রবীন্দ্র যাপন
রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে নতুন করে রচনা লেখার ইচ্ছে আমার নেই। কারণ সেই ক্লাস টু
থেকে লিখে আসছি। তাই তথ্য সমৃদ্ধ লেখা থেকে আপাতত মুক্তি নিয়েছি। গত একমাসে সত্যজিৎ রায় ও
রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে আমরা বড়ই ব্যস্ত। যদিও এই দুজনকে একই ফ্রেমে বন্দী করার কোনো অভিপ্রায়ও আমার নেই।
জানেন, রবীন্দ্র যাপন করতে খুব ইচ্ছে করে। অনেকে বলতেই পারেন যে, ‘কে বারণ করেছে’? সত্যি কেউ বারণ করেনি। কিন্তু ঠিকঠাক রবীন্দ্র যাপন
কি করা সম্ভব? বাঙালি যে শুধু পঁচিশে বৈশাখেই রবীন্দ্র যাপন করে তা হয়তো নয়, প্রায় সারা বছর ধরেই করে। সত্যি কথা বলতে কি, রাবীন্দ্রিক হওয়ার একটা
আলাদা আভিজাত্য আছে। রাস্তাঘাটে মাঝেমাঝেই চোখে পড়ে, কোনো এক বঙ্গললনা সুসজ্জিত
হয়েছে রবীন্দ্রসঙ্গীত লেখা শাড়িতে। কাঁধে শান্তিনিকেতনের ব্যাগ। কপালে একটা বেশ বড় সাইজের
টিপ, খোঁপায় ফুল। সকলের মাঝে থেকেও কিন্তু সে একটা আলাদা মাত্রা পেয়ে যায়।
ব্যাক্তিত্বের সীমারেখার পারদ ক্রমশঃ চড়তে থাকে।
পুরুষরাও রাবীন্দ্রিক হবার ইঁদুর দৌড়ে কোথাও এতটুকু পিছিয়ে নেই। বাটিকের
পাঞ্জাবী, মুখে খোঁচা দাড়ি আর ওই শান্তিনিকেতনের ব্যাগ নিয়েও সেও যে আর পাঁচজনের
থেকে আলাদা, যে কোনো উপায়ে তাকে এটা প্রমাণ করতেই হয়। আবার মোবাইলের রিংটোনেও
রবীন্দ্রনাথ! হঠাৎ জনৈক সঙ্গীত শিল্পীর কন্ঠে ভেসে উঠল- ‘আমার এ পথ, তোমার পথের
থেকে অনেক দূরে গেছে বেঁকে’- বোঝাতে চাইল যে সে প্রেমেও রবি, আবার বিরহেও রবি।
অর্থাৎ নিজের একটা আলাদা identity তৈরি করার ক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথ আদর্শ
ঘরানা। মাঝে মাঝে ভাবি জীবনের এমন কোনো মুহূর্ত কি আছে, যার জন্য রবি
ঠাকুর গান লিখে যাননি! শুধু রাস্তা পারাপারের সময় ট্রাফিক
কাকুদের জন্য তিনি গান লেখেন নি। এইখানে তাঁর কিছুটা দূরদর্শীতার অভাব লক্ষ্য করা যায়। না না আমি তাই বলে দোষ তাঁকে দিচ্ছি না। সে ধৃষ্টতাও আমার নেই।
এখন তো আবার বাংলা সিরিয়ালে রবীন্দ্রসঙ্গীত নতুন ফ্যাশন। বাঙালির শয়নে স্বপনে মননে জাগরণে আনন্দে বিরহে সবেতেই
রবি ঠাকুর, একথা আমার আগেও অনেকজন বলেছেন। আমি শুধু ‘মহাজন যে পথে করেন গমন’।
দোলের সময় শান্তিনিকেতন না গেলে যেন সমাজে status নষ্ট
হবার একটা ভয় কাজ করে। তবে সেটা সকলের নয়। সারাজীবনে রবীন্দ্রনাথের একটি কাব্য না পড়লেও কোনো অসুবিধা নেই। কিন্তু ড্রয়িংরুমে রবীন্দ্ররচনাবলী থাকা চাইই। আপনার অতি প্রিয়জনের যে কোনো অনুষ্ঠানে ব্যাকগ্রাউণ্ডে যদি
হালকা সুরে রবীন্দ্রসঙ্গীত হয়, তাহলে অতিথিরা আপনার রুচির প্রশংসায় পঞ্চমুখ। এমনকি দুর্গা পুজোতেও জলতরঙ্গে রবিঠাকুরের মিউজিক চালিয়ে পুজো কমিটি পেয়ে যাচ্ছে শ্রেষ্ঠ
পরিবেশ মনস্কতার পুরস্কার।
তার মানে নিজেদের ইমেজ ধরে রাখার জন্য রবীন্দ্রনাথকে ভীষণ দরকার। কিন্তু রবি ঠাকুরের সমসাময়িক এবং পরবর্তীকালে
অনেক নতুন সূর্যের আবির্ভাব হয়েছে। কিন্তু তাদের অনেকেরই নিজস্ব ঘরানা থাকলেও বাঙালি সেটা গ্রহণ করল না কেন? Sofishticated মনোভাবে কি কোথাও ভাঁটার জন্ম নিয়েছিল? আমরা সাহিত্যের
ক্ষেত্রে খুব বড়াই করি, একে অপরের ভুল
ধরি তখনই, যদি কারো লেখায় রবীন্দ্র প্রভাব পাওয়া যায়। অর্থাৎ তার নিজস্বতা বলে কিছু নেই। রবীন্দ্রনাথের লেখার স্টাইল এখন নাকি ‘ব্যাকডেটেড’! নৈব নৈব চ। কত বড় বড় ভাষণ শুনতে যে হয়, ‘বাঙালি রবীন্দ্রনাথকে ছাড়া কিছু বুঝল না’। তার প্রভাব মুক্ত হতে গিয়ে আধুনিক হবার ম্যারাথনে অংশগ্রহণ না করলে আর যাই হোক, কফিহাউসে মুখ দেখানো যায় না। কিন্তু জীবনের সবচেয়ে অসহায় মুহূর্তে আবার সেই বুকের কাছে আঁকড়ে
ধরে রবিঠাকুর-
নদীর বুকে যে যার ডিঙা দে ভাসিয়ে
জীবন নদী খেয়াল খুশি যায় বয়ে
যায়।
কোন সাগরে মিলবে নদী বেলা শেষে
জোয়ার ভাঁটার খেলা সে পথ বোঝারে
দায়।
এই মনোভাব সকলের নয়, কারো কারো। রবিঠাকুর বলেছিলেন, ‘কমল হীরে পাথরটাকেই
বলে বিদ্যে, আর ওর থেকে যে আলো ঠিকরে পড়ে তাকেই বলে কালচার’। কিন্তু শিক্ষিত বাঙালির এই বিদ্যে আর কালচারের মধ্যেই যত ঘাত-প্রতিঘাত। নিজেদের ইগো নিয়ে আমরা সদা ব্যস্ত, তাই আপনিও। যখন যেমন তখন তেমন, এটাই তো আমাদের আদর্শ, তাই নয় কি?
আবার মাছের তেলেই মাছ ভাজি রবিঠাকুরের কাছে-
‘আমার
মাথা নত করে দাও হে তোমার চরণধূলার তলে’।
আমার যাওয়ার সময় হলো হল দাও বিদায়। ( ভীষণ রবীন্দ্র প্রেমিক তুমি, আমি এবার বাংলাদেশের কুষ্টিয়া, শিলাইদহে শাহাজাদা পুরে গতকাল কুমিল্লার টাউন হলে কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম জয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলাম।
উত্তরমুছুনতোমার কত সংগ্রহ রবীন্দ্র সঙ্গীত তুমি কি গাও ? ভালোবাসা আমারে ভিখারী করেছে।
আমি চিরতরে দূরে চলে যাবো তবু আমারে দেবো না ভুলিতে বাতাস হইয়া জড়াইয়াবো আমি বেণী যাবে যবে খুলিতে।
দাঁড়িয়ে আছো তুমি আমার গানের ওপারে, আমার সুর গুলি পায় চরণ আমি পাইনি তোমারে। বাংলাদেশেবাংলাদেশের এবার এসে কুষ্টিয়া, শিলাইদহ শাহাজাদ পুরে রবীন্দ্র স্মৃতি বিজরিত কুটি বাড়িতে অনুষ্ঠানে আনন্দে ভাসলাম। কুমিল্লার টাউন হলে ও দৌলতপুরে নজরুলের স্ত্রী প্রমিলাদেবীর জন্মভূমিতে অনুষ্ঠানে ছিলাম। রবীন্দ্রনাথ ও কাজী নজরুল ইসলামের প্রেমে পড়ে আনন্দে ভাসছি। বাংলাদেশে এসে ভালোবেসে ভাবি ফিরে আসি ফেলে যাওয়া জন্মভূমিতে। বাংলাদেশের মানুষেরা বিশেষ করে মায়েরা আমাকে এত গভীর ভাবে ভালোবাসে এ ভালোবাসার বাঁধন খুলে ফিরে যেতে কোলকাতায় ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। অশ্রু নদী---
রবীন্দ্রনাথ, " যদি প্রেম দিলে না প্রাণে কেন ভোরের আকাশ ভরে দিলে এমন গানে গানে। বিদায় বন্ধু ! দাও বিদায়, মায়াবী রাতে রোজ কথা হবে কবিতা শুনবো কোলকাইতার দাদাভাই।
অসম্ভব সুন্দর লেখা শোনাবে তুমি। আমার সাথে তোমার , আর ঢাকায় এসেও দেখা হলো না, ঢাকায় পৌঁছে, কোলকাতায় ফিরে যেতে হবে শুক্রবার। কিন্তু তুমি থাকবে হৃদয় জুড়ে। বিদায় ! বন্ধু বিদায় !
মায়াবী রাতে রোজ কথা হবে কবিতা শুনবো কোলকাইতার দাদাভাই।
অসম্ভব সুন্দর লেখা শোনাবে তুমি। আমার সাথে তোমার , আর ঢাকায় এসেও দেখা হলো না, ঢাকায় পৌঁছে, কোলকাতায় ফিরে যেতে হবে শুক্রবার। কিন্তু তুমি থাকবে হৃদয় জুড়ে।কালের যাত্রা ধ্বনি শুনিতে পাও ? শেষের কবিতা - বিদায় ! বন্ধু বিদায় !