কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

শনিবার, ১৩ আগস্ট, ২০২২

প্রণব চক্রবর্তী

 

সমকালীন ছোটগল্প


বদগন্ধে মম না-জীবনের ডকু

 

ভবাদাকে নিয়ে ভাবতে ভাবতেই ভ্যাবলা কেলসে যাচ্ছে। এ কথাটা বলেছিলো ভ্যাবলাদার প্রাক্তন প্রেমিকা, যার শরীরে এখন ঘাই মারে আমাদের কেল্টু। রাত্রি ৭.২৫ বাজলেই কেল্টুকে আর কেউ পাবে না। জিজ্ঞেস করতে বলেছিলো, নাইট শিফটে পাহারাদারের একটা কাজ জুটিয়ে নিয়েছে। দিনে একটা কারখানায় কাজ করত সেটা সবাই জানে। পয়সা খুব বেশি না হলেও, সে টাকায় ওর বুড়ো বাবা মা এবং ভাইটার চলে যায় একরকম করে। প্রচুর খাটিয়ে ছেলে কেল্টু। ওকে আমরা তাই একটু আলাদা চোখেই দেখতাম। তবে নাইট শিফটের এই কাজ নিয়ে আমাদের মধ্যে একেবারেই বাওয়ালী হয়নি, সেটাও নয়। আসলে সন্দেহজনক লাগতে শুরু করেছে ওই ৭.২৫। এ ব্যাপারে কেল্টুর যুক্তি - যেতে ১৫ মিনিট লাগে, তারপর পোষাক ছেড়ে, ডিউটির পোষাক পরে আরও পাঁচ  মিনিটের ব্যাপার। পৌনে আটটা। একেবারে পাক্কা ব্যবস্থা, আমরাও এমনটাই মেনে নিয়েছিলাম। কিন্তু কেলো করলো ক্যালক্যালানী। এই ক্যালক্যালানী হচ্ছে হাবুর হবু মেয়েছেলে, থুড়ি, মানে ভালোবাসাবাসির মেয়ে। বিয়ে হয়নি এখনও, তবে তিনবার লোকাল দাক্তারনী, চ্যানেলের নোংরা পরিষ্কার করে দিয়েছে। হাবু ছিলিমে টান দিলেই পেং নিয়ে বিস্তর ভাষণবাজী করতে থাকে। আমরা তখন ল্যাংড়া কুত্তাটাকে ঘোলা বৌদির দোকানের ফুলুরির তলা খাওয়াতে ব্যস্ত থাকি। তলা বলতে ঝুড়ির গুঁড়োগাড়া। পেং হচ্ছে হাবুর কাছে এক মহান ব্যাপার। তবে অনুস্বার ছাড়া আজ পর্যন্ত কোনদিন হাবু প্রে-র পর ম ব্যবহার করেনি। তার কাছে তাই আদি অকিত্তিম প্রেং। কেন? তারও যুক্তি আছে। যেমন? ধর, যখুনই তুই প্রেম বলবি, তোর মাথায় নানা্রকম ভগবান এসে ঢুকবে। যীশুদাদু, চৈতন্যকাকা, মহম্মদচাচা এইসব। আমরা কি আর ওরকম ভগবান হতে পারি? আমাদের প্রেং বলতেই মেয়েছেলে, ঠ্যাং ফাঁক, তাই অনুস্বার। এতবড় গভীর জ্ঞানের কথা, এতবড় দশশন শুনে, আমাদের চোখ গোল হয়েছে, খুপড়িতে চিন্তা দলা পাকিয়েছে এবং শেষমেষ সব্বসম্মতিকোমে আমরা মেনে নিয়েছি। ঠিকই তো, ঠ্যাং ফাঁকই পেঙের আসল কম্ম।

তো সেই ক্যালক্যালানি একদিন সন্ধ্যার ঠেকে এসে কেলোটা বাঁধালো। হঠাৎ চিৎকার কোরে বলে উঠলো, কোথায়, তোমাদের নাইট শিফট মারা নাটবল্টু কেল্টু কোথায়? হাবু বললো, ও ডিউটিতে চলে গেছে।

- উঁ, ডিউটি? কিসের ডিউটি?

- কি একটা পাহারাদারের!

ক্যালক্যালানি হাসতে হাসতে প্রায় দম আটকে যায় আর কি, হাবু কোনমতে তাকে থামিয়ে, বুকে জড়িয়ে নিয়ে পাশে এনে বসায়। হাসি থামিয়ে ক্যালক্যালনি বলে উঠলো, আমার সাথে তোমরা চলো, অক্কয়কুমারের পাহারাদারি তোমাদের একবার দেখিয়ে আনি! আমাদের কেউই ঘোলাবৌদির দোকানের সেই মৌতাত ছেড়ে উঠে যাওয়ার আগ্রহ তেমন দেখালো না।

- তুই কি জানিস সেটা বলে দে না, তাইলেই তো আমরা বুঝে যাব।- ব্যাঁকা বঙ্কিম বললো।

- ওই কেল্টুটা একটা চরম মাগীবাজ। আমার পেট বাধলে তোমরা সবাই আমার হাবুটাকে গালি দাও, কিন্তু ওই মিচকে কেলটুটাকে তোমরা ধরতেই পাচ্ছনা। যেন এক ভগবানের অবতার, দিনরাত কাজ কোরছে বাপ-মা কে খাওয়াতে। কেল্টু কেল্টু কোরে তোমরা সব পাগল, আর হাবু কথা বললেই তোমরা কুকুরবাজী শুরু করো। তোমাদের নামে আমিও কটা কুত্তার বাচ্চাকে ফ্যান খাওয়াই।

- এই ক্যালানী, বেশি বাড়াবাড়ি করিস না, ওরা সবাই আমাদের বন্ধু।

- বন্ধু হলে আমার সাথে যাচ্ছে না কেন? ওই মাগীবাজটার আসল চেহারাটা দেখিয়ে দিতে পারতাম! 

- তুই দেখেছিস তো, তুই বললেই আমাদের দেখা হয়ে যাবে। বল...  হাবু বললো।

এসব কথাবার্তার মধ্যেই ঘোলাবৌদি কাছে এসে দাঁড়ায়। হাবুকে বলে, 'এ হাবু মালটা আবার আজকে চেতেছে, যা, ওকে নিয়ে ওই মন্দিরে চলে যা'।

বলে রাখা দরকার এ এলাকায় একটা ভেঙ্গে পড়া বহু পুরোনো শিবের মন্দির আছে। বাইরেটা ঝোপঝাড়ে ঢাকা থাকলেও, ওরাই খেটেখুটে ভেতরটা পরিষ্কার করে নিয়েছে। ওদেরই নানান কাজে লাগে। কখনও তিনপাত্তির বোর্ড বসছে, আবার কখনও মেয়েছিলে নিয়ে একটু নিরিবিলির কাজ, পুলিশের তাড়া খেলেও ওই আড়ালটা ওদের বাঁচিয়ে দেয়। তবে একটা সত্যি কথা বলি, হাবু বিয়ে না করলেও রাতের দিকে ঘনঘনই ওই মন্দিরে ঢোকে ক্যালক্যালানির হাত ধরে, আর আমরাও জানতাম যত ঘনঘন ওই মন্দিরে ওরা ঢুকবে, ততই তাড়াতাড়ি ওরা দাক্তারনীকেও খোঁজ করবে। আর ঘোলা বৌদির ইঙ্গিতটা সেই দিকেই।

- তুমি বাল থামোতো, ম্যালা কপচাতে এসোনা। তুমি কি জিনিস আমি জানি।- ক্যালকালানি খিঁচিয়ে ওঠে।

- কি জানিস তুই! বল মাগী, তোকে আজ বলতেই হবে, নাইলে তোকে আজ এখানে পুঁতে রাখবো।- ঘোলা বৌদিও কম যায় না।

- আমি কিছু জানিনা, না! পুঁতে রাখবে! এতগুলো তাগড়া মুনিসকে যেন একেবারে শায়ার মধ্যে ঢুকিয়ে রেখেছে, ঠেক ছেড়ে কেউ কোথাও যেতেই চায় না।

- কি বললি, যতবড় মুখ নয় ততবড় কতা! দাঁড়া... বলেই ছুটে গিয়ে ঘর থেকে ফুলুরী ভাজার বড় হাতাটা বার করে নিয়ে আসে- 'তোকে আজকে মেরেই ফেলে দেব, খানকী মাগী, আমার উপর চোট দেখাতে এসছিস!'

আমরা তাড়াতাড়ি ছুটে গিয়ে তাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরি। তার কাপড়চোপড়ও কেমন বেসামাল হয়ে খসে পড়তে থাকে। আমরাও তাকে ছাড়বনা, সেও ক্যালানীকে মারবেই বলে লাফাচ্ছে। এবং অবশেষে সেটাই হলো ক্যালক্যালানি যেটা বলতে চাইছিলো। আমাদের একজন হাত থেকে হাতাটা কেড়ে নিয়ে দোকানে রেখে আসলো। ঘোলা বৌদিও প্রায় অর্দ্ধনগ্ন নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে, ক্যালানীর সামনে গিয়ে আঙুল নাচিয়ে বলতে থাকে-- ' 'হ্যাঁরে খানকি, আমি এ মিনসেদের আমার শায়ার নিচে ঢুকিয়ে রাখি' বলেই খপাৎ কোরে ব্যাঁকা বঙ্কিম আর খাটুয়ার কলার ধরে ঠেলতে ঠেলতে মন্দিরের দিকে নিয়ে যেতে যেতে বলে-- 'দ্যাখ খানকী, তুই ওই এ্কটাকে নিয়েই থাক, আমি দুটোকে নিয়ে একসাথে মারাবো'। কথাটা শোনা গেলেও, ওদের আর দেখা গেলো না, মন্দিরের মধ্যে ঢুকে গেলো সেই তিনজন। হাবু প্রায় দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ফিকে কণ্ঠে বললো-- 'ওদুটো আজ গেলো। মালটা একেবারে ফুটছে'। হাবুর কথাটা কানে যেতেই ক্যালানী হাউহাউ করে কেঁদে উঠেই হাবুকে উন্মাদের মতো কিল চড় লাথি ঘুঁষি মারতে মারতেই চেঁচাতে লাগলো, "তোকে আমি আজ শেষ কোরে দেব। তুই আমার পেট বাধিয়ে বিয়ে করতে পারিস না, আর ওই খানকীর সাথে ফুর্তি মারিস! তোকে আজ আমি খুন কোরে ফেলব"।

হাবু কোনক্রমে দুহাত দিয়ে মুখ আড়াল কোরে ক্যালক্যালানীর যথেচ্ছ ক্যালানী খাচ্ছে দেখে, বাধ্য হয়ে হাবুকে বাঁচাতে সমস্ত শক্তি একজায়গায় কোরে পেছন থেকে ক্যালকালানীকে সপাটে খেবলে নিলাম। আর আমার সেই তীব্র আকর্ষণে ক্যালানীও কেমন যেন গা ছেড়ে দিলো আমার শরীরে। মেয়েটা যে এতটা গরম আগে তো বুঝিনি। মেয়েটা এবার ঘুরে গিয়ে আমাকেই তীব্রভাবে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলো। আমার শরীর জুড়ে হঠাৎ বিদ্যুৎগতিতে নেচে যাচ্ছে ক্যালক্যালানীর শরীরের নেশা। আর মেয়েটাও যেন নতুন শরীরের উত্তাপে ঝলসে দিচ্ছে নিজেকে। কে কাকে ছাড়বে প্রথম, কেউই যেন চাইছে না সেটা। অগত্যা হাবু নিজে থেকে উঠে এসেই বাঁচালো আমাকে। আমার বুক থেকে ক্যালানীকে খুলে নিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে এগিয়ে চললো মন্দিরের দিকে। "চল, ওখানে কি হচ্ছে, দেখে আসি, ও জায়গাটা কি ওই বৌদির একার নাকি, চল"... বলতে বলতে ওরাও ঢুকে গেলো ঝোপ পেড়িয়ে মন্দিরের ভেতর, আর আমি সাইকেলটা টেনে নিয়ে চড়ে বসলাম মাঝি পাড়ার কালিন্দীর ঘরের দিকে। কালিন্দীর গভীর কালো অতলজুড়ে আজ যদি সাঁতার খেলতে না পারি, বেঁচে থাকাই ব্যর্থ হয়ে যাবে। কালিন্দী বহুবার, বহু ছলে ডেকেছে আমাকে, কখনও যাইনি। কিন্তু ক্যালক্যালানীর খামচে ঝলসে দেয়া শরীরী উত্তাপ আজ যে নেশায় আমাকে সেঁতলে দিলো, কালিন্দী নিশ্চয়ই সে নেশার জংলী সওয়ারী। আজ আমি তুমুল হব। জ্বলে যাক হাড় চামড়া মাংসের চাতাল... মাথায় সহস্র ঢাক সাইকেলের দুচাকার গতি থেকে আরও জোরে বাজতে থাকে গিজদা ঘিচাং গিজ ঘিনাতা, ঘিজদা ঘিচাং গিজ ঘিনাতা...

 

(২) 

যেহেতু বন্ধুগণ, থুড়ি, লেখাটি পড়িয়েগণ, ভ্যাবলাদাকে নিয়েই আজকের বাওয়ালিটা শুরু হয়েছিলো, তাই ভ্যাবলাদার বৃত্তে আমাদের কিছুটা লাট খেতে হবেই। আসলে আসুন, প্রথমে জেনে নেয়া যাক কে এই ভ্যাবলা বা ভ্যাবলাদা! ওই যে দেখছেন দেয়ালে পোস্টার, "লড়ে যাও ভ্যাবলাদা, আমরা তোমার অনুগামী", রহস্যটা ওই পোস্টারেই রয়েছে। ভ্যাবলাদার সম্পর্কে বলতে গেলে আগে তার গুণগুলো বলতে হবে। ভ্যাবলাদা পুরো একটা বাংলার সৈনিক। বাংলা ছাড়া সে আর কিছু ভাবতেই পারেনা। তার হাঁচি কাশি পেচ্ছাপ পায়খানা একেবারে বাংলাময়। বাংলার জন্য জান লড়িয়ে দেয়া এমন ভক্তপ্রাণ বাংলু এ দিগড়ে দ্বিতীয় আর একটাও পাওয়া যাবে না। ভ্যাবলাদার দ্বিতীয় গুণটা জানলে আপনিও তাকে উপেক্ষা কোরে পাশ কাটিয়ে যেতে পারবেন না। মানে, কি বলব, নোবেল প্রাইজ পাবার মতো তার মেয়ে তোলার হাত। উটের দিব্যি দিয়ে বলছি, এ রকম মেয়েবাজির প্রতিভা ১০০ সখী নিয়ে জলকেলী করা কৃষ্ণ ভগবান ঠাকুরেরও ছিলো না। তুলছে খেলছে খাচ্ছে সাঁতার কাটছে তারপর একদিন নিজে নিজেই মহিলাদল কেটে পড়ছে। কারণ হিসেবে আমরা যেটা "সম্যক অনুধাবন করতে পেরিচি", সেটা হচ্ছে এই যে, বাংলাপ্রেমী ভ্যাবলাদার সর্বদাই চার্জ হয়ে থাকা সকাল দুপুর সন্ধ্যা রাত্রির বিশাল ডিম্যাণ্ডের পাল্লা দিয়ে যাওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব হয়না। দুদিনেই কেমন কেলসে গিয়ে তারপর নিজে থেকেই ধাঁ। বাংলাপ্রেম বলে কথা, যত তাড়াতাড়ি তাদের বদহজম হত ভ্যাবলাদাকে, তত দ্রুতই তার ঝুড়ি ভরে উঠত নতুন ফসলে। ব্যাঁকা বঙ্কিম তো রীতিমত হিংসা করে ভ্যাবলাদাকে, বেচারীর ঠোঁটে এখনও থ্যাবড়ানো কোন ঠোঁটের লাল নীল ছাপই পড়লো না, একদিন ছিলিম টেনে চরম ধুনকীতে সে কী কান্না! তো সেই ভ্যাবলাদাকে বিপদে ফেলে এখন কি আমরা পালিয়ে যেতে পারি! তো সেই মহানায়কের এই একাদশ পর্বের মহানায়িকা এক শুকনো ডাঁটার মতো সিজনড বৌদি। ভাবখানা কত লড়বি লড়ে যা। ভ্যাবলাদা তাকে নিয়ে এখন বেশরমের মতো ব্যস্ত। বৌদির দাদাটি শোনা যায় সোনাশ্রমিক। শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি। বছরে একবার তিনদিনের জন্য বৌবাজি কোরে ফিরে যান তার গোলোকধামে। মহাপুরুষ তারা, সন্তান হয়নি, বৌটির শরীর যন্ত্রের ভেতর-ঘরে সন্তান বানাবার ক্ষমতা নেই। চল বোগল, তেড়ে বাজাই। শোনা যায় দাদা বাবাজীর সোনাগাঁয়ে অন্য বউ যমজ নামিয়েছে। চরম ফলবতী। ভ্যাবলাদা ছাড়া কে আর বসে বসে ডাঁটা চেবাবে! সুতরাং বছরের তিনদিন ছেড়ে দিয়ে ভ্যাবলাদা ক্যাচ। আর এই বৌদিলীলায় তার কপালও চওড়া হয়ে গিয়েছে, আমরা দাদার অনুগামী, আমাদের সামনেও এখন বিরাট ভবিষ্যৎ খলবল করছে।

বলছি দাঁড়ান, আচ্ছা সেদিন ক্যালাকেলি হবার আগে ক্যালক্যালানী কেল্টুকে নিয়ে কি বলতে চাইছিলো মনে আছে? আমিই মনে করিয়ে দিচ্ছি, সে কেল্টুর নাইট ডিউটির ঢপ নিয়ে কি এক পর্দাফাঁস করতে চাইছিলো। তো তখন তাকে থামিয়ে দিলেও, আমরাও কিন্তু গোপনে একদিন ৭.২৫-এর কিছু পরেই কেল্টুর পিছু নিয়েছিলাম। সে এক মহাকেলো। মাঝিপাড়ার যে ঝুপড়ির, যে মেয়েলোকটা দরজা ফাঁক কোরে কেল্টুকে ভেতরে ঢোকালো, সে তো ভ্যাবলাদার সেই বাতিল প্রথম। মাঝিপাড়ার যে দিকটায় এ ঝুপড়ি ঘর, তার আশেপাশে ঝোপঝাড় আর পেছনটায় ধুধু ফাঁকা। এসে যখন পড়েছি সুযোগ ছাড়ছি না, কেল্টুর কীসের ডিউটি সেটা জেনে যেতেই হবে। আমার সাথে হাবুও এসেছে। সে যথারীতি একফাঁকে জানিয়েও দিলো, দেখেছো তো, ক্যালক্যালানী কখনও মিথ্যে বলেনা! আমিও বললাম, ঠিকই, সতী ঘাবলানী। আমি আর বললাম না, সেদিন আমাকে যেভাবে সাঁটিয়ে নিয়েছিলো পুরো শরীর সেঁধিয়ে, শুধু বন্ধুত্ব বিচ্ছেদ হবে বলে ওকে নিয়ে মন্দিরে ঢুকিনি। বরং ছুটে গিয়ে কালিন্দীর পাঁজর বিষদাঁতে ফালাফালা কোরে ঢেলে এসেছি বিষ। সেও বাজারী মাল, নানারকম মাংসখাদক খদ্দের নিয়ে কারবার, কোনওরকম বাধা দেয়নি আমায়। কাজের পরে শুধু বলেছিলো, কার কাছে লাথি খেয়ে আজ এখানে এসছিলি! আমি কোনও উত্তর না দিয়ে পাওনাগণ্ডা মিটিয়ে চলে এসছিলাম। যাই হোক, হাবুকে আবারও বললাম, ক্যালক্যালানীর সতীত্বের তুলনা নাই, তোকে যেভাবে ভালোবাসে, বিয়ে না করতেই তিনবার খালাস, কোনও মেয়ে এভাবে করতে দেবে না। হাবু শুধু গদগদ হয়ে বললো, ওকে ছাড়া আমি কিছুতেই বাঁচবো না। আমি আর কান্নাকাটির সুযোগ না দিয়ে বললাম, একবার যাবি নাকি ঘরটায় উঁকি দিতে? হাবু যেন এমনই ভাবছিলো। সঙ্গে সঙ্গে বললো, চল, একবার দেখেই আসি। পায়ে পায়ে এগিয়ে গিয়ে জানালার যে ফাঁক দিয়ে একচিলতে টিমটিমে আলো বেরোচ্ছিলো ঝোপটার দিকে, সে দিকে কাঁটাখোঁচা খেয়ে ফাঁকে চোখ রাখতেই থ। একেবারে ফাটাফাটি লালেঝোলে যুদ্ধ। কেউ কারো থেকে ঘোড়া ছোটানোয় কম নয়, বোঝা গেলো। উরিঃ গাণ্ডু, কেয়া ডিবটি হ্যায় জনাব! হাবু তো ফুটোয় চোখ লাগিয়েই প্রায় ধনুষ্টঙ্কার হবার মত অবস্থা। পুরো চেতে উঠেছে। আমি বুদ্ধি কোরে ওর কানের গোড়ায় মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বললাম, হাবু, সাপ। ব্যাস, হাবু খুলে গেলো জানালার ফুটো থেকে, লাফিয়ে উঠেই ঝোপঝাড় মাড়িয়ে ঝেরে দৌড়, যেন সাপের আগে ওকে নিরাপদ দূরত্বে পৌঁছতে হবে। যাকগে, কেল্টুর ডিউটিটা তো জানা গেলো, এবার ৭.২৫ এর রহস্যটা বাকি থাকলো। ওটা এবার ক্যালক্যালানীকে কাজে লাগিয়ে জানতে হবে। যেমন ভাবা তেমন কাজ এবং ১১০% সফলতা। ক্যালক্যালানী তার যোগ্যতা প্রমাণের এমন সুযোগ, সর্বোপরি কেল্টুও যে তার হাবুর থেকে অন্যরকম ধম্মপুত্তুর নয়, সেটা প্রমাণেরও একটা হাতেনাতে গরম সুযোগ পেয়ে একেবারে ফুটতে শুরু করেছে। সেটা পরের দিনই কেল্টু বাদে সবাই টের পেয়ে গেলো। রাত আটটা নাগাদ হাঁফাতে হাঁফাতে এসেই বললো "আমি দারুণ একটা খবর দেব, কিন্তু গলা শুকিয়ে গেছে, আমাকে আগে একগ্লাস বাংলা খাওয়াতে হবে।" বুঝলাম এতদিন নাভীর নীচে পুষে রাখা কেল্টুর প্রতি তার যে প্রতিহিংসা (আকর্ষণ নয়তো!), সেটা ঘাবলে নেবার একটা সুযোগ আজ সে পেয়ে গেছে। কিন্তু এই প্রতিহিংসার কারণটাও প্রিয় পড়িয়ে আপনাকে জানিয়ে রাখার দায়িত্ব গল্প বলিয়ের কিছুটা আছে বৈকি! আসলে, কেল্টুর প্রতি সকলের যে একটা প্যাচপেচে ভদ্দরভদ্দর ক্যালসানী, কারণ সে প্রচুর খেটে, সারাদিন কারখানায় কাজ, তার পরেও নাইট ডিউটি জোগাড় কোরে বাবা-মা-বোনকে খাওয়ায়, যখন তখন নেশা করেনা, তেমন মেয়েবাজী করবারও বদনাম নেই তার-- আর অন্যেরা কথায় কথায় কেল্টুকে দেখিয়ে হাবুর সাথে ইল্লি করে, এটা ক্যালক্যালানী কিছুতেই সহ্য করতে পারেনা। হাবু বিয়ে করতে পারছে না পয়সার অভাবে, তাতে কি হয়েছে! সে তো আর তাকে ছাড়া অন্য মাগী ধরে শোয়াতে যায় নি, এটা কেউ বলে না। সবাই একগলায় কেল্টুর পোশোংসায় যখন তখন হেঁচকি তুলছে। পাশাপাশি কেল্টুর শক্তপোক্ত চেহারা, থাবার কাঠিন্য ভেতরে ভেতরে ক্যালক্যালানীকে বিবশ করে দিলেও কেল্টু তার দিকে ফিরেও তাকায়না, যেন পাত্তাই দেয়না ক্যালানীকে। সুতরাং আজকে সে সুযোগ পেয়েছে, কেল্টুর ওই মহান নাটবল্টু সাঁটানো চিত্তিরপনা, সে ভেঙ্গে চুরচুর করে দেবে সবার সামনে।

যাই হোক, কেল্টুর নাইট ডিউটি আমাদের জানা হয়ে গেছে, কিন্তু ৭.২৫ রহস্যের ফুল ফাটাতে এতই অস্থির আমরা যে, একগ্লাস কেন প্রয়োজনে ওর ঠোঁট ফাঁক করে পুরো এক বোতল ঢেলে দিয়ে, তলপেটে গোঁত্তা মেরে খিঁচে বার করতে হবে গোপন রহস্যের ছালমাংস। ঘোলা বৌদি যেহেতু আমাদের সবকিছুরই সাথে থাকে, তাকে শুধু বলতে অপেক্ষা, গ্লাস যেন রেডি করাই আছে, কাটাবোতল খুলে ছ্যারছ্যার কোরে ঢেলে দিলো একগ্লাস বাংলা, তবে সেটা বাংলু না পচাই, সেটা ওই ঘাবলা মহিলাই জানে। কারণ তার কাছে অঙ্কটা পরিষ্কার, ক্যালক্যালানী ওই মুত খেয়ে একটু পরেই হাবুকে গুটিয়ে নিয়ে মন্দিরে গিয়ে ঢুকবে, তারপর আবার পেট ফুলবে, আবার খালাস। লে পাঁচুয়া, ওই দাক্তারনীর কাছ থেকে ঘোলা বৌদি কমিশন খায় কিনা কে জানে! যেভাবে মেয়েছেলে নিয়ে মন্দিরে কেউ ঢুকলে বৌদি সবসময় চোরাচোখে পাহারা দিয়ে যায়, সন্দেহজনক! তো আপাতত, গ্লাস হাতে পেয়েই লম্বা এক চুমুক দিয়ে সেটা শেষ করে ক্যালানী। হাবুর হাতে সেটা ধরিয়ে দিয়ে ক্যালক্যালানী যা বলে, তার বাংলা করলে দাঁড়ায়, (কারণ প্রতিটি শব্দ অক্ষরের সামনে পেছনে নানা রঙের এত গরম চরম ঘেয়ো শব্দের আধিক্য, বাংলা অনুবাদ করেই তাই পড়ুয়াকে জানাই), সন্ধ্যে ৭.১৫-র মধ্যে মেয়েছেলেটার মেঝো-মদ্দা কাঁধে জাল ঝুলিয়ে বেরিয়ে যায় রোজ রাতের নদীতে সাঁতলি দিতে। ফিরে আসে ১০/১১টার মধ্যেই। পরপর তিনদিন এটাই দেখেছে ক্যালানী। আর কেল্টু ৯/৯.৩০ এর মধ্যে ডিউটি সেরে বাড়ি ফিরে যায়। কিন্তু মেয়েমানুষটার ব্যাটাছেলেটা কোথায় যায় ক্যালক্যালানী সেটা জানেনা।

স্বাভাবিকভাবেই কোন কেস হাতে নিলে তার বিচী না ছাড়ালে পুরোটা জানা হয় না, তাই হাবুকে সঙ্গী কোরে সিদ্ধান্ত নেয়া হলো, সে দায়িত্ব আমাদেরই নিতে হবে। পরদিন হাবু আর আমি, কেল্টু ঠেকে আসার আগেই মানে সন্ধ্যে হবার সাথে সাথেই পৌঁছে গেলাম কেল্টুর ডিউটি ঠিকানার কাছাকাছি গাছপালার ফাঁকে। যেখান থেকে অন্ধকারেও আমরা সব দেখতে পাব, কিন্তু আমাদের কেউ দেখবে না। ক্যালক্যালানীর কথাকে সত্য প্রমাণ কোরে ঘাড়ে জাল, মাঝি বেরিয়ে সরু এক পথ বেয়ে ভাঙাচোরা পাকা রাস্তায় ওঠে। আমরাও ঝোপ থেকে বেরিয়ে ধীরেসুস্থে তার পেছনে চলেছি। রাস্তাটা যেদিকে শুনশান হয়ে নদীর দিকে গেছে, রাস্তার দুপাশে বড় বড় গাছের ফাঁকফোকড়ে মাঝে মাঝে চটচুটো ছাওয়া ছোট ছোট ঝুপড়ি, সেদিকেই চললো সেই জালকাঁধে মাঝি। কিছুটা গিয়েই দেখা গেলো এক ঝুপড়ির পাশে গাছ থেকে লন্ঠন ঝুলিয়ে গোটাকয় ব্যাটাছেলে, দুয়েকটা মেয়েছেলে বসে হাঁড়ি থেকে ঢেলে মনে হলো হাঁড়িয়া বা চোলাই খাচ্ছে। আমরা যার পিছু পিছু এলাম সেই মাঝিও বসে গেলো তাদের মধ্যে, হাতে গ্লাস এলো আর ঝুপড়ি থেকে বেরিয়ে এলো এক আধন্যাংটো টলোমলো মেয়েছেলে। এসেই সরাসরি বসে পড়লো আমাদের সেই মাঝির কোলে। তারপর গ্লাস দুয়েক মাল গলায় ঢেলে দুজনেই বেশ গায়েগতরে জড়িয়ে যেতেই, মাঝি সেই মেয়েছেলেকে চ্যাংদোলা কোরে তুলে ঢুকে পড়লো পাশের ঝুপড়িতে। মাঝি একাই নয়, সেই ঠেকের প্রায় সব ব্যাটাছেলে, মেয়েছেলেগুলোকে কোনওক্রমে কুড়িয়ে নিয়ে যে যার মতো ঢুকে পড়লো একেকটা ঝুপড়িতে। হাবু হঠাৎ বললো, দেখেছিস, এই ভবের নদীতে কতরকম মাছধরা আছে, কতরকম মাছ ফাৎনা খুঁজে সাঁতার খেলছে! কতরকম মাঝি! আমাদের কেল্টু তো পাকা মাঝি রে, ভালো মাছ জালে ফেলেছে। কি দম, কেমন ঘাপালো সেদিন দেখলি! সেখানে আর দাঁড়িয়ে না থেকে সাইকেল চালিয়ে আমরাও ফিরতে থাকলাম। ফেরবার পথেই দেখলাম কেল্টু আমাদের কিছুটা আগে আগেই যাচ্ছে। কেল্টু তার নাইট ডিউটির গল্পটাকে পাকা করতে রাতের দিকে কোনদিনই ঠেকে যায়না, আমরা জানতাম আজও সে যাবে না। যাই হোক, একটা দুষ্টুবুদ্ধি কদিন ধরেই আমার মাথায় খেলছে, কেল্টুকে যেভাবেই হোক ক্যালক্যালানীর সাথে একবার মন্দিরে ঢোকাতে হবে। দেখতে হবে ক্যালানীর কেল্টুর প্রতি সত্যিই রাগ, নাকি কেল্টুর শক্ত থাবায় পেষিত হওয়ার টান!

ভবাদা আমাদের ভাববার আগেই যেন সব ভাবনা ভেবে রাখে, ভ্যাবলাদার ভবিতব্যের মতই। সে প্রসঙ্গে পরে আসছি, আগে কেল্টু পর্ব সামলাই। পরদিন ঠিকঠাক সময়েই কেল্টু এলো ঠেকে, আর এলো ক্যালক্যালানীও। আর কোনদিকে না তাকিয়ে, আজকেই প্রথম ক্যালানী সরাসরি কেল্টুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে হঠাৎই বলে বসলো, "কি কেল্টুবাবু, নাইট ডিউটিতে কেমন ঠাপাচ্ছেন"? কথাটা বলেই বাজারী মেয়েছেলেদের মতো সারা শরীর দিয়ে চরম চুল্লী তাতানো এক হাসিতে কিলবিল করে উঠলো। আমিও দেখলাম সুযোগ এসে গেছে। কোনও কথা না বলে একটা গোটা বাংলা এনে হাবুর হাতে দিয়ে বললাম "চুঁচুঁ করে যতটা পারবি টেনে দে"। হাবু যেন হাতে সোনা পেলো। সন্ধ্যে নামার আগে থেকেই গাঁজায় ঢুলছিলো, বাংলা বোতল হাতে পেতেই কাউকে যেন ভাগ দিতে না হয়, তাড়াতাড়ি যতটা পারে টেনে বোতলের মাঝমাঠ পার করে দিলো। আমি জানি দু-চার মিনিটেই হাবু কেলিয়ে পড়বে ভূমিশয্যায়, তারপর কে ক্যালক্যালানী আর কে কেল্টু, সবজুড়েই ভবাদার ছড়ানো গলিত বিছানা, উড়ন্ত, আদিগন্ত জলাৎকার লুপ্ত হাহাকার।

আর ওদিকে দেখছি কেল্টু, তো তো করে তোতলাচ্ছে ক্যালক্যালানীর সামনে। ক্যালানী হাসতে হাসতে প্রায় কেল্টুর গায়ের কাছে এসে হাসি থামিয়ে কেল্টুকে বলে বসে, "এত ডিউটি ঠাপাচ্ছো, আমাদেরও খাওয়াও", কথাটা বলেই কেল্টুর হাতটা খপাৎ কোরে ধরে টানতে টানতে বৌদির দোকানে ঢুকিয়ে বলে বসে, "তোমার সাথে আজ মাল খাব, তুমি খাওয়াবে, তোমাকে আজ খাবই"। কেল্টু ঠিক এরকম একটা পরিস্থিতির মুখোমুখি হবে যেন স্বপ্নেও ছিলো না। ঘাবলা বৌদি দেরী না কোরে দুগ্লাস বাংলা না চোলাই সেই জানে, দুজনার হাতে ধরিয়ে দেয়। ক্যালানী বলে, "দেখি তুমি কত বড় ঠাপবাজ, একচুমুকে টেনে দিতে হবে, একসাথে"। কেল্টু পরিস্থিতির আকস্মিকতায় বিচারবোধ হারিয়ে যেন চ্যালেঞ্জ নিয়েই ফ্যালে। ক্যালানীর আগে শেষ করে দেয় গ্লাস। ক্যালক্যালানী সেটা দেখেই, গ্লাস নামিয়ে লাফিয়ে উঠেই সপাটে কেল্টুকে জড়িয়ে ধরে নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে চুষতে থাকে কেল্টুর ঠোঁট। নেশা না করা কেল্টু মদ এবং মেয়েছেলের উত্তাপে কেমন বুদ্ধিহীন, স্থানকালপাত্র ভুলে গিয়ে নিজেও তীব্র কোরে জড়িয়ে নেয় ক্যালকালানীকে নিজের দুহাতে। ঘাবলা বৌদি সুযোগ বুঝে গ্লাসদুটো তুলে নিয়ে আরও দুগ্লাস মদ দুজনার হাতে ধরিয়ে দেয়। নিজেদের খুলে নিয়ে ওরা সেটাও টেনে দেয়। আর শেষ করেই ক্যালক্যালানী চারপাশে একবার দ্রুত চোখ বুলিয়েই বুঝতে পারে, হাবু কেলিয়ে পড়েছে মাটিতে। ক্যালক্যালানী আর কোন কথা না ভেবে, কেল্টু্র হাত ধরে হিড়হিড় করে টেনে নিয়ে যায় মন্দিরের দিকে। কেল্টুও কেমন টলোমলো পায়ে, কোমড়ে দড়ি বাঁধা বাছুরের মতো, ক্যালানীকে অনুসরণ কোরে ঢুকে গেলো মন্দিরের গর্ভে। জানিনা, কেল্টুর আজ থেকে নাইট ডিউটির ঠিকানা বদল হবে কিনা, তবে ক্যালক্যালানী যে চতুর্থবার ঘোলা বৌদির হাত ধরে দাক্তারনীর দরবারে গিয়ে দাঁড়াবেই, সেটা নিশ্চিত। আমি বাড়ি চলে আসবার আগে ঘোলাবৌদি জানিয়ে দেয়, "চিন্তা নেই, আমি হাবুকে ঘরে নিয়ে আসব"। বৌদির চোখে অন্য ঈশারা, "নেশা কাটলে বাড়ি চলে যাবে"। বিভ্রান্তের মত ভাবতে থাকি, কে বেশি নেশাগ্রস্ত, হাবু না ঘোলাবৌদি। কাল ছাড়া জানার উপায় নেই। আস্তে শুধু বললাম, "যদি পারো, ওর মাথা থেকে ক্যালক্যালানীর নেশাটা ছাড়িয়ে, তোমার নেশা ঢুকিয়ে দিও"। বৌদি খ্যালখেলিয়ে সেই একই হাসি হেসে উঠলো, সন্ধ্যেবেলা ক্যালানী কেল্টুর সামনে যে হাসিটা হাসছিলো। ঘরে ফিরতে ফিরতে ভাবছিলাম, ভ্যাবলাদার কথা বলব বলে লোক ডেকে এনে, কি সব বলছি! নাঃ, এবার ভ্যাবলাদার কথা বলব, আর দাদার অনুগামী আমাদের ভবিতব্যের কথাও...

 

(৩) 

তো ক্রমশ প্রকাশিত ভ্যাবলাদা এপিসোডে একাদশতম নায়িকা বৌদিটি যে জম্পেস যত্রতত্রগামী, ভ্যাবলাদা সেটা জানত না কিংবা সেসব জানাটানায় ত্যানা জ্বেলে ভ্যাবলাদা একাই জয় গুরু। সে বসে থাকে ঠেকে বা হাটবাজার ঘোরে যাই করুক, মাল লটকে যায় তলপেটে। "ভ্যাবলাদা এক গোদা পোতিভা" ব্যাঁকা বঙ্কিম এভাবেই বলে। আমরা এখন "দাদার অনুগামী" হয়ে ময়দানে খলবল করছি কারণ একটাই, ঐ স্যাঁতলানো একাদশতম সীজনড বৌদিটি ভ্যাবলাদাকে ভোটে নামিয়ে দিয়েছে। পঞ্চায়েত ভোটে। চিমটে মহিলাটি কোথা থেকে টাকা নিয়ে আসছে কে জানে, আমাদের ঘাবলা বৌদির দোকানে বোতল বোতল 'অজ্জিনাল' বাংলা বিক্রির গমগমা। তার সাথে ডিমভাজি চপ ফুলুরির কেয়া বাৎ! আমাদের একটাই হল্লা, লড়ে যাও ভ্যাবলাদা, আমরা দাদার অনুগামী, সাথে আছি। আর এসবের ফাঁকে, কেল্টুর চাপে ক্যালক্যালানী চতুর্থবার বাঁধিয়ে ফেলেছে। হাবুর তাতে দুঃখ নেই কারণ সামনে আছে ভ্যাবলা দাদার মহান আদশ্য। হাবু তো জানেই, প্রেং মানেই ঠ্যাং ফাঁক। অনুস্বার তাই আর ম হবার সুযোগই পায় না। আপাতত ওসব ভাববার কোনও সময়ই নেই কারও। সারাদিনই এলাকা গরম করা হল্লায় ভ্যাবলাদার জন্য জান লড়িয়ে দিচ্ছি আমরা দাদার অনুগামীরা। একদিন ঘাবলা বৌদি ডেকে নিয়ে চুপিচুপি বললো, "তোদের ভ্যাবলার শুঁটকি নায়িকা তো হাবুকে নিয়ে এর মধ্যেই একদিন মন্দির মারিয়ে নিলো, তোরা তো কিছুই জানিস না"! কথাটা শুনে দু-এক মুহূর্ত একটু অবাক লাগলেও, ঘোর কেটে গেলো। ঘাবলা বৌদি আবার বললো, "শুঁটকি মাগীর বহুৎ খাই। তোদেরও চাটবে দেখে নিস"!

কথাটা শুনে দোকান থেকে বেরোতে যাব, খপ করে আমার হাত চেপে ধরে কাছে টেনে নিয়ে বৌদি আবার বললো, "তোকে আমার খুব ভালো লাগে"। আমার মাথায় হঠাৎ কালিন্দী ভেসে উঠলো, ভঙ্গিমা একই, ভাবটাও এক, শুধু চেহারা দুটো আলাদা। আমি তাড়াহুড়ো কোরে হাতটা ছাড়াতে ছাড়াতে বললাম, "তাই! তা তোমাকেও তো আমাদের সবারই ভালো লাগে, না হলে কি প্রতিদিন এখানে ঠেকবাজী করতে আসতাম"! বৌদির কথাটা বিশেষ মনে ধরলো না, বুঝলাম সবাইকে নিয়ে সে এখন ভাবছে না, সে এখন একজনকেই চাইছে, একটু শক্তপোক্ত একজন। যাকগে, বেরিয়ে আসার আগে বললাম, "আমারও ভালো লাগে তোমাকে। যেভাবে এত হুজ্জুতি সামলাচ্ছো একা, তোমাকে ভালো না লেগে উপায় আছে"! কথার ফাঁকে বৌদি একটা আস্ত বোতল তুলে আমার হাতে দিয়ে বললো, "তোকে এটা দিলাম, পয়সা দিতে হবে না, বাড়ি নিয়ে যা, একা একা খাবি"। আমি 'কিছুতেই নেব না' ভাব দেখালেও মনে মনে লোভটা সামলাতে পারছিলাম না। বৌদি একটু রেগে গিয়েই বললো, না নিলে তোকে আর কোনদিন মদ বিক্রি করব না। আমিও আর কথা না বাড়িয়ে বোতলটা প্যান্ট ফাঁক কোরে পেটের মধ্যে ঢুকিয়ে নিয়ে দোকান থেকে বেরিয়ে এলাম। আর দোকান পেরিয়ে ঠেকের দিকে দু-এক পা যেতেই টের পেলাম তলপেটে সেঁটে থাকা বাংলার বোতলটি আর বোতল নেই, যেন ঘাবলা বৌদি হয়ে গেছে। যেই হোক, কালিন্দী হোক আর ঘাবলা বৌদি, ভ্যাবলাদা একবার ভোটে জিতলেই আমরা "দাদার অনুগামী"দের ভবিষ্যৎ জ্বলে জ্বলে উঠবে, যার সাথে খুশি শোবো। ঠেকে পা দিতেই দেখলাম সেখানে হাবু নেই। হল্লায় যতক্ষণ ছিলাম খেয়াল করিনি, আজ প্রচুর খাটিয়েছে ভ্যাবলাদা্র স্যাঁকা বৌদি। গোয়াল পাড়া, কামার পাড়া, মোল্লা পাড়া, চামার পাড়া, মাঝি পাড়া-- মেয়েছেলেটা খরচাও করে, ফাটিয়ে খাইয়েছে। কিন্তু হাবু গেলো কোথায়? রাতটাও বেড়েছে। হঠাৎই দেখি অন্ধকার থেকে সেই চামকাঠ ভ্যাবলা বৌদি সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললো, "হাবু খুব আজ বাওয়ালী করেছে। মাঝিপাড়ায় ঢোকার মুখেই দেখলাম জঙ্গলের দিকে চলে যাচ্ছে অন্ধকারে। পিছু পিছু গিয়ে দেখি, এক ঝুপড়ির পাশে বসে মাল খাচ্ছে। আমায় দেখে বললো, পয়সা দিয়ে দাও। কি করব দিয়ে দিলাম। তারপর বললো, শরীরটা খারাপ লাগছে, আমায় ঠেকে নিয়ে চলো। তোমরা তখন অনেকটা এগিয়ে গিয়েছো। তারপর অন্ধকারে একটা সরু পথ দিয়ে ওই আমাকে পথ চিনিয়ে মন্দিরের পেছন রাস্তা দিয়ে সেখানে ঢুকে বললো, তুমি একটু বসে চলে যাও। বোধহয় চোলাই টোলাই খাইয়েছে, ক্যালক্যালানীর নাম ধরে কাঁদছে আর ছটফট করছে। কোনোক্রমে থামিয়ে এই আমি এলাম। নেশা একটু থিতিয়ে গেলেই সেও চলে আসবে।" গল্পটা ভালোই ঘেপেছে। ঘাবলা বৌদির কথা মনে পড়লো, কিছুক্ষণ আগে ডেকে আমায় যেটা বলেছে। মেয়েছেলেটার নজরও মারাত্মক। ঠিক বুঝেছে, এই শুঁটকি মেয়েছেলের বহুৎ খাই। হাবুকে কায়দা কোরে আলাদা কোরে আচ্ছাসে গবা গরম কোরে এখানে এসে গল্প ঠাপাচ্ছে। ভ্যাবলাদার ছেঁড়া গেলো তাতে। একবার জিতে গেলেই, কত মেয়েছেলে লাইন দিয়ে আসবে। তবে এই সোনা-খোঁচানো মেয়েছেলের নানা্রকম লাইনবাট্টা জানা আছে। কি এক গা-গরম পার্টি জোগাড় কোরে ভ্যাবলাদাকে ভোটে সাজিয়ে তেড়ে টাকা খিঁচে যাচ্ছে। এ মালটা আমাদের পেছনে যা ছড়াচ্ছে নিশ্চয়ই তার অনেক অনেক বেশি খিঁচছে পার্টির মালিকদের কাছ থেকে। যাকগে, আমরা কথাবার্তা বলতে বলতেই দেখি হাবু হাবাগোবা সেজে আমাদের সামনে এসে একটা জায়গা দেখে বসলো। আমি আর ঘাঁটালাম না। করবেই তো, এক মেয়েছেলে ওকে ছেড়ে আরেকটাকে খাবলে নিয়েছে বলে কি ও' হাতে ফলনা ধরে বসে থাকবে! মারা শালা, খুলে মার। তবে মালটা খুব চিপসে এটাই যা ব্যাপার। পাশাপাশি এটাও ঠিক যে, এ মালটা ভ্যাবলাদাকেও ছাড়বে না, আমাকে হাবুকে নিয়েও খলবলাবে। হঠাৎই মনে হলো ঘাবলা বৌদিকে গিয়ে একবার বলি, আজ তোমার ঘরে ঘুমাবো। তার পরেই মনে হলো, সারারাত ওর ঘরে কাটালে, সকালে কঙ্কাল হাতে নিয়ে বাড়ি যেতে হবে। পাগল! মালটা চেগে গেলে একসাথে দুটোকে ঠুসে দেয় গত্তে। সেদিন তো নিজের চোখেই দেখলাম! চল বাপ, তলপেটে বাংলা নিয়ে মানে মানে কেটে পরা যাক। ঘাবলা তো আর কালিন্দী নয়! কালিন্দী প্রেমের হুতাশে জ্বলছে, শরীর তো সবাই কেনে, সে তাই মাংস বেচিয়ে। কালিন্দী আমাকে ডাকে প্রেমের খিদেয়। আমি তো প্রেমিক নয়, এতকিছু কি করে মেটাব! আমিও তো হাবুর মতই অনুস্বার ভাবি। ঠ্যাং ফাঁক একবার চোরাগোপ্তা খিদেয় অস্থির হয়ে যাই। ঘাবলা বৌদির ব্যাকরণে এসব ম বা অনুস্বারের দ্বন্দ্ব নেই। প্রতি মিনিটের একটাই টার্গেট, কামানো। কোন ধান্দায় দু-পয়সা বাড়তি আসবে, মারো কোপ। আর তাই শরীরে খলবলে পোকা গোঙানি তুললেই যে কেউ একটাকে তুলে আগুনে সেঁকবে। কিন্তু তারই দেয়া বাংলা বোতল তলপেটে গুঁজে, কিঞ্চিৎ মস্তিষ্কের টালমাটালে মনে হলো, পালাচ্ছি নাকি! কালিন্দীকে দেখেছি, ঘাবলা বৌদিকে দেখিই না একবার! বাড়াবাড়ি করলে কেলিয়ে দিয়ে পালিয়ে যাব। দ্বিতীয় কোন ভাবনাকে হ্যাটা দিয়ে, ঘুরে এসে দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে আস্তে করে বললাম, আজ আর ঘরে ফিরব না। কথাটা বলতে যে সময়টুকু, ঘাবলা বৌদি দোকান থেকে প্রায় ছুটে বেরিয়ে এসে চকচকে চোখ তুলে বললো, "ফিরতে হবেনা, আজ তুই আমার ঘরে শুবি। রাত বেড়ে গেছে, এগুলোকে বাড়ি পাঠিয়ে, আমিও দোকানে ঝাঁপ ফেলে দেব।" ঠেকে গিয়ে দেখলাম সবগুলোই লাট খাচ্ছে। কেবল ভ্যাবলাদার মালটা হাবুর বেশ ঠাস চাপন খেয়ে এসে, কেমন ঘাড় কেতিয়ে দুহাঁটু চেপে ধরে বসে আছে। বোতলটা প্যান্টের ফাঁক থেকে বার করে ব্যাঁকা বঙ্কিমের হাতে দিয়ে বললাম, মালটা সবাই মিলে টেনে দে। জানতাম এ অবস্থায় এ মাল টেনে কেউ আর ঠেকে থাকবে না। এখুনই এলেবেলে করছে। তাই হলো। দুয়েক ঢোঁক গলায় ঢেলেই যে যার মতো পায়ে পায়ে উঠে টাল খেতে খেতে ফিরতে শুরু করলো ঘরের দিকে। ভ্যাবলাদার সেই সীজনড সোনা-শ্রমিকের বছরের তিনরাত্রির মেয়েলোকটিও, হাবুর হাত ধরে আজ একস্ট্রা পীড়িত দেখিয়ে ফিরে চললো নিজেদের ঘরের দিকে। যাবার আগে মেয়েলোকটি সবাইকে উদ্দেশ্য করেই যেন বললো, "কাল তাহলে সবাই সময়মতো চলে এসো। কাল আমাদের ফাটিয়ে পোচার করতে হবে। কাল আগে যাব তাঁতি পাড়ায়। আর তিনদিন কষ্ট করলেই লাফা।" কথাটা শুনে মনে মনে বললাম, বোকাচোদা, লাফা! ভ্যাবলাদাকে এমন ঢপের ফাঁদে ফেলেছে, ভালো লোকটা পুরো ভবাদার পায়ে লটকে গেছে। তিনবেলা করে ওঝা, গুণিন আর জ্যোতিষের ঘরে গোঁত্তা মারছে। ভোটে যদি এর পরেও না জেতে, লোকটার মটকা চটকে যাবে, মাগীটাকে বিষ খাইয়ে মেরে ফেলে দেবে। ভ্যাবলাদা খুব চেতে আছে এই খেঙটি মেয়েলোকটার ওপর, একদিন হল্লার সময় হাঁটতে হাঁটতে বিড়বিড় করে বলছিলো। বলেছিলাম, তুমি রাজি হলে কেনো? ভ্যাবলাদা বললো, "এমনভাবে মেয়েছেলেটা ইনিয়ে বিনিয়ে জেতার পর কি কি হবে বলতে লাগলো, পুরো ঝার খেয়ে গেলাম"। আমি আর কি বলব, উৎসাহ দিতে বলেছিলা্ম,‌ "নেমে যখন পড়েছো সবাই মিলে ঠিক তোমাকে জিতিয়ে আনব। জিতে গেলে আমাদের দেখবে তো? ওই মেয়েলোকটা সব বিলা করে দেবে না তো"? কেমন চেগে গিয়ে ভ্যাবলাদা বলেছিলো, আমাদের সাথে বেইমানি করতে এলে, মুখ ফাঁক কোরে অ্যাসিড ঢেলে দেব।

আপাতত সবাই ফিরে গেলে অন্ধকার একবার ভালো করে জরীপ করে নিলাম। না, এদিক ওদিক আর কেউ নেই। ঘাবলা বৌদিও ঝাঁপ ফেলে দিয়েছে। ওদের ছেড়ে যাওয়া বোতলের শেষ মালটুকু একটানে তলপেটে চালান দিয়ে দিলাম। বোঝা গেলো অর্দ্ধেকও টানতে পারেনি ওরা। একটানে অনেকটাই পাকস্থলীতে চালান করতেই শরীর জানিয়ে দিলো 'এটা ঠিক করলি না'। যা হবার হোক। আজ কিছু ভাবব না আর। শুধু মাথায় তোলপাড় হচ্ছে 'ঘাবলা বৌদি আজ আমাকে খাবে'। শরীর ক্রমেই গরম হয়ে উঠছে আর কেমন অস্থির লাগতে শুরু করেছে। জামাটা খুলে ফেলে, হাত পা ছড়িয়ে সেই আলকাতরা অন্ধকারে, আকাশের দিকে চোখ রেখে চিৎ হয়ে ঘাসের ওপরেই শুয়ে পড়লাম। আজ ফাটিয়ে হল্লা হয়েছে। প্রচুর হাঁটিয়েছে ভ্যাবলাদার মালটা।...

আহা, সারা আকাশ জুড়ে কত আলোর টিপ। কত আলো চাদ্দিকে। বর্শাফলার মত সরু আলোর অগুণতি রেখা হামলে পড়ছে শরীরের ওপর। চারদিকের কালো অন্ধকারে শুয়ে আছি আমি। আমি কি শুয়ে আছি, নাকি ঘুরছি, উত্তর দক্ষিণ পূর্ব পশ্চিম। আমি কি ঘুরছি নাকি ভেসে যাচ্ছি অন্ধকার ঢেউয়ের মাথায়! আলোর বর্শারা আমায় বিঁধছে।... কতক্ষণ জানিনা, হঠাৎই একি, চটকা ভাঙতেই দেখি সেই অন্ধকার থেকে অন্ধকারের মতই ন্যাংটো এক মেয়েছেলে কোথা থেকে এসে দুপায়ের ফাঁকে আমাকে রেখে আমার ওপর সটান দাঁড়িয়ে। তারাদের আলোয় মেয়েছেলে বুঝতে পারলেও, চোখমুখ দেখতে পাচ্ছি না। লম্বা চুলগুলো ছড়িয়ে আছে চোখমুখ ঢেকে। চিৎকার করবারও শব্দ নেই গলায়। কে এই ন্যাংটো পাগলী? আমাকে ভয় দেখাতে এলো কেন? আমাকে কি মড়া ভেবে শরীরটা দখল নিতে এসেছে? নেশার মাথায় আবার অন্য ভাবও খেলছে। আকাশ থেকে কালী ঠাকুর নেমে আসেনি তো! ধ্যাৎ, তাই হয় নাকি! আমি কি শিব ঠাকুর নাকি! একটু সাহস কোরে মনে হলো ছুঁয়ে দেখি, ভুত হোক পাগল হোক আর কালী ঠাকুর হোক, মেরে দিলে দেবে! আমার আর কী আছে! এসব ভাবতে ভাবতেই মাটিতে লেপটে থেকে হাতদুটো আস্তে আস্তে টেনে এনে মেয়েছেলেটার পাদুটো টিপ করে ধীরে ধীরে হাত বোলাতে থাকি। বুঝতে পারি এটা ভুত নয়, একেবারে মানুষ। মেয়েছেলেটার দিক থেকে কোনও বারণ আসছেনা, না বিরক্তি, না শাসন। আমার হাতের ছোঁয়া পেয়ে কেমন গরম হয়ে উঠছে চামড়া, কেমন একটা চঞ্চলতাও টের পাচ্ছি। আমারও হাতের পাতাদুটোও পা ছাড়িয়ে ক্রমেই সাহস করে আরও ওপর দিকে উঠতে থাকে। এবার হাঁটু পেরিয়ে দুহাতের পাতা, হাতের দশ আঙুল বাধাহীন সেই নরম মাংসময় উরুর চাতাল ছুঁতেই আমার মধ্যে গনগন করে ওঠে এক আদিম আগুন। মাথার মধ্যে চড়বড় করে বাজতে থাকে চামাড় পাড়ার একশোটা তাসার আওয়াজ। উরুদুটো ধরে অস্থির খিদেয় মাতাল, সাহস একজায়গায় কোরে যেই মাথা তুলতে যাব হঠাৎই মেয়েছেলেটা হাঁটুদুটো মাটিতে গিঁথে আমার উপর বসে দুহাতে জোর করে আমাকে শুইয়ে দেয় আবার। প্রায় একইসাথে মুখ আমার মুখের ওপর নামিয়ে এনে তীব্র চুমুতে আমাকে অস্থির করে দিতে থাকে। শুধু চুমু নয় যেন, মনে হয় চুষে চিবিয়ে দাঁত দিয়ে ছিঁড়ে নেবে আমার ঠোঁট দুটো। মহিলার ভারি দুটো বুক প্রায় গিঁথে আছে আমার বুকের ওপর। বেগ কিছুটা কমতেই আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে ধীরে ধীরে মহিলা বলে, "ভয় পেয়েছিস? আমাকে চিনতে পারিস নি?" কথাটা শুনে আমার হুঁশ ফেরে। গলার স্বর শুনে বুঝতে পারি এই মেয়েলোকটি ভ্যাবলা বৌদি ছাড়া আর কেউ হতেই পারেনা। যেই হোক আমি এখন মাতাল এক আদি মানব, মেয়ে শরীরের ছোঁয়ায় আগুন জ্বালিয়ে দেব, সব। ভ্যাবলা বৌদি হোক আর যেই হোক আমাকে বেঁধে আছে মেয়েছেলের একটা শরীর, আমার এখন এই শরীরটাই দরকার। এ আগুন নেভাতে চাই না আমি। দুহাতে বৌদির মুখটাকে ধরে চুলগুলো সরিয়ে অন্ধকারেও একবার বুঝে নিতে চেষ্টা করি মেয়েছেলেটা সত্যিই বৌদি মাগীই তো! মোটামুটি বোঝা যায়, হ্যাঁ, ভ্যাবলা বৌদিই। আমি যখন জমি জরীপের কাজ করছি, মেয়েলোকটা আমার শরীর বেয়ে নীচে নামতে নামতে ক্রমেই নাভী পেরিয়ে, কোমড় পেরিয়ে প্যান্টের গিঁটদড়ি খোলবার কাজে ব্যাস্ত হয়ে পড়ে। একে একে বাঁধন খুলে পা থেকে ছাড়িয়ে নেয় বহুদিনের ফাটা চটাওঠা তেলচিটে জীনস। আর সেই মেয়েছেলের স্বাধীন স্বেচ্ছাচারী উদ্দাম আমোদের শরীক আমার শরীরও যেন ভুত ভবিষ্যৎ বর্তমানহীন দাউদাউ অগ্নীগোলকে এই মাটি আকাশ অন্ধকার আলোর ফোঁটা ফেলা যাবতীয় তারাদেরও শেষবারের মত জ্বালিয়ে পুড়িয়ে শেষ করে দেবার জন্য মদের নেশায় উন্মত্ত লাফাচ্ছে। কোদণ্ডে উৎক্ষীপ্ত চীৎকার যেন চেঁচিয়ে বলতে চাইছে "যোনী দাও, যোনী দাও, অন্ধকার আগুনের গুহায় ঢুকিয়ে লুকিয়ে ফেলো সম্পূর্ণ আমাকে"! কিন্তু না, তেমন হওয়ার বদলে, বৌদি আমার শরীর থেকে নেমে, হাত পা ছড়িয়ে পাশে চিৎ হয়ে শুয়ে কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস কোরে বললো, "আজ আমি তোকে দেব, তুই আমাকে নিবি"। কথাটা শুনে একমুহূর্তও দেরি না কোরে পাশে শুয়ে থাকা নরম উষ্ণ সমর্পিত মেয়েলোকের, এক মাংসল শরীরে পাগলা কুত্তার মতো লাফিয়ে উঠে আঁচড়ে কামড়ে তীব্রতম আঘাতে আঘাতে তাকে ছিঁড়ে ফালাফালা করতে থাকলাম। মনে হলো কতদিনের, কতকিছুর ওপর, জমানো কত ক্রোধে যেন লম্বা এক ছুরির ফালায় একের পর এক আঘাতে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে চাচ্ছি মেয়েলোকের এই ন্যাংটো শরীরটাকে। উন্মাদের মতো মনে হতে লাগলো এ অন্ধকার রাত্রির পর আর কিছু নেই... আর কিছু আসবে না কখনো! ভ্যাবলাদার ভোট নেই, শুঁটকি মহিলা, ক্যালক্যালানী, হাবু, কেল্টু, ব্যাঁকা বঙ্কিম, দাদার অনুগামী, সব ফুস... কিছু নেই কোথাও কিছু ছিলো না কখনও...  সত্য এই আগুন... সত্য এই অন্ধকার... সত্য এই তীব্র তীব্রতম শরীর মন্থন!

যেহেতু কিছুই চিরন্তন নয়, কিছু পরেই আমার শরীর ছিটকে বেরোনো ধাতুজলে ভেসে যায় মেয়েমানুষের অন্ধকার গুহার আঁধার। কম্পিতা, শিহরীতা তীব্র বাঁধনে বেঁধে ফেলে আমার শরীর। সে বাঁধনে নেশার্ত শরীর কখন ঘুমিয়ে গেছে জানিনা, ঘুম ভাঙতেই দেখলাম ঘাস নয়, মাটি নয়, অন্ধকার তারাদের কোন চিহ্ন নেই, শুয়ে আছি গুছোনো বিছানায় এক চৌকির ওপর। সামনে দাঁড়িয়ে আছে গ্লাসভরা চা হাতে, স্নান ভেজা ছড়ানো চুলের মু্‌খ, কপাল জুড়ে বড় টিপ উজ্জ্বল সিঁদুরে্‌র, সাদা শাড়ি লাল পাড় শাঁখা-পলায় দুহাত জড়ানো যে দাঁড়িয়ে আছে তাকে আর ভ্যাবলা বৌদি ভাবতে পারছি না, ছেলেবেলায় দেখা মায়েদের মতো এক অন্য মহিলা। শরীর থেকে মাঝে মাঝেই উড়ে আসছে স্নানসাবানের হালকা গন্ধ। হাত বাড়িয়ে চা-টা আমার হাতে দিয়ে মহিলা শুধু আলতো করে বললো--"আজ থেকে আমি তোর বৌ। আমাকে আর বৌদি বলবি না। আমাকে 'চিতা' বলে ডাকবি"। কথাটা বলেই চৌকি থেকে নেমে সে দোকান ঘরের দিকে চলে গেলো। আমার মাথায় শুধু ছোটবেলার বন্ধু ভাদুদের জমিদার বাড়িতে দেখা বিরাট এক দেয়াল ঘড়ির পেণ্ডুলামটা যেন দুটো শব্দ "বৌ" আর "চিতা" ছুঁয়ে ছুঁয়ে দুলতে থাকলো। উঠছি, বসছি, হাঁটছি, থামছি শুধু মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে দুটো শব্দ বৌ আর চিতা...

 

উপসংহার

লিখিয়ের দায় হিসেবে জানিয়ে রাখি ভ্যাবলাদাকে আমরা প্রচুর হল্লা, প্রচুর খাওয়াদাওয়া, প্রচুর গোলযোগ তৈরি করেও জেতাতে না পারলেও, ভোটে হেরেও ভ্যাবলাদার পজিশন বেড়ে গেছে। এখন সেই সোনা-শুঁটকি মেয়েছেলের বদলে তার দ্বাদশ ও ত্রয়োদশ পর্ব একসাথে চলছে। আর তার একাদশতম ভোটে নামানো মেয়েছেলেটি মাঝেমাঝে খেপ মারছে হাবুর সাথে। ফিসফিস শোনা যাচ্ছে, দাক্তারনীর সাথে যোগাযোগে তারা নাকি শিশুপাচারের কাজে নেমেছে। ক্যালক্যালানী সব খবর রাখে।

 

 

 

 

 

 

 


4 কমেন্টস্:

  1. এক নিঃশ্বাসে পড়ে গেলাম। প্রণবে কলম ও ভাবনা তুখোড়। অসাধারণ বললে কম বলা হবে। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যে আইরনি সব ই ওর মেধার ও সমাজচেতনার আরেকটি পদক্ষেপ।‌‌‌এর আগেও তার সোচ্চার পদক্ষেপ ও উচ্চারণ আমাকে একজন লেখকের সৎ ও অকপট ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ করেছে,আজ আবার প্রাণিত হলাম।🙏

    উত্তরমুছুন
    উত্তরগুলি
    1. যেহেতু বিদিশা নিজেও এক নিরন্তর চর্চায়, ধারে ভারে সময় জুড়ে এগিয়ে যাওয়া একজন কবি ও গদ্যকার, লেখায় থাকে অনেকটাই , ওর মন্তব্যে কিছুটা উত্তাপ তো উড়ে আসবেই, যা লেখালিখির সাহস জোগায় ।

      মুছুন
    2. অসম্ভব জোরদার এক গদ্য। একটানা পড়ে ফেললাম আর চিতার আগুনে পোড়ার অনুভূতি নিয়ে বসে আছি!

      মুছুন
    3. ধন্যবাদ পাঠক । এই লেখার পাশে দাঁড়ানোর জন্য এক সৃজনশীল হৃদয় প্রয়োজন হয় যা প্রথাবিরুদ্ধ কবি লেখকদের কাছে কাঙ্খিত। সরকার সুব্রতর কবজিতে সেই টানটা আছে বলেই মনে করি ।

      মুছুন