কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

রবিবার, ১ জুলাই, ২০১৮

শুক্লা মালাকার




ওভারব্রিজের তলার জীবন


চকোলেট পাওয়ার খুশীতে ছোটকু, গুড়িয়া, গোপু খিলখিল করে হাসে সাঁ সাঁ করে ছুটে যাওয়া গাড়ি টপকে মোহরকুঞ্জে ঢুকে পরে ভিক্টোরিয়ার পিছনের গেটের কাছাকাছি একটা জায়গা খুঁজে নেয় এবার ভাগাভাগির হিসেব

ওভারব্রিজের তলায় পনের-ষোলটা পরিবারের বাচ্চাগুলোর জন্য রোজ স্কুল বসে নাচ গান আঁকা শেখায় অন্য এনজিও শহরের নতুন স্ট্যটাস সিম্বল সোশ্যালওয়ার্ক  গুড়িয়ারা ছোট থেকেই দেখছে দলে দলে লোক আসে নতুন পুরনো জামাকাপড়, ওষুধ, খাবারের প্যকেট, পরিষ্কার থাকার জন্য সাবান-ফিনাইল, আরো কত কী এমনি দিয়ে যায় চাচা-বাপুরা সেগুলো পোঁটলা করে  কোথায় দিয়ে আসে সেদিন খাবার থালায় গিলে মেটে দিয়ে জবরদস্ত তরকারি পায় রোজই কারো না কারো জন্মদিন, মৃত্যুদিন থাকে কেক বিস্কুট চকলেট পায়, সঙ্গে খাবারের প্যাকেট

অনেকবার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে এসে বলে গেছে খোলা জায়গায় হাগা-মোতা  করতে নেই বাপু-চাচারাই মানে না মায়েরা ফ্রি-তে উল্টো দিকের সুলভে যায়   অবশ্য রাতে বাপুদের মতো এখানেই সারে সোনুই প্রথম দেখেছিল এখানে ভূত  আছে একবার রাতে মুততে উঠে রাস্তার আলোয় পরিষ্কার দেখতে পেল নাথুচাচা চাচীর গায়ের ওপর কাঁপছে প্রথমে ভেবেছিল মারছে কিন্তু গালি ছাড়া তো মারধোর হয় না! চাচীও গোঙাচ্ছে ভয় পেয়ে পালিয়ে এসেছে সে এরপর  গুড়িয়া, রাজেশ আরো অনেকেই দেখেছে ভূতগুলো বাপুদেরই ধরে এখনো  পর্যন্ত ওদের কাউকে ধরে নি এই যা রক্ষে
ওদের থেকে একটু যারা বড় তাদের কাছেই নন্দন অ্যাকাডেমি থেকে বাবুঘাট  অব্দি রাস্তা চলাচলের হাতেখড়ি বড়ভাইরা যে যার ধান্দায় লেগে গেছে, আর দিদিগুলো হয় ভেগে বিয়ে করেছে, না হয় বাসনমাজার কাজ নিয়েছে রবি  ভাইয়া বলেছিল, চকলেট চিপস আইসক্রিম খেতে খেতে ঘেন্না ধরে যাবে  সত্যিই তাই ভাইয়াদের হাতে ওইসব দেখে আগে কী খেতে ইচ্ছে করত! এখন এত পায়, সোনুদের গা গুলোয় তবুও ওরা দলবেঁধে বেরোয় সারি বেঁধে বসে  থাকা বাবুবিবিদের কাছে হাত পাতে ভাইয়ারা দোকান দেখিয়ে দিয়েছে যা পায় সেখানে গিয়ে বেচে আসে টাকা জমিয়ে শখ মেটায় গোপুর ভাইয়া যেমন  খাঁচায় দুটো খরগোশ পুষেছে

বছরে একবার সবাই দেশের বাড়ি যায় তখন ওরাও বাবুদের মতো ভালো জামাকাপড় পরে, বড় টিভিতে শাহরুখের সিনেমা দেখে মায়ের গায়ে সোনার জিনিষ বাপু বাইক চালিয়ে গোটা গ্রাম চষে বেড়ায় ঝকঝকে বাড়িতে কয়েকটা দিন রাজার হালে থাকে 
ফিরে এলে সেই পুরনো নোংরা জামা, খোলা ওভারব্রিজের তলায় জীবন কলকাতার হাওয়ায় পয়সা ওড়ে, সেটা ধরতে পারা চাই গুড়িয়ার খুব কুকুরের  শখ এক সকালে ভিক্টোরিয়ার রাস্তায় একটা মেয়ে লালফিতে বাঁধা কুকুর নিয়ে হাঁটছিল গুড়িয়ার অমন কুকুর চাই ওদের সঙ্গে যে কুকুরগুলো থাকে, দু’মাস  আগে তাদের একটা পাঁচটা বাচ্চা দিয়েছে সবচেয়ে সুন্দরটাকে গুড়িয়া রোজ গিলে মেটে মাংস যখন যা পারে এনে খাওয়ায় দড়ি দিয়ে থামের সঙ্গে বেঁধে রেখেছে রাজেশ, সোনু ওরা বলে বাচ্চাটা বড়লোকদের কুকুরের মতোই দেখতে হচ্ছে এখন দরকার শুধু একটা লালাফিতে    



0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন