![]() |
কালিমাটির ঝুরোগল্প ১৪০ |
বুটিক
নিশার বহুদিনের শখ তার একটা নিজস্ব বুটিক হবে। খুড়োর কলের মত এই ইচ্ছাটুকু সামনে রেখেই এগিয়ে চলেছে সে। আপাতত বিগ-শপারে শাড়ি ভরে ইতিউতি আত্মীয়স্বজন বন্ধুবান্ধবদের মধ্যেই বিক্রিবাট্টা হয় কিছু। সঙ্গে বাইপ্রোডাক্ট, ধার বাকি, তদ্বির তাগাদা।
মাঝে-মাঝে সন্দেহ হয় সত্যিই নিজস্ব
বুটিক হবে তার? খোলাচোখে একটা ছিমছাম সাজানো
গোছানো শোরুমের স্বপ্ন দেখে নিশা। এসব ভাবতে ভাবতেই ভাগলপুরি সিল্কের থানদুটো সুন্দর করে
ভাঁজ করে ব্যাগে রাখে। একটা পেস্তা-সবুজ আর অন্যটা মাস্টার্ড রংয়ের। সুতনুকার মা
নির্ঘাত দেখলেই লুফে নেবেন। উনি শাড়ির ওপর এম্ব্রয়ডারির কাজ করেন। কমার্শিয়াল কিছু
নয়। নিজের জন্যেই করেন। এই থান তো চট করে পাওয়া যায় না। সেদিন মেয়েকে স্কুলে দিয়ে
ফেরার পথে বলছিলেন, আগে নাকি শঙ্কর টেক্সটাইলের মলমলের একরঙা থান আসত। তার ওপরে চমৎকার
কাঁথা বা গুজরাটি কাজ করা যেত। এখন সেগুলোও আর তেমন পাওয়া যায় না।
নিশার বর অনন্ত অফিস থেকে ফিরে চা খেতে খেতে রিমোট টিপে খবরের চ্যানেল ঘোরাচ্ছিল। নিশা শাড়িগুলো গুছিয়ে বিগ-শপারটা ঘরের এককোণে সরিয়ে রেখে বললো,
-কীই যে সবসময় খবর দেখ? মাঝেমাঝে
ইউটিউবে একটু প্রপারটির চ্যানেলগুলোও তো দেখতে পারো,,যদি একটা দোকানঘর পাওয়া যায়?
আমার বুটিকটা...
-উফফ্ নিশা, কবে তোমার মাথা থেকে এই বুটিকের ভুতটা নামবে বলো তো? আমি তো চাকরি করছি! আমার টাকা কি তোমার টাকা নয়?
-না নয়। তোমারটা তোমার আমারটা আমার।
দশটাকার জন্যে তোমার কাছে হাত পাততে পারব না আমি!
টুম্পা পড়ছে একমনে। সে ক্লাসে ফার্স্ট-সেকেন্ড হয়। খানিকটা সেই কারণেও অন্যান্য ছাত্রীদের মায়েরা নিশার সঙ্গে সদ্ভাব রেখে চলে। গল্পগুজব করে জেনে নিতে চেষ্টা করে মেয়ের পড়ার রুটিন, রেফারেন্সবুকস অথবা প্রাইভেট টিউটরদের কথা। নিশাও সেসব গল্প করে বলার ফাঁকেই গছিয়ে দেয় দু’একটা ধনেখালি অথবা শান্তিপুরী।
-না ভাই, কোনো প্রাইভেট টিউশন নয়!
মেয়েকে এখনো পর্যন্ত নিজেই পড়াই। টিউটরদের যা খাঁই!
কথা শেষ না করেই নিশা বলে ওঠে,
-এই রণিতার মা, দ্যাখো তো এই হ্যান্ডলুমের
শাড়িটা... জাস্ট তোমার কথা ভেবেই তুলেছি। দারুণ মানাবে তোমাকে কিন্তু!
রণিতার মা রিমি ব্যস্ত হয়ে বলে,
-এই না না। এখন আর কোনো শাড়িটাড়ি
কিনব না গো! মেয়েটার জ্বরের জন্যে ডাক্তার-ওষুধ করে বিস্তর খরচাপাতি হয়ে গেল। সাতদিন
স্কুল কামাই হলো। সেসব নোটসগুল…
নিশা রিমির মুখের কথা কেড়ে বললো,
-সে নোটস তুমি পেয়ে যাবে। টুম্পার
খাতাগুলো দুদিনের জন্যে নিয়ে যেও ক্ষণ!
রিমি খানিক একথা সেকথার পর বললো,
-দেখাও তো নিশা, কোন শাড়ির কথা
বলছিলে তুমি?
নিশা মনে-মনে মুচকি হেসে ব্যাগ খুলে একখানা শাড়ি বার করে রিমির দিকে এগিয়ে দিয়ে মুখ ঘোরাতেই দেখে, সুতনুকা আর গরিমার মা আড়চোখে তাকিয়ে অন্যদিকে ঘুরে গেল। নিশা স্পষ্ট শুনতে পেল, সুতনুকার মা গরিমার মাকে বলছেন,
-এই, ওদিক দিয়ে যেও না। ওদিকে নিশা
আছে। এখুনি শাড়ি নেওয়ার জন্যে জোরাজুরি করবে...
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন