান তোমায় শুনিয়ে কী হবে! কিন্তু জানো অলি, আমি তোমার কাছে প্রথম আসি সমুদ্র ভেবেই।  পরে বুঝেছিলাম ব্যাক ওয়াটার। হ্যাঁ ঘন নীল। ঢেউও তো প্রবল ছিল। কিন্তু ওই যে  অবিন হালুমকে বিয়ে করলে ও তোমায় বাঁধলো। না ভেবো না, আমি ওদের অসম্মান করছি। আমাদের এসব নামেই ডাকা হতো হস্টেলে। আমার আগে যোগ হতো চুতিয়া  নীল। রাগ করছো? কর না। চুতিয়া মানে বোকা। অভিধান দেখে নিও। হ্যাঁ  বোকা ছিলাম তো বটেই! নইলে সমুদ্রের নেশায় পড়ি?

অলি প্রবল সাইক্লোন এখন এখানে। প্রশাসন সতর্কবার্তা জারি করে গেছে। পাড়ের কাছেই যাদের বসতি তাদের সরিয়ে নিয়ে গেছে নিরাপদ দূরত্বে। আর তা শুনেই তো আমি এখানে। আমি এখন হাঁটুজলে। হ্যাঁ নেশা। আমি হাঁটুজল মানে, বিচে নামিনি, নামছি। পাশের রাস্তায় আপাতত। সেখানেই হাঁটুজল। বোল্ডারে আছাড় মারছে, ঢেউ। আহা! এমন কিছু যা আমায় গ্রাস করে নিতে পারে, আমার সমস্ত ভালো মন্দ নিয়ে আর এক সব্বোনাশী  ভালো লাগায় বুঁদ করে দিতে পারে, তেমন এক চরিত্রের সন্ধানেই তো তোমার কাছে যাওয়া। তুমি বলেছিলে আগুন নিয়ে খেলা যায়, ঘর করা নয়। আমি হেসেছিলাম। আজও তাই। আহহহ অলি! এ নির্জনতায় একা আমি  আর পাগল করা সমুদ্র নেশা। আমি নেশা না করেও মাতাল। আমার মাথা ছুঁলো  ঢেউ। আহ আহ! অলি ঠিক যেভাবে তুমি আমায় আদর করতে। আজ একটাও  সিগাল নেই। ওরাও কি মধ্যবিত্ত তোমার মতোই! না অলি দোষ দিই না  তোমায়। আই রিয়েলি হেট মিডিওক্রিটি।
অলি কিছু দেখা যায় না। তবু মেসেজ করছি। পায়ের তলা থেকে সরে যাচ্ছে সব। মাথার ওপর দিয়ে ঢেউ যাচ্ছে। ও হ্যাঁ, তোমায় বলা হয়নি এই অসময়ে কেন এই মেসেজ? শুভেচ্ছা জানাতে। অহনকে জানালাম, অপরাহ্ণকে, তোমাকে, আর তোমার হাবি অবিনকেও। এবার আমিই সিগাল হব। ভালো থেকো আমার অলি, আমার স্বচ্ছতোয়া। পাহাড় যেও বেড়াতে। আমি সমুদ্রে, সব্বোনাশে। প্রেমে আশরীর সমুদ্র  সঙ্গমে। ফেয়ার ওয়েল মাই কনকুবাইন। সমুদ্রকে ভুলেও ভালোবেসো না। সে সুন্দর আর ভয়ংকর। আর সমুদ্র রিয়েলি হেটস মেডিওক্রিটি


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন