ধারাবাহিক
উপন্যাস
ছেঁড়া শেকড়ের অন্তরাখ্যান
(৭)
কাঁটাতারের দাগ নিয়ে বাঁচার অভিনয় প্রতিদিন…
বাসন্তীদের বাড়িতে যাওয়ার পথে যে অনেকটা খোলা জমি, ওটা কার কে জানে। হয়ত কারও, হয়ত কারও না। নতুন এক পরিবার তার একটা ছোটো অংশ পরিষ্কার করে ঘর বেঁধেছে। একপক্ষে ভালো, অতখানি খালি জমি পেরিয়ে যেতে গা-ছমছমে ব্যাপার ছিল। এরা এসে বসত করাতে তবু খানিক কমেছে। স্বামী-স্ত্রী, তিনটি ছেলে, দু-টি মেয়ে। কারও বয়স বিশেষ কম নয়। তারাসুন্দরী গিয়েছিলেন একদিন পরিচয় করতে। বড়ো দুই ছেলে নাকি বর্মাদেশে সরকারি চাকরি করত। অনেক বছর কাটিয়েছে সে দেশে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে সেদেশ ছেড়ে চলে আসতে বাধ্য হয়। তখন জাহাজ-বোঝাই মানুষ ছেড়ে আসছে সংসার, গিয়ে পৌঁছাচ্ছে ভারতের পূর্বতটে। গোপেশ্বর ও মোক্ষদারাণিও দুই মেয়ে আর ছোটো ছেলেকে নিয়ে গেলেন জন্মভূমিতে। বড়ো ছেলেরা আসতে পারল না। কোনওরকমে দিন চলছিল। তারপর দাঙ্গা, দেশভাগ। তবু মাটি কামড়ে পড়েছিলেন ছেলেদের অপেক্ষায়। আবার দাঙ্গা, আবার কাটাকাটি, দুর্দশার চরম। পালিয়ে গেলেন ত্রিপুরায়। বছরখানেক আগে কলকাতা শহরে কোন পরিচিতের বাড়িতে এসে উঠলেন। তারাসুন্দরী ফিরে এসে ধীরেন্দ্রনাথকে বলেছিলেন,
“তাগ ভাষা য্যান অইন্যরকম। ভাল বোঝবার পারি না। বাংলা কয় না কী
ভাষা কয় কেডা জানে?”
“তুমার যাওনের কোন কাম আছিল?”
ধমক খেয়ে তারাসুন্দরী নীরব হয়ে গেলেন। অনেক খবর তিনি জমা করে
এনেছেন, ধীরেন্দ্রনাথ শুনতে চাইলেন না। অমুর কাছে বললে মন হালকা হত। অমলা গেছে কাছেই
বন্ধুর বাড়ি। সেখানে একজন সেলাই-দিদিমণি আসেন। তারাসুন্দরী আপত্তি করেন নি। বিয়ে না
হওয়া পর্যন্ত শিখুক, পরে কাজে দেবে। তারাসুন্দরী আপনমনে বলতে থাকেন,
“কয় কিনা কুলীন ব্রাইম্মণ! দেইখ্যা মন লয় য্যান জাউরার পুত—!”
“কী কও এইগুলা?”
ভীষণ অসন্তুষ্ট হয়ে স্ত্রীকে থামিয়ে দিলেন ধীরেন্দ্রনাথ। তিনি
জরুরী কাগজপত্র ট্রাঙ্ক থেকে বের করে বসেছিলেন। তারাসুন্দরী কৌতূহলী হয়ে উঁকি দিলেন।
তেমন কিছু না বুঝে বললেন,
“কিয়ের কাগজ? কেডা পাঠায়?”
“তুমি বোঝবা? তাইলেই হইছে। মাইয়া মাইনষের বুদ্ধি—!”
এই কথা শুনলে আগে রাগ হতেন তারাসুন্দরী। তর্ক করতেন। তাঁকে রাগাতে
ভালোবাসতেন ধীরেন্দ্রনাথ। আপাতত ক্লান্ত গলায় স্বামীকে বললেন,
“কইতে না চান, কইয়েন না। বুদ্ধির খোটা দ্যান কিয়ের লাইগ্যা? এই
বুদ্ধিতেই সংসার চলে অ্যাদ্দিন।”
“শুন, হেই দ্যাশের থে’ আইলাম, ডোকুমেন্ট, পারমিট যা আছে সামলাইয়া রাখি। কুনদিন আবার
খেদাইয়া দিব জানি না। কইব, বে-আইনি, বে-আইনি। যামু কই? আমগ খেদানের লাইগ্যা এইহানের
মাইনষে রেডি হইয়া বইছে। কয় কিনা জবরদখল কলোনি। ব্যাংকের এই খাতাখান দ্যাখছ? ব্যাঙ্গের
আধুলি বাইচা আছে। মাইয়ার বিয়া-বিয়া ক্ষ্যাপছ, দিবা ক্যামনে? বড়খোকায় কিছু দেয়, নিরুও
নিজের খরচ দিতাছে—তয় না চলছে। ভাব এইগুলান?”
শান্ত গলায় বুঝিয়ে বললেন ধীরেন্দ্রনাথ। তারাসুন্দরী দমে গেলেন,
এসব তিনি জানেন। তাঁর শরীর আগের চেয়ে অনেক ভেঙেছে। অল্প পরিশ্রমে কাহিল হয়ে পড়েন। ঠিকে
কাজের ঝি প্রায়ই অনুপস্থিত। তর্কাতর্কি না করে চুপ করে রইলেন। ওপারে থাকতে সোনা তাঁর
কম ছিল না। গয়নার শখ ছিল বলে একটু একটু করে অনেক গড়িয়েছিলেন। কমলার গা সাজিয়ে বিয়ে
দিয়েছিলেন। রমলার কথা ভাবেন নি। অমলা তখন দুধের শিশু প্রায়। কমলার ছিল শিল্পীমন। মাছের
আঁশ, ঝিনুকের খোলা শুকিয়ে আঠা দিয়ে জুড়ে সাজিয়ে নেকলেস, কানবালার ডিজাইন দিয়েছিল স্যাকরাকে।
ওজনে অনেক হালকা এবং অতি সুদৃশ্য। কলকাতায় আসার সময়ে গোটাপাঁচেক গিনিমোহর তারাসুন্দরী
পেটকাপড়ে লুকিয়ে এনেছিলেন। নৌকায়, ট্রেনে সাবধানতার মার নেই। রমলাকে আসার সময়ে বুদ্ধি
করে অল্প ক-খানা সঙ্গে আনতে বলেছিলেন। মা-মেয়ের গায়ে বারোমেসে গহনা ছিল। কী ভেবে তিনি
নিজের হাত দু-খানা তুলে দেখলেন। গয়নার সঙ্গে হাতের জৌলুসও কবে উধাও হয়েছে। মলিন শাঁখা-পলার
পাশে শুধু দু-খানা অনুজ্জ্বল সরু রুলি। হঠাৎ বুকের মধ্যে তোলপাড় করে বন্যার মতো দুঃখ
এল। মুখে আঁচল চাপা দিয়ে উঠে গেলেন। ধীরেন্দ্রনাথ আড়চোখ স্ত্রীকে দেখলেন। অনেকখানি
মায়া হল, আবার কৌতুকবোধও। হৃষ্টমনে নিজের কাজে মন দিলেন। গত সপ্তাহে পাশের ঘরের শিবনাথ
দু-তিনটি ছেলেকে নিয়ে এসেছিল। শিবনাথ ছেলেটি বিশেষ শিক্ষিত না হলেও বুদ্ধিমান। নিজস্ব
চিন্তাভাবনা আছে। কালীঘাটের হকার্স কর্নারে এক দোকানের কর্মচারী। টাকা জমিয়ে নিজস্ব
ব্যবসা শুরু করার প্ল্যান আঁটছে। আঞ্চলিক উন্নয়ন সমিতিতে সদস্য হওয়ার জন্য শিবনাথকে
বারবার অনুরোধ করে গেছে। শিক্ষিত মানুষ ধীরেন্দ্রনাথ। জ্ঞান ও সুভদ্র ব্যবহারের জন্য
লোকপ্রিয় হয়ে উঠেছেন। মাত্র ক-বছর আগে এরাজ্যের সমস্ত বাস্তুহারা অধিবাসীদের নিয়ে কেন্দ্রিয়
কমিটি গঠিত হয়েছে। বিভিন্ন উদ্বাস্তু উপনিবেশ থেকে সদস্য সংগ্রহ করে কাজকর্ম চালানো
হচ্ছে। মাঝে উদ্বাস্তু উৎখাতের জোর হাওয়া উঠেছিল। এই সংগঠনের আন্দোলন ঠেকিয়ে দিয়েছে।
ট্রামভাড়া একপয়সা বেড়েছিল বলে তুমুল সরকারবিরোধী ঝড় তুলেছিল এই সংগঠন। সাময়িকভাবে আটকানো
হয়েছে। ধীরেন্দ্রনাথ আপাতত পড়ে-পাওয়া জমি আর মাথা গোঁজার আশ্রয় হারানোর ভাবনা থেকে
নিজেকে মুক্ত রাখার চেষ্টা করছেন। তবে জমির দলিলপত্র যতদিন না তৈরি হচ্ছে এই অনিশ্চয়তা
কুরে-কুরে খাবে। দলিল পাওয়ার আশাও সুদূরপরাহত।
দুপুরের পর নারকেলবাটা, ছোট এলাচের গুঁড়ো, চিনি আর দুধ নরম আঁচে পাক দিচ্ছিলেন তারাসুন্দরী। ভুরভুরে সুগন্ধ ছড়িয়েছে বাড়িময়। ভাত খেয়ে উঠে এসব করতে বসলে শরীর ইদানিং বিদ্রোহ করে। কড়া ঠাণ্ডাও পড়েছে। এদিকটা শহরের গোলমাল থেকে দূর, নির্জন আর ছায়াচ্ছন্ন অন্ধকার বলে মাঘের শীতের কামড় আরও বেশী। বাজারে নতুন গুড় উঠেছে। নিরঞ্জনকে দিয়ে আনিয়ে রেখেছেন। তাঁর হাতের পিঠাপুলি অতি সুস্বাদু। ওদেশে থাকতে আত্মীয়জন, প্রতিবেশী – সকলকে যত্ন করে খাওয়াতেন। পৌষ-সংক্রান্তির দিন চিতই পিঠা করেছিলেন। মাটির সরায় ছোটো ছোটো বাটির মতো গর্তে চালবাটার গোলা মৃদু আঁচে ডুমো-ডুমো সাদা পিঠে হয়ে ফুলে ওঠে। সঙ্গে নারকেলকোরা আর খেজুরের পাতলা গুড়। এই পিঠে ধীরেন্দ্রনাথ ও ছেলেমেয়েদের খুব প্রিয়। মধুসূদনও দিনদুই ছুটি নিয়ে পিঠে-পরবে বাড়ি এসেছিল। রমলার চিঠি এসেছে। লিখেছে, মুরারী কী যেন কাজে কলকাতা যাচ্ছে। তারাসুন্দরী তাই ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন। মস্ত একখানা ঝুনো নারকেল কুরিয়ে নিরামিষ পাটা ধুয়ে মিহি করে বেটেছেন। তারপর পাক দেওয়া। সন্দেশের ছাঁচগুলো বের করে ধুয়ে শুকিয়ে রেখেছেন। এগুলো ওদেশ থেকে আনা। এখানে পাওয়া যায় কিনা কখনও খোঁজ করেন নি। পোড়ামাটির তৈরি কালোরঙ মসৃণ ছাঁচে ফুলপাতার নিখুঁত নকশা। তাতে ঘী মাখিয়ে অল্প গরম থাকতে থাকতে নারকেলের পাক চেপে চেপে বসিয়ে খুব সাবধানে তুলে নেবেন। যত মিহি বাটা হবে, যত নিঁখুত পাক হবে, সন্দেশ তত সুন্দর হবে। ছানার সন্দেশ ফেলে এই সন্দেশ খাবে লোকে। আরও একটা বড়ো নারকেল অমলা কুরিয়ে দিয়ে ঘরে গেছে। সেটা দিয়ে হবে নাড়ু আর পাটিসাপটা। উনুনের তাতে আর পরিশ্রমে গরম লাগছিল তারাসুন্দরীর। গায়ের চাদরখানা খুলে একপাশে রাখলেন। অমলা আর আসবে না। সে ঘরে বসে সেলাইয়ের ফোঁড় তুলছে। ধীরেন্দ্রনাথ তাকে ব্যাক-পাওয়া বিষয়ে আবার পরীক্ষা দিতে বলেছিলেন। অমলার না ইচ্ছে আছে, না মনের জোর। তবে বাবার মুখের ওপর বলতে পারেনি সে। তারাসুন্দরী গেটের শব্দ পেলেন। অবেলায় কে এল কে জানে। ঢুকতে ঢুকতে বাসন্তী ডাক দিল,
“খুড়িমা!”
“অ! আস রে বাসন্তী। আমি পাকঘরে।”
“আমি বাসেই বুঝছি—।”
রান্নাঘরের দাওয়ায় এসে দাঁড়াল বাসন্তী। হাতে ঢাকা-দেওয়া বড়ো
কাঁসার বাটি। নামিয়ে রেখে বলল,
“কচুছড়া রানছিলাম আজ, কুচা চিংড়ি দিয়েছি। দুপুরে আর আসতে পারলাম
না। সময়ই পাইলাম না।”
“তুমি রানছ? বউমা গেছে কই?”
“কাল গেছে বাপের বাড়ি চেতলায়। কয়দিন বিশ্রাম নিয়ে আসুক।”
“ভালা খবরটবর দিব নাকি?”
“তাই ধরে নেন। আগেরটা দুইমাসে নষ্ট হয়ে গেল। এইবার বাপের বাড়ি
কাটিয়ে চারমাসে আসব।”
বাসন্তীর গলা পেয়ে অমলা খুশীমুখে এসে দাঁড়াল। বাসন্তী আপন লোকের
মতো অমলাকে শাসন করল,
“খুড়িমার ধারে বসে সাহায্য করতে পারিস না? একা একা ঘেমে-চুমে
কী অবস্থা।”
অমলা জবাব দিল না। নীচু হয়ে বাসন্তীর হাত ধরে টানল। তারাসুন্দরী
দেখে বললেন,
“যাও ঘরে যাইয়া বস। কাল জামাই আইব। দুধপুলি বানামু। অমু গিয়া
তমাগ দিয়া আইব’নে।”
“বড় সোয়াদ আপনের হাতের পিঠাপুলি। আমারে শিখাবেন খুড়িমা?”
তারাসুন্দরী সস্নেহে হাসলেন। এই মেয়েটি ভারী অন্যরকম। তার শান্ত
ব্যক্তিত্বটি আপনা থেকে সমীহ উদ্রেক করে। রঙ ময়লা, দেখেও কেউ সুন্দর বলবে না। কিন্তু
ছোটো কপালের নীচে পাখির ডানার মতো ভ্রূ আর গভীর চোখদুটি যেন বুকের ভেতর পর্যন্ত দেখে
ফেলে। তারাসুন্দরী বললেন,
“পাশে অই জাগাত যেনারা আইছেন, আলাপ করছ নি?”
“গেলাম একদিন। তারা কেউ কথা বলতে চায় না। ঘরের মধ্যে বসে রইল।”
“হ—, তাগ অবস্থা য্যান বড়ই দুস্থ। একখান ঘরে হক্কলডি, ঠাইরেনের
শাশুড়িও আছে কইল।”
বাসন্তী নতুন আবাসিকদের নিয়ে আলোচনা করতে ইচ্ছুক নয়। সে ধীরেন্দ্রনাথের
খোঁজ করছিল। ধীরেন্দ্রনাথ ঘরে শুয়েছিলেন। অমু গিয়ে ডেকে তুলল। বাসন্তী ইতস্তত করে বলল,
“অসময়ে কাকাবাবুর ঘুম ভাঙাইলাম। সন্ধাবেলায় আসার সময় হবে না,
তাই—।”
“না মা তাতে কিছু হয় নাই, তুমি কী কইবা কও। অমু আমগ দুইকাপ চা
দিবা?”
“শিবু আসছিল শুনলাম আপনার কাছে? আমাকে বলল।”
“হ। কমিটিতে যোগ দেওনের প্রস্তাব দিছে।”
“আমিও সেই কথাই কই, আপনি থাকেন কাকাবাবু। আর একটা আর্জি আছে।
শুনছেন নিশ্চয়, এইখানে ইশকুল খোলার পরিকল্পনা করছে? আমারে শিক্ষক হিসাবে নিতে হবে কাকাবাবু।”
“আমি?”
ধীরেন্দ্রনাথ অবাকভাবে তাকিয়ে দেখলেন বাসন্তীকে। তার লেখাপড়া,
ডিগ্রি জানা নেই। কিন্তু সে যে আত্মবিশ্বাসে ছুটে এসেছে আবেদন নিয়ে, তিনি মুগ্ধ হয়ে
গেলেন।
“তুমি পারবা? ল্যাখাপড়া কদ্দূর শিখছ?”
মাথা নীচু করে অনেকক্ষণ নীরব রইল বাসন্তী। ধীরেন্দ্রনাথের খারাপ
লাগছিল, না জেনে বুঝি আঘাত দিয়েছেন। বাসন্তী সামলে নিয়ে ধীরে ধীরে বলল,
“ইস্কুলের শেষ পরীক্ষার রেজাল্ট খুবই ভালো করছিলাম। বাবা চান
নাই বলে কলেজ আর—। প্রাইভেটে পরীক্ষা দিবার মন ছিল। তাও শেষমেষ হইল না। আমি পারব
কাকাবাবু।”
“পাশের সাট্টিফিকেট আছে?”
“সাট্টিফিকেট, প্রাইজের বই—।”
“সুযোগ পাইলে আর পড়বা? প্রাইভেটে পাশ দিবা।”
বাসন্তী করুণ চোখে তাকিয়ে হাসল, উত্তর দিল না। সময় বয়ে গেছে
অনেকখানি। বয়স বেড়ে গেছে, সংসারের দায়িত্বের অনেকখানি ঘাড়ে এসে পড়েছে। বিয়ের কথা ভাবতে
ইচ্ছা করে না। সে কাজের মধ্যে থাকতে চায়, যে কাজে অন্তরের সবটুকু দিতে পারবে।
ধীরেন্দ্রনাথও চিন্তা করছিলেন। স্কুল খোলার কথা উঠেছে। আঞ্চলিক
ছেলেমেয়েরা অন্তত প্রাইমারি শিক্ষা যাতে এখানে পায় সে ব্যবস্থা করা একান্ত আবশ্যক।
সেজন্য শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়োগ করা প্রয়োজন। শহর থেকে ঠেঙিয়ে এদিকের ইশকুলে পড়াতে ক-জন
আসবেন, সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায় না। বরং বাসন্তীর মতো যারা স্বেচ্ছায় এগিয়ে আসতে
চায় তাদের হাতে ছেলেমেয়েদের ভার তুলে দেওয়া ভালো। শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে অবশ্য প্রশ্ন
থাকে। ধীরেন্দ্রনাথ গুছিয়ে নিয়ে বললেন,
“শুন মা, তোমার ইচ্ছা পূরণের চেষ্টা আমি করমু। ইশকুলের জন্য যে
কমিটি অইব, আমার সুপারিশ আমি দিমু। তয়, তুমারে একখান কথা কই। টিচার্স ট্রেনিং-এর একখান
কোর্স কইরা লও। পরে কামে আইব।”
বাসন্তী বেরিয়ে গেলে তিনি শুয়ে শুয়ে আকাশ-পাতাল ভাবতে লাগলেন।
অমলা চা নিয়ে এসে দেখল বাসন্তী চলে গেছে। সে জিজ্ঞেস করামাত্র তিনি তিক্তস্বরে বললেন,
“রাইখ্যা দে অইহানে। চায়ের লাইগ্যা বইয়া থাকব নি?”
তাঁর বিরক্তির কারণ অমলা বুঝল খানিকটা। ধীরেন্দ্রনাথ নিরসভাবে
বললেন,
“তরেও কইছিলাম একখান ট্রেনিং লইতে। নিবা না। যাও অহন।”
কত রকমের দুঃখ, কত আক্ষেপ তাঁর। দাপটে মাস্টারমশাই এখানে এসে
কয়েকটা টিউশন করেছিলেন। তাঁর ভাষা বুঝতে নাকি ছেলেদের অসুবিধা, এই অজুহাতে বারবার তাঁকে
শুনতে হয়েছে। তিনি অপমান বয়ে নিয়ে বেরিয়ে এসেছেন। এখানে স্কুল হবে, বাস্তুহারা ছেলেমেয়েদের
স্কুল। তারাও তাঁরই মতো উৎখাত হয়ে-আসা ঘরের ছেলেপুলে। একদিন উঠে দাঁড়াবে তারা, প্রতিষ্ঠিত
হবে।
(ক্রমশঃ)
@Phullara Sengupta - মতামত দেওয়ার জন্য কৃতজ্ঞতা ... ও ধন্যবাদ জানাই।
উত্তরমুছুন