কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

সোমবার, ২৩ মে, ২০১৬

নভেরা হোসেন

শম্পার সাথে একদিন জুলেখার জেরা পর্ব অথবা জুতা কাহিনী


হঠাৎ হঠাৎ শম্পা ফোন করে, কিন্তু যখন তাকে ফোন করা হয়, খুব কমই রেসপন্স করে ফোন সাইলেন্ট মুডে দিয়ে রাখে খুব সকালে ঘুম ভাঙে বলে শম্পা বেশিরভাগ  সময় ক্লান্ত থাকে, কখন বিছানায় গিয়ে ঘুমোবে এই চিন্তা মাথায় ঘুরতে থাকে সেদিনও হঠাৎ শম্পার ফোন, চয়ন খায়রুল হাবিবের ডৌল : জুলেখার জেরা পর্ব দেখতে যাবো কিনা! এই ধরনের প্রস্তাবে না করার কোনো প্রশ্নই ওঠে না আর যেখানে সে নিজে যেতে চাইছে অন্য সময় আমিই তাকে বলি, চলো আজ বইমেলায় যাই, না হলে অমুকের কবিতা পাঠ, তমুক অনুষ্ঠানে যে সব প্রস্তাব তাকে দেয়া হয় তার বেশির ভাগই সে উড়িয়ে দেয় তবে দুএকবার সাড়া দেয়, আর তা হয়   ভয়ানক আনন্দের একবার কলকাতার কবি বন্ধুর পাঠনো বই আনতে গেলাম এক  পত্রিকার অফিসে সম্পাদককে অনেকক্ষণ অপেক্ষার পর পাওয়া গেল তিনি বার বার চা খেতে বললেন আর আমরা আমাদের তাড়ার কথা বলতে লাগলাম নানা কথা হলো সাহিত্য, দেশ, কাল, রাজনীতি; কিন্তু বন্ধুর বইয়ের প্রসঙ্গ আর আসে না শেষে লজ্জার মাথা খেয়ে বললাম, কলকাতা থেকে পাঠনো বইটা তো অফিসেই আছে, তাই না? সম্পাদক সাহেব নির্লিপ্তভাবে কথা বলেই চললেন। প্রায় এক ঘণ্টা পর খুব  স্লিম এটি কবিতার বই হাতে দুজনে বেরিয়ে এলাম বন্ধুর পাঠানো পুস্তিকার জন্য  এতক্ষণের অপেক্ষা যেন ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে দিল এরপর হট পেটিস আর সফট ড্রিঙ্কস খেতে খেতে পল্টন হতে মিরপুর ফেরা এ যেন ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাত্রা টিকাটুলি,  যাত্রাবাড়ি, সিদ্ধিরগঞ্জ, চৌদ্দগ্রাম পথ আর ফুরোয় না সোয়া দুঘণ্টা গাড়ি ভ্রমণ করার পর বাড়ি ফেরা তাও যে ভাগ্য ভালো বাড়িটা ঠিকঠাক জায়গা মতো ছিল,  মানুষগুলোও আর রাতের খাবারও ছিল গরম এবার শম্পা নিজেই বলল, চলো চলো অপেরা দেখতে যাব আমি বললাম, দেখ যা্বে তো শেষপর্যন্ত? না হলে আমার একা যেতে ইচ্ছা করবে না, আর মনও খুব খারাপ হবে শম্পা অভয় দিয়ে বলল,  এবার যাবই, সুতরাং নো চিন্তা আমিও চয়ন খায়রুল হাবিবের জুলেখার জেরা পর্ব  দেখার জন্য মুখিয়ে উঠলাম এদিকে মন যদিও ঝড়োকাক হয়ে আছে অনেকদিন, তবু  বন্ধুর সাথে গাড়িভ্রমণ আর অপেরা দেখা এই দুই চিন্তায় মন বিভোর হয়ে থাকল আনন্দে একটা পদ্যও লিখে ফেললাম যথারীতি বিকেল হলো, ঘড়িতে পাঁচটাও বাজল কিন্তু শম্পা করে না, ধরেও না শেষে ফোন ধরে বলল, যাবে? বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে,  চলো আজ বাদ দি ওর কথা শুনে আঁৎকে উঠলাম বলো কী? আবার সেই   ব্যারাম? না না আজ যাবোই, আজ যাইহোক তুমি আমার বাসার নিচে চলেসো একঘণ্টা চা, ফেসবুক করে শেষে বন্ধুর আগমন মনে হচ্ছিলো হার্ট খুলে বাইরে চলে  আসবে ছাতা নিয়ে গাড়িতে উঠলেও বৃষ্টির ছিটা গায়ে এসে লাগল শিল্পকলা   একাডেমিতে আজ বেশ অল্প সময়েই পৌঁছে গেলাম বাইরে মুষলধারে বৃষ্টি গাড়ির জানালা দিযে ঝাপসা দেখা যাচ্ছে সবুজ রঙের গাছের সারি, অনেকটা জলে গোলানো রঙের মতো শম্পা ক্লান্তিতে প্রায় ঘুমিয়ে পড়ল আমি এতদিনের জমানো কথা সব বলতে লাগলাম শম্পা হাঁ হুঁ করতে লাগল মনে হলো, ওকে ঘুমোতে দেয়াই উচিত  ছিল শিল্পকলায় যখন পৌঁছালাম এক হাঁটু পানি শেষে ঘুরে গাড়ি বারান্দায় ঢুকলাম,  কিন্তু বৃষ্টির হাত থেকে রেহাই নেই অপেরা হচ্ছে এক্সপেরিমেন্টাল হলে, সেখানে যেতে  হলে বৃষ্টিতে ভিজতেই হবে ওখানে বন্ধু বান্না আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিল সাড়ে সাতটা বেজে গেল, বৃষ্টি থামার কোনো লক্ষ নেই শম্পার গায়ে এক ফোঁটা বৃষ্টির পানি পড়তেই আঁৎকে উঠল, না না আমি চলে যাই আমার জ্বর আসতেছে, তোমরা দে নাটকক। ওর কথা শুনে দমে গেলাম শেষে শুরু হলো ছাতা খোঁজা ড্রাইভার  আর ছাতা নিয়ে আসে না শেষপর্যন্ত বৃষ্টিতে ভিজেই হলে ঢুকলাম এসির ঠান্ডা বাতাস শম্পার গায়ে লাগতে গা কাঁটা দিয়ে উঠলো ঢুকেই বলল, আমি চলে যাই তুমি নাটক দেখ আমি বললাম, না তাহলে আমিও চলে যাব এই করে দশ-পনেরো মিনিট কাটলো সিটে বসেই শম্পা পায়ের জুতো খুলে চেয়ারের নিচে রেখেছিল যাওযার জন্য উঠতেই একটা জুতো পাওয়া গেল পায়ের নিচে, কিন্তু আরেকটা জুতো নেই। অনেক খোঁজাখুঁজি তিনজনে মিলে চেয়ারের নিচে মাথা ঢুকিয়ে খুঁজি, এদিক খুঁজি, ওদিক খুঁজি মোবাইলের আলো জ্বেলে খুঁজি কোথাও নেই। শম্পা বলল,  অসুবিধে নেই, খালি পায়েই যাব এদিকে মঞ্চে জুলেখাকে গ্রেফতার করে আনা হয়েছে  জেরা করার জন্য শেষে দেখি এই জুলেখা সেই জুলেখা না, ইনি একজন বিবেক,  একজন লেখক, তাকে কাঁটাছেড়া করা হবে মঞ্চের টেবিলে এদিকে শম্পার জুতো খোঁজা চলছে তার শরীরও খারাপ হতে লাগল পেটে অসম্ভব ব্যথা আরা থাকা যায় না বান্না কটমট করে আমাদের কীর্তি দেখছে বেচারা দাওয়াত করে আমাদের  এনে নিজেই অপেরা দেখতে পারছে না শেষে সিদ্ধান্ত হলো, শম্পা আমার জুতা পড়বে আর আমি খালি পায়ে গাড়ি পর্যন্ত যাব হল থেকে নেমে টানা লম্বা বারান্দার ঢাল,  তারপর খোলা জায়গায় বৃষ্টি... ভিজে খালি পায়ে গাড়ি বারান্দায় এলাম লোকজন  সব পায়ের দিকে তাকিয়ে আছে, যেন ভূত দেখছে তারা বিশ্বাস করতে পারছে না,  সুন্দর ফিটফাট ড্রেসে এক ভদ্রমহিলা অথচ পায়ে জুতো নেই অপেক্ষার পর গাড়ি  এসে পৌঁছালো দুজনে হাফ ছেড়ে বাঁচলাম এবার শুরু হলো কক্সবাজার যাত্রা মৎস্য ভবন থেকে শেরাটন পর্যন্ত যেতে মনে হলো, রাত ভোর হয়ে গেলমাথার মধ্যে পাখির কিচির-মিচির শব্দ প্রায় মধ্যরাতে মিরপুরে এসে পৌঁছালাম তখনও  টেলিভিশনে সুলতান সুলেমান হচ্ছে আর বাড়ির লোকজন টেবিলে খাবার সাজিয়ে রেখেছে তবে আজ ঠান্ডা খাবার, এদিকে মাইক্রো ওভেনও নষ্ট শেষঙ্কী আর করা  ফ্রাইপ্যানে খাবার গরম করে খেয়ে নিলাম বৃষ্টিটাও ধরে আসল। রাতে ঘুমের মধ্যে  দেখতে পেলাম, ইউসুফ-জুলেখা আমাদের বাড়ির ছাদে বৃষ্টিতে ভিজছে তাদের শরীরে পোশানেই, এমনকী তাদের শরীরও নেই। একটা হলো-মানবের মতো তাদের  শরীরের মধ্যে দিয়ে আসা যাওয়া করতে লাগলাম সারারাত ধরে


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন