ঘর নেই, পর আছে, রাতে অঙ্গাঙ্গী, দিনে অচ্ছুৎ
“হয় রাখো শ্রীরাধা নয়তো চন্দ্রাবলী / সব ফুলেতে খাবে মধু, হায় রে আমার অলি / ডুবালে দুকূল সখা, ডুববে তরি মাঝ ধারে”
(পলাতক)
নাচনী, যাদের গলায় সুর আছে, শরীরে নাচ আছে, চোখে লাস্য আছে, কিন্তু মুখে ভাষ্য নেই। শিক্ষা থেকে বহু যোজন দূরে থাকা সমাজের মেয়ের দল এরা, এরা ঝুমুর নাচে। ঝুমুর, প্রায় হারিয়ে যেতে বসা একটা সংস্কৃতি। অন্যান্য লোক সংস্কৃতির ধুঁকতে ধুঁকতে বাঁচার মতোই এর বেঁচে থাকা। ঠিক এরকম পরিস্থিতিতেই তৈরি হয় এই সংস্কৃতিগুলোর কথা ভদ্রলোকের সংস্কৃতির মধ্য দিয়ে বলার। বহুকাল আগে ঝুমুরের একটি বড় প্রতিনিধিত্ব আমরা দেখেছিলাম ‘পলাতক’ সিনেমায়। কিন্তু লোকসংস্কৃতি যখন মরতে বসে তখনই কি তার প্রতিনিধিত্ব করে থাকে ভদ্রলোকের মিডিয়া? ঠিক তা নয়, আসলে কোনো লোকসংস্কৃতির ফর্মের অন্য মিডিয়ামে উঠে আসার ব্যাপারটা ঘটে দু’ধরনের তাগিদ থেকে। এক, যখন সেই ফর্ম দাপিয়ে বেড়াচ্ছে একটি বিশেষ সংস্কৃতিতে, তখন তার ঐশ্বর্য থেকে কিছু চিন্তা ধার নেওয়া; আর দুই, অন্য দিকে যখন সে মৃতপ্রায় তখন তার গল্প শোনানো। ১৯৬৩ সালে মুক্তি পাওয়া সেই সিনেমায় তাই বড় একটি সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্ব দরকার হয়ে পড়েছিল। অবশ্য অন্য আরেকটি দিক থেকে ভাবলে দেখা যায়, সেই সময়ের বাংলা সিনেমায় লোকজীবন ছিল অঙ্গাঙ্গী। একেবারে নাগরিক জীবনের ড্রয়িংরুমে সিনেমা বন্দী হয়নি। ভদ্রলোকরাও সবে সবে মেয়েদের তখন নাম রাখতে শুরু করেছেন ঝুমুর। ‘নান্দীকারে’র সাম্প্রতিক প্রযোজনা ‘নাচনী’ উক্ত দ্বিতীয় তাগিদকে নির্দেশ করে। ‘রসিক’ উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত এই নাটকে যে সময় প্রেক্ষিতকে ধরা হয়েছে, তা সাতের দশকের শেষ ও আটের দশকের শুরুর বাংলা। যে দল বিশ্ব সাহিত্যের নানা নাটক অনুবাদ করে চলেছে, জীবন ও সমাজের নানা সংকট দশকের পর দশক ধরে তুলে ধরেছে, সেই নাট্যদলকে তো ঘরের আনাচ কানাচ ঘুরে ঘুরে দেখতে হবেই।
এই নাটকে একই সাথে ঘটেছে লোকজীবনের একটি সংরূপের উঠে আসা, অন্যদিকে সেই সংরূপের ভেতরে থাকা পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীর ক্লেদাক্ত জীবন ও অন্যান্য সম্পর্কের টানাপোড়েন। একটা অন্য শোষণকে তুলে ধরা এখানে। পুরুলিয়া, মেদিনীপুরের ঝুমুর নাচ যাদের পেশা, তারা নিম্ন বর্গের মানুষ। এই পেশায় যে মেয়েরা আসে তাদের মধ্যে একটা অংশ আদিবাসী, একটা অংশ দলিত। প্রান্তজনের জীবন নানা ভাবেই শোষণের শিকার, তার মধ্যে নারী যখন শোষিত হয় তখন তাকে সহ্য করতে হয় দ্বিস্তরের শোষণ, একটা তার বর্গের প্রান্তিক অবস্থানের জন্য, আর অন্য আরেকটা পুরুষ শাসিত সমাজের নির্লজ্জ শরীরী উল্লাসের জন্য। এই শেষ বিষয়টিই নাটকের উপজীব্য। শরীর শুধু শরীর নয়, শরীর ধর্ম, শরীর সমাজ। তাই মৃত্যুর পরেও দলিত সমাজ নারীকে আরও বেশি দলিত করে তোলে। নাচনী বলে, পুরুষের পীরিতের ছোবলে তার শরীর অচ্ছুৎ। অথচ পুরুষ এটা আজও উপলব্ধি করতে পারেনি যে, যে নারীকে সে অচ্ছুৎ বলে ঘোষণা করে, সে আসলে অচ্ছুৎ হয় তার আলিঙ্গনের আশ্লেষেই। তাই রাতের শেষে সে শরীর বাসি হয়, আর সে জীবন অচ্ছুৎ হয়ে শেয়াল কুকুরের খাদ্য হয় জীবন রাত্রির শেষে। নাচনীর জীবন তো রাতেই আবদ্ধ। এই সমাজে যখন নারী স্বাধীন তখন তার সম্মান নেই, যখন সে ঘরের বাঁধনে বাঁধা তখন তার যত সম্মান। উচ্চ বর্গের সমাজের কাছে, অচ্ছুৎ শ্রেণীর পুরুষের কাছে আবার অচ্ছুৎ এই নাচনীরা। তাই মৃত্যুর পর তার পায়ে দড়ি বেঁধে হিড় হিড় করে টানতে টানতে নিয়ে গিয়ে ফেলা হবে কোনো ভাগাড়ে, চিল ও শকুনের খাদ্য হবে সে শরীর। সমাজ এখানে বোধ হয় খুব প্রতীকী বন্দোবস্ত করে ফেলে নাচনীদের জীবনের। মৃত্যুর পর যার শরীর চিল শকুনের খাদ্য, বেঁচে থাকতে সেই শরীর কি ছিল? কুসমীবাঈ-এর মৃতদেহকে যখন খাটিয়ায় চাপিয়ে বিজুলী ‘বলো হরি, হরি বোল’ ধ্বনি তুলতে তুলতে টানতে থাকে, তখন ঐ পুরুষতান্ত্রিক লাস্য ধাক্কা খায়, তখন সমগ্র সমাজের মুখে ঘুষি মেরে বিপ্লব ঘোষিত হয়।
নাচনীর যতদিন শরীর আছে ততদিন তার আদর পুরুষের কাছে, ‘দেহ পট, সনে নট সকলি হারায়’। শরীর যাওয়ার সাথে সাথে তার জীবনও যায়, বেঁচে থাকা তখন অতীতের মায়া নিয়ে আর দিনরাত আত্মগ্লানিতে দগ্ধে দগ্ধে। ‘সুখ গেছে কিন্তু স্মৃতি আছে’। তারা কারও মা নয়, কারও বৌ নয়। তাই তাদের ঘর নেই। ঘরের কাছাকাছি তাদের ঘোরাফেরা, কিন্তু ঘর তাদের কেউ দেয় না। রসিকের সাথে শরীরী লাস্য আর মঞ্চ পরিবেশনে অভ্যস্ত চটুল প্রেমের কথকতা, এই নিয়ে জীবনের সব না পাওয়াকে চেতনায় ভুলে থাকা। ‘পলাতক’ সিনেমায় দেখি বসন্ত চাটুজ্জে গোলাপীর পা টিপে দিতে পারে, তার জন্য সব করতে পারে, কিন্তু তাকে বিয়ে করতে পারে না। “নাগর আমার আসবে যাবে মধু খাবে কিন্তু বিয়ে করতে পারবে না” (পলাতক)। কিন্তু ভদ্রলোক পুরুষ দুষ্মন্তের মতো, তাদের গায়ে কালি লাগে না। মহাকবিকে তাই আংটির গল্প আনতে হয় আর ‘পলাতকে’ চূড়ান্ত মেলোড্রামা, যখন আংটি চাটুজ্জের ভাই গোলাপীকে বলে, “আমি তোমাকে মায়ের মতো দেখি”। পরিচালক বোঝালেন নাচনীদেরও কেউ মায়ের মতো দেখে, যেমন কুসমীবাঈকে দেখে পান্ডবকুমার। কিন্তু শেষ রক্ষা হয় কি? মা তো নয়, হবেও না, হয়ে থাকবে মায়ের মতো। বিগত যৌবনা কুসমীবাঈও বোঝে তার রসিক ধ্রুবকুমারের ঘরের কাছে থেকে। কিন্তু উঠোন থেকে ঘরের দুয়ার এই অবধি, ঘরের অন্দরে ঢোকার অনুমতি নেই, তাই অন্দরের সম্মানও নেই তার। ধ্রুবকুমারের ছেলে পান্ডবকুমারের নাচনী হয়ে ওঠে যখন বিজুলীবালা, তখন তার মধ্যে সদ্য ডাকাত সর্দার ভরত সর্দারের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার আনন্দ। তাই ঘর বলে সে যাকে ভুল করে, সে আসলে ঘর নয়, ঘরের মতো কিছু। এই মায়াস্বপ্ন ভাঙে তার কুসমীবাঈ-এর আত্মহত্যায়। ঝুমুরের রসিক আসলে কৃষ্ণ, আর নাচনী হলো রাধা। রাধাকে সবই হারাতে হয়, যেটুকু পাওয়ার সেটুকু শুধুই লীলা। কিন্তু রাধা দেবী, তাই নাচনীর মতো করুণ হয় না তাঁর বাস্তব জীবন।
বিজুলীবালা পান্ডবকুমারদের গ্রামের মেয়ে। সেই গ্রামের মেয়েকে উদ্ধার করতে রণং দেহি হয়ে বেরিয়ে আসে মেয়েরা, ছেলেরা যুদ্ধের জন্যও বেরিয়ে পড়ে নলপা নিয়ে। গ্রাম তখন হয়ে ওঠে মানুষের একতার প্রতীক, স্বয়ং রাষ্ট্রের প্রতিভূ, গ্রামই দেশ। তাই দেশের মেয়েকে উদ্ধারের জন্য পুরুষ ও নারীর একসাথে লড়াই। নারী স্বাধীনতার এই সম্ভাবনা যে সমাজে থাকে, সেই সমাজেই নারীকে প্রজন্মের পর প্রজন্ম নিজের জীবন দিয়ে আত্মত্যাগ করতে হয় সংস্কৃতির স্বার্থে। সংস্কৃতির জন্য জীবনের এই বড় অপচয়ের গঠন নির্মাণ করেছে পুরুষ নিজে। আসলে এই সমাজে নারীও দু’ধরনের – ঘরের নারী ও পরের নারী। একজনের সাথে পুরুষকে সমাজ বেঁধে দিয়েছে, আরেক জনের সাথে সমাজ নিজের স্বার্থে বাঁধন আলগা করার লাটাই পুরুষের হাতে দিয়েছে।
রসনাবালাদের গায়ে যতদিন বল থাকে, চলায় যতদিন ছল থাকে, ততদিন তাদের নিজেদের অধিকার থাকে; আর তারপর পেটের ভাত যোগাড় করতে হয়তো মেয়েকে বিক্রি করতে হয়। কিন্তু এই নাচনী হয়ে ওঠা শুধু পেটের বা শরীরের স্বাধীনতা কি? তা তো নারীর নিজের স্বাধীনতাও বটে! যদিও জীবন অনিশ্চিত। রসনাবালা তার মেয়ে বিজুলীবালাকে বিক্রি করে দেয়। নাটকের মধ্যে থেকে তা হলে এই বার্তাও উঠে আসে যে, নাচনী হওয়া মানে জীবনের সাথে বাজি ধরা, নিশ্চয়তা পেতে বৌ হতে হবে, বন্দী হতে হবে। সমাজের ব্যাধির উপশম নাকি সমাজের মধ্যেই থাকে। নাটকে তাই হাল্কা ছটাক ইঙ্গিত দেখি নাচনীর ঘর মেলার সম্ভাবনার। রসনাবাঈ একদা নাচনী ছিল, তার বিয়ে হয়, তাদেরই সন্তান বিজুলী, কিন্তু সেখানেও অকালমৃত্যু হয়। রসনাবালার বরের তাই সমাজ জীবনের পরিবর্তনের দৃষ্টান্ত তৈরি হয় না। কিন্তু ‘পলাতক’ সিনেমায় অন্য বার্তা, গোলাপী দামুকে বিয়ে করে বর পেয়ে, ঘর পেয়ে দল ছাড়ে। কিন্তু ‘নাচনী’ লিঙ্গ বৈষম্য ও যন্ত্রণার কথা বলে, সেই ইতিহাসকে খুঁড়ে খুঁড়ে উদ্ধার করে। তাই নাচনীর জীবনের সেই সম্ভাবনাকে আড়াল করে রাখা হয়। ব্রাত্য জীবনের ব্রাত্যতর ইতিহাসের অনুসন্ধান এই নাটক। সময় এই নাটক দাবী করে নিশ্চিতভাবেই।
পুরুষের লড়াই বাঁধন ছাড়া, আগ্রাসী। আর তা বাড়তে বাড়তে কখন যে নিজের অজান্তেই নিজের রক্ত মাংস ছিঁড়তে থাকে! পাণ্ডবকুমার নিজের পরিচয় তৈরি করতে চায়। অন্যদিকে বিখ্যাত রসিক, তার বাবা ধ্রুবকুমারের কাছে বড় হয়ে ওঠে তার অহং। পাণ্ডবকুমারের নাচনীর প্রতি শরীরী আকর্ষণ দেখায় ধ্রুবকুমার, শুধু ছেলের আত্মপ্রতিষ্ঠার লড়াইকে দমন করতে হবে বলে। বাবা ও ছেলের মধ্যে মনযৌন জটিলতা তৈরি হয়, যার সূচনা অবশ্য বাবার নাচনীর সাথে যখন ছেলে পাণ্ডবকুমার এক রাতের জন্য রসিক চরিত্রে অভিনয় করে, তারপর থেকেই। মনে পড়ে যায় সমরেশ বসুর ‘শাম্ব’; নিজের সন্তানের পৌরুষে নিজের গোপিনীদের কামনামেদুর হয়ে উঠতে দেখে ঈর্ষাকাতর কৃষ্ণ অভিশাপ দেন শাম্বর রমণী মোহিত রূপ নষ্ট হবে কুষ্ঠে। অন্যদিকে বিজুলীবালার প্রতি ধ্রুবকুমারের আকর্ষণ ধরা পড়ে যায় কুসমীবাঈ-এর নজরে আর সেই মুহূর্তেই সে বেছে নেয় আত্মহননের পথ। এখানেও দেখি সেই একই মনযৌন জটিলতা, কন্যা সম বিজুলীর প্রতি আকর্ষিত পতিসম ধ্রুবকুমার। কুসমীর এই আত্মহনন পুরুষের যৌন স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ।
বয়সের ভারে ন্যুব্জ লাগে স্বাতীলেখা আর রুদ্রপ্রসাদ দুজনকেই। রসিক শ্রেষ্ঠ বলে মেনে নিতে অসুবিধা হয় ধ্রুবকুমারের চরিত্রে অভিনয় করা রুদ্রপ্রসাদকে। এককালের শ্রেষ্ঠ নাচনী বলে মেনে নিতে মন সায় দেয় না স্বাতীলেখাকেও। অন্ধ বৃদ্ধ রসিকের চরিত্রে মানিয়ে যায় পার্থপ্রতিম দেব, মানিয়ে যায় দেবশঙ্কর হালদারের সরল প্রেমিক চরিত্র, যে বাবার ছায়া থেকে বেড়িয়ে এসে সহজভাবে অথচ দৃঢ় ভঙ্গিতে ঘোষণা করবে নিজের আত্মপ্রতিষ্ঠার কথা। ‘বাপ্পাদিত্য’তে অভিনয় করা সেই সোহিনীর নৃত্যকৃতি এখানে বেশ ম্লান। যদিও এ নাটকে সে নাচ জানতো না গান জানতো না, কিন্তু শেষ অবধি তো সে হয়ে উঠেছিল পান্ডবকুমারের নাচনী। নাটকের কথোপকথনের ভাষা বিষয়ে আরও একটু যত্নবান হওয়া উচিৎ ছিল। ভালো অভিনয় করেছেন ময়ূর চরিত্রে দেবব্রত মাইতি। আলোক ও শব্দ প্রয়োগের চমৎকারিত্ব ও স্থির মঞ্চসজ্জা নাট্য কথনের আবেদন তৈরি করে।
শোষণের যন্ত্রণার থেকে ছন্দের সৌন্দর্য স্বাভাবিকভাবেই মনকে বেশি টানে। নাটকের শেষে মঞ্চে সব চরিত্রগুলো একত্রিত হয় গান বাজনার তালে তালে। আয়োজকদের অনুরোধে দর্শক যখন ‘হল’ ছাড়ে, তখন চলেছে মঞ্চে সম্মিলিত নাচ গান। দর্শক গানের তালে শরীর ও মন দুইই দোলাতে দোলাতে বেড়িয়ে পড়ে। মনে হয়, নাটক যেন অনেকক্ষণ আগেই শেষ হয়ে গেছে। কুসুমবাঈ-এর আত্মহত্যায় যে যন্ত্রণা তৈরি হলো, আর বিজলীবালার নারী মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য নিজেকে বিদীর্ণ করা প্রচেষ্টায় যে বিপ্লব সেই মৃত্যুশয্যার পাশে ঘোষিত হলো, নাটক তো সেখানেই শেষ! কিন্তু দর্শকের সাথে সেই ঘোষিত নারী বিপ্লবের মনুষ্যত্ব দোমড়ানো যন্ত্রণার দূরত্ব খুব তাড়াতাড়ি বেড়ে যায় নাচ গানের সাথে সাথে। ৬ই এপ্রিল, রবিবার সন্ধ্যায় হায়দ্রাবাদ ‘উত্তরায়ণ ক্লাবে’র উদ্যোগে ‘রবীন্দ্রভারতী’ প্রেক্ষাগৃহে আয়োজিত হয়েছিল এই নাটক। পাশ থেকে এক নিন্দুক বলে উঠলেন, হায়দ্রাবাদ মহানগরীর নাগরিক একঘেয়েমিতে হপ্তা কাবার করা আধুনিক ব্যক্তিসত্তার একাকীত্বে আবদ্ধ সুখী মানুষগুলোকে কি নান্দীকার চাইলো না, নারী শোষণের ঐ রগরগে ঘা নিয়ে বাড়ি ফিরে যেতে দিতে!
“হয় রাখো শ্রীরাধা নয়তো চন্দ্রাবলী / সব ফুলেতে খাবে মধু, হায় রে আমার অলি / ডুবালে দুকূল সখা, ডুববে তরি মাঝ ধারে”
(পলাতক)
নাচনী, যাদের গলায় সুর আছে, শরীরে নাচ আছে, চোখে লাস্য আছে, কিন্তু মুখে ভাষ্য নেই। শিক্ষা থেকে বহু যোজন দূরে থাকা সমাজের মেয়ের দল এরা, এরা ঝুমুর নাচে। ঝুমুর, প্রায় হারিয়ে যেতে বসা একটা সংস্কৃতি। অন্যান্য লোক সংস্কৃতির ধুঁকতে ধুঁকতে বাঁচার মতোই এর বেঁচে থাকা। ঠিক এরকম পরিস্থিতিতেই তৈরি হয় এই সংস্কৃতিগুলোর কথা ভদ্রলোকের সংস্কৃতির মধ্য দিয়ে বলার। বহুকাল আগে ঝুমুরের একটি বড় প্রতিনিধিত্ব আমরা দেখেছিলাম ‘পলাতক’ সিনেমায়। কিন্তু লোকসংস্কৃতি যখন মরতে বসে তখনই কি তার প্রতিনিধিত্ব করে থাকে ভদ্রলোকের মিডিয়া? ঠিক তা নয়, আসলে কোনো লোকসংস্কৃতির ফর্মের অন্য মিডিয়ামে উঠে আসার ব্যাপারটা ঘটে দু’ধরনের তাগিদ থেকে। এক, যখন সেই ফর্ম দাপিয়ে বেড়াচ্ছে একটি বিশেষ সংস্কৃতিতে, তখন তার ঐশ্বর্য থেকে কিছু চিন্তা ধার নেওয়া; আর দুই, অন্য দিকে যখন সে মৃতপ্রায় তখন তার গল্প শোনানো। ১৯৬৩ সালে মুক্তি পাওয়া সেই সিনেমায় তাই বড় একটি সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্ব দরকার হয়ে পড়েছিল। অবশ্য অন্য আরেকটি দিক থেকে ভাবলে দেখা যায়, সেই সময়ের বাংলা সিনেমায় লোকজীবন ছিল অঙ্গাঙ্গী। একেবারে নাগরিক জীবনের ড্রয়িংরুমে সিনেমা বন্দী হয়নি। ভদ্রলোকরাও সবে সবে মেয়েদের তখন নাম রাখতে শুরু করেছেন ঝুমুর। ‘নান্দীকারে’র সাম্প্রতিক প্রযোজনা ‘নাচনী’ উক্ত দ্বিতীয় তাগিদকে নির্দেশ করে। ‘রসিক’ উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত এই নাটকে যে সময় প্রেক্ষিতকে ধরা হয়েছে, তা সাতের দশকের শেষ ও আটের দশকের শুরুর বাংলা। যে দল বিশ্ব সাহিত্যের নানা নাটক অনুবাদ করে চলেছে, জীবন ও সমাজের নানা সংকট দশকের পর দশক ধরে তুলে ধরেছে, সেই নাট্যদলকে তো ঘরের আনাচ কানাচ ঘুরে ঘুরে দেখতে হবেই।
এই নাটকে একই সাথে ঘটেছে লোকজীবনের একটি সংরূপের উঠে আসা, অন্যদিকে সেই সংরূপের ভেতরে থাকা পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীর ক্লেদাক্ত জীবন ও অন্যান্য সম্পর্কের টানাপোড়েন। একটা অন্য শোষণকে তুলে ধরা এখানে। পুরুলিয়া, মেদিনীপুরের ঝুমুর নাচ যাদের পেশা, তারা নিম্ন বর্গের মানুষ। এই পেশায় যে মেয়েরা আসে তাদের মধ্যে একটা অংশ আদিবাসী, একটা অংশ দলিত। প্রান্তজনের জীবন নানা ভাবেই শোষণের শিকার, তার মধ্যে নারী যখন শোষিত হয় তখন তাকে সহ্য করতে হয় দ্বিস্তরের শোষণ, একটা তার বর্গের প্রান্তিক অবস্থানের জন্য, আর অন্য আরেকটা পুরুষ শাসিত সমাজের নির্লজ্জ শরীরী উল্লাসের জন্য। এই শেষ বিষয়টিই নাটকের উপজীব্য। শরীর শুধু শরীর নয়, শরীর ধর্ম, শরীর সমাজ। তাই মৃত্যুর পরেও দলিত সমাজ নারীকে আরও বেশি দলিত করে তোলে। নাচনী বলে, পুরুষের পীরিতের ছোবলে তার শরীর অচ্ছুৎ। অথচ পুরুষ এটা আজও উপলব্ধি করতে পারেনি যে, যে নারীকে সে অচ্ছুৎ বলে ঘোষণা করে, সে আসলে অচ্ছুৎ হয় তার আলিঙ্গনের আশ্লেষেই। তাই রাতের শেষে সে শরীর বাসি হয়, আর সে জীবন অচ্ছুৎ হয়ে শেয়াল কুকুরের খাদ্য হয় জীবন রাত্রির শেষে। নাচনীর জীবন তো রাতেই আবদ্ধ। এই সমাজে যখন নারী স্বাধীন তখন তার সম্মান নেই, যখন সে ঘরের বাঁধনে বাঁধা তখন তার যত সম্মান। উচ্চ বর্গের সমাজের কাছে, অচ্ছুৎ শ্রেণীর পুরুষের কাছে আবার অচ্ছুৎ এই নাচনীরা। তাই মৃত্যুর পর তার পায়ে দড়ি বেঁধে হিড় হিড় করে টানতে টানতে নিয়ে গিয়ে ফেলা হবে কোনো ভাগাড়ে, চিল ও শকুনের খাদ্য হবে সে শরীর। সমাজ এখানে বোধ হয় খুব প্রতীকী বন্দোবস্ত করে ফেলে নাচনীদের জীবনের। মৃত্যুর পর যার শরীর চিল শকুনের খাদ্য, বেঁচে থাকতে সেই শরীর কি ছিল? কুসমীবাঈ-এর মৃতদেহকে যখন খাটিয়ায় চাপিয়ে বিজুলী ‘বলো হরি, হরি বোল’ ধ্বনি তুলতে তুলতে টানতে থাকে, তখন ঐ পুরুষতান্ত্রিক লাস্য ধাক্কা খায়, তখন সমগ্র সমাজের মুখে ঘুষি মেরে বিপ্লব ঘোষিত হয়।
নাচনীর যতদিন শরীর আছে ততদিন তার আদর পুরুষের কাছে, ‘দেহ পট, সনে নট সকলি হারায়’। শরীর যাওয়ার সাথে সাথে তার জীবনও যায়, বেঁচে থাকা তখন অতীতের মায়া নিয়ে আর দিনরাত আত্মগ্লানিতে দগ্ধে দগ্ধে। ‘সুখ গেছে কিন্তু স্মৃতি আছে’। তারা কারও মা নয়, কারও বৌ নয়। তাই তাদের ঘর নেই। ঘরের কাছাকাছি তাদের ঘোরাফেরা, কিন্তু ঘর তাদের কেউ দেয় না। রসিকের সাথে শরীরী লাস্য আর মঞ্চ পরিবেশনে অভ্যস্ত চটুল প্রেমের কথকতা, এই নিয়ে জীবনের সব না পাওয়াকে চেতনায় ভুলে থাকা। ‘পলাতক’ সিনেমায় দেখি বসন্ত চাটুজ্জে গোলাপীর পা টিপে দিতে পারে, তার জন্য সব করতে পারে, কিন্তু তাকে বিয়ে করতে পারে না। “নাগর আমার আসবে যাবে মধু খাবে কিন্তু বিয়ে করতে পারবে না” (পলাতক)। কিন্তু ভদ্রলোক পুরুষ দুষ্মন্তের মতো, তাদের গায়ে কালি লাগে না। মহাকবিকে তাই আংটির গল্প আনতে হয় আর ‘পলাতকে’ চূড়ান্ত মেলোড্রামা, যখন আংটি চাটুজ্জের ভাই গোলাপীকে বলে, “আমি তোমাকে মায়ের মতো দেখি”। পরিচালক বোঝালেন নাচনীদেরও কেউ মায়ের মতো দেখে, যেমন কুসমীবাঈকে দেখে পান্ডবকুমার। কিন্তু শেষ রক্ষা হয় কি? মা তো নয়, হবেও না, হয়ে থাকবে মায়ের মতো। বিগত যৌবনা কুসমীবাঈও বোঝে তার রসিক ধ্রুবকুমারের ঘরের কাছে থেকে। কিন্তু উঠোন থেকে ঘরের দুয়ার এই অবধি, ঘরের অন্দরে ঢোকার অনুমতি নেই, তাই অন্দরের সম্মানও নেই তার। ধ্রুবকুমারের ছেলে পান্ডবকুমারের নাচনী হয়ে ওঠে যখন বিজুলীবালা, তখন তার মধ্যে সদ্য ডাকাত সর্দার ভরত সর্দারের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার আনন্দ। তাই ঘর বলে সে যাকে ভুল করে, সে আসলে ঘর নয়, ঘরের মতো কিছু। এই মায়াস্বপ্ন ভাঙে তার কুসমীবাঈ-এর আত্মহত্যায়। ঝুমুরের রসিক আসলে কৃষ্ণ, আর নাচনী হলো রাধা। রাধাকে সবই হারাতে হয়, যেটুকু পাওয়ার সেটুকু শুধুই লীলা। কিন্তু রাধা দেবী, তাই নাচনীর মতো করুণ হয় না তাঁর বাস্তব জীবন।
বিজুলীবালা পান্ডবকুমারদের গ্রামের মেয়ে। সেই গ্রামের মেয়েকে উদ্ধার করতে রণং দেহি হয়ে বেরিয়ে আসে মেয়েরা, ছেলেরা যুদ্ধের জন্যও বেরিয়ে পড়ে নলপা নিয়ে। গ্রাম তখন হয়ে ওঠে মানুষের একতার প্রতীক, স্বয়ং রাষ্ট্রের প্রতিভূ, গ্রামই দেশ। তাই দেশের মেয়েকে উদ্ধারের জন্য পুরুষ ও নারীর একসাথে লড়াই। নারী স্বাধীনতার এই সম্ভাবনা যে সমাজে থাকে, সেই সমাজেই নারীকে প্রজন্মের পর প্রজন্ম নিজের জীবন দিয়ে আত্মত্যাগ করতে হয় সংস্কৃতির স্বার্থে। সংস্কৃতির জন্য জীবনের এই বড় অপচয়ের গঠন নির্মাণ করেছে পুরুষ নিজে। আসলে এই সমাজে নারীও দু’ধরনের – ঘরের নারী ও পরের নারী। একজনের সাথে পুরুষকে সমাজ বেঁধে দিয়েছে, আরেক জনের সাথে সমাজ নিজের স্বার্থে বাঁধন আলগা করার লাটাই পুরুষের হাতে দিয়েছে।
রসনাবালাদের গায়ে যতদিন বল থাকে, চলায় যতদিন ছল থাকে, ততদিন তাদের নিজেদের অধিকার থাকে; আর তারপর পেটের ভাত যোগাড় করতে হয়তো মেয়েকে বিক্রি করতে হয়। কিন্তু এই নাচনী হয়ে ওঠা শুধু পেটের বা শরীরের স্বাধীনতা কি? তা তো নারীর নিজের স্বাধীনতাও বটে! যদিও জীবন অনিশ্চিত। রসনাবালা তার মেয়ে বিজুলীবালাকে বিক্রি করে দেয়। নাটকের মধ্যে থেকে তা হলে এই বার্তাও উঠে আসে যে, নাচনী হওয়া মানে জীবনের সাথে বাজি ধরা, নিশ্চয়তা পেতে বৌ হতে হবে, বন্দী হতে হবে। সমাজের ব্যাধির উপশম নাকি সমাজের মধ্যেই থাকে। নাটকে তাই হাল্কা ছটাক ইঙ্গিত দেখি নাচনীর ঘর মেলার সম্ভাবনার। রসনাবাঈ একদা নাচনী ছিল, তার বিয়ে হয়, তাদেরই সন্তান বিজুলী, কিন্তু সেখানেও অকালমৃত্যু হয়। রসনাবালার বরের তাই সমাজ জীবনের পরিবর্তনের দৃষ্টান্ত তৈরি হয় না। কিন্তু ‘পলাতক’ সিনেমায় অন্য বার্তা, গোলাপী দামুকে বিয়ে করে বর পেয়ে, ঘর পেয়ে দল ছাড়ে। কিন্তু ‘নাচনী’ লিঙ্গ বৈষম্য ও যন্ত্রণার কথা বলে, সেই ইতিহাসকে খুঁড়ে খুঁড়ে উদ্ধার করে। তাই নাচনীর জীবনের সেই সম্ভাবনাকে আড়াল করে রাখা হয়। ব্রাত্য জীবনের ব্রাত্যতর ইতিহাসের অনুসন্ধান এই নাটক। সময় এই নাটক দাবী করে নিশ্চিতভাবেই।
পুরুষের লড়াই বাঁধন ছাড়া, আগ্রাসী। আর তা বাড়তে বাড়তে কখন যে নিজের অজান্তেই নিজের রক্ত মাংস ছিঁড়তে থাকে! পাণ্ডবকুমার নিজের পরিচয় তৈরি করতে চায়। অন্যদিকে বিখ্যাত রসিক, তার বাবা ধ্রুবকুমারের কাছে বড় হয়ে ওঠে তার অহং। পাণ্ডবকুমারের নাচনীর প্রতি শরীরী আকর্ষণ দেখায় ধ্রুবকুমার, শুধু ছেলের আত্মপ্রতিষ্ঠার লড়াইকে দমন করতে হবে বলে। বাবা ও ছেলের মধ্যে মনযৌন জটিলতা তৈরি হয়, যার সূচনা অবশ্য বাবার নাচনীর সাথে যখন ছেলে পাণ্ডবকুমার এক রাতের জন্য রসিক চরিত্রে অভিনয় করে, তারপর থেকেই। মনে পড়ে যায় সমরেশ বসুর ‘শাম্ব’; নিজের সন্তানের পৌরুষে নিজের গোপিনীদের কামনামেদুর হয়ে উঠতে দেখে ঈর্ষাকাতর কৃষ্ণ অভিশাপ দেন শাম্বর রমণী মোহিত রূপ নষ্ট হবে কুষ্ঠে। অন্যদিকে বিজুলীবালার প্রতি ধ্রুবকুমারের আকর্ষণ ধরা পড়ে যায় কুসমীবাঈ-এর নজরে আর সেই মুহূর্তেই সে বেছে নেয় আত্মহননের পথ। এখানেও দেখি সেই একই মনযৌন জটিলতা, কন্যা সম বিজুলীর প্রতি আকর্ষিত পতিসম ধ্রুবকুমার। কুসমীর এই আত্মহনন পুরুষের যৌন স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ।
বয়সের ভারে ন্যুব্জ লাগে স্বাতীলেখা আর রুদ্রপ্রসাদ দুজনকেই। রসিক শ্রেষ্ঠ বলে মেনে নিতে অসুবিধা হয় ধ্রুবকুমারের চরিত্রে অভিনয় করা রুদ্রপ্রসাদকে। এককালের শ্রেষ্ঠ নাচনী বলে মেনে নিতে মন সায় দেয় না স্বাতীলেখাকেও। অন্ধ বৃদ্ধ রসিকের চরিত্রে মানিয়ে যায় পার্থপ্রতিম দেব, মানিয়ে যায় দেবশঙ্কর হালদারের সরল প্রেমিক চরিত্র, যে বাবার ছায়া থেকে বেড়িয়ে এসে সহজভাবে অথচ দৃঢ় ভঙ্গিতে ঘোষণা করবে নিজের আত্মপ্রতিষ্ঠার কথা। ‘বাপ্পাদিত্য’তে অভিনয় করা সেই সোহিনীর নৃত্যকৃতি এখানে বেশ ম্লান। যদিও এ নাটকে সে নাচ জানতো না গান জানতো না, কিন্তু শেষ অবধি তো সে হয়ে উঠেছিল পান্ডবকুমারের নাচনী। নাটকের কথোপকথনের ভাষা বিষয়ে আরও একটু যত্নবান হওয়া উচিৎ ছিল। ভালো অভিনয় করেছেন ময়ূর চরিত্রে দেবব্রত মাইতি। আলোক ও শব্দ প্রয়োগের চমৎকারিত্ব ও স্থির মঞ্চসজ্জা নাট্য কথনের আবেদন তৈরি করে।
শোষণের যন্ত্রণার থেকে ছন্দের সৌন্দর্য স্বাভাবিকভাবেই মনকে বেশি টানে। নাটকের শেষে মঞ্চে সব চরিত্রগুলো একত্রিত হয় গান বাজনার তালে তালে। আয়োজকদের অনুরোধে দর্শক যখন ‘হল’ ছাড়ে, তখন চলেছে মঞ্চে সম্মিলিত নাচ গান। দর্শক গানের তালে শরীর ও মন দুইই দোলাতে দোলাতে বেড়িয়ে পড়ে। মনে হয়, নাটক যেন অনেকক্ষণ আগেই শেষ হয়ে গেছে। কুসুমবাঈ-এর আত্মহত্যায় যে যন্ত্রণা তৈরি হলো, আর বিজলীবালার নারী মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য নিজেকে বিদীর্ণ করা প্রচেষ্টায় যে বিপ্লব সেই মৃত্যুশয্যার পাশে ঘোষিত হলো, নাটক তো সেখানেই শেষ! কিন্তু দর্শকের সাথে সেই ঘোষিত নারী বিপ্লবের মনুষ্যত্ব দোমড়ানো যন্ত্রণার দূরত্ব খুব তাড়াতাড়ি বেড়ে যায় নাচ গানের সাথে সাথে। ৬ই এপ্রিল, রবিবার সন্ধ্যায় হায়দ্রাবাদ ‘উত্তরায়ণ ক্লাবে’র উদ্যোগে ‘রবীন্দ্রভারতী’ প্রেক্ষাগৃহে আয়োজিত হয়েছিল এই নাটক। পাশ থেকে এক নিন্দুক বলে উঠলেন, হায়দ্রাবাদ মহানগরীর নাগরিক একঘেয়েমিতে হপ্তা কাবার করা আধুনিক ব্যক্তিসত্তার একাকীত্বে আবদ্ধ সুখী মানুষগুলোকে কি নান্দীকার চাইলো না, নারী শোষণের ঐ রগরগে ঘা নিয়ে বাড়ি ফিরে যেতে দিতে!
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন