কালিমাটি অনলাইন

ত্রয়োদশ বর্ষ / নবম সংখ্যা / ১৩৬

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

ত্রয়োদশ বর্ষ / নবম সংখ্যা / ১৩৬

মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২৫

অভিজিৎ মিত্র

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১৪০


মিষ্টি

মিষ্টিকে রোজ আদর করতে ইচ্ছে করে। ওর ঠোঁটের তিলে ঠোঁট ডুবিয়ে। কিন্তু সুযোগ হয় না। মিষ্টি একটা পেয়িংগেস্ট হিসেবে থাকে, শিয়ালদার কাছে। রাজা উত্তর কলকাতায়। কালেভদ্রে মিষ্টির বাড়িওয়ালা আর তার বৌ কোথাও বেড়াতে গেলে বাড়ি ফাঁকা পাওয়া যায়, তখন রাজা দৌড়য়। যেমন আজ। সেই কলেজ লাইফ থেকে মিষ্টির সঙ্গে প্রেম, এখন মিষ্টি মাস্টার্স প্রায় শেষ করে ফেলল, এই ৩-৪ বছরের মধ্যে নিজের মত করে ও মিষ্টিকে পেয়েছে বড়জোর ১৫-১৬ বার। রোজ শুধু দুজনে হাত ধরে এসপ্ল্যানেডের রাস্তা ধরে হেঁটে এসে হাইকোর্টের পাশে চাঁদপাল ঘাট, সেখান থেকে ছোট ব্রীজ পেরিয়ে প্রিন্সেপ ঘাট পার্কে বসে আকন্ঠ চুমু। অবশ্য মিষ্টির হাত ধরে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যেতে রাজার ভালোই লাগে, একটা পোজেসিভ ফিলিং।

মিষ্টির বাড়ি থেকে বেরিয়ে রাজা আজ অন্যমনস্কভাবে হাঁটছিল, দেখতে দেখতে শিয়ালদা। ওকে আদর করার সময় জিন্সের বোতাম খুলে নাভিতে চুমু খেতে গিয়ে ওর শরীরের একটা অংশ দেখে রাজা আজ ধাক্কা খেয়েছে। এই নয় যে সেটা আগে দেখেনি, অনেকবার দেখেছে, কিন্তু কদিন আগে মায়ের কাঁদো কাঁদো মুখটা মনে পড়ে গেছিল। মা সেদিন বলছিল, ফ্যামিলি ট্যুরে গিয়ে ওর যে বোনটা দু’বছর বয়সে তিস্তার স্রোতে হারিয়ে গেছিল, তার নাভির নিচে নাকি একটা উজ্জ্বল কমলা দাগ ছিল, জন্মদাগ, ঠিক যে রকম আছে মিষ্টির। আজ বেঁচে থাকলে তার বয়স হত চব্বিশ, একদম মিষ্টির বয়সী।

মিষ্টির বাড়ি মালদায়, যেখানে তিস্তার ছোঁয়ামাত্র নেই, ওর বাবা স্টেট ব্যাঙ্কের অফিসার, একমাত্র মেয়ে। লজিক বলছে কোনভাবেই সম্ভব নয়, তবুও আজ রাজার মনটা খচখচ করছে। ও কি মিষ্টিকে জিজ্ঞেস করবে? কিন্তু কী জিজ্ঞেস করবে? মিষ্টির পড়া শেষ হলে ওদের দুজনের সামনের বছর চাকরি নিয়ে ব্যাঙ্গালোর চলে  যাবার কথা, হয়ত সেখানেই ওদের বাকি জীবন, এখন এইসব উৎপটাং, মিষ্টি ওকে ভুল বুঝবে না তো?

-- ও দাদা, কী নেবেন? ঐ কমলা প্যান্টিটা ধরে আছেন কেন?

রাস্তার ধারের দোকানদারের কথায় রাজার হুঁশ ফেরে।

-- না না, আমি একটা কমলা রুমাল খুঁজছি, একজনকে গিফ্‌ট দিতে হবে।

-- এখানে রুমাল নেই, ওই তিননম্বর দোকানটায় চলে যান। ... পাবলিক বটে, প্যান্টি ধরে রুমাল খুঁজছে।

রাজা এদিকটায় সরে আসে, নাভির নিচের ঐ কমলা দাগটা ওকে এখনো হন্ট করছে। একটা এলাচের প্যাকেট মুখে ফেলে ও মোবাইলে হাত রাখে। মিষ্টির গলাটা ও একবার শুনতে চায়।

এ কী! বুকপকেটে মোবাইল নেই কেন? কোথায় গেল? রাজার মনে পড়ল, আদর করার আগে ও মিষ্টির খাটের পাশে মোবাইলটা সাইলেন্ট করে রেখেছিল, আসার সময় সেটা আনতে ভুলে গেছে।

 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন