কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

রবিবার, ১ জুলাই, ২০১৮

বর্ণালী গুপ্ত




খুঁত, ভালবাসা


আমার ছোটখাটো খুঁতগুলো যদি ভালবাসতে পার
তাহলেই বুঝব আমায় সত্যি ভালবাস।
আচ্ছা তোমার ঘাড়ের নীচে গাঢ় বাদামী তিলটা আছে,
যা আমার খুব প্রিয় ছিল মাঝরাতে
তোমার হঠাৎ রেগে যাওয়া, মুখভার করে থাকা
ভাবলে আজও হাসি সবার আড়ালে।
সরলতায় মোড়া ওই মনটার ওপর কোনোদিন
এতোটুকু রাগ যে করতে পারিনি
ছোট ছোট খুঁতগুলোকে ভালবেসে-
পাগলের মত জড়িয়ে নিয়েছিলাম মনের কোণে -
 ছোট্ট পানসিখানি সাজাতে দামি বজরার সাজে-
পালতুলে ভাসতাম চূর্ণী নদীতে, আমি কিন্তু বৈঠার
ঘায়ে ছলকে ওঠা জলে ভিজতেই ভালবাসতাম।
আজও বাসি, চাই না আমার দামি বজরা
বিলাসবহুল চানঘর, গ্র্যান্ড পিয়ানো, মখমলে মোড়া ঘর-
ভাসতে চাই শুধু নদীতে  আঁচল ভিজিয়ে,
সব দোষ গুণ খুঁতকে ভালবেসে

দেখ নদীও কেমন কলকলিয়ে হাসছে--
'যে বয়ে যায় আপন মনে- ভালবাসার একমাত্র সাক্ষী!



জন্মলগ্ন


যখন ভাললাগার গর্ভসঞ্চার হয় ধীরে ধীরে
রোজ ছুঁয়ে দেখতাম -- একটা একটা করে শিরা উপশিরা -- মাঝে মাঝে তারা গর্ভস্থ  ভ্রুণের মতই জানান দিত হৃদয়ের চার কুঠুরিতে -- কখনও  উচ্ছ্বল, কখনও চঞ্চল, কখনও বা  নরম এহসাস --
একদিন টের পেলাম ভালবাসা জন্মগ্রহণ করতে চাইছে -- চাইছে  সব দ্বিধা-দ্বন্দ্ব  ভুলে, ভূমিষ্ঠ হতে --  
সাদরে তাকে কোলে তুলে নিলাম -- গভীর আশ্লেষে --  
তার আবদার, অনুনয়, দুষ্টু-মিষ্টি উচ্ছ্বাস, পাগলামি সব কিছু দামাল  শিশু
সহজ সরল ব্যঞ্জনায় ভরিয়ে রাখত, রাখে মনের প্রতিটি স্রোত
অকপট, অনাবিল, আবদারে --

আর আমি সেই অনুভবের জোয়ারে ভেসে যাই -- অস্ফুটে, মন ছুঁয়ে ছুঁয়ে --
সে যে  সব ঋতুতেই বসন্ত, আ্যন্টিঅক্সিডেন্ট, এজ মির‍্যাকেল স্টপেজ ক্রিম। 
সাজিয়ে নেয় নিজের মত, তছনছ করে আপনমনে  
বজরা সাজায় -- প্রেমানন্দে --
আকুল হয়ে আদরে, যত্নে।
ভালবাসা আজ ফুলে ফলে ভরা  সুপুরুষ তরুণ  --
অজান্তেই রোজ তার বুকে করি সমর্পণ



গড়জঙ্গল


অজয়ের চরা ধরে হাঁটতে হাঁটতে গড় জঙ্গলের মাঝে এসে থমকে গেলাম -
সারা বনময় কচিপাতা ঘ্রাণ আর কিছু শুকনো  পাতার আলেখ্য।

কোনোদিন দেখা হয় না প্রথম চারাটি কবে, কোন প্রান্তে  ছুঁয়েছিল মাটি -

চল না আজ শুরু করি  পথচলা, ঘন বন চিরে গেরুয়া সিঁথির মত পথ ধরে দেখে আসি
কে লিখেছিল গাছের নাম 'শাল'! 
আর তার সঙ্গি-সাথীদের, কত অজানা নাম - কত চরিত্র।

নাহ্! কোনো  নৃত্যনাট্য  হয়নি, শুধু গীতিআলেখ্য দর্শন, আর  কুচোকুচো কথা  
বাতাসের আবহ যেন সেরেন্দার করুণ সুরে বাঁধা -
দূরে আড়বাঁশির মত শিস দেওয়া পাখি, কী যেন নাম ভুলে গেছি।

পিঠে লেজ তুলে কাঠবেড়ালির অস্থিরতা, খুঁজে খুঁজে বেড়ায়  টুকরো উল্লাস-
আরো,  আরো দূরে অনিয়মিত তালে নদীর ছলাত ছলাত-
বনবিবির থানে মাদলের  দ্রুম দ্রুম- দ্রিম দ্রিম, বুক ঢিপ ঢিপ।

আচ্ছন্ন হয়ে যেতে যেতে আঁকড়ে ধরি তোমায় -
লেখা হয় গীতিকাব্য - যার নাম ‘শালবীথির আত্মকথা’ -
বন্যা-প্লাবন রচিত।

যেখানে বনানীর শেষ পাতাদের আসর, সেখানেই বাঁধব স্বপ্নবাসর।
এটুকুই রইল সাধ।

0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন