দ্বিতীয় গ্রন্থ
আমার ছয় বছর বয়সে
আমার মা দ্বিতীয় বিয়ে করেন। বেশ মনে আছে বিয়ের হলুদ হচ্ছে, সবাই হলুদ শাড়ি পরে মা’র কপালে, চিবুকে
আলতো হলুদ লাগিয়ে দিচ্ছে আর একটু করে কেটে কেটে মিষ্টি তুলে দিচ্ছে মুখে। মাকে অপূর্ব লাগছিল হলুদ হলুদাভায়। আমি মায়ের আঁচল ধরে বসেছিলাম
অনেকক্ষণ।
বিয়ের আগেরদিন ছোটকাকু
আমাকে নিয়ে বের হলেন। সৌম্য সরকারের ব্যাটিং সুন্দরের মতো বৃষ্টি দাপুটে দিন।
কোথাও গরমের ছানাপোনা নেই। একটু শীত শীত করছিল আমার। ছোটকাকু একটা রিক্সা নিলেন।
উঠেই বললেন;
: সম্রাট টিপু
সুলতান, শীত করছে?
: হুম
: সুলতানদের শীতে
কাবু হতে হয় না। যুদ্ধে বাঁশের কেল্লায় তাহলে থাকবি কি করে? চল আজ তোকে নিয়ে চাংপাইতে পৃথিবীর সেরা
স্যুপ খাব।
মন ভালো হয়ে গেল
রিক্সার হন হন ছুটে মাখার গতিতে।
অল্প আলো আঁধারে
কাকু আর আমি স্যুপ খাচ্ছি। মা সব সময় বলতেন, খবরদার কোনো সময় শব্দ করে খাবি না। শব্দ করে না খাওয়ার অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল। ছোটকাকু জোরে
সোরে আমাকে ধমকে উঠলেন ছাত্রলীগ ছাত্রদলের সভাপতির মতো।
: ভদ্রলোকদের মতো
এরকম নি:শব্দে খাচ্ছিস কেন? জানিস, জাপানে সবাই শব্দ করে নুডলস স্যুপ খায়। আয় সুলতান শব্দ করে খাই। বলে হো হো করে হাসতে লাগলেন।
আমরা দুজন শব্দ করে
মুখ টুখ মাখিয়ে ওয়ানথুন স্যুপ খেতে লাগলাম। আহা যেন আমরা দুজন জাপান সফরে...
চারপাশের টেবিলে
লোকজনদের চেহারা দেখা যাচ্ছে না। তবে
মানুষের অস্তিত্ব টের পাচ্ছি। ফস করে ছোটকাকু আমার দিকে ঝুঁকে বললেন;
: তোর পাশের টেবিলে
যে লোকটা খাচ্ছে, তোর নতুন বাবা। খবরদার সরাসরি তাকাবি না। তেরসা করে তাকা...
আমি ঘামতে শুরু করি। স্যুপ খেতে আর ভালো লাগছিল না।
বাসায় ফিরছিলাম আবার
দুজন। রিক্সায় উঠেই আবার ঠান্ডা লাগছিল বেশ। আমি কাকুর গা ঘেষে বসে থাকলাম। ঘুম ঘুম গন্ধ।
: কিরে সুলতানব্যাটা
ঘুম পাচ্ছে?
কোনো জবাব নেই আমার।
কাকুর গায়ে সেই কোন্ ছোটবেলার বাবার গন্ধ পাচ্ছি। ঘুম ঘুম
ঘোরে বাবার কথা ভাসছিল;
: শোন টিপু সুলতান,
ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখা আসল স্বপ্ন না। যে স্বপ্ন তোকে ঘুমোতে দেবে না, জাগিয়ে রাখবে, সেটাই
স্বপ্ন।
বাসার কাছে আসতে
দেখি আমাদের বাসার পুরোটা আলো দিয়ে ময়ূরপঙ্খী সাজানো। কত অমল বর্ণ আলো! এত আলোর
দ্যুতি শাহানায় আবার আমার ঘুম ঘুম পেল। কাকুকে শক্ত করে ধরে রাখলাম। কাকুটা চুপ করে
আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
ছোটকাকু ডুকরে কেঁদে
উঠলো মনে হলো। আমার কান্না পাচ্ছে
না একদম...
তুমি সেরার সেরা... এত কম কথায়... আর তো কাউকে দেখলাম না
উত্তরমুছুন- সাঁঝবাতি
অনবদ্য ভালো একটি লেখা।
উত্তরমুছুনশ্রাবণী দাশগুপ্ত।