কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

শনিবার, ১৩ আগস্ট, ২০২২

সমরেন্দ্র বিশ্বাস

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১১০


ট্রাক্টর বনাম বলদ-মানুষ

 

ট্রাক্টর আর ট্রেইলারগুলো মহাজনদের গ্যারেজগুলোতে সারি সারি দাঁড়িয়ে আছে!

অন্যদিকে দুপুরের রোদ্দুরে দুটো বলদ মানুষের কাঁধে জোয়াল। পেছনের লাঙ্গল ধরা তৃতীয় বল্দা-লোকটাও ক্লান্তিতে ঘামে। পেছনের মানুষটার মুখ দিয়ে অভ্যেসবশতঃ সামনের বলদ দুটোকে ভাগানোর আওয়াজ ভেসে আসে – ‘হ্যাট্‌ হ্যাট্‌ - জলদি চল্‌ - হ্যাট্‌ হ্যাট্‌’। ট্রাক্টর নেই, বিরাট বিরাট মাঠে এই চেহারাটা আজকাল সব জায়গাতেই দেখা যাচ্ছে!

মানুষের এই কামকে অনেক বছর আগে বলা হতো ‘বল্দার কাম’। কে কী বলে – তাতে বাল কার কী ছেঁড়া যায়! এই বল্দার কাম যদি না করে, কেউ কি তাদের  মুখের সামনে ভাত-রুটি এনে দেবে? তিনজনে মিলে কাজটা উদ্ধার হলে মহাজনের থেকে টাকা মিলবে। তাতে কোনোমতে পেট চালানোর খোরাকিটাও উঠবে।

এই বল্দার কাম পাবার জন্যেই বাজারের চারমাথায় লাইন। মারপিট! রাস্তার মোড়ে লাইন।

ছেলেমানুষ, মেয়েমানুষ, বাচ্চামানুষ। মাথার উপর চড়া রোদ্দুর। জোয়াল কাঁধে নিয়ে ঝুঁকে আছে দু’দুটো মানুষ। ওদের দিয়ে লাঙ্গল চালাচ্ছে তিন-নম্বরটা। ওদের  মেহনতে লাঙ্গলের ফাল চষে ফেলছে জমি, উপড়ে ফেলছে আগাছা!

কৃষি প্রধান দেশে মাঠের পরে মাঠ। আগে এখানে ষাঁড় দিয়েই চাষ হতো। আজকাল হয় না। বলদগুলো কসাইখানায় বিক্রি হয়ে যায়। খেতির জন্যে বলদকে পালবার অনেক খর্চা, এ জামানায় মানুষ তার চাইতে বহুৎ সস্তা! বলদ গুঁতায়, পেটের দায় থাকলে মানুষ গুঁতায় না। বলদের মাংস বিদেশে চালান যায়, মানুষের মাংস বাজারে বিকোয় না! তাছাড়া, ইচ্ছে-খুশী মতো খুব সস্তায় মানুষকে নানা কিসিমের কাজে লাগানো যায়!

বল্দা-মানুষদের মাথার উপর মেঘ, বৃষ্টি, জল, রোদ্দুর, গাছের ছায়া! এ সব নিয়েই দিনের শেষে বিকেল নামে। ঘরে ফেরে হর কিসিমের বলদ মানুষ!

বড়ো রাস্তার ধারে মহাজনদের ফসলের গোডাউন। পাশেই গ্যারেজের শেডের নীচে মুখ বেজার করে দাঁড়িয়ে থাকে সারি সারি ট্রাক্টর! ডিজেল পেট্রোলের ভয়ঙ্কর দাম। ভুখা ট্রাক্টরগুলোর কোনো কাজ নেই! ওগুলো আজকাল বেকার। ওদের হাতে পায়ে জং ধরে গেছে! পেট্রোলিয়াম জ্বালানি বাজারে অমিল। হতভাগ্য ট্রাক্টরগুলো মিট মিট করে মানুষের দিকে তাকায়!

ক্লান্তি নিয়ে ক্ষিধে নিয়ে বলদ-মানুষগুলো রাস্তা ধরে ঘরে ফেরে। ওদের এই ঘরে ফেরবার ক্লান্তি দেখে ট্রাক্টর নামের মেশিনগুলো হি-হি করে হাসে। পুরনো  প্রতিশোধের হাসি! কাজেই যদি না লাগাবে, ট্রাক্টর কোম্পানীর হতভাগা মানুষগুলো কেন তাদের এই মেশিন-জন্ম দিয়েছিলো?

 

 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন