কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / চতুর্থ সংখ্যা / ১২৪

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / চতুর্থ সংখ্যা / ১২৪

শুক্রবার, ২২ মে, ২০১৫

লিপিকা ঘোষ

পর্ণমোচী

দরজায় একটু জোরে কড়া নাড়ে পর্ণা। কোনো সাড়া নেইখুব পুরনো দোতলা বাড়ির ক্ষয়ে যাওয়া একটা দরজাজনবহুল রাজপথ থেকে হঠাত একটা গলি ঢুকে গেছেগলি বেয়ে যেতে যেতে পুরনো কলকাতার এক মরচে পড়া আধভাঙ্গা বাড়ির দরজা
ঠক ঠক ঠক ... আবার কড়া নাড়ে পর্ণা
‘কে এ এ এ এ এ ?’
নড়বড়ে দোতলার বারান্দা থেকে ঝুঁকে পড়ে এক অতি প্রৌঢ়া মহিলার কর্কশ জিজ্ঞাসা
‘আমি’...
‘কে তুমি? কেন এই ভর দুকুরে আস বল দিকি? আমাদের কিচ্ছু চাইনে বাপুযেখান থে এয়েছো সেখেনে ফিরে যাও’এক নিঃশ্বাসে বলে হাঁফাতে থাকেন অতি প্রৌঢ়া
‘জাহান্নামে যেতে বল, যত্তসব’। কর্ক পুরুষ কণ্ঠ ভেসে আসে ভেতর থেকে। বোধ হয় অতি প্রৌঢ় কেউ
‘আহা তা বলব কেন? কার ঘরের বাছা। রোদে মুখ রাঙ্গা হয়ে আছে। দেখে তো ভদ্র ঘরই লাগছে’
‘অ, তা হবেপড়াশোনা শিখে শেষ অবধি সেলস গার্ল! না আর জাহান্নামে নতুন করে যাবে কি? এ দেশই তো নরক অতি প্রৌঢ়র কণ্ঠ
হতচকিত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে পর্ণা। ঘা তুলে বলে ‘আমাকে আসতে বলা হয়েছিলএই বাড়ির ঠিকানাই তো দেওয়া হয়েছে 
‘কে তোমায় আসতে বলেছে বাছা? তোমাকে আমাদের দরকারটা কি?’ জিজ্ঞেস করেন মহিলা
‘রান্নার লোক নয় তো? রাণু পাঠালো হয়তো?’ প্রৌঢ় ভেতর থেকে বলে
পর্ণা ঘেমে নেয়ে একসাওর কালো পাড় সাদা শাড়ির টাঙ্গাইল-আঁচল দিয়ে মুখ মুছে কাঁধের ঝোলা ব্যাগ থেকে মোবাইল বের করে নেট অন করে। ফেসবুকের মেসেজ ইনবক্স চেক করে দরজায় লেখা ঠিকানার সঙ্গে মিলিয়ে নেয়। ঠিকই তো আছেযিনি ঠিকানা দিয়েছেন তাঁর অ্যাকাউন্ট ডি-এক্টিভেটেড 
‘আচ্ছা আমার কোথাও ভুল হয়েছে তা হলে’। উত্তর করে পর্ণা
বলে মোবাইলে নেট অফ করে কাঁধের ঝোলায় ঢুকিয়ে গলি বেয়ে হাঁটতে শুরু করে
‘তা বাছা তোমায় কে আসতে বলেছিল সেটি তো বলে যাও!’ অতি প্রৌঢ়া একটু মোলায়েম
‘নাম বলেছিলেন বি. চক্রবর্তী, আমার ফেসবুক ফ্রেন্ডবছরখানেক হলো আলাপঘা তুলে তুলে জবাব দিতে কষ্ট হচ্ছে পর্ণার
‘এই হয়েছে এক ফেসবুক অবতার। ছেলেমেয়েগুলোর মাথা খেয়ে ফেলল’প্রৌঢ় বলে 
‘আহা শুধু ছেলেমেয়েগুলোর কথা কইছ কেন? তোমার বন্ধু অচিন্ত্যদা তো এই বুড়ো বয়েসে ফেসবুকে প্রেম করতে গিয়ে কী কেলেঙ্কারী কী কেলেঙ্কারী, ছ্যা!’  প্রৌঢ়া তীব্র কর্কশ
পর্ণা আর দেরি করে না। অন্য আরও কয়েকটা বাড়ি ও যাবেচক্রবর্তী লোকটা ওকে আরও কয়েকটা বাড়ির ঠিকানা দিয়েছে
‘ও বাছা তোমার নাম কী? কেন এসেছিলে?’ প্রৌঢ়া নরম
‘আমার নাম সুপর্ণা, চক্রবর্তী ভদ্রলোক আমায় এই বাড়ির ঠিকানা দিয়ে বলেছিল, এখানে বলে যেতে শীতকাল কবে আসবে’
‘সে কি কথা গো, এই পেরুলুম শীতকাল, চৈত্রের আগুনে জ্বলছি!’ প্রৌঢ়ার অবাক  হয়ে যাওয়া উত্তর
অনেকটা এগিয়ে গেছে পর্ণা। গলির প্রান্তে এরপরই রাজপথের জনস্রোতে মিশে যাবে সে  
‘আমি চললাম, শীতকাল কবে আসবে তা কেবল আমিই জানি--ভদ্রলোক আপনাদের কখনো জিজ্ঞাসা করলে বলে দেবেন, আমি এসেছিলামআরও বলে দেবেন, শীতের শেষেই বসন্ত আসে---এ’


(ভাস্কর চক্রবর্তীর শীতকাল কবে আসবে সুপর্ণা মনে রেখে)

0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন