কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

শনিবার, ১৩ আগস্ট, ২০২২

অভিজিৎ মিত্র

 

সিনেমার পৃথিবী – ২২   




 

আজ হলিউডের প্রিয় অভিনেত্রীদের নিয়ে কলম ধরার পালা। অকপটে বলি, হলিউডের সুন্দরী ছিপছিপে হাস্যময়ী নায়িকাদের অনেককেই আমার ভাল লাগে, সে নাতালি পোর্টম্যান হোক বা চার্লিজ থেরন কিম্বা অ্যানি হ্যাথওয়ে বা জেসিকা অ্যালবা বা কিরা নাইটলি (অবশ্য ভাববেন না যে শুধুমাত্র এদের সৌন্দর্যই দর্শককে স্ক্রিনের সামনে আটকে রাখে, এদের অভিনয়ও যথেষ্ট ভাল)।

কিন্তু অভিনয়ের জন্য যদি আমাকে নায়িকাদের চালুনির নিচে ফেলে ঝাড়াই-বাছাই করতে বলা হয়, তাহলে তালিকা ছোট হয়ে আসবে। তখন কিন্তু এই মুহূর্তের তরুণী অভিনেত্রীদের নাম নয়, বর্ষীয়ানদের নাম আগে আসবে যারা বহু  বছর ধরে বিভিন্ন চরিত্রে নিজেদের প্রমাণিত করেছেন (যেটা আগের পর্বেও  বলেছি)। সেই লিস্টে আমার প্রথম পছন্দঃ মেরিল স্ট্রিপ, দ্বিতীয় ফ্রান্সিস ম্যাকডরম্যান্ড। তৃতীয় পছন্দ হিসেবে রাখতে চাই এমন একজনকে যিনি হিরোইন থেকে যে কোন সিরিয়াস চরিত্র বা ভ্যাম্প, সব চরিত্রেই সাবলীল। সেই হিসেবে যাকে পেনের ডগায় আনব, তার নাম কেট ব্ল্যাঞ্চেট। আর, যাকে অভিনয় দক্ষতার বিচারে খুব অল্পের জন্য এই তিনজনের মধ্যে রাখতে পারলাম না, তার নাম কেট উইন্সলেট। ‘টাইটানিক’ খ্যাত সুন্দরী এই ব্রিটিশ অভিনেত্রীর  ভাইরাস সংক্রান্ত একটা সিনেমা নিয়ে কিন্তু একদম প্রথম পর্বে আলোচনা করেছিলাম, মনে আছে তো? কেটের আরেকটা ছবি না দেখলে আপনি ওর অভিনয় মুন্সিয়ানা বুঝতে পারবেন না – ‘দ্য রিডার’ (২০০৮)। 

তাহলে মেরিল স্ট্রিপ-কে দিয়ে শুরু করা যাক। বয়স ৭৩, জন্মসূত্রে আমেরিকান এবং ওনাকে ওনার প্রজন্মের সেরা নায়িকা আখ্যা দেওয়া হয়ে থাকে। ওনার যেসব ছবির কথা উল্লেখ করতেই হয়, সেগুলো হল - দ্য ডিয়ার হান্টার (১৯৭৮), ক্র্যামার ভার্সেস ক্র্যামার (১৯৭৯), দ্য ফ্রেঞ্চ লেফটেন্যান্ট’স ওয়াইফ  (১৯৮১), সোফি’জ চয়েস (১৯৮২), আউট অব আফ্রিকা (১৯৮৫), এ ক্রাই ইন  দ্য ডার্ক (১৯৮৮), পোস্টকার্ডস ফ্রম দ্য এজ (১৯৯০), ব্রিজেস অব ম্যাডিসন কাউন্টি (১৯৯৫), অ্যাডাপ্টেশন (২০০২), অ্যাঞ্জেলস্‌ ইন আমেরিকা (২০০৩), দ্য ডেভিল অয়্যারস প্রাডা (২০০৬), জুলি অ্যান্ড জুলিয়া (২০০৯), দ্য আয়রন লেডি (২০১১) এবং ইনটু দ্য উডস্‌ (২০১৪)। অভিনয়ের জন্য সারা জীবনে ১৭৫টি পুরষ্কার জিতেছেন যার ভেতর ২১বার অস্কার নমিনেশন, ৩বার বিজয়ী, ৩২বার গোল্ডেন গ্লোব নমিনেশন, ৮বার জয়, এবং ১৫বার বাফটা নমিনেশন ও ২বারের বিজয়। 

আগের পর্বে ডাস্টিন হফম্যানকে আলোচনার সময় ‘ক্র্যামার ভার্সেস ক্র্যামার’ নিয়ে লিখেছিলাম, যেখানে স্ট্রিপ ছিলেন নায়িকা। সুতরাং এই পর্বে স্ট্রিপের শুধুমাত্র ‘সোফি’জ চয়েস’ নিয়ে আলোচনা করব। আড়াই ঘন্টার এই সিনেমা  নিউ ইয়র্কের পটভূমিকায় ১৯৪৭ সালের কিছু গল্প নিয়ে, যার প্রধান চরিত্রে তিনজন – সোফির নামভূমিকায় মেরিল স্ট্রিপ, সোফির প্রেমিক এক পাগলাটে যুবক নাথান এবং এক হবু ঔপন্যাসিক স্টিঙ্গো। সোফি এক পোলিশ উদ্বাস্তু, তার এক কালো অতীত আছে। তার দু’সন্তান জার্মান কনসেন্ট্রেশান ক্যাম্পে মৃত। সে  কোনমতে আমেরিকা পালিয়ে বেঁচেছে। নাথান পাগলাটে, এক ল্যাবে কাজ করে এবং মনে করে সে কিছুদিন পরেই পোলিওর যুগান্তকারী ওষুধ আবিষ্কার করে ফেলবে। কিন্তু রোজ সে সোফি-কে সন্দেহ করে। এবং সদ্যযুবক স্টিঙ্গো সদ্য আমেরিকায় এসেছে, এদের দুজনের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়েছে, কিন্তু মনে মনে সে নিজের লেখক হবার ইচ্ছেকেই বেশি ভালবাসে এবং ভালবাসে মিষ্টি মুখের অধিকারী সোফি-কে। ছবি এগিয়ে চলে, একসময় সোফি ও স্টিঙ্গো মিলিত হয়, এবং শেষ মুহূর্তে গিয়ে সোফি ও নাথান আত্মহত্যা করে। কিন্তু যেটা এই গোটা সিনেমা জুড়ে রয়ে যায়, তা হল সোফি হিসেবে স্ট্রিপের দুর্দান্ত অভিনয়। পোলিশ-আমেরিকান উচ্চারণ এবং ছবির ফ্ল্যাশব্যাকে পোলিশ-জার্মান উচ্চারণ। এগুলো স্ট্রিপ-কে বহুদিন ধরে শিখতে হয়েছিল। কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পের সিনে অভিনয়ের জন্য নিজেকে রোগা ও বিবর্ণ করতে হয়েছে। এই স্ট্রিপ ক্র্যামার বা  ডিয়ার হান্টারের স্ট্রিপের থেকে অনেক আলাদা। সেখানেই এই ছবির মজা।

ফ্রান্সিস ম্যাকডরম্যান্ড জন্মসূত্রে আমেরিকান, বয়স ৬৫ এবং অভিনয়ের বিবিধ শিরোপা তার মাথাতেও (৩বার অস্কার, ২বার বাফটা, ১বার গোল্ডেন গ্লোব)। তার যে যে সিনেমার কথা বলতেই হয় - মিসিসিপি বার্নিং (১৯৮৮), হিডন্‌ অ্যাজেন্ডা (১৯৯০), ফারগো (১৯৯৬), অলমোস্ট ফেমাস (২০০০), দ্য ম্যান হু ওয়াজন্ট দেয়ার (২০০১), নর্থ কান্ট্রি (২০০৫), বার্ন আফটার রিডিং (২০০৮), প্রমিস্‌ড ল্যান্ড (২০১২), থ্রি বিলবোর্ডস আউটসাইড এবিং, মিসৌরি (২০১৭) এবং নোম্যাডল্যান্ড (২০২০)। এখানে ম্যাকডরম্যান্ডের ‘ফারগো’ নিয়ে আলোচনা করব।

এক অপরাধমূলক ব্ল্যাক কমেডি সিনেমা হল ‘ফারগো’। পরিচালক জোয়েল  কোয়েনের ৯৮ মিনিটের ছবি। ম্যাকডরম্যান্ড এখানে মিনেসোটা শহরের গর্ভবতী পুলিশ চিফের ভূমিকায়। সেই শহরের এক গাড়ি বিক্রেতা নিজের শ্বশুরের থেকে মোটা টাকা আদায়ের জন্য নিজের বউকে দুজন ডাকসাইটে অপরাধীকে দিয়ে অপহরণ করানোর প্ল্যান করে। কিন্তু এমন কিছু ঘটনা ঘটে যায় যে পরপর বেশ কয়েকটা খুন হয়। ম্যাকডরম্যান্ড অনুসন্ধান করতে নামেন। তারপর অনেক সত্যি সামনে আসে। এই সিনেমায় ম্যাকডরম্যান্ডের অভিনয় তারিফের যোগ্য। ওনার আরো এক ছবি ‘থ্রি বিলবোর্ডস...’ শুধুমাত্র ওনার অভিনয়ের জন্যই দুর্দান্ত।  

জন্মসূত্রে অস্ট্রেলিয়ান ক্যাথরিন এলিস ব্ল্যাঞ্চেট (কেট ব্ল্যাঞ্চেট) এখনো সমানভাবে ছবিতে ও মঞ্চে অভিনয় করে চলেছেন। বয়স ৫৩। তার মনে রাখার মত সিনেমাগুলো হল - এলিজাবেথ (১৯৯৮), দ্য অ্যাভিয়েটর (২০০৪), নোটস্‌ অন আ স্ক্যান্ডাল (২০০৬), আয়াম নট দেয়ার (২০০৭), এলিজাবেথঃ দ্য গোল্ডেন এজ (২০০৭), দ্য কিউরিয়াস কেস অব বেঞ্জামিন বাট্‌ন (২০০৮), ব্লু জাসমিন (২০১৩), ক্যারল (২০১৫), সিন্ডারেলা (২০১৫), নাইটমেয়ার অ্যালি (২০২১) ইত্যাদি। অভিনয়ের জন্য ২বার অস্কার, ৩বার গোল্ডেন গ্লোব, ৩বার বাফটা পেয়েছেন। এখানে ওনার ‘ব্লু জাসমিন’ নিয়ে আলোচনাই সঙ্গত হবে।

উডি অ্যালেনের ১ ঘন্টা ৪০ মিনিটের কমেডি-ড্রামা ব্লু জাসমিন ছবির নামভূমিকায় ব্ল্যাঞ্চেট। টাকা তছরূপকারী স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর জাসমিন মানসিক উৎকন্ঠায় ঘুমের ওষুধ খেতে শুরু করে এবং নিজের সঙ্গে কথা বলতে শুরু করে। তার প্রচুর ধারদেনা হয়ে যায়। অবশেষে সে নিউ ইয়র্ক ছেড়ে নিজের বোনের কাছে সান ফ্রান্সিসকো চলে আসে। সেখানে বোনের প্রেমিকের বিষয়ে সে নাক গলাতে শুরু করে এবং সেই নিয়ে তার বোনের দু’বার ব্রেক-আপ হয়।  এরপর জমাটি নাটক, শেষেও বেশ ড্রামা। ব্ল্যাঞ্চেটের মেধাবি অভিনয় এই সিনেমাকে ‘এ স্ট্রিটকার নেমড ডিজায়ার’ ছবির সঙ্গে একাসনে বসিয়ে দেয়।  এমনকি ছবির শেষ সিনেও অনবদ্য স্বগতোক্তি।

হলিউড বিদূষীদের নিয়ে কথা শেষ করার আগে আরো কয়েক লাইন। ‘দ্য মমি’ (১৯৯৯) সিনেমার অভিনেত্রীকে মেনস্ট্রিম নায়িকার ছাপ মেরে অস্কার কমিটি বারবার উপেক্ষা করে গেছে, শুধু একবার সেরা সহ-অভিনেত্রীর পুরষ্কার দেওয়া ছাড়া (‘কনস্টান্ট গার্ডনার’, ২০০৫)। এই নায়িকার নাম র‍্যাচেল ভাইশ। বয়স  ৫২। কিন্তু বিভিন্ন সিনেমায় তার বেশ কিছু ভাল অভিনয় ছড়িয়ে আছে যেগুলোর সিরিয়াস মূল্যায়ন হওয়া দরকার ছিল। এর আগের ১২ নম্বর পর্বে আর্ট হাউজ মুভি নিয়ে র‍্যাচেলের ‘দ্য ফাউন্টেন’ সিনেমার কয়েক লাইন উল্লেখ করেছিলাম।  আরো দুটোর নাম বলছি, দেখবেন। ‘মাই কাজিন র‍্যাচেল’ (২০১৭) এবং ‘দ্য ডিপ ব্লু সি’ (২০১১)। আরেক নায়িকার কথা উল্লেখ করতে চাই যার বয়স এখন  মাত্র ৩৭, কিন্তু এই বয়সেই সে বেশ কিছু ভাল অভিনয় দেখিয়েছে এবং বিভিন্ন রকমের চরিত্রে। কিরা নাইটলি। ওর ভবিষ্যত উজ্জ্বল। কিরার তিন রকম অভিনয় বোঝার জন্য আমি পাঠককে তিনটে সিনেমা দেখতে বলব – অ্যাটোনমেন্ট (২০০৭), দ্য ডাচেস (২০০৮), এ ডেঞ্জারাস মেথড (২০১১)। 

এবার হলিউডের সমান্তরালে পৃথিবীর যে চারজন বর্ষীয়ান অভিনেত্রীকে আমরা তাদের দক্ষতার জন্য বেছে নিতে পারি, তারা হলেন ইউরোপ থেকে লিভ উলমান (নরওয়ে), ক্যাথরিন ডেনেভ (ফ্রান্স) এবং এশিয়া থেকে ইয়ুন জিওং-হি (দক্ষিন কোরিয়া) ও গং লি (চিন)। 

নরওয়ের জীবিত কিংবদন্তী অভিনেত্রী লিভ উলমান (বয়স ৮৩) তার বাবার চাকরিসূত্রে জাপানে জন্মেছিলেন। কিন্তু খুব ছোট বয়সে তার বাবা মারা যাবার পর তার পরিবার আবার নরওয়েতে ফিরে আসে। ইংমার বার্গম্যানের বেশিরভাগ যৌন মনস্তাত্বিক ছবির প্রধান মুখ ছিলেন তিনিই। তার সময়ের সেরা স্ক্যান্ডিনেভিয়ান অভিনেত্রী বলতে উলমান-কেই বোঝায়। দুর্ভাগ্য, সারাজীবনে একবারো অস্কার পাননি, কিন্তু ২০২২-এ তাকে অনারারী অস্কার দেওয়ার সময় কমিটি স্বীকার করে নেয় যে তার সিনেমার প্রধান গুণ হল ‘bravery and emotional transparency that has gifted audiences with deeply affecting screen portrayals’। তার প্রধান ছবিগুলো হল - পারসোনা (১৯৬৬), শেম (১৯৬৮), দ্য প্যাশন অব আনা (১৯৬৯), দ্য এমিগ্রান্টস (১৯৭১), ক্রাইজ অ্যান্ড হুইস্পারস (১৯৭২), সিন্‌স ফ্রম আ ম্যারেজ (১৯৭৩), ফেস টু ফেস (১৯৭৬), অটাম সোনাটা (১৯৭৮), ফেইথলেস (২০০০), সারাবান্ড (২০০৩)। এখানে আমরা তার ‘পারসোনা’ নিয়ে কিছু কথা বলব।

এই সিনেমায় লিভ উলমান একজন বিখ্যাত স্টেজ অভিনেত্রী, এলিজাবেথ। একদিন অভিনয় করতে গিয়ে এলিজাবেথ চোখে অন্ধকার দ্যাখে। পরের দিন কথা বলতে বলতে বোবা হয়ে যায়। ডাক্তারের পরামর্শে কিছুদিনের জন্য সে বাল্টিক সমুদ্রের ধারে হাওয়া বদল করতে যায়। সঙ্গে থাকে এক নার্স। কিন্তু যত সময় যায়, এলিজাবেথ সেরে ওঠার বদলে এই দুজন একে অন্যের চরিত্রে আস্তে আস্তে ঢুকে যেতে থাকে। তাদের আর আলাদা করা যায় না। বার্গম্যানের ৮৪ মিনিটের অনবদ্য রহস্যে ঢাকা বিভ্রান্তিকর মনস্তাত্তিক ভয়ার্ত ছবি। এবং সেই রহস্য প্রায় প্রতি সিনে ফুটিয়ে তুলেছেন উলমান। পিটার কাউয়ি এই ছবি নিয়ে বলেছিলেন – ‘everything one says about Persona may be contradicted; the opposite will also be true’।

ফ্রেঞ্চ অভিনেত্রী ক্যাথরিন ডেনেভ আরেক জীবিত কিংবদন্তী। বয়স ৭৮। বেশ কয়েক দশক জুড়ে ছিলেন সেরা ফ্রেঞ্চ অভিনেত্রী। তার অভিনীত যে যে ছবি দেখতেই হয়, সেগুলো - দ্য আমব্রেলাজ অব চেরবার্গ (১৯৬৪), রিপালসন (১৯৬৫), বেল দে জুর (১৯৬৭), দ্য ইয়ং গার্লস অব রোশফোর্ট (১৯৬৭), মিসিসিপি মারমেড (১৯৬৯), ত্রিস্তানা (১৯৭০), আন ফ্লিক (১৯৭২), অ্যানিমা পেরসা (১৯৭৭), দ্য লাস্ট মেট্রো (১৯৮০), দ্য হাঙ্গার (১৯৮৩), ডান্সার ইন দ্য ডার্ক (২০০০)। আজ আমরা ‘বেল দে জুর’ নিয়ে আলোচনা করব কারণ  ডেনেভ-কে বুঝতে গেলে এই সিনেমা দেখতেই হবে।

‘বেল দে জুর’ বা ‘বিউটি অব ডে-লাইট’ লুই বুনুয়েলের এক অন্যতম সফল ছবি  যা ক্যাথরিন ডেনেভ-কে বিশ্বজোড়া খ্যাতি এনে দিয়েছিল। ডেনেভ এখানে এক সুন্দরী গৃহবধূ যে তার স্বামীর সাথে যৌনসুখ উপভোগ করতে পারে না। তার ফ্যান্টাসি লুকিয়ে বিভিন্ন রকম ব্যথাদায়ক যৌনতায়। ফলে সে আস্তে আস্তে এক হাই সোসাইটি বেশ্যালয়ে প্রতি সপ্তায় কয়েকদিন দুপুরে সময় দিতে শুরু করে, যখন তার স্বামী কাজে ব্যস্ত। এবং তার জীবনে আবার যৌনসুখ ফিরে আসে। বিতর্কিত সিনেমা, বিশেষ করে ১৯৬৭ সালের মত সময়ে। কিন্তু সাহসী। মেয়েরাও যে নিজের ইচ্ছেমত যৌনতা প্রকাশ করতে পারে, এই ছবি তার সিম্বল। ডেনেভ সেইসব মেয়েদের প্রতিভূ। প্রতি সিন মনে রাখার মত। এইরকম সিনেমা দেখলে বোদলেয়ারের কবিতা মনে পড়ে – ‘O fleeting beauty / By whose glance I was suddenly reborn / Shall I see you again only in eternity?’ স্বদেশ সেনের কবিতাও যেন এর কাছাকাছি।

কোরিয়ান অভিনেত্রী ইয়ুন জিওং-হি বয়সে ডেনেভের সমসাময়িক। সেই ১৯৬৭ সাল থেকে সিনেমায় চুটিয়ে অভিনয় করছেন। কিন্তু প্রায় শেষ জীবনে এসে ‘পোয়েট্রি’ ছবির জন্য সেরা অভিনেত্রীর পুরষ্কার পেলেন। তার উল্লেখযোগ্য কাজ- গুলোর মধ্যে রয়েছে মিস্ট (১৯৬৭), দ্য ফার্স্ট নাইট (১৯৬৭), স্নো-স্টর্ম (১৯৬৮), ইউনাক (১৯৬৮), বান-রাইজ স্টোরি (১৯৭১), নাইট জার্নি (১৯৭৭), স্প্লেন্ডিড আউটিং (১৯৭৮), ভিলেজ অব হেজ (১৯৮৩), দ্য আইল অব শিরো (১৯৮৮), ফ্লাওয়ার ইন স্নো (১৯৯২) এবং পোয়েট্রি (২০১০)। যদিও ‘পোয়েট্রি’ নিয়ে আমি কোরিয়ান সিনেমার দিন আলোচনা করেছিলাম, এখানে  আরো কিছু বলা দরকার। বিশেষত জিওং-হি-র অভিনয় নিয়ে। একজন ৬৬ বছর বয়স্ক ঠাকুমা যে কোন ছবিতে নায়িকা হতে পারেন, তা এই ছবিতে জিওং-হি করে দেখিয়ে দিয়েছেন। বিবর্ণ হয়ে আসা স্মৃতি, টাকার জন্য এই বয়সেও  অনৈতিক কাজ করার সাহস, তার মাঝে কুরে কুরে খাওয়া অপরাধবোধ, আর সবার ওপরে কবিতা বা পোয়েট্রি বা শি – জিওং-হি যেভাবে এক মাটির কাছাকাছি থাকা ঠাকুমার চরিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন, তা আর কেউ পারত কিনা সন্দেহ আছে।

গং লি চিনের সিনেমার এক প্রধান মুখ। বয়স ৫৬, এবং আজ অব্ধি চিনের যে চারটে সিনেমা অস্কারের জন্য নমিনেটেড হয়েছিল, তার তিনখানাতেই অভিনয় করেছেন গং লি। তার বাছাই কয়েকটা হবি হল - রেড সোরঘাম (১৯৮৭), এ সিটি অব স্যাডনেস (১৯৮৯), জু দো (১৯৯০), রেইজ দ্য রেড ল্যান্টার্ন (১৯৯১), ফেয়ারওয়েল মাই কনকুবাইন (১৯৯৩), টু লিভ (১৯৯৪), ২০৪৬ (২০০৪), সাংহাই (২০১০), গুই লাই (২০১৪) ও লিপ (২০২০)। চিনের ছবি নিয়ে যেদিন লিখেছিলাম, গং লি-র এক মাস্টারমিস ‘ফেয়ারওয়েল মাই কনকুবাইন’ নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। আজ আরেক ক্লাসিক ‘রেইজ দ্য রেড ল্যান্টার্ন’ নিয়ে কয়েক কথা। ঊনবিংশ শতকের শুরুর দিকে চিনদেশের ধনী  শ্রেণী এবং তাদের একাধিক মিস্ট্রেস রাখার গল্প নিয়ে এই ছবি। মিস্ট্রেসদের নিজেদের ভেতর ঈর্ষা ও রেষারেষি নিয়ে টানটান সিন। গং লি এই ছবির চার নম্বর মিস্ট্রেস। লো টোন অভিনয়, অন্তর্ভেদী দৃষ্টি এবং অনেক কিছু মুখ বুজে সহ্য করার চরিত্র ফুটিয়েছেন গং লি। অবশ্য তার সঙ্গে এই ছবি অপেরার ঢংয়ে আরো আকর্ষণীয় করে তুলেছেন তারই আরেক সহ অভিনেত্রী হি সাইফাই।

ওপরের সবার বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়ে এক ব্রিটিশ নায়িকা – জুডি ডেঞ্চ, এক স্প্যানিশ নায়িকা – পেনেলোপি ক্রুজ এবং এক ফ্রেঞ্চ নায়িকা – মারিয়ন কোটিলার্ড, এদের উল্লেখ করতে ভুলে গেছি। এদের ছবি দেখতে ভুলবেন না।   

 

(ক্রমশ)

 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন