রমার ঋতুস্নান
আষাঢ় মাস। আসামের গুয়াহাটির কামাখ্যা মন্দির। একান্নটি শক্তিপীঠের অন্যতম। রমারা সবাই মিলে
কামাখ্যা মন্দিরে এসেছে। কালিকা পুরাণ-এ সমস্ত ইচ্ছে পূরণের দেবী কামাখ্যা শিবের
পত্নী, তিনিই দেবী শক্তি। দেবী শক্তিই সতী। সতীর যোনির অবস্থান মানে
সৃজনশীলতার প্রতীক। রমা ভাবছে।
ভক্তরা ঢোল-কীর্তন করছে।
আজ সেই পবিত্র দিন। বছরের এই চারদিন মন্দির বন্ধ থাকে। এরপর শোনিতসিক্ত কাপড় ভক্তদের মধ্যে প্রসাদ হিসেবে
বিতরণ করা হয়।
বাৎসরিক ঋতুস্নান করেন দেবী কামাখ্যা
দেবী তো পবিত্র
কেন তবে মানবীরূপে আমরা অপবিত্র থাকি?
এভাবে বলতে নেই রমা! মা ধমকের সুরে বলেন।
আজ উৎসবের দিন।
চল ব্রহ্মপুত্র জলে স্নান সেরে আসি
মা, তোমার ভাবনায় আজ আমি অপবিত্র আছি
সে কি? আগে বলিসনি কেন? ছিঃ ছিঃ
মা, রাখো তো তোমার থিওরী
সংস্কার বলে একটা কথা আছে
জানি। দেবীর ঋতুস্নাত-কাপড়-প্রসাদ নেবে চলো
তুই রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাক, মন্দিরচত্বরে আসিস না
তোমায় মিথ্যেভাষণ দিয়েছি গো মা
পারিস বটে
সবাই প্রসাদ নিতে অগ্রসর
হচ্ছে। রমা
ব্রহ্মপুত্র নদীর রক্তে রাঙা জলে অবগাহন করল। মানবী ও দেবীর ঋতু মিলেমিশে অশ্চর্য এক চমক
সৃষ্টি করল। সন্তর্পণে রমা ভাবতে থাকল যে, কত কত সংস্কার আছে পৃথিবীতে,
সবই কী বোঝা যায়! যেমন সে বাংলা ইংরেজি সংস্কৃত জানে। চাইনিজ জাপানিজ এইরকম অসংখ্য
ভাষা তার অজানা। তাই বলে কি এইসব ভাষা মানুষের মুখের ভাষা নয়! সময়ের দর্পনে সে কি
খুব একলা হয়ে যাচ্ছে! এই তো জীবন অসংখ্য অসংগতি অসংখ্য সংস্কার। তার মানসচক্ষে ভেসে ওঠে মহান চিত্রকর পিকাসোর
আঁকা ছবি, যা বর্তমান সময় ছাড়িয়ে পাড়ি জমায় ভবিষ্যৎ-এর দিকে...
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন