এক্কেকে এক
বছর খানিক আগেও ভোরের সূর্য হাতছানি দিত ঊর্মিকে। সোনালি রোদে তেতে যেত ছোট চুলের খোলা পিঠ। আজকাল সারাক্ষণ রক্তিম আকাশ। গাঢ় লাল রঙা। ঊর্মির প্রথম জীবনের রাজনৈতিক পছন্দের রঙ। এর মাঝে ঊর্মি খুঁজে
পেয়েছিল মৃত্যু চেতনা। এর মাঝে মিলেছিল ঘাতকের সন্ধান। চোখের তারায় ছিল এসবের বাস। শ্বাসে শ্বাসে ফুলে কাজের
মাঝে পেরিয়ে যায় একেক মুহূর্তের অনুভব। যেন গল্পে পড়া গ্রামের বায়স্কোপ দাদুর ম্যাজিক বক্সে
চোখ লাগানোর প্রলোভনে পড়া।
ইউনিভারসিটিতে কোনো প্রেমিক জোটেনি ঊর্মির। ওই আট তলার ইউনিয়ন রুমের
সঙ্গে ছিল লিভ টুগেদার। এখনো বন্ধ ঘরের জানালা
খুললে ঊর্মির কানে ঝিঁঝিঁর মতো বাজে অন্তর্দ্বন্দ্ব, সংঘাত, গণতান্ত্রিক মিথ্যাচারের
একঘেয়ে নৈঃশব্দ্য। দূরের সীমানায় যেখানে আকাশ নেমে এসেছে গাছের মাথায়, সেই সমান্তরাল দৃষ্টিতে
আবার ছন্দপতনের গোপন ইতিহাস।
ইউনিটের বার্ষিক সভায় প্রস্তাব, পাল্টা প্রস্তাব। যতদুর মনে পড়ে রাজনীতিতে অলিখিতভাবে নিষিদ্ধ
ঘোষিত হয়েছিল ঊর্মি। তাদের নিয়ে সতর্ক করা হয়েছিল ইউনিটের অনান্যদের। নিজেদের
ভুল ও সিনিয়রদের অরাজনৈতিক অরাজকতার কথা জানাতে তৎকালীন রাজ্য সম্পাদকের সঙ্গে তারা
গিয়েছিল দেখা করতে। এরপর ক্যাম্পাসের আটতলার স্যুইচে ভুলেও ঊর্মির হাত পড়েনি।
পরে কোনোদিন সেইসব দাদাদের কোনো সন্ধানও ঊর্মি পায়নি। যাদের চোখের স্বপ্ন আর মুখের বুলিতে পড়া ছেড়ে
লেলিন-মার্ক্সকে সিলেবাস বানিয়েছিল তারা। কলকাতার সূর্য কখনো আকাশে অস্ত যায়নি। ঊর্মিরা
এই তেজস্বীকে ইউনিয়ন রুমের জানালাতেই হারাতে দেখত প্রতিদিন। কে জানে সবটাই ইল্যুউসন কিনা!
দেওয়ালে লেখা পোস্টারের লাল লাল অক্ষর যেন জলন্ত মশালের মতো সার বেঁধে রাজপথে চলতে থাকত হষ্টেলে ফেরার পথে। আগুন রঙা সেই লাল। ঊর্মির রক্তে চলতে থাকত লাল রঙের চনমনে
বিপ্লবী স্রোত। প্রেম, সেও তো এক বিপ্লব হয়ে এসেছিল ঊর্মির জীবনে। প্রেমিকের নির্মম অত্যাচার ও অশ্লীলতা মেনেছিল সে ঠিকানাহীন দাম্পত্যের জন্য। সেইসব ঝঞ্ঝার দিন-রাত ছেয়েছিল লাল রঙে। সব কবুল তবু একাকীত্বের
সঙ্গে সমঝোতা করতে চায়নি ঊর্মি। কিন্তু সেই তো আষ্টেপৃষ্টে
অক্টোপাসের মতো বেঁধে রেখেছিল ঊর্মিকে!
বাকি কথা সবই পড়ন্ত বিকেলের। অপরাহ্নের আলো চেনা প্রতিশ্রুতি দিয়ে
যায় ঊর্মিকে, যেমন সকালে বারান্দায় ঝোলা
পাখির ছোলা-জলের শূন্য বাটি লিপিবদ্ধ করে একটি প্রাণের বেঁচে থাকার ইতিহাসকে।
প্রেমের রাজনীতি, রাজনীতির প্রেম। রাজনীতি এক বিচ্ছিরি শব্দ। কিন্তু বেশ পরিহার্য নয়। একা থাকতে দেয় না, এটাই বিপদ।
উত্তরমুছুন