![]() |
সমকালীন ছোটগল্প |
আঁধি
- আমারে ভুলে যাইস না, জাদু। এইভাবে সরে যাইস না, মানিক। সব পুরানা কথা মনে হয়। যদি তোমারে ভুলতে না পারি কী করব বলো? খুব জ্বলে তো, জান। খুব পরান পোড়ে। তুই আমারে ছেড়ে যাইস না।
- ঠিক আছে,
যাব
না।
- জ্বলে তো,
মানিক।
ভিতরটা খুব পোড়ে তো। বাকি জীবন কাটায়ে দাও না শুধু আমারে ভালবেসে, ফেরত আসো। আর কখনও জালাব না আমি তোরে।
- দেখি।
- তুমি আমারে ছেড়ে না গেলে, ডিভোর্স না করলে হয় না? তুমি না আমার লক্ষ্মী বউ? সেই কবে কত বছর আগে
ইউনিভার্সিটিতে তোমারে দেখলাম, তারপর থিকা তো
আমার জীবনে তুমি ছাড়া আর কিছু নাই। আমারে ডিভোর্স না কইরা মাইরা ফ্যাল্। তবু ছাইড়া
যাইস না। আর কোনোদিন বকব না। গালি দিব না,
আর
অকারণে সন্দেহ করব না।
- তুমি কান্দাইতেছ কেন আমারে? অকারণে কান্দাও ক্যান তুমি?
একথা ফোনে আমি আমার স্বামীকে বলি ঠিকই, কিন্তু শেষমেষ ডিভোর্স করেও দেই। ডিভোর্স করার মাস দু’য়েক পরই সে মারা যায় একা ঘরে হার্ট অ্যাটাকে। লন্ডন থেকে ঢাকায় লাশ নিয়ে যাওয়া, দাফন-কাফন, সব মিলিয়ে বেশ ধকল গেছে আমার উপর দিয়ে।
ডিভোর্স করার আগে কী অনুনয় তার। কী তীব্র আহাজারি। “আমার পাখি, আমার মানিক, ময়না, ছেড়ে যা’স না আমারে, তোরে ছাড়া বাঁচমু না আমি।”
তার এত আকুল প্রার্থনার পরও ডিভোর্স করি। সে আমার দমবন্ধ
করে ফেলেছিল। তীব্র সন্দেহবাতিকগ্রস্ত সে। অফিস থেকে ফিরতে একটু দেরি হলেই যা মন
চায় গালিগালাজ করত। আমি জানি যে সে ভালোও বাসত আমাকে উম্মাদের মতো। দিনরাত আতঙ্কে
থাকতে হ’ত আমার তাকে নিয়ে। আমি যে-কলেজে পড়াই, ওখানে ঘড়ি ধরে ক্লাসের ফাঁকে-ফাঁকে ফোন করত। ফোনে না পেলেই
আগুন; মিটিং-এ থাকলে বা কোনো
কারণে মোবাইল বন্ধ থাকলে তারপর সারারাত তার চিৎকার, গালিগালাজ। আমি অসুস্থ হয়ে গিয়েছি এসবে। কোনো পুরুষ কলিগ, পুরুষ বন্ধুর সাথে কথা বললে মাথাখারাপের মতো
ব্যবহার করত সে। মাস-দু’য়েক রাগ করে কলেজ থেকে ছুটিও নিয়েছিলাম। কিন্তু তখন সে
হাজারবার বাসায় ফোন করে খোঁজ করে বাসায় আছি কী না, বাসায় আমার কোনো কলিগ বা অন্য কোনো পুরুষ এলো কী না!
হামেশাই শরীর-খারাপের অজুহাতে অসময়ে দুম
করে বাসায় চলে আসত। সবসময় কড়া প্রহরায় রাখত আমাকে।
টানা চব্বিশ বছর সংসার করলাম, কোনো সন্তান হয় নাই আমাদের। আমার জরায়ুতে সমস্যা ছিল; অনেক চিকিৎসার পরও গর্ভধারণ করতে পারি নাই।
কিন্তু আমি জানতাম, সন্তান জন্মদানে
ব্যর্থতার জন্য সে ছেড়ে যাবে না আমাকে,
বা
অন্য নারীতে আসক্তও হবে না। আমি বুঝতাম কতটা সে ভালবাসে আমাকে, কিন্তু তার নিরন্তর সন্দেহ ও অশান্তিতে আমার
নিজের প্রতিই শ্রদ্ধা নষ্ট করে দিচ্ছিল সে।
আমার স্বামী আমার পায়ে ধরে কাঁদল সারারাত। এর দুই দিন পরই ডিভোর্স হয়ে যায়। ডিভোর্সের পর একা বাসায় উঠে বেশ স্বস্তি লাগছিল। আমি কল্পনায় দেখতে পেতাম, সে কাঁদছে ছোট বাচ্চার মতো। কিন্তু আমিই বা কী করব! আমার নিজেরও তো বাঁচাটা জরুরি। ডিভোর্স হয়ে গেলেও, দিনের মধ্যে কয়েকবার ফোন করে খোঁজ নিত ও। “রান্না করছ তো? কাপড় তো নিশ্চয়ই আর আয়রন কর না?” সে জানে আমি খুব অলস, আমাকে নিয়ে তার টেনশনের শেষ নাই।
ডিভোর্সের পর আমি লন্ডন থেকে কার্ডিফ চলে যাই। একটা কলেজে চাকরি করি। সপ্তাহে কয়েকটা দিন কলেজে ক্লাস নেই, ফেরার পথে গ্রসারি করি। বাকি সময় দিনরাত ঘরেই কাটাই। সে মারা যাওয়ার পর এক তীব্র শূন্যতা কাজ করে আমার মধ্যে। কান্নাকাটিও করি। অপরাধবোধেও ভুগি কিছুসময়। তারপর আবার একদমই অনুভূতিহীন লাগে। কয়েকদিন তার কথা আমার চারপাশে ভাসে। তার আকুল সব বাক্য, শব্দ, কান্না... সব মনে পড়ে। নিজেকে অপরাধী মনে হয়। আবার একটু শান্তি-শান্তিও যেন লাগে।
আমার স্বামী মারা যাবার মাসখানেক পরে আমার বোনের মেয়ে লাবনি
আমেরিকা থেকে বেড়াতে আসে স্বামী-বাচ্চাসহ। আমি একা আছি, স্বামী মারা গেছে, বয়স হয়ে গেছে, এসব ভেবে হয়তো দেখতে আসে আমাকে। লাবনিকে এতদিন পর বুকে
জড়িয়ে ধরে আমার দু’চোখ পানিতে ভরে যায়। কিন্তু তার দুই ছেলেমেয়ের
কান্নাকাটি-হৈচৈ-গণ্ডগোল তিনচারদিন তিনচারদিন যেতে-না-যেতেই বিরক্তিকর লাগতে শুরু
করে। মুখে কিছু বলি না, কিন্তু মনে-মনে
ওদের যাবার দিন গুনি। ওরা চলে গেলে কিছুসময় খালি খালি লাগলেও, ভারি শান্তি লাগে। একা ঘরে বিছানায় শুয়ে
কাটিয়ে দেই। এই জীবনই আমার পছন্দ। একবার একা থাকার স্বাদ পেলে মানুষের জন্য কোলাহলে থাকাটা কঠিন হয়ে যায়।
পারতপক্ষে কোথাও যাই না। আবার স্মৃতির মধ্যেও বেঁচে থাকি না আমি। বই পড়ি, গান শুনি, মাঝে-মাঝে রান্না করি : চমৎকার কেটে যায়। মাহমুদের কথা, আম্মার কথা, সাফিয়ার কথা কখনোসখনো মনে হয়। আম্মা মারা গেছে অনেকদিন।
মুখটা পুরোপুরি মনে করতে পারি না আর এখন।
সাফিয়াটা সারাক্ষণ আমার কোলে থাকত। আমার আট বছরের ছোট বোন। তিন বছর বয়সী সাফিয়াকে কোলে রাখতে রাখতে আমার কোমর ব্যথা হয়ে যেত। কিন্তু কোল থেকে নামালেই চিৎকার, “আপা আপা আপা...আ...আ...।” যতক্ষণ আবার তাকে কোলে না নেই, কান্না থামে না। কোমরে প্রায় ঘা হয়ে যায় আমার। সাফিয়ার এক বছরের ছোট এক ভাই ছিল আমার। হঠাৎ নিউমোনিয়ায় মারা যায়। তারপর থেকেই আম্মা অসুস্থ। প্রথম দিকে দিনরাত অকারণে ভয় পেত সে। একদিন সে বলল, “ঐ যে রাম দা নিয়া ঘরের কোণায় দাঁড়ায়া আছে ওরা, কেউ কোনো কথা কইবা না। একদম মাইরা ফেলবো।” আমি দেখলাম আম্মা থরথর কাঁপছে। একদিন দেখি খাটের নীচে জুবুথুবু বসে আছে। আতঙ্কে নীল।
এর পর থেকে আম্মা প্রায়ই খাটের নীচে ঢুকে থাকে অথবা দরজার
চিপায় লুকিয়ে থাকে ভয়ে। তারপর একদিন আব্বা,
দাদি, সবাই ধরাধরি করে আম্মাকে রশি দিয়ে বেঁধে
রাখল, বড় ঘরের এক খুঁটিতে।
কিছুদিন পর আম্মাকে নিয়ে যায় তার বাবার বাড়ি। আমি আর সাফিয়াও নানাবাড়ি যাই। সাফিয়া
একদমই কোল ছেড়ে নামে না আমার, নামালেই চিৎকার।
বাড়ির সবার পরামর্শে একজন হুজুর ডেকে নিয়ে আসে নানা। হুজুর
জ্বিনে-ধরা, পাগলামি ছাড়ানোর
জন্য এলাকায় বিখ্যাত। হুজুরের সামনে হাঁটু গেড়ে আম্মা বসে একটা কুকুরের বাচ্চার
মতো। দিনে দিনে আম্মা আকারে ছোট হয়ে যেতে থাকে। হুজুর আম্মাকে পরীক্ষা করে বলে, “এরে গইন্না গইন্না দশ-পনেরটা চুবান দিতে
হইবো পানিতে। ” নানাবাড়ির আশেপাশের বাড়িঘরের লোকজন জড়ো হয় পুকুরপারে। নানা বুক
সমান পানিতে, আম্মা পানিতে
নামবে না। মাথায় ঘোমটা দিয়ে শক্ত হয়ে পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকে। নানা এবং অন্যান্য
পাড়াপড়শিরা জোর করে টেনেহিঁচড়ে নামায় তাকে। নানা পানিতে আম্মার মাথা চেপে ধরে।
লোকজন উল্লাসে চিৎকা দেয় “দেন, চুবা দেন, আরো চুবা দেন। এই তো পাগলে ঠিক হয়া যাইতেছে।
আরো চুবা দেন।” সবার হৈচৈ-এ আম্মারও আর কোনো প্রতিরোধ থাকে না। দশ-বারোটা চুবা
দেয়ার পর আম্মা যখন একেবারে নিথর,
তাকে
কোলে নিয়ে নানা পানি থেকে উঠে আসে। জটলার লোকজনই একপর্যায়ে আবিষ্কার করে আম্মা
মারা গেছে।
আম্মার দাফন হয়ে গেলে আব্বা আমাদের দুইবোনকে নিয়ে ফিরে আসে
আমাদের বাড়ি। বছর খানেক পর আব্বা আবার বিয়ে করে। আব্বা বিয়ে করলেও আমার দাদি
আমাদের দু’-বোনকে মুরগির ছানার মতো আগলে রাখে। ফলে সৎ মায়ের সংসারে খুব বেশি অযতœ আমাদের হয় না। ম্যাট্রিক এবং আইএ পরীক্ষাতে
আমার রেজাল্ট বেশ ভালো হওয়ায় আর আমি গোঁ ধরে থাকায়, আব্বা ঢাকায় এক দূর সম্পর্কের চাচার বাড়িতে আমাকে পাঠায়
ইউনিভার্সিটি ভর্তি পরীক্ষা দিতে। অর্থনীতিতে ভর্তি হই আমি। ভার্সিটিতেই আমার চার
বছরের সিনিয়র মাহমুদের সাথে পরিচয় এবং প্রণয়।
মাহমুদ প্রথমে ভার্সিটিতে চাকরি পায়,
পরে
স্কলারশিপে ইংল্যান্ডে যায়।
বিয়ের পর থেকে তাঁর সন্দেহ-বাতিকের শুরু।
আমি বুঝতাম, আমাকে ভালবাসে বলেই তার এই টেনশন। কিন্তু কয়েক বছর পর থেকে এইসব সন্দেহ এবং বাড়াবাড়ি প্রেম আমার অসহ্য হয়ে ওঠে। লন্ডনে আসার পর গৃহস্থালি কাজ, রান্না খুব ভালো করত সে। কাজ থেকে ফিরে এসে প্রায়ই রান্না নতুন-নতুন জিনিস পাকাত আর অপেক্ষা করত আমার প্রশংসার। আমি গ্লাস ধুলে পছন্দ হয় না তার। কিন্তু কোনো ঝামেলা না করে নিজেই আয়নার মতো ঝকমকে করে দেখাত, “দ্যাখো।” ওয়াশিং ম্যাশিনে লন্ড্রি করত দু’জনের কাপড়। তারপর নিজেই ইস্ত্রি করত সব। চাল ডাল মশলা ক্রোকারিজ, প্রতিটা জিনিস সুন্দর করে গুছিয়ে রাখত। এসব কাজে আমি সাহায্য করতে চাইলে আমাকে বলত, “কাজের বেটি-মার্কা তোমার আধখেঁচড়া কাজ আমার পছন্দ না।” ঈর্ষণীয় নৈপুণ্যে সব কাজ শেষ করে তার যাবতীয় বাহাদুরির প্রশংসা পেতে আমাকে জিজ্ঞাসা করত, “কেমন হইছে বলো তো?” আমিও বিশাল একেকটা সার্টিফিকেট দিয়ে দিতাম।
লন্ডনে আমাকে চাইত পারলে ঘরে তালাবন্ধ করে রাখে। আশেপাশের বাঙালি, বিদেশি কারো সাথে মিশতে দিত না আমাকে। অফিসে কোনো কাজে বা মিটিং-এ দেরি হলে আমি আতঙ্কিত হয়ে পড়তাম, না জানি কী করে আজ। বাসায় ফিরলে চিৎকার, “বসের লগে সময় কাটায়া আসছো? বস্ ঠিকমতো আদর কইরা দিছে তো?”
আমি বলি,
“বাজে
কথা বলবা না। তুমি নিজে যে একজন মানসিক রোগী একবার চিন্তা কইরো।”
একবার কলেজে টানা কাজের চাপ থাকায় প্রতিদিনই বাড়ি ফিরতে দেরি হয়। প্রতিদিনই গালিগালাজ। আমার সাথে কলেজ মিটিং-এ ছিল এমন একজন কলিগ একদিন ডেকে নিয়ে বলে, “তোমার স্বামী কি অসুস্থ?” আমি বলি, “কেন?” তিনি বলেন, “আমাকে ফোন করে অনেক উল্টাপাল্টা কথা বলল। বলল, আমি নাকি ইচ্ছা করে তোমাকে দেরি করিয়ে দেই অফিসে। বলে, ‘আপনার উদ্দেশ্য কী? কী চান আপনি?’।”
আমি বলি,
“আমার
স্বামীর একটু প্রবলেম আছে। সরি। এক্সট্রিমলি সরি।”
বাড়ি ফিরে গিয়ে ইচ্ছামতো ধমকাই আমি তাকে। তারপর ব্যাগ গোছাই, হোটেলে গিয়ে উঠব। সংসার করা সম্ভব না আর। সে চুপচাপ বসে থাকে। আমি ব্যাগের চেইন বন্ধ করে বের হতে উদ্যত হলে সে পিছন থেকে এসে আমাকে কোলে করে বিছানায় নিয়ে যায়।
“আমার ময়না পাখি, আমারে ছেড়ে যাইস না তুই। তোর পায়ে ধরি, জাদু।” কাঁদতে কাঁদতে বলে, “তোরে ছাড়া আমি মরে যাব, মানিক।”
আমিও কাঁদি তার সাথে,
“না, যাব না। তুমি পাগলামি বন্ধ কর।”
কিন্তু এই সন্দেহ বন্ধ হয় নাই কোনদিন। চব্বিশ বছর চার মাস সংসার করার পর আমি তাকে ত্যাগ করি।
ডিভোর্সের পর থেকেই কলেজে ক্লাস না থাকলে বা প্রয়োজন না হলে বাসা ছেড়ে অন্য কোথাও যাই না আর। সে মারা যাবার পরও খুব জরুরি দরকার না হলে বাসা থেকে বের হতে ইচ্ছা হয় না আমার। সপ্তায় দু’তিনদিন একটানা কলেজের ক্লাসগুলো শেষ করে বাসায় ফিরি। সেমিনার, মিটিং যতটা পারা যায় অ্যাভয়েড করি। বাসায় ফিরে মনে হয়, এত শান্তির জায়গা আমার বাসাটা। লোকজন, হৈচৈ, আড্ডা, এগুলোকে যন্ত্রণা মনে হয়। এমনকি ফোনে কথা বলতেও বিরক্তি লাগে। ঢাকা থেকে সাফিয়া ফোন করে তার বাসায় কিছুদিন গিয়ে থেকে আসতে। তাকে জানাই কলেজে অনেক চাপ, ঢাকায় যাওয়ার সময় নাই আমার। আমি জানি আমার পক্ষে কয়েকটাদিনও অন্যের বাসায় গিয়ে থাকা সম্ভব না। একা-একা ভালোই কেটে যাচ্ছিল...
কিন্তু এক মাঝরাতে ফোন বেজে উঠল। ঘুমের ঘোরে রিসিভার কানে দিতেই শুনি, “কেমন আছো, সোনা?”
কন্ঠস্বর চিনতে পেরে কাঁপছি আমি আর সে ক্যাজ্যুয়ালি জিজ্ঞেস
করছে, “তুই আমার গলা চিনিস না, মানিক?”
কোনোমতে জবাব দেই,
“হ্যাঁ
চিনি তো।”
এইটুকু বলতেই গলা মরু-বালিয়াড়ি। ইচ্ছা হচ্ছে চিৎকার করে লোক
জড়ো করি।
“তুমি বিরক্ত
হচ্ছো, মানিক? ময়না,
এত
তাড়াতাড়ি বদলে গেলি? ভুলে গেলি আমারে? সত্যিই ভুলে গেছিস। আমারে ‘জান’ বলিস না
ক্যান একবারও?”
ভয়ে তখনও কাঁপছি। তাকে বলতে সাহস হয় না ‘তুমি না মারা গেছ
কয়মাস আগে, আবার কথা বলছ
কেমনে’।
আর... এত জীবন্ত,
এত
তাজা তার আওয়াজ! তবে কি আমিও মারা গেছি?
সে প্রশ্ন করে যায় :
ঘর ক্লিন করো তো ডেইলি? রান্না করো তো,
সোনা? নাকি না খায়া পড়ে থাকিস?”
“হ্যাঁ, সবই করি,” জবাব দেই।
“তোমার কোনো
অনুভূতি নাই আমার প্রতি। আমি পরিষ্কার টের পাইতেছি তুমি বদলে গেছ। ভুলে গেছ, পাখি। আমি মরে গেছি তবু তোমার মায়া হয় না!”
ফোনের ওপাশ বলে যায়।
সে কি কবরে নিয়ে যেতে চাইছে আমাকে? তার এত অনুনয়ের জবাবে এর মধ্যেও বলি, “আমি তো একা ঘরে, মাঝেমধ্যেই কাঁদি তোমার জন্য।”
ফোনের লাইন কেটে গেলে ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমাই। তারপরদিন
সারাদিন জড়পদার্থের মতো কাটাই। এখন প্রায়ই মাঝরাতে ফোন আসে মরামানুষটার। “জাদুসোনা, রান্না করছো ঠিকমতো?
ভুলে
গেছ আমারে, মানিক?”
তার কথার একদুইটা উত্তর দেই, আর তীব্র মৃত্যুভয় চেপে ধরে আমাকে। ভাবি, একা থাকায় হয়তো এসব হচ্ছে। অনেক লোকের মধ্যে
থাকলে ঠিক হয়ে যাবে হয়তো। কিন্তু এও জানি যে লোকজনের মধ্যে, হৈচৈয়ের মধ্যে থাকা সম্ভব নয় আমার।
আবার রিং বাজে। সেই গলা। সেই তাজা গলা। সেই আকুতি।
ফোনের লাইন কেটে গেলে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াই। অস্পষ্ট
জ্যোৎস্নালোকে অন্ধকার ঝোপঝাড় আর ঝাপসা কুয়াশা ছাড়া আরকিছূই দ্রষ্টব্য নাই। আমার
স্বামীর নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস রূপে ধূসর কুয়াশা এসে আমাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জাপটে ধরে, আচ্ছন্ন করে রাখে।
আমার নতুন এক বিবাহিত জীবনের সূচনা। ফারাক শুধু এই যে এবার
আর ডিভোর্সের পথ খোলা নেই আমার।
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন