কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

শুক্রবার, ২২ মে, ২০১৫

অনিন্দিতা গুপ্ত রায়

আ যা নাচ্‌ লে—

আগুনের শিখাটা আকাশ অবধি পৌঁছে গেছে মনে হচ্ছিল। লাল টকটক করছিল পশ্চিমের আকাশটা। ধরা যাক আজ কালীপুজোর রাত। ধরা যাক বুলটির গায়ে  একটা দামী শাড়ি! আতশবাজি ফাটাচ্ছে বুলটি। দুমদাম শব্দ করে যেগুলো ফাটছে সেগুলো আসলে বাঁশ, কাঠ, খড় মাটির কাঠামো না -- উইই একটা রকেট উঠে গেল আকাশে। কী আলো গো! আর এগুলো কি তুবড়ি নাকি? চোখে ধাঁধা লাগছে  খুব। জলও এসে যাচ্ছে ধোঁয়ায়। ওই যে কত্ত বড়ো একটা দোদোমার বাক্স ফেটে গেল। আসলে এসব না। আসলে ফাটছিল বুলটির বুকের ভেতরটাযদিও ঘর সংসার বলতে সেরকম কিছু নেই, তবু একটা অভ্যেস পুড়ে যাচ্ছিল তো! অনেকদিনের থাকা, খাওয়া, ঘুম, সঙ্গমের অভ্যেস। কিন্তু ঠিক বুঝছে না বুলটি -- এরকম লাগছে কেন। এনামেলের দু-একখান বাসন থালা গ্লাস মাটির হাঁড়ি একটা ভাঙাচোরা চৌকি আর ঘরে দড়িতে টাঙানো দু’চারখান শাড়ি ব্লাউস -- চেয়েচিন্তে জোগাড় করা। আর ওই সাদা ফুলছাপ ম্যাক্সিটা, হাতসাফাই করাসেদিন বিকেল শেষে হাসপাতালের কোয়ার্টারের বারান্দা থেকে সরিয়ে এনেছিল যেটা। রঙ জলা পুরনো ম্যাক্সিটায় ওকে সুখেন যখন জাপটে ধরে আদর করছিল -- নিজেকে ওর প্রিয়া দিদিমনির মতোই লাগছিলকে জানে সুখেনেরও তাইই লাগছিল কিনা। শালা হারামি -- থুঃ করে একদলা থুতু ফেলল বুলটি। আজ সাতদিন ধরে পাত্তা নেই মালটার। মরুক গে! এই  যে কাল থেকে আগুনে ঘরদোর পুড়ে গেছে আর তারপর থেকে পাট্টির দাদা দিদিরা এসে এত খাতির করছে, সেটা কি ও থাকলে হতো? কো্নো বাবু বুকের দিকে  তাকালো, আর কে পিঠে হাত রাখল্‌ তাই নিয়ে কাজিয়া করে দু’ তিন ঘা লাগাতো এতক্ষণএকটা নতুন কম্বল। দুটো শাড়ি -- একটু পুরনো কিন্তু অনেকদিন পড়া চলবে। আর একটা নতুন শায়া — সঙ্গে পাঁউরুটি, মিষ্টি, নগদ টাকা -- উফফ্‌!  কোনোদিন এসব পায় বুলটি পাগলি? পরপর তিন চারখানা ঘর আগুনে পুড়েছে।  ওদের দু’ একজনের ঘরে জিনিসপত্র ছিল বেশ কিছু -- মড়াগুলো কাঁদছে দ্যাখো! হি হি করে হাসি আসে বুলটির। বেশ হয়েছে। সব এখন একসাথে থাক এই স্কুল বাড়িতে। সামনে ভোট -- তাই ওদের ঘরদোর স--ব বানিয়ে দেবে পাট্টির লোকেরা। লিস্টি নিয়ে গেছে -- কী কী ছিল বাড়িতে। বুলটি বলেছে -- এক ট্রাংক শাড়ি জামা, বাসনকোসন, ইস্টোভ, রেডিও, লেপ আর বালিশ। এই জিনিসপত্রগুলোর খুব শখ ওর। সারাদিন ধরে ভাঁজ করবে বুলটি জামাকাপড়গুলো। রোদ্দুর খাওয়াবে। রেডিওটায় মুন্নি বদ্‌নাম চালিয়ে নাচবে। সুখেনটা পুরো আউলিয়ে যাবে তখন... হি হি  হি! স্কুল বাড়ির বারান্দার এক কোণে দুটো ঘরে ওরা ষোলোজন আছে। মেয়েছেলেরা  আর বাচ্চারা এক ঘরে আর ব্যাটাছেলেরা আলাদা ঘরে। দামড়া ছাত্রগুলো উঁকি মারছে মাঝে মাঝে -- দেখুক দেখুক! কী আর করবে! মিড-ডে মিলের খিচুড়ি খেল এক্ষুনি   বুলটি। সঙ্গে আবার বেগুনভাজা। মাস্টাররা বলছিল কীসব নিজেদের মধ্যে--
একটা কম বয়েসী দিদিমনিঃ -- যাই বলুন, শুধু সামনে ভোট বলেই এদের খাতির যত্ন হচ্ছে। মহল্লার লোকেরা যাতে বোঝে এদের বিপদে দাদা দিদিরা পাশে আছে।
একজন মাস্টারঃ -- এইজন্যই ভোট দেওয়াই উচিত না।
আরেকজন মাস্টারঃ -- দেখুন এসব বলবেন না। সরকার সবসময়ই ওদের দেখাশোনা করে। এসব বদনাম করা ঠিক না--।
দিদিমনিঃ — এই যে দশ বারোজন মানুষকে এখানে রেখে খাতির করছে তার কারণটা কী? বলুন...? এত্তগুলো ভোট আসলে!
বুলটির পেটের ভিতর হাসি গুড়গুড় করে উঠছে, দম বন্ধ হয়ে আসছে। শালা  সুখেনটা তো ঠিকই বলেছিল! জেনে নিতে হবে পরের ভোটটা যেন কবে--! শুধু ঘরে কেরোসিনটা আবার জমিয়ে রাখতে হবে ওকে। আর কিছু পাটখড়ি। হাজার হোক ও’তো ভোটার একজন -- হি হি হি!   
  

  


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন