আলেকজান্ডার চৌধুরী
আমার নানী মারা যাবার পর দুই বছরের মাথায় নানাজান উদাস হয়ে এ পাড়া ও পাড়া ঘুরতে লাগলেন। গ্রামের লোকজন নানাকে পরামর্শ দিলেন পুনরায় বিবাহ করার জন্য।
একদিন আমাকে নানা খুব যত্ন করে কাছে ডাকলেন।
: নানখাতাই
: জ্বি নানাজান
নানাজান কিছু বলেন না, চুপ করে আছেন। তিনি আমাকে খুব স্নেহ করেন। আমি এতিম। ছোটবেলায় বাপ মা মারা যাবার পর নানার কাছে আমি মানুষ।
আমাদের গ্রামে এক ধরনের ভীষণ মিষ্টি বিস্কুট পাওয়া যেত, ঘিয়ে ভাজা। বিস্কুটের নাম নানখাতাই। ছোটবেলায় আমার খুব প্রিয় ছিল বলে লোকমুখে আমার নাম হয়ে যায় বিস্কুটটির নামে : নানখাতাই।
ক্লাস নাইনে স্কুলে রেজিস্ট্রেশনের সময় হেডস্যার আমাকে ডেকে বললেন,
: তুমি চাইলে তোমার নাম পাল্টাতে পারো। একটা সুন্দর নাম দিয়া দেই আমি?
হেডস্যারের চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলতে খুব ভয় পেতাম আমরা। আমি মাটির দিকে তাকিয়ে বললাম,
: স্যার আমার নাম নানখাতাই চৌধুরী।
হেডস্যার আকাশ থেকে পড়লেন।
: তুই চৌধুরী হলি কেমনে?
আমার বাপজান পাশের গ্রামের চৌধুরী সাহেবের খাস গোলাম ছিলেন। প্রধান লাঠিয়াল। আমি তখন খুব গুড়া। একবার হাউদার খাল পাড়ে ছোট একটা চর জেগে উঠলে চৌধুরী সাহেব ওটা দখল করবেন ভেবে বাবাকে মাঝ রাতে ডেকে পাঠালেন। কী কারণে বাবা সেই প্রথম বিদ্রোহ করে বসলেন, ডাকে সাড়া দিলেন না। পরদিন চৌধুরী সাহেবের লোকজন বাড়িতে এসে বাবাকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে গেলেন। পিটিয়ে তক্তা বানানো হলো বাপজানকে। কয়েকদিন পর আমার বাবা রক্তবমি হয়ে মারা গেলেন।
বড় হয়ে যখন সব জানলাম আমি, প্রতিশোধ নেবার ইচ্ছা চরের মতো ভেতরে জাগতে লাগল।
হেডস্যার নাম ঠিক করার প্রসঙ্গ আনতেই প্রথম সুযোগে নামটা পাল্টে ফেললাম। নাম হয়ে গেল আমার নানখাতাই চৌধুরী।
নানার পাত্রী দেখার সঙ্গী হলাম আমি। চুপিচুপি একদিন কনে দেখা আলোর বিকেলে নানাজান আর আমি পাত্রী দেখতে ছুটি। নানা সুরমা আতর লাগিয়ে ফুরফুরে।
আমাদের সামনে যখন পাত্রী এলো, আমি থ। এতো সুন্দর মেয়ে আমি জীবনে দেখিনি। পাত্রীপক্ষ কী করে এই অল্পবয়সী ফুটফুটে মেয়েটাকে নানার মতো বুড়োর কাছে সমর্পণ করছেন?
যাইহোক এর কয়েকদিন পর এই জ্যোৎস্না সুন্দর মেয়েটাকে নিয়ে আমি ভাগলবা হলাম। গ্রাম থেকে পালালাম। খবর পেলাম, নানাজান নাকি রামদা নিয়ে আমাকে খুঁজছে।
সন্ধ্যার পর আমি আর মেয়েটা একসাথে পুকুরপাড়ে বসে থাকি। টুপুস করে ভেসে ওঠা মাছের ঘাই মারা জলের শব্দ শুনি। রাতের মাধবী দেখি। মেয়েটা আমার নাম নিয়ে খিলখিল করে হেসে ঢলে পড়ে আমার গায়ে। বোকার মতো মেয়েটার দিকে তাকিয়ে থাকি।
কেটে যায় একেকটা আড়িয়াল খাঁ মনোরমা দিন।
মাস সাতেক পরে এই চাঁদমাখা বউটা একদিন ফিসফিস করে আমাকে বলে,
: ও নানখাতাই ও নানখাতাই
: বলো আমার প্রেম পিরীতি
: তুমি তো বাবা হবা
আমি পাংখা হয়ে উঠি প্রবল তরাসে। মনে হলো, ভেসে যাচ্ছে আমার হাতের তালুর উপরে আড়িয়ালখাঁ। কলকলে হুমহম হামাগুড়ি শিশু। অপূর্ব সুন্দর মেয়েটার কানে কানে বলি,
: ছেলে হলে নাম রাখব আলেকজান্ডার চৌধুরী। তারপর তুমি আমি আর আলেকজান্ডার সেই চৌধুরী বাড়ির সামনে গিয়া চিৎকার করে বলব... দেইখা যান চৌধুরী। এই যে আমাদের আলেকজান্ডার।...
বউ অবাক হয়ে আমার অন্ধকার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে। চিনতে পারে না। কোমল করে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়,
: আর মেয়ে হলে?
: পৃথিবী চৌধুরী...
চাঁদমাখা রাত ওখানেই টুপ করে বেলা অবেলা ফ্রিজ হয়ে থাকে। ভীতুর ডিম রাতটা...
আমার নানী মারা যাবার পর দুই বছরের মাথায় নানাজান উদাস হয়ে এ পাড়া ও পাড়া ঘুরতে লাগলেন। গ্রামের লোকজন নানাকে পরামর্শ দিলেন পুনরায় বিবাহ করার জন্য।
একদিন আমাকে নানা খুব যত্ন করে কাছে ডাকলেন।
: নানখাতাই
: জ্বি নানাজান
নানাজান কিছু বলেন না, চুপ করে আছেন। তিনি আমাকে খুব স্নেহ করেন। আমি এতিম। ছোটবেলায় বাপ মা মারা যাবার পর নানার কাছে আমি মানুষ।
আমাদের গ্রামে এক ধরনের ভীষণ মিষ্টি বিস্কুট পাওয়া যেত, ঘিয়ে ভাজা। বিস্কুটের নাম নানখাতাই। ছোটবেলায় আমার খুব প্রিয় ছিল বলে লোকমুখে আমার নাম হয়ে যায় বিস্কুটটির নামে : নানখাতাই।
ক্লাস নাইনে স্কুলে রেজিস্ট্রেশনের সময় হেডস্যার আমাকে ডেকে বললেন,
: তুমি চাইলে তোমার নাম পাল্টাতে পারো। একটা সুন্দর নাম দিয়া দেই আমি?
হেডস্যারের চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলতে খুব ভয় পেতাম আমরা। আমি মাটির দিকে তাকিয়ে বললাম,
: স্যার আমার নাম নানখাতাই চৌধুরী।
হেডস্যার আকাশ থেকে পড়লেন।
: তুই চৌধুরী হলি কেমনে?
আমার বাপজান পাশের গ্রামের চৌধুরী সাহেবের খাস গোলাম ছিলেন। প্রধান লাঠিয়াল। আমি তখন খুব গুড়া। একবার হাউদার খাল পাড়ে ছোট একটা চর জেগে উঠলে চৌধুরী সাহেব ওটা দখল করবেন ভেবে বাবাকে মাঝ রাতে ডেকে পাঠালেন। কী কারণে বাবা সেই প্রথম বিদ্রোহ করে বসলেন, ডাকে সাড়া দিলেন না। পরদিন চৌধুরী সাহেবের লোকজন বাড়িতে এসে বাবাকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে গেলেন। পিটিয়ে তক্তা বানানো হলো বাপজানকে। কয়েকদিন পর আমার বাবা রক্তবমি হয়ে মারা গেলেন।
বড় হয়ে যখন সব জানলাম আমি, প্রতিশোধ নেবার ইচ্ছা চরের মতো ভেতরে জাগতে লাগল।
হেডস্যার নাম ঠিক করার প্রসঙ্গ আনতেই প্রথম সুযোগে নামটা পাল্টে ফেললাম। নাম হয়ে গেল আমার নানখাতাই চৌধুরী।
নানার পাত্রী দেখার সঙ্গী হলাম আমি। চুপিচুপি একদিন কনে দেখা আলোর বিকেলে নানাজান আর আমি পাত্রী দেখতে ছুটি। নানা সুরমা আতর লাগিয়ে ফুরফুরে।
আমাদের সামনে যখন পাত্রী এলো, আমি থ। এতো সুন্দর মেয়ে আমি জীবনে দেখিনি। পাত্রীপক্ষ কী করে এই অল্পবয়সী ফুটফুটে মেয়েটাকে নানার মতো বুড়োর কাছে সমর্পণ করছেন?
যাইহোক এর কয়েকদিন পর এই জ্যোৎস্না সুন্দর মেয়েটাকে নিয়ে আমি ভাগলবা হলাম। গ্রাম থেকে পালালাম। খবর পেলাম, নানাজান নাকি রামদা নিয়ে আমাকে খুঁজছে।
সন্ধ্যার পর আমি আর মেয়েটা একসাথে পুকুরপাড়ে বসে থাকি। টুপুস করে ভেসে ওঠা মাছের ঘাই মারা জলের শব্দ শুনি। রাতের মাধবী দেখি। মেয়েটা আমার নাম নিয়ে খিলখিল করে হেসে ঢলে পড়ে আমার গায়ে। বোকার মতো মেয়েটার দিকে তাকিয়ে থাকি।
কেটে যায় একেকটা আড়িয়াল খাঁ মনোরমা দিন।
মাস সাতেক পরে এই চাঁদমাখা বউটা একদিন ফিসফিস করে আমাকে বলে,
: ও নানখাতাই ও নানখাতাই
: বলো আমার প্রেম পিরীতি
: তুমি তো বাবা হবা
আমি পাংখা হয়ে উঠি প্রবল তরাসে। মনে হলো, ভেসে যাচ্ছে আমার হাতের তালুর উপরে আড়িয়ালখাঁ। কলকলে হুমহম হামাগুড়ি শিশু। অপূর্ব সুন্দর মেয়েটার কানে কানে বলি,
: ছেলে হলে নাম রাখব আলেকজান্ডার চৌধুরী। তারপর তুমি আমি আর আলেকজান্ডার সেই চৌধুরী বাড়ির সামনে গিয়া চিৎকার করে বলব... দেইখা যান চৌধুরী। এই যে আমাদের আলেকজান্ডার।...
বউ অবাক হয়ে আমার অন্ধকার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে। চিনতে পারে না। কোমল করে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়,
: আর মেয়ে হলে?
: পৃথিবী চৌধুরী...
চাঁদমাখা রাত ওখানেই টুপ করে বেলা অবেলা ফ্রিজ হয়ে থাকে। ভীতুর ডিম রাতটা...
খুব মিষ্টি একটা স্বাদে ভরে গেলাম... ভালো লাগা জানাই ঃ), ভালো থাকবেন,- অলোকপর্ণা
উত্তরমুছুন