কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

শুক্রবার, ৩০ মে, ২০১৪

০৫) অনির্বাণ

শ্মশান


মানুষই সবচেয়ে বিপজ্জনক দাহ্য। আর শ্মশানই পৃথিবীর বৃহত্তম উনুন।

শ্মশানে যেতাম জেঠুর সঙ্গে। দূর থেকে দেখতাম - অসংখ্য ক্যালেন্ডারের দাউ দাউ করে জ্বলা। দুই সর্বভুকের লড়াই। এবং আগুনের জয়। মানুষের পাশে তখন কাঠ, চন্ডাল ছাড়া আর কোনো আত্মীয় নেই। ব্যতিক্রম আমরা জনা সাতেক। বেশিরভাগই মদের খদ্দের। ওই কয়েকটা লোককে যেন ছুঁতেই পারে না শোক- কান্না। আগুনের পাশে থাকতে থাকতে কেমন আধপোড়া হয়ে গেছে চামড়াগুলো। ওরা মদ খেয়ে মড়াকে খিস্তি করত। জেঠু বলত, আরও খিস্তি কর। জলদি পুড়বে শ্যালা।




পুড়তে পুড়তে মানুষটা হঠাৎ জেগে ওঠে। হাতে মোমবাতি দেখা যায়। জেঠু চীৎকার করে বলে - অ্যাই বাঁশে করে বেড়ো। শরীরটা আবার শুয়ে পড়ে। পুড়তে থাকে আপন মনে। পুড়তে থাকে বাজারের থলে, এই মাসের ঘরভাড়া। কিন্তু সব কিছু পোড়ে না। যেমন এই দক্ষিণের ঝোলাবারান্দা, কিম্বা একটু এগিয়ে লোহার গেটটা। পুড়ে যাওয়াটুকু ছাই হয়ে উড়ে যায় মোড়ের দোকানে। ঝেঁটিয়ে ফেলে দেয় ক্লাস ফোরের বিট্টু। জেঠু বিট্টুকে জামা কিনে দিত পকেটওয়ালা।


শরীরের সাথে বুকপকেটও পুড়ে যায় হু হু করে। পকেটের নিচের মিস্‌ডকলগুলি বাষ্প হয়ে জমে চুল্লীর আকাশে। কোমরের নিচেটুকু পোড়ে অদ্ভুত আওয়াজ করে। ওই আওয়াজ শুনতে পাই এখন অদ্রিজার গলায়। ও হয়তো জানতে পেরেছে - আমি পুড়ছি। কেউ যেন সন্ধেবেলা পার্কে এসে আমার গায়ে ঘি ঢেলে যায়। আমার আশেপাশে বেঞ্চগুলো থেকেও কিছু আগুন দেখা যায়। ছাই হয়ে উড়ে যাওয়া শেষ হলে, জানালায় একটা প্রজাপতি বসে। জেঠু ওদের কাউকে চেনে না। জেঠু প্রান্তিক স্টেশনও চেনে না। জেঠু বলত, ট্রেনও আসলে চিতা। মানুষকে আলাদা করে দেয়। কাঠের বেঞ্চিতে পুড়তে পুড়তে ছেড়ে যেতে হয় প্ল্যাটফর্ম। তবু ওই ট্রেন বয়ে আসে সাইকেলের চিঠি। সোনাঝুরির চিঠি। আসলে মানুষের প্রকৃত প্রেম হলো গাছ। গাছই মানুষের ছদ্মবেশে ধরা দেয়। আবার ছাই হয়ে মিশে যায় কাঠ এবং কান্নাতে। কা-কা করে কান্না ছড়িয়ে পড়ে এন্টেনা জুড়ে।

এণ্টেনা থেকে তার বেয়ে বাক্সে বন্দী হয় মানুষ। এবং ইত্যাদি রঙের জীবন।

0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন