অপেক্ষা
ট্রান্সপারেন্ট প্যাকেট ছিঁড়ে হাতের মুঠোয় লাল আবীর ভরে নিল হেনা। সারা সকাল ফাঁকা বাড়িতে ছড়িয়ে থাকা অপেক্ষা কুড়িয়ে বেরিয়েছে সে। পাল্লা দিয়েছে বারান্দার দুটো চড়ুই আর কার্নিশের হলদেটে সাদা বেড়ালটা। হেনা এই বাড়িতে যেদিন প্রথম এলো সেদিনই বুঝতে পেরেছিল, নানান নামের নানান রকমের অপেক্ষারা হাওয়ার টানে ধুলোর মতো উড়ে আসে এখানে। এই অপেক্ষাদের জন্ম কোথায়, সে আজও জানে না। বারান্দায় দাঁড়ালে উঠোনে যে চৌবাচ্চাটা দেখা যায়, সেখানে বিন্নি পিসি রোজ বেলা বারোটার সময় তার রঙিন আটপৌরেগুলোর থেকে যে কোনো একটা তুলে এনে কাচতে বসে। পরনে থাকে সাদা থান। ফেনার বুদবুদের মধ্যে দিয়ে গলগল করে অপেক্ষা বেরিয়ে আসে সেইসব রঙিন শাড়ি থেকে। এই অপেক্ষাগুলোর প্রাণ নেই। বহু বছর আগে বিন্নি পিসির কাছে চিঠি মারফত এসেছিল খবরটা, শরীরটা আসেনি — মানে খুঁজে পায়নি কেউ। এই বাড়িটা তার বাপের বাড়ি। এখন বেলা সওয়া বারোটা। হাতের মুঠোয় লাল আবীর নিয়ে শোবার ঘরের দরজায় গিয়ে দাঁড়ায় হেনা। সেখানে ফুলশয্যা অপেক্ষা করে আছে আর চৌকাঠের ওপারে একটা কোণা খাওয়া পাপোষ। জানালার পাশে আয়নাটাকে মাঝ দুপুর গ্রাস করছে। বসন্তটা শরৎকাল হয়ে গেছে হঠাৎ। অসহ্য অপেক্ষাগুলো বিসর্জন হবে। দূর থেকে ভেসে আসছে বিসর্জনের উলুধ্বনি। হেনার চুলের মোটা গোছের বিনুনি খোঁপা থেকে খুলে পড়ে। মাথার মাঝখানে সুদীর্ঘ পথ। সেই পথের রঙ সাবান দিয়ে ঘষে ধুয়ে ফেলেছিল সে গত বছর। লাল আবীর মাখা প্যাকেটটা বারান্দা থেকে উড়ে যাওয়ার সময় একবার ধাক্কা খেলো জানালার খড়খড়িতে। চড়ুইয়ের ঠোঁটে অপেক্ষার ঘোর। মোড়ের মাথায় যে কোনো মুহূর্তে এসে দাঁড়াবে গাড়িটা। অগোছালো বরণডালা পড়ে থাকবে যেমনকার তেমন। দু’হাত আবীর হেনা আছড়ে দিল কপালে। কুড়িয়ে নেওয়া অপেক্ষা মেখে নিল চোখে। এই বাড়িটা তার শ্বশুর বাড়ি।
ট্রান্সপারেন্ট প্যাকেট ছিঁড়ে হাতের মুঠোয় লাল আবীর ভরে নিল হেনা। সারা সকাল ফাঁকা বাড়িতে ছড়িয়ে থাকা অপেক্ষা কুড়িয়ে বেরিয়েছে সে। পাল্লা দিয়েছে বারান্দার দুটো চড়ুই আর কার্নিশের হলদেটে সাদা বেড়ালটা। হেনা এই বাড়িতে যেদিন প্রথম এলো সেদিনই বুঝতে পেরেছিল, নানান নামের নানান রকমের অপেক্ষারা হাওয়ার টানে ধুলোর মতো উড়ে আসে এখানে। এই অপেক্ষাদের জন্ম কোথায়, সে আজও জানে না। বারান্দায় দাঁড়ালে উঠোনে যে চৌবাচ্চাটা দেখা যায়, সেখানে বিন্নি পিসি রোজ বেলা বারোটার সময় তার রঙিন আটপৌরেগুলোর থেকে যে কোনো একটা তুলে এনে কাচতে বসে। পরনে থাকে সাদা থান। ফেনার বুদবুদের মধ্যে দিয়ে গলগল করে অপেক্ষা বেরিয়ে আসে সেইসব রঙিন শাড়ি থেকে। এই অপেক্ষাগুলোর প্রাণ নেই। বহু বছর আগে বিন্নি পিসির কাছে চিঠি মারফত এসেছিল খবরটা, শরীরটা আসেনি — মানে খুঁজে পায়নি কেউ। এই বাড়িটা তার বাপের বাড়ি। এখন বেলা সওয়া বারোটা। হাতের মুঠোয় লাল আবীর নিয়ে শোবার ঘরের দরজায় গিয়ে দাঁড়ায় হেনা। সেখানে ফুলশয্যা অপেক্ষা করে আছে আর চৌকাঠের ওপারে একটা কোণা খাওয়া পাপোষ। জানালার পাশে আয়নাটাকে মাঝ দুপুর গ্রাস করছে। বসন্তটা শরৎকাল হয়ে গেছে হঠাৎ। অসহ্য অপেক্ষাগুলো বিসর্জন হবে। দূর থেকে ভেসে আসছে বিসর্জনের উলুধ্বনি। হেনার চুলের মোটা গোছের বিনুনি খোঁপা থেকে খুলে পড়ে। মাথার মাঝখানে সুদীর্ঘ পথ। সেই পথের রঙ সাবান দিয়ে ঘষে ধুয়ে ফেলেছিল সে গত বছর। লাল আবীর মাখা প্যাকেটটা বারান্দা থেকে উড়ে যাওয়ার সময় একবার ধাক্কা খেলো জানালার খড়খড়িতে। চড়ুইয়ের ঠোঁটে অপেক্ষার ঘোর। মোড়ের মাথায় যে কোনো মুহূর্তে এসে দাঁড়াবে গাড়িটা। অগোছালো বরণডালা পড়ে থাকবে যেমনকার তেমন। দু’হাত আবীর হেনা আছড়ে দিল কপালে। কুড়িয়ে নেওয়া অপেক্ষা মেখে নিল চোখে। এই বাড়িটা তার শ্বশুর বাড়ি।
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন