কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

রবিবার, ১ জুলাই, ২০১৮

ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত




আদালত

সাজা দাও দৈব আদালত ঠিক আছে;
অপরাধ কী বলো? দ্যাখো আমি তো
মেনে নিয়েছি বিচার প্রণালী! কীই বা
করার থাকে এক বন্দীর? পালানোর
রাস্তাগুলো ঘেরা খুব উঁচু পাঁচিল দিয়ে।

অনেক ফাটল তোমার বিচার ব্যবস্থায়,
সম্পূর্ণ নিশ্ছিদ্র বন্দীশালা, মাঝে মাঝে
ওয়াচ টাওয়ারে সেন্ট্রি দেখি আমি।
হাত নাড়ে তারা হাসিমুখে। যেন কতো
বন্ধু, কিন্তু পালাতে গেলেই আমার দিকে
গুলি আসবে ছুটে, ফোয়ারার মতো।

সাজা দাও দৈব আদালত ঠিক আছে;
বিচারপদ্ধতি যেন বহাল থাকে;
আমাকেও বক্তব্য বলার সুযোগ দিও
তুমি, যুক্তির সুযোগ দিও। সাজা দাও
ঠিক আছে, অপরাধটা জানতে দিও।


অন্ধকারে


অন্ধকারে নারী বসেছি মান্দাসে, আঁকড়ে 
ধরেছি পচনশীল দেহ, হে স্বামী আমার
একবার চোখ খোল।

শ্রাবণে অমরত্বে যাবো তাই বিস্ময়
উজানে ভেসেছি নিশ্চিত; পৃথিবীর
সাদাকালো মুগ্ধ করে- রঙ্গীন দেখি না আর।

দেবতা বিরূপ হলে আসে শয়তান,
হোক তাই, তবু তো সঙ্গী সে,
একাকী সফরে শয়তানও মন্দ নয়।


নাম


আমার যে কী নাম, কেন যে বারবার
হাত কাঁপে স্বাক্ষর কাগজে! সদাশয়
ডালপালা মেলে থাকা বৃক্ষের কাছে
নিস্তব্ধ থাকি, এভাবে কিছুটা জোর আসে।

আমার কি গ্রাম ছিলো কোন? ভিটে বলে
যাকে- ছিলো কি? কংক্রিট শহরে হারায়
শিশিরবিন্দু- থাকে নির্মম কাচখণ্ডগুলো;
আবার জন্মাবো আমি, শিখে নেবো মাঠঘাট।

মৃত্যু এক বিম্বিত উপাখ্যান, বহু পথ পেরিয়ে
যাবার কাহিনী, বিষণ্ন রেস্তোরাঁয় বসে
থাকা, ওয়েটার অর্ডার ধরবে বলে হাতে
নিয়েছে নোটপ্যাড মায়াবী পেন্সিল।

কফিনের সাদা বক বসে থাকে
উড়োচিঠি প্রতীক্ষায়,
ভুবনের ডাকঘর থেকে আসে ঝরাপাতা,
দ্যাখে তার নাম তাতে লেখা আছে কিনা।

প্রেম অন্যরকম- ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত
আমাদের তো শব্দ শুনে চলা,
আওয়াজ বুঝে এড়াচ্ছি ঘুরপথ;
প্রতিপদে বিপদ পাতে ওত।

আমাদের তো বুঝে সুঝে কোপ,
সরিয়ে সরিয়ে দেখছি কাঁটা ঝোপ। 

আমাদের তো অধিক সমস্যা,
জীবন মানেই একান্ত প্রতীক্ষা,
কিন্তু সেটা কিসের? মৃত্যু বিভীষিকা?

আমরা খুঁজি প্রেমের মধ্যে ঘর,
প্রেম আসলে ভীষণ স্বার্থপর,
প্রেমের মানে বোঝা, অতটা নয় সোজা।

প্রেম এক জলহীন মরুভূমি,
বৃষ্টিধারায় ভেজাও তুমি,
প্রেম মানে এক ঘাতক সন্ধিক্ষণ;
কিছুটা পেয়ে অনেকখানি দেয়া।


দিগন্ত


তোমাকে ছুঁয়েছে বৃক্ষ প্রান্তসীমায়,
এরপর থেকে গ্রাম আর নেই,
আছে প্রান্তর, ভেসে আছে আকাশে
সাদা মেঘ; যেন এক্কা দোক্কা খেলছে
ছাতারে পাখি, দল বেঁধে।

তুমি দিগন্তকে দেখো, সে কী ভীষণ
একা থাকে; স্তব্ধ থাকে সে একাকী তাপস, 
ছড়ানো থাকে গাছরেখা বাড়িঘর
সব কিছু নিয়ে দিগন্ত কী একাই না থাকে!

আদৃত সমাজ চুপ করে দেখে তোমাকে,
নানা কথা শুধায় আচ্ছন্ন অবকাশে।
ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে তুমি থামালে তাদের।
দেখালে দিগন্তকে।

দেখালে নৈঃশব্দ্য কতো ব্যাপক হতে পারে।

ভালোবাসো যদি সে যোগ্য হয়
নয়ত ছুঁড়ে ফেলো  - ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত

হাত বাড়াও, ভালোবাসো তাকে-
যে দাঁড়িয়েছিল তার সব নিয়ে স্নিগ্ধ গন্ধ মেখে;
সে তো দিয়েছিল নিঃশর্ত সব কিছু,
ক্ষোভ কেন তবে? যেটুকু পাওনি তাই নিয়ে ক্ষোভ,
ওজন করেছ কোনদিন পেয়েছ যা অনায়াসে!

অনায়াসপ্রাপ্তিকে আসলে আমল দেয় না কেউ, 
ভাবেই না, ভুলে যায় নির্বোধ আনন্দে;
প্রতিটি প্রাপ্য তাই কাউকে এমনি দিও না,
বুঝিয়ে বুঝিয়ে দাও কতোটা পাচ্ছে সে।

বহু নির্বোধ চরে বেরাচ্ছে তৃণভূমিতে,
তারা ঘাস খায়, হাম্বা হাম্বা করে আনন্দে,
তাদেরকে ধাতস্ত হতে দাও;
প্রতিটির জন্য নির্বাচিত করো উপযুক্ত মুগুর,
তৃণভোজী অথবা কুকুর। 

এভাবে নির্বাচিত কর নিজের উপযুক্ত পথ,
যেটুকু প্রাপ্য তোমার পাবেই নিশ্চিত,
ছিঁড়ে ফেলো ভিক্ষার ঝুলি;
পাপ্য দাবী করো, আদায় করো তাকে।

হাত বাড়াও, ভালোবাসো;
সে হাত ফিরিয়ে দিলে কেউ, বন্ধু ভেবো না তাকে;
বেঁচে থাকতে গেলে কিছু অবজ্ঞারও প্রয়োজন আছে।

0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন